আমি নিরামিষাশী পিপড়া। জ্বি হা ভাই আমি মাংস খাই না খাই খালী পাতা। আর পাতা খাই বলে তোমরা মানুষের নাম দিয়েছো, পাতা-কাঠা পিপড়া! আবার তোমাদের চরম শত্রু বলেও ভাবো। আমাদের সে যা ভেবেছো, কারণ এক বছরে এক কলোনির দশ হাজার থেকে এক মিলিয়ন পিপড়া মিলে আমরা জমিয়ে ফেলি প্রায় আধ টন গাছের পাতা।
মহারাণী পিপড়ার বয়ান
সাধারন পিপড়ার বয়ান
কিশোরী পিপড়ার বয়ান
শেষ পর্ব
আমাদের পাতা কাঠা পিপড়া দের মাঝে আবার বিশেষায়িত তিন শ্রেণী আছে। একেবারে মাঠা মোঠা। মুখের আগে সাঁড়াশি লাগানো এদের বলে জায়ান্ট। এদের কাজ হলো গাছে চড়ে পাতা কেঠে নিচে ফেলা। এই কাজটা এরা চূড়ান্ত ভালো পারে, এরা শুধু পাতা কাটেই কখনও বয়ে নিয়ে যায় না। কথা হচ্ছে তোমরা মানুষেরা মাঝে মাঝেই বনে আগুন লাগিয়ে দাও। সে আমাদের মারতে অথবা জঙ্গল সাফ করতে তখন এই বলদ ভোদাই রা কি করে সেই কথা বলি। যখন আগুন লাগে তখন আগুনের তাপ আস্তে আস্তে পাশে আসে আর এরা এদের কাজ ই করতে থাকে, পাতা কাটতেই থাকে। একেবারে জ্বলে পুড়ে নিঃশেষ হবার আগে পর্যন্ত একবারের জন্য পালানোর কথা ভাবে না।
এর পরেই এলো ট্রান্সপোর্টর এদের কাজ কাটা পাতা বয়ে নিয়ে যাওয়া। চল চল চল ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাতল বলে এরা কাঁধে তুলে নেয় কাটা পাতা আর রওয়ানা হয়ে যায় বাসার দিকে। সারাদিন এরা অনবরত নিরবধি কাজ চালিয়ে যায় এক বারের জন্য না থেকে। শুধু মাত্র ঘুমের সময় দেড় মিনিট কাল ঘুমিয়ে নেয়।
এর পরেই আছে ছোট ছোট সাইজের আরেক দল এরা ঘরে থাকে, ফাই ফরমাস খাটে। ছোট ছোট কাজ করে পাতা সামলে রাখে। এদের দেখতে বড়ো মায়া লাগে, বড়োরা ঘরে ফিরে এলে আশে পাশে ঘুরঘুর করে অনবরত। যদি বড়োরা হটাত হটাত হাত পা টিপে দেবার কথা বলে আর বকশিস দেয় এই আশায়। কিন্তু আমরা পিপড়াদের গায়ে ব্যথা নাই তাই গা টিপে দিতে হয় না।
মাঝে মাঝে বিভিন্ন কারণে আমাদের বাসা আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত কলোনিকে সরিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের প্রায় সময় লাগে দুইদিন। এই প্রক্রিয়া টা খুব কঠিন। কারণ আমাদের মাঝে কোন লিডারশীপ নেই তাই আমরা সবাই মিলে কারো কথা শুনবো এমন হয় না কখনই। আমরা সবাই রাজা আমাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেই। তবে আমাদের সিদ্ধান্তে কখনও ভুল হয় না। সবাই মিলে নিরাপদ এক জায়গাতেই যাই। প্রধান কাজ আমাদের রানীমাকে নিয়ে যাওয়া। সে ডিম পাড়তে পাড়তে নিতিয়ে যায় যার ফলে তাকে টেনে নিয়ে যেতে হয়, সহজে যেতে চায় না। এর পরে ডিম লার্ভা। যত টুকু পারো খাবার নিয়ে যাওয়া।
এর থেকেও কঠিন কাজ হচ্ছে রাজকুমারী দের নিয়ে যাওয়া। কারণ এদের পিঠে পাখনা অসময়ে উড়াল দিয়ে কোন বাঁদরের আদর খেতে চলে যাবে! শেষে কিনা বংশ ধংস, কুলের নাশ! তাই এদের-নিয়ে যাওয়ার সময় এদের পাখায় জোড়করে ধরে রাখতে হয় যেনো কলঙ্কিনী হওয়ার কোন সুযোগ না পায়।
নতুন ঘরে গেলেই হলো না কত কাজ তখন বাকী নতুন জায়গা, রোগ বালাই এ ভরতিতখন আমাদের মাঝে কেউ কেউ রওয়ানা দেয় কবিরাজ বাড়ী, কবিরাজ তো আর বিনা দামে ঔষধ দিবে না জান দিতে হয় আমাদের অনেক কেই। আমাদের ঔষধ হলো গাছের থেকে বের হওয়া কস বা রেজন। এই রেজনের ফাদের মাঝে যে আটকে যায় তাকে আর বের করে আনা যায় না। কালে কালে তারা হয়ে উঠে এম্বার। তাকে শেষ চুমো খেয়ে ওখানেই রেখে আসতে হয়। বাকী বেচে যাওয়া জনেরা শুকনো এজন্য তুলে নিয়ে আসে কাঁধে করে। এবার বাসার চারিদিকে সেটা রেখে দেয়া হয়, গর থেকে বেরুবোর সময় আর ঘরে ঢুকার সময় সেই এজন্য এর উপর দিয়ে যাওয়া আসা করা লাগে যাতে পায়ের নিচে লাগা ফাঙ্গাস বেটারে মরে যায়। এরা আমদের দারুণ জ্বালায়, এরা ঘরে একবার ঢুকে গেলে চিমনি করে দিয়ে রোদ আলো ঢুকাতে হয় না হলে পালে পালে আমাদের পিপড়ারা মরে যায় বিভিন্ন রোগে। আমাদের বড়ো বড়ো কলোনির অনেক গল্প তোমরা শুনেছো। আবার ২০-২৫ সদস্যা নিয়েও কিন্তু আমাদের কলোনি হয় প্রচুর, সরবোচ্ছ ১০০ পর্যন্ত যায় সংখ্যা। যে কোন শুকনো ফলের ভিতরে আরামসে সেই সব কলোনি বানিয়ে ফেলা যায়। যারা একটু নিরিবিলি অহংকারী তারাই এমন ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে যায়।