somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খড়মবাবা--

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইশ্বর বিশাল এক জনসভার ডাক দিয়া বলিলেন, তোমরা মানুষের বাচ্ছারা হইবা দুই প্রকার।
এক ছেলিব্রেটি আর আরেক আধাভোধার জাত!
জনসভার মানুষ হাততালী দিয়াই চিল্লাচিল্লি শুরু কইরা দিলো!
ইশ্বর কান পাতিয়া শুনিলেন এবং বলিলেন খামোশ, এক জন খাড়ায়া প্রশ্ন করো, কি জিগাইতে চাও!
এক আধাবোধা মানুষ খাড়া হইয়া জিগাইলো, স্যার আপনে দুই দল কইরা দিলেন, এখন কোন দলেরে আপনি বেশি ভালা বাসবেন? আর কোনদলের লগেই বা আপনে আছেন? আপনে কোনদলের কোচ?
ইশ্বর মুচকী হাসিয়া মাইকে ফু দিয়া উত্তর দিলেন। ছেলিব্রেটি পনা আর ছেনালী পনার মাঝে বেশি পার্থক্য নাই, আমি ইশ্বর, ছেনালীপনাত কেমনে থাকি? আমি তোমরা আধাভোধাদের সহিত থাকিবো। তোমার বিশ্বাস হীন হইবে না, তোমরা আরামে থাকিবে। আর ছেলিব্রেটিরা আমারে ছাড়িয়া আশেকানী ভক্ত বানাইবো, ফেইসবুক এ পেইজ বানাইবো, তোমরা সেইখানে গুতাগুতি করিবা, আমি ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করিয়া দিবো।
আরেক আধাবোধা প্রশ্ন নিয়া খাড়াইতেই ইশ্বর বলিলেন, হারামজাদারা দুনিয়ায় যাও, যা খুশী কইরা মরো, তোমাগো এতো জিগাজিগিত আমি নাই!
আধাবোধা তাও কইলো, হুজুরে পাক, উচ্ছারনে ভুল করিয়াছেন, ছেলিব্রেটি না সেলিব্রেটি হইবে।
ইশ্বর রাগিয়া বলিলেন, আমি কি এইখানে তোমাদের কবিতা আবৃত্তির পরীক্ষা দিতে আসিয়াছে, হারামখোর। এরপরে তিনি তাহার এসিস্টেন্ট এর দিকে তাকাইয়া বলিলেন, এরা পয়দা হয় কেমনে? কোন মাঠি দিয়া এদের তৈয়ার করা হয়েছে? তাড়াতাড়ি জানিয়া আমার কাছে রিপোর্ট করো। অই মাঠি দিয়া যেনো আর কোন মাল না বানানো হয়। অই গোদামে সীলগালা করিয়া দেও, আর এর হাড্ডি দিয়া যে বান্দি বানানো হইছে, সেইগুলাও তো অইরখম ত্যাঁদড় হইবে, সবাইরে খোজ করিয়া, বার করিয়া বাঞ্জুয়া করিয়া দেও, প্রোডাকশন বন্ধ হউক!
ইশ্বর মাইকে ফু দিয়া, বলিলেন আজকের মত সভা শেষ, যার যার ঘরে দোয়ারে যাও।
তিনি মাইক অয়ালাকে ডাকিয়া ভাড়া মিঠাইয়া দিলেন। ইশ্বরের এসিটেন্ট এতে গাই গুই করা শুরু করিলো, সে কইলো হুজুর, এই যে টেকা দিয়া পুংটার জাতরে মাথায় তুললেন, আপনে ইশ্বর টেকা দিবেন কেনো?
ইশ্বর মুচকী হাসিয়া বলিলেন, অরে আমি যতবার জগতে আসিয়াছি, মানুষের বেশেই, মানুষের মতই কাজ কারবার করেছি। নাকি হা করে শুধু মুখের ভিতরে বিশ্বরুপ দর্শন করায়ে বেড়ায়েছি?
ইশ্বরের এসিটেন্ট তপ্ত উত্তর পাইয়া নির্বাক!
এইবার ইশ্বর গাট্টি গুট্টি গোটাইয়া চিদাকাশের দিকে রওয়ানা দিলেন, একটু পথ যাইতেই এই আধাবোধা তার পথ রোধ করিয়া দিলো। মাঠিতে পড়িয়া বলিতে লাগিলো, হুজুরে পাকের দয়ার শরীর!
