উত্তাল পদ্মার বুকে সেতু হয়েছে। যাতায়াত সহজ হবে, অর্থনীতি প্রবৃত্তি বৃদ্ধি, জিডিপি বৃদ্ধি, নির্মানকালী নানা ধরণের প্রযুক্তির ব্যবহার, বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে। পত্রিকার প্রকাশিত সংবাদে আর সামাজিক যোগাযোগের আলোচনায় এটি প্রতিষ্ঠিত যে পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতু নয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা বিবেচনায় একটি এ অঞ্চলের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বেশকিছু সংবাদ পড়ছিলাম গত কয়েকদিন সংবাদ মাধ্যমগুলোর পদ্মা সেতু নিয়ে প্রকাশিত সংবাদে এ সেতু নিয়ে বেশ কিছুটা চিন্তিত।
কারণ এদেশে সেতু মানেই নদীর বুকে চর, নদীর স্বাভাবিক গতি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়া। এখন পর্যন্ত এ দেশে একটি সেতুর উদাহরণ দেওয়া যাবে না যা নদীবান্ধব হয়েছে বা নদীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সবগুলো প্রকল্প নদীর গলা চেপে ধরতে চেয়েছে।
পদ্মা সেতু বানাতে একটা খরস্রোতা নদীকে বাগে আনতে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ আলোচনা যেভাবে শুরু করেছিলেন পত্রিকাগুলোতে তাতে কিছু বক্তব্য পড়ে পদ্মার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। নিমার্ণের সাথে জড়িত কেউ বলছেন ভাল শাসন করেছি, জেদি চেপেছে, জেদ থেকে ..... করেছি। এ বাক্যগুলো পদ্মার সাথে যায় না। কারণ পদ্মার শুধু ভাঙ্গতে জানে না। পদ্মা আর্শিবাদ। পদ্মা এ দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ পানির অন্যতম জোগানদাতা, দেশের কৃষি, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, মৎস সম্পদ, লবণাক্তা বৃদ্ধিরোধ, মরুকরণ থেকে রক্ষায় পদ্মা ভূমিকা মাথায় নিয়ে পদ্মার আলোচনা করা প্রয়োজন ছিল।
পদ্মা সেতু নিয়ে এত এত আলোচনার মাঝে এ প্রকল্প নিয়ে পরিবেশগত সমীক্ষা নিয়ে পত্রিকাগুলোতে তেমন আলোচনা নেই। কিন্তু এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পদ্মা সেতু থেকেও এ অঞ্চলে পদ্মার গুরুত্ব অনেক বেশি। পদ্মা সেতুর হাজার বিকল্প আছে বা থাকতে পারত। যে কারণে মানুষকে ঢাকা মুখী হতে হয় তা দক্ষিণ অঞ্চলে সহজেই নিয়ে যাওয়া যায়।
এ সেতুর বিপরীতে অন্য কি বিকল্প ছিল তা নিয়ে তেমন কন আলোচনা হয়নি। যতটা বলা হচ্ছে যে দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। কিসে পরিবর্তণ ঢাকা কেন্দ্রিক সব গন্তব্যই কি ভাগ্য পরিবর্তন ।
এটি স্পষ্ট সেতু কি আবারও ঢাকা কেন্দ্রিক উন্নয়নকেই প্রাধান্য দিয়েছে। পদ্মা সেতু টাকা দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে বিনিয়োগ করলে হাজারগুণ বেশি অর্থনীতির অগ্রগতি সম্ভব হত। উন্নয়নের বিকেন্দ্রিকরণ হত। পরিবেশ ও নদীবান্ধব উন্নয়ন হত।
কিন্তু এ আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন। এ দেশের নদীর ভূমিকা শুধু কাগজে বা মুখে বলেই হবে না। ভৌগলিক কারণে নদীর অস্তিত কোনভাবে মুছে দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের উন্নয়নবাদের তত্ত্ব ও প্রযুক্তিজ্ঞানে নেই এটা মনে রাখতে হবে। পদ্মার স্বাভাবিক প্রবাহ বাধা দিয়ে এ উপর বিরুপ প্রভাব আগামীতে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলসহ সারাদেশে কি প্রভাব ফেলে তা দেখার