ক.
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রি শিক্ষকদের নিয়ে কটাক্ষ করেছেন । এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকগণ যথেষ্ট রুষ্ট হয়েছেন এবং তা স্বাভাবিক ।জোরে জোরে বিচার দিচ্ছেন কিন্তু কার কাছে দিচ্ছেন ? প্রধানমন্ত্রি বরাবর, জনগণ নাকি বিচারপতি বরাবর ? স্পষ্ট নয় । ভদ্রভাষায় কটাক্ষও করছেন কিন্তু ভাবছেন না, কেনো এমন হলো ? কোত্থা থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রি শিক্ষকদের সম্পর্কে এমন মন্তব্য করার সাহস পায় ? কেনো আজ কলম নয়, অস্ত্রের ডাকনাম ‘সম্মান’ ? এই অস্ত্র কারা চালায় ? ভবিষ্যতের মন্ত্রীগণ কি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার সময়ই অস্ত্র নিয়ে এসেছিলো ? ওরা কি খেলতে খেলতে অস্ত্র চালাতে শিখেছে ? কে সরকার চালায় ? কলম নাকি বন্দুক ? নীতি কারা দেয়া, শিক্ষক নাকি সেনা অফিসার ? কারা গণতন্ত্র আমদানি রফতানি করে, অধ্যাপক নাকি স্বৈরাচার ? কোথায় ভবিষ্যত জন্ম নেয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি সেনানিবাসে ? চিন্তা করছেন না । কোনো অধ্যাপক এ নিয়ে চিন্তা করছেন না । তাঁরা ছাত্রদের ফি বৃদ্ধি আর নাইট কোর্স নিয়েই দারুন চিন্তিত । আর যারা রাজনীতি করেন তারা মাঝে মাঝে ডাক পান টিভির পর্দায়। এবং খুব বিশ্বাসের সাথে ধরে নেন, তার ছাত্রদের মত সারা দেশের সব জনগণ মেধাহীন, প্রজ্ঞাহীন এবং ভৃত্য। ছাত্রদের মত বাজে বিষয় নিয়ে চিন্তা করার সময় কোত্থা ! কিন্তু যখন সরকার টুটি ধরেছে তখন সবাই হায় হায় করছেন” সম্মান চলে গেলো, সম্মান চলে গেলো । আরে আপনাদের আত্মসম্মানবোধ ছিলো কবে ? হাল আমলের কোন বুদ্ধিজীবীর মাথা নিজের ঘাড়ে আছে বলেতো মনে হয় না । সবাই ব্যবসায় ব্যস্ত । কেউ কেউ প্রমিত বাংলায় লেখে ও বলে, এজন্য তারা বুদ্ধির ব্যবসায়ি । আর যাদের বাংলা উচ্চারণ খারাপ, বাক্য গঠন ঠিকঠাক হয় না, মাথার ব্যবসায়ি। আর একদল আছেন যাঁরা নিরুপায়: সুশীলদের থেকেও ভদ্র, অবশ্য উপায় খুঁজতেও দেখা যায়নি, কোন শিক্ষককেই ছাত্রদের পক্ষে কোন দাবীর পেছনে দাঁড়াতে দেখিনি । এঁরা এতিমের মত ক্লাশে যান, পড়ান আর চালচলনে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। ছাত্ররাও এদের দেখে হায় হায় করেন ! উভয়ের রক্তই শীতল এবং খুব ঠাণ্ডা আর মারাত্মক রকমের মানবিক । এরা কারো ক্ষতি করেনা কিন্তু মোকাবেলাও করেনা। কিন্তু ভারত চন্দ্র রায়গুণাকরতো প্রশ্ন করে গেছেন,‘নগড় পুড়িলে কি দেবালয় এড়ায়? ‘
খ.
সরকার আলোচনা করতে বাধ্য রাষ্ট্রের নাগরিকদের সাথে, পোষা বিড়ালদের সাথে নয়। মাননীয় সরকার মহোদয় খুব ভাল করে জানেন, মোল্লার দৌড় শাপলা চত্ত্বর পর্যন্ত আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের দৌড় ক্লাশ বর্জন থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত । বঙ্গভবন বা গণভবনের বারান্দায়ও এদের জায়গা হবে না, ওটা সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত । ১৯৯০ এ গণতান্ত্রিক (?) বাংলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সব ধরনের শিক্ষক ছাত্রদের অপ্রয়োজনীয় মনে করতে শুরু করেছেন, ঝামেলা মনে করতে শুরু করেছেন। অবশ্য ১৯৯০’র আগের ব্যাপারটা ইতিহাস থেকে শেখা, সে ইতিহাসও আপনারাই লিখেছেন নয়তো বন্দুকের ডগায় রেখে কেউ আপনাদের দিয়েই লিখিয়েছে । কবে জনগণের পাশে ছিলেন আপনারা ? কোন পরিস্থিতিতে ছাত্রদের পক্ষে কথা বলেছেন ? কত ছাত্র প্রতি বছর ঝরে পড়ছে ! কেনো এমন হচ্ছে ? কেউ চিন্তা করেছেন ? ছেলেপেলে মন খুলে আপনাদের সামনে হাসার সাহস পর্যন্ত পায় না, এবং এতে আপনারা পুলকিত হন, কোন ছাত্র ফেল করলে কেউ কেউ খুব খুশি হন যেনবা এটা তার নিজেরই কৃতিত্ব। আজ যারা মন্ত্রী, এমপি, অভিনেতা বা সন্ত্রাসী তারা আপনাদেরই ছাত্র। কী শিখিয়েছেন তাদের ? এর দায়ভার কে নেবে ? এ আন্দোলনের মানববন্ধনে