আজ একটা ছোট খাট মজার ঘটনা শেয়ার করি। লন্ডন এর পেডিংটন ষ্টেশনের পাশে এক ভাবীর বড়ো বোনের বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়েছিলাম ২০০৯ এর শেষ দিকে। তো নিয়ম অনুযায়ী ইমাজিন টিভি সিরিয়াল নিয়ে কথা হবে আমি শুনবো, হাসবো, কাদবো, ভাববো মাঝে মাঝে এক দুইটা আক্ষেপ করার জায়গায় আক্ষেপ করবো এই ভাবনা আগে থেকেই রেডি করা। বড়ো আপুর সাথে পরিচয় শেষ করেই ভাবী বললেন, নাও বই নিয়েই কথা বলো এ তোমার কথা শুনবে। নানায় কথায় বারতায় বের হয়ে আসলো তিনি এক চলন্ত লাইব্রেরী, ঘরে বই জায়গা হয় না দেখে বেশিরভাগ বই দান করে দিয়েছেন বিভিন্নি লাইব্রেরীতে। এখন ঘরে তেমন একটা বই নেই, যা আছে তা থেকে বই বেছে আনতে বেশ সময় লাগে। যাই হোক তার কাছ থেকে শোনা একটা সত্য ঘটনা।
উনার বড়ো চাচা একবার লন্ডন থেকে জাহাজে করে দেশে গিয়েছিলেন সম্ভবত ৭১ এর আগের সময় হবে। তো সাথে করে অনেক গুলো ট্রাঙ্ক নিয়ে গেছেন। ইয়া বড়ো বড়ো সাইজের বিদেশী ট্রাঙ্ক। সারা এলাকায় খবর রটে গেছে অমুক বিদেশ থেকে কয়েক ট্রাক ট্রাঙ্ক নিয়ে আসছেন। সেই রটে যাওয়া খবরের সুত্র ধরে তাদের বাড়িতে ডাকাত পড়লো তখন ডাকাত আসলে নাকি বাদ্য বাজনা বাজিয়ে আসতো। যাই হোক বাধ্য বাজনা বাজিয়ে ডাকাত ডাকাতি করে কয়েকটা ট্রাঙ্ক নিয়ে গেলো। বড়ো চাচার বেহুশ অবস্থা আমার ট্রাঙ্ক, আমার সব, আমার জীবন বলে তিনি অজ্ঞান হচ্ছেন। তিনি কিন্তু কখনই ট্রাঙ্ক গুলো খুলে কাউকেই দেখান নি। তাদের বাড়ীর কারোর ও ধারনা ছিলো না ট্রাঙ্কে কি পরিমান জিনিষ আছে। সুতরাং স্বান্তনা দেবার ভাষা কারোরই ছিলো না, তারা বুঝলেন ছোট চাচা সর্বস্বান্ত হয়ে এই কান্না কাদছেন। তাদের বাড়ী নদীর পাশে, ১০-১৫ দিন পরে বাড়িতে খবর আসলো ডাকাতরা মনে হয় ট্রাঙ্ক নিয়ে যেতে পারেনি জালে আটকা পড়ছে ইয়া বড়ো দুই ট্রাঙ্ক, চাচা পাগলের বেশে সেখানে রওানা হলেন তার জীবন ফিরে পাবেন কিনা দেখতে! সাথে বাড়ির পুরুষ রাও। ট্রাঙ্ক উঠানো হলো তালা ভাঙ্গা ছিলো, খোলা হলো ডালা এবং ভেতরে দেখা গেলো গলে, পচে কাদায় ভর্তি হয়ে, দুই চারটা ছোট মাছ সাথে, আর বই আর বই। মানে চাচা অনেক দিন থেকে তার জোগাড় করা সব বই ট্রাঙ্ক ভরে সাথে নিয়ে গেছিলেন, হয়তো শান্তি মতো লাইব্রেরী বানাবেন বলে। ডাকাতরা মনে হয় নৌকায় উঠে আর তর সইতে না পেরে তালা ভাংলো কি মাল মরলো দেখবে বলে। আর সব আশায় গুড়ে বাই দিয়ে ডাকাতী করলো বই এর ট্রাঙ্ক!!!!!