ইশ্বরের উঠিলো রাগ, তিনি রাগ সামলাইয়া বলিলেন, অরে ভোধাই এইটাও জানো না, আমি ইশ্বর হইলাম নাই শরীর, আমার কোন শরীর নাই। যখন যেমনে দরকার, তেমন একটা কিছু ধারন করি। বাদ দেও, এখন বলো পথে থামাইলা কেনো? পথে কেনো করাইতেছো দেরী?
লোকটা বলিলো, কি জিজ্ঞাসিবো ভুলিয়া গিয়াছি, তবে হুজুর আমারেও না শরীর করিয়া দেন। কাঁশতে কাঁশতে জান শেষ। এর উপরে হাপানীর টান উঠে। তুশকা খাইলে কামে কাজে যাইতে পারি না। সারাদিন পড়িয়া ঘুমাই। বিকালে বউ ছিল্লায়। আমি কি এ জীবন চেয়েছিলাম হুজুর?
ইশ্বর আর রাগ সামলাইতে পারিলেন না। পায়ের খড়ম খুলিয়া ধপাধপ কয়েক ঘা বসাইলেন! এসিটেন্ট ইশ্বরের অগ্নিমূর্তি দেখিয়া বলিয়া উঠিলো, হুজুর আমি আজকেই খবর নিতেছি, কোন মাঠি দিয়া এরে পয়দা করা হয়েছে। সেই মাঠির প্রোডাকশনও বন্ধ, ফ্যাক্টরী আজকেই সীলগালা করিয়া দিবো। হুজুর বললে থাপড়ায়া এর দাত ফালায়া দিই?
ইশ্বর রাগ সম্বরণ করিয়া বলিলেন, তুমি চুপ থাকো। আজ হইতে এর ভোধাই পর্ব শেষ। আজ হইতে এ হইবে আরেক ছেলেব্রেটী।
যাও বেটা, তোমার দুঃখ গোছাইয়া দিলাম।
আধাবোধা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ইশ্বর মিলাইয়া গেলেন। লোকটা মার খাইয়া কান্নাকাটি শুরু করিয়া দিলো। খড়মের বাড়িতে, ভীষন জ্বালাপোড়া!
তার কান্না কাটি দেখিয়া, পথের লোকজন জিগাইলো বিষয় কি? কান্দো কেনো? তখন লোকটা বিস্তারিত সব তাহাদের নিকঠ বলিলো। সব কথা শুনিয়া আধাবোধাদের মাঝে লিডার গোছের একজন বলিলো, ইশ্বরের জুতার বারি খেয়েছো তুমি তো মিয়া যেই সেই না। তোমার অতীত ঘাটানো দরকার, নিশ্চই এমন কোন পুন্য কাজ আগে করিয়াছিলে?
লোকটার আর কারোর কথার উত্তর দিবার ইচ্ছা নাই, সে আপন মনে কান্দিতেই লাগিলো।
লিডার তার এক ছেলার দিকে তাকাইয়া বলিলেন, এই লোকের যাবতীয় খবর এক্ষন নিয়া আসো, সেতো যেই সেই লোক না। এরে দিয়াই জগতের অনেক কল্যান কারয করানো বাকী আছে!
ছেলা রওয়ানা দিলো খবর আনতে, বাড়ী ঘরের হুঁশ নাই, ঠিকানা নাই, কিসের খবর? সে কতদুর হাটিয়া এক গ্রামের রাস্তার পাশে দেখিলো ভালো ইক্ষুর ক্ষেত, গলা শুকাইয়া কাট, সে ইক্ষু ছিড়িয়া খাইতে লাগিলো। ইক্ষুর রস খাওয়া অবস্থায় সে দেখিলো সামনে গরুর পাল, একজন রাখাল বসিয়া বসিয়া আরাম করিয়া বিড়ি খাইতেছে। ইক্ষুর রস গলা বাইয়া পরিতেই, তার মনে হইলো, খবর তো সব পাইয়া গেলাম। সে উল্টা দিকে রওয়ানা দিলো। ভীরের পাশে পৌঁছাইয়াই বলিলো, ইনি তো যেই সেই লোক না।
আগে ইনি ছিলেন রাখাল রাজা, আবিতা গাই গরুর গায়ে হাত দিয়া দুই চাপড় দিলেই আবিতা গাই গরু গাভীন হইয়া যাইতো। বিচিওয়ালা বলদ লাগতো না!
এই কথা শুনিয়া লীডার বলিলেন, যে ব্যক্তি হাত ইশারায় আবিতা গাই গরু গাভীন করিয়া ফেলে, সে বাঞ্জুয়া বেটি মানুষরে গাভীন করিতে তো মেশিন লাগিবার কথা না। খড়ম পিটা করিলেই কাজ হইবে। ইনি তো আর কেউ না স্বয়ং খড়ম বাবা!