যদি আপনাদের উপর লাঠিচার্জ পর্যন্ত হয়, কে দাঁড়াবে ? কাকে বুক পেতে খঞ্জর নেওয়ার বিদ্যা দিয়েছেন ? শিখিয়েছেন, ক্লাশে নিয়মিত হলে নাম্বার পাওয়া যায়। ওখানে গেলেতো উপস্থিতির নাম্বার পাওয়া যাবে না। ব্যবহারিক পরীক্ষায় অবশ্য পাওয়ার সুযোগ আছে তবে এ ক্ষেত্রে আপনারা খুব নীতিবান। এজন্য, সালাম। বলছিলাম, সরকার এবং আপনাদের ইস্যুতে। আজ সরকার মনে করছে, আপনারা গৌণ কারন আপনাদের প্রয়োজনীয়তা আর মুখ্য তালিকায় নেই। সরকার বুঝে গেছে, দেশ চালায় সেনা কর্মকর্তারা, ঝুঁকি নেয় তাঁরা, নির্বাচনে কেবল তাঁরাই ন্যায় ও আধুনিক এবং গণতান্ত্রিক ভোট জাতিকে উপহার দিতে পারে । আর এক শ্রেণিকে না চাইলেও মূল্য দিতে হয়:মিডিয়া বা সাংবাদিক। একমাত্র কলমের মধ্যে ওদের কলমেই খানিকটা দামী কালি আছে । এবং জনগণকে তারা বুঝিয়েছে, হাল আমলে কেবল সাংবাদিকরাই শহিদি খেতাবের যোগ্য। আপনারা প্রতিবাদ করেননি। বুঝতেই পারেননি। তবে আধুনিক মারনাস্ত্রের কাছে আবার ওটাও কিছু নয়: কালির বেগের থেকে গুলির বেগ বরাবরই বেশি কিনা ! মানতেই (?) হচ্ছে, সেনাবাহিনীর ত্যাগ, মহিমা এবং কৃতিত্ব সবার উপরে। তারপরে কারা ? সরকার কে ? শুধু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ? মোটেও না ! আমলারাও । নীতি প্রণেতারাও এবং নিশ্চয়ই সরকারি কর্মাবলি প্রচারিত হয় শেখ হাসিনা’র নামে। কে আপনার হয়ে ওখানে উকালতি করবে ? আপনাদের কেউ আছে ? যারা ওখানে আছে তারা কি আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ মনে করে ? করা কি খুব দরকার ? একটু ভেবে দেখবেন। তাহলে কি দাঁড়াচ্ছে : সচিবালয় আর সেনানিবাস কাছের বন্ধু । এদের বন্ধুত্বে আমার কোন ঈর্ষা নেই। কথা হলো, অধ্যাপকদের জায়গাটা কোথায় ? আমিতো দেখি না যেনবা এতদুরে যে অংক কষে বুঝতে হবে।
.
বরাবরই বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের অঘোষিত দুশমন। যারা রাজনীতি করে তারা ঝরে পড়া ছাত্র হতে পারে কিন্তু মেধাবী। অতীতে বক্তব্য দিতে গিয়ে দলীয় মহাসচিবদের পায়জামা খুলে পড়তে দেখা গেছে এবং জনগণ হেসেছে । ওটা রাজনৈতিক কৌতূক ছিলো । ঐ জামা মহাসচিবের ছিলো না, বাঙালি শাসকদের পরিচয় ছিলো । কোন অধ্যাপক সেই সৃজনশীল প্রশ্নের মিমাংসা জনগনের সামনে হাজির করতে পারেননি। কেনো আপনার বেতনের/মর্যাদার আপেক্ষিকমান কমবে না ? আপনারাইতো এই মার্কিং শিখিয়েছেন। অথচ গত নির্বাচনের চেহারা দেখুন । বিএনপি-জামাত এখানে সেখানে বোম মারছে।মানুষ মরছে। ডিএমসির এত কাছে থেকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পর্যন্ত পোড়া মানুষের গন্ধ পাননি। আর যারা পেয়েছেন তারা নাক শিটকিয়েছেন। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জাতীয় দায়িত্ব পালন করেছেন। সেদিন কে নির্বাচনের মাঠে ছিলো ? অত ঝামেলার মধ্যেও কারা গণতান্ত্রিক সুবাতাসের দ্বার পাহাড়া দিয়েছে ? যুদ্ধের নেতৃত্ব কারা দেয় ? বিশ্বের কি দরকার ? সৈন্য নাকি বিজ্ঞানী ? কে কোথায় তৈরি হয় ? আপনারা প্রয়োজনীয় মাল প্রস্তুত করছেন ? কেনো আপনাদের বেতন বাড়বে ? কে সেদিন ব্যালটবাক্স পাহাড়া দিয়েছে ? রাজনৈতিক দলগুলির ভোট দরকার, আমলাদের টাকা দরকার আর সেনাবাহিনীর অস্ত্র দরকার আর চাকরির জন্য সনদ দরকার। শিক্ষা কার দরকার ? কে শিক্ষিত হতে চায় ? সনদপত্রতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বা নীলক্ষেতে কিনতে পাওয়া যায় বলে শুনেছি। জাতির দরকার সেনানিবাস, বিশ্ববিদ্যালয় না।
গ.
স্যার, সব সমীকরণের সমাধান জ্যামিতিক বা গাণিতিক নিয়মে হয়না, কিছু কিছু সমস্যা সমাধানের জন্য সামাজিক নিয়ম দরকার হয়, অর্থনীতির নিয়ম দরকার হয়। কিছু কিছু দর্শন আর কিছু কিছু সমীকরণ জীবনানন্দ দাশের কবিতার শব্দ দিয়ে সমাধান করতে হয় । কিছু কিছু সমীকরণ কেবল গরম রাজপথেই সমাধানযোগ্য !
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:৩২