মহাজাগতিক প্রিয়া !
নিশ্চয়ই ভালো আছো। জানি, পৃথিবীর সুন্দর জায়গাটুকু তোমার জন্যই বরাদ্দ। সুখেও আছো । মহাজাগতিক অন্ধকারেও তোমার সুখের আভা আমার নজড়ে আসে। পুলকিত হই। ভাবতে ভাল লাগে, কেউ একজন অন্তত সুখে আছে ,হয়তো আমি তার কেউ নই কিন্তু সে আমার কেউ, নিশ্চয়ই কেউ । ভয় পাই তোমার কথা ভাবতে, পাছে তোমার অমঙ্গল হয়, পড়শিরা তোমাকে কলঙ্কিনী বলে । মনের ভেতরে নাড়া দেয় ভয়:নিত্য সঙ্গিনী আমার, যদি আমার জন্য কষ্ট পাও ! যদি কোন কুটিল ফেরেশতা হেমলকের পাত্র উপুর করে ঢেলে দেয় তোমার প্রিয়জনের কানে ! কোথায় দাঁড়াবে তুমি ! খুব ভয় হয় আমার।
জানো, আমার খুব মনে আছে প্রথম দিনের কথা। তোমাকে সৃষ্টিকর্তা দুহাত উজাড় করে দিয়েয়ে সব। শুনে ভাল লেগেছে আমার। আমারও আছে। সৃষ্টিকর্তা দেননি,আমি কেড়ে নিয়েছি। নিজের হাতে গড়েছি কয়েকটি বিকেল, কিছু রাত আর কিছু দৃশ্য। ... তুমি এলে । একটু হাসলে ।..... তোমার হাত কাঁপছিলো। খসে পড়লো টিপ । হয়তো পড়োনি আগে নয়তো দাতার ভালবাসার জোর ছিলো না,যতটুকু জোর থাকলে ধরে রাখা যায়, স্পর্শ করার অধিকার মেলে বা বন্ধু থেকে প্রিয়তমা বলার সাহস পাওয়া যায়।
সে রাস্তায় তুমি আর হাঁটো যেখানে সাপের ডিম খুঁজতে গিয়েছিলে, যেখানে প্রজাপতির চাষ হয়। সে চায়ের দোকান কি এখনো আছে ? সেই সাঁকোটা ? যেখানে বসে প্রথমবার বুঝলাম, আমাকে অন্তত বিশ্বাস করো তুমি । সেখানে কি এখনো খুব মশা ? মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয়, সব মশাদের স্বরলিপির পাঠ শেখাই, বেহালার সুর গেঁথে দেই ওদের মগজে। ইচ্ছে হয় সেদিনের কথা ভেবে ।
আজও নিশ্চয়ই নাটক হয়। চিৎকার করে প্রেমের পক্ষে উকালতি করে নট-নটীরা। কেউ কি জানে, কত প্রেমের মৃত্যু হয় মঞ্চের পাশে । কত প্রেমিক প্রিয়তমাকে একবার দেখার জন্য কতবার মঞ্চের পাশে হাঁটে ! কত প্রেমিকের রঙিন স্বপ্নগুলি কেমন মিশে যায় অন্ধকারের সাথে । কত লাবণ্যের বিচ্ছেদে কত অমিতরা মাথা নীচু করে পাড় হয় সিংহদ্বার। তারপর মিশে যায় হাজার মানুষের সাথে। প্রিয়তমার নিথর স্মৃতিকে একটু জাগাতে কত অমিতের চোখে পানি আসে। কেউ জানে না ! কোন অভিনেতা জানে না, কোন অধ্যাপক জানে না, কোন লাবণ্যও জানে না। জানে কেবল ঘাষ আর রাতের শিশির । নোনা জলে সিক্ত হয়ে মাথা ন্যুয়ায়, ওরা সেজদা করে, ভালবেসে কৃতজ্ঞতা জানায়।