খড়ম বাবা নাম পড়ার লগে লগেই, সকলে মিলিয়া পাশের এক প্রাচীন বটবৃক্ষের তল ঠিক করিয়া ফেলিলো। বাবা বটের তলায় থাকিবেন। ইট আনো, সিমেন্ট আনো, ঘর বানাও, স্পন্সর লাগাও, ডাবের পানির ব্যবস্থা করো আর করো কাচা কাচা খড়ম বানানোর ব্যবস্থা, হুজুর খড়ম পড়া দিবেন। খড়ম পায়ে না, মাথায় নিয়া রাখিতে হইবে। বাঞ্জুয়া বেটাবেটি খড়ম পড়া নিয়া যাবে। জুতার বাড়ী খাওয়া খড়ম বাবা, খড়মে বরকত।
ঘটনা তুঙ্গে, আসর বানানো হয়ে গেছে, খড়ম বাবার নাম ডাক শুরু। টেলিভিশন, পত্রিকা সকলে রিপোর্ট করে ফেলেছে। সারাদেশের মানুষ জেনে গেছে।
ইশ্বর তখন নির্জনে চিত্ত বিলাশে মত্ত। এসিস্টেন্ট বারবার করিয়া ভাবিয়া ইশ্বরের দরজায় টোকা দিয়া গলা খাখারী দিলেন। ইশ্বর রাগ গোস্বা নিয়া বার হইয়া জিজ্ঞেস করিলেন, কি হইছে? ছাতাও ক্যান?
এসিটেন্ট বলিলেন হুজুর সর্বনাশ, যে আধাবোধারে খড়ম পিটা করেছিলেন সে এখন খড়ম বাবা হইয়া বসিয়া আছে। সে খড়ম পিঠাইয়া বাঞ্জুয়া বেটা বেটির ঘরে প্রোডাকশনের ব্যবস্থা করিয়া দিতেছে।
ইশ্বর বলিলেন প্রোডাকশন কেমনে হইলো?
এসিটেন্ট বলিলেন হুজুরে পাক আপনার খড়ম, খড়মের মান রক্ষার্থে আমি ই সিস্টেম করিয়া দিয়াছি। আপনে তো বিশ্বাসে আছেন তর্কে বহুদুর। লোকজন আপনার খড়মে বিশ্বাস শুরু করিয়া দিলো, আমি কেমনে থামাই? আর সেই সময়ে আপনেও ব্যস্থ, আমি কেমনে আপনারে জিগাই।
ইশ্বর বলিলেন তাইলে এখন কেনো জিগাইতে আসিয়াছো?
এসিটেন্ট বলিলেন হুজুরে পাক, আমি তো আপনারে চিনি, না জিগাইয়া এক কাজ করে ফেলেছি, সিস্টেমে পাইলে যে আমারে দিবেন ছ্যাচা, সেইটা তো আমি জানি! কিন্তু আই ভুল করতেই পারি, এখন কেমনে সামাল দিবো হুজুর পথ দেখান!
ইশ্বর ভাবিবার অবকাশ নাই দেখিয়া বলিলেন, সকল প্রোডাকশন বন্ধ করিয়া দেও, সকল ফ্যাক্টরীতে লাগাও তালা। আমারে কয়টা দিন শান্তিতে থাকতে দেও, তোমরার জ্বালায় আর পারি না। প্রোডাকশন বন্ধ হইলেই আমার শান্তি।
এসিটেন্ট বুঝিলেন ইশ্বর রাগিয়া আছেন। কিন্তু প্রোডাকশন বন্ধ করিয়া দিলে ঝামেলা অনেক, তিনি আস্তে আস্তে কইলেন, হুজুর এখন প্রোডাকশন বন্ধ করিয়া দিলে আপনে আমি থাকিবো কি নিয়া? আর প্রোডাকশন মানেই তো আপনে আছেন, নাই মানেই নাই। শাস্তি যা আমারে দেন প্রোডাকশনে টাটা ফালাইলে সব দিকে সমস্যা!
ইশ্বর বলিলেন তাহিলে হইতেছে হইতে দেও। খড়ম বাবারে আমার পক্ষ হইতে একখানা ঐশ্বরিক খড়ম পাঠাইয়া দেও। সে যেমনে আছে তেমনে থাকুক কয়দিন পরে মিঠিং করিয়া ব্যবস্থা নেয়া যাইবে।
তাই হইলো এক জোড়া ঐশ্বরিক খড়ম ডাক মারফত পরদিন সকালে খড়ম বাবার দরবারে আসিয়া পৌঁছাইল। সকলে দেখিলো ডাকে ইশ্বরের নিকট হইতে খড়ম বাবার নিকট খড়ম আসা শুরু হয়েছে, যারা আগে একটু আদটু গাই গুই করতেছিলো তারাও খড়ম বাবার খাদেম হইতে উঠিয়া পড়িয়া লাগিলো।

এই লেখা ফেবু জগতে আমার এক প্রিয় মানুষ, অয়াসিফ ভাইকে উৎসর্গ করে লিখলাম। আমি যাই বলি তাই এই মানুষটার ভাল্লাগে! তার এই ভালো লাগা মাঝে মাঝে আমার মাঝেও ভালো লাগা এনে দেয়।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের সেকাল এবং একালের ঈদ

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:১৩



কানাডার আকাশে ঈদের চাঁদ উঠেছে কিনা সেটা খুঁজতে গতকাল সন্ধ্যায় বাসার ছাদে বা খোলা মাঠে ছুটে যাইনি। শৈশবে সরু এই চাঁদটা আকাশে দেখতে পেলেই দেহকোষের সবখানে একটা আনন্দধারা বয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাঁটুতে ব্যথা, তাই সুঁই এ সুতা লাগানো যাচ্ছে না

লিখেছেন অপলক , ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭

শুরুতেই একটা কৌতুক বলি। হাজার হলেও আজ ঈদের দিন। হেসে মনটা একটু হালকা করে নেই।

"কোন এক জায়গায় স্বামী স্ত্রী ঘুরতে বেরিয়ে বাইক এক্সিডেন্ট করে। জ্ঞান ফিরলে স্বামী নিজেকে হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদ মোবারক!

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:০৪



ঈদ মোবারক!

ঈদ উল ফিতরের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন! এক মাসের সংযম ও আত্মশুদ্ধির পর এসেছে খুশির ঈদ। ঈদ মানেই আনন্দ, ভালোবাসা ও একসঙ্গে থাকার মুহূর্ত। আসুন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্লোবাল ব্রান্ডঃ ডক্টর ইউনুস....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৯

গ্লোবাল ব্রান্ডঃ ডক্টর ইউনুস....

রাজনৈতিক নেতাদের সাথে, ক্ষমতাসীনদের সাথে তাদের কর্মী সমর্থক, অনুগতরা ছবি তুলতে, কোলাকুলি করতে, হাত মেলাতে যায় পদ-পদবী, আনুকূল্য লাভের জন্য, নিজেকে নেতার নজরে আনার জন্য। আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির ব্যক্তিটি কোন আমলের সুলতান ছিলেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪১



বাংলাদেশে এবার অভিনব উপায়ে ঈদ উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। ঈদ মিছিল, ঈদ মেলা, ঈদ র‍্যালী সহ নানা রকম আয়োজনে ঈদ উৎসব পালন করেছে ঢাকাবাসী। যারা বিভিন্ন কারণে ঢাকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×