হ্যাঁ, তোমার জন্য জমেছে কিছু ঘৃণা । পুঞ্জিভূত দারুন সুন্দর কিছু ঘৃণা । প্রেমের অভিধান একে গ্রহণ করেছে ‘ঈর্ষা’ নামে। আমি ঈর্ষিত । আমি প্রেমিক, তাই আমি ঈর্ষিত। বিশ্বাস করো, তোমাকে আমি ভুলে গিয়েছিলাম। তুমি মৃত ছিলে আমার কাছে। কেবল ঈর্ষাটুকু জীবিত ছিলো, আর ছিলো আগুন:লালটুকটুকে ভীষণ সুন্দর, আমার বর্তমানের প্রিয়া। তুমি কেনো দাঁড়ালে আবার ? কেনো আগুনের মধ্য থেকে বলে উঠলে:দাঁড়কাক। ভালবেসেছিলামতো তোমায়। ভালবাসিতো। এটুকু শুনবে তুমি ? খুশি হবে জেনে ? ভাল লাগবে তোমার ! খুব কষ্টে আছি । ভেঙে পড়ছি ক্ষণে ক্ষণে । খুশি হবে ? দুচোখ ভরে দেখবে: কোন এক অবহেলিত নক্ষত্রের অকাল পতন ! আমি চাই তুমি সুখে থাকো । তোমার চোখের কোণে খেলা করুক তোমার আঙিনার সব ক’টি প্রজাপতি। সকালে বিকালে তোমার ঘ্রাণে শুকে পবিত্র হোক ধর্ষণ আর রাহাজানির শিক্ষাঙ্গণ। স্নেহ, করুণা আর প্রেমের দেবীর কাছে প্রার্থণা আমার: পৃথিবীর সব সাপ আশ্রয় নিক তোমার কোলে । ওরা স্নেহ বঞ্চিত । ওরা ভালবাসা চায়, স্নেহ চায়, করুণার খোঁজে ওরা ফুসফুস করে। ওরা অভিশপ্ত । ওদের জিহ্বা মানুষের ঘৃণার বিষে ভরপুর। ভালবাসা, বিশ্বাস আর একটু উষ্ণতা ওদের কাম্য ।
বন্ধু আমার, ব্যস্ততা নেইতো ! বিশ্বায়নের যুগে সময়ের খুব অভাব মানুষের । টাকায় সব মেলে। কেজি দরে মানুষের মাংশ মেলে। শুনেছি, ঘণ্টা দরে মানুষও কিনতে পাওয়া যায় । ভাড়া করা যায় শিল্পী, অধ্যাপক, নারী, পুরুষ বা সন্ত্রাসী । কিন্তু সময় ইস্যুতে সম্প্রদান কারকের ব্যবহার বিষয়ক আলোচনায় সবাই নারাজ । সবাই ব্যস্ত। ভীষণ ব্যস্ত। কী নিয়ে ব্যস্ত, তা কেউ জানে না। সবাই অসন্তুষ্ট । কেউ ঘরে, কেউ বাইরে। সবাই অস্থির। সবাই ভণ্ড এবং বদমাশ। বিশুদ্ধ কেবল আগুন। এজন্যই প্রেমের হাল আমলের ধ্রুপদী নাম আগুন। ও জ্বালায়। এখানেই কেবল বাণিজ্য নেই, কেবল পোড়ার সুখ আছে, বিশুদ্ধ হওয়ার তাড়না আছে, জীবনানন্দ আছে। আমি বিশুদ্ধ হতে চাই-আমি প্রেমিক হতে চাই।
তুমি জানো, বিদায় শব্দে কেঁপে উঠি আমি। ভয় হয় আমার। হারানোর ভয়, ধ্বংসের ভয়, কষ্ট আর যন্ত্রনার ভয়। তুমি জানো, ‘পাঁচ মিনিট নয়’, আমার পছন্দ ‘সারা জীবন’, যুগ নয় যুগযুগান্তর । প্রেমের জন্য আমি বিশ্বাস করি জন্মজন্মান্তর।
আশির্বাদ চেয়েছো তুমি । কি দেবো তোমায় ! পূণ্যের পুঁজিতো নেই আমার। কেউ বেচবে হৃদয়ের দামে ? ...... .সব ভাগাভাগি হয়ে গেছে। প্রেমের পুঁজি পুড়ে পুড়ে হয়ে গেছে বিশুদ্ধতম ঘৃণা । নেবে তুমি ? দেবে কোন উপহার ! নাহ, সোনা দানা, শরীর মন কিচ্ছু চাই না আমার। যদি গড়ি মন্দির কোন, যদি শারদ সকালে আহ্বান করি, যদি ডাকি দেবী বলে, আসবে ? দাঁড়াবে উঠানে ! সোনার পিঁড়ি নেই, ভালবেসে চৌকি দেবো, বসবে ?
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:০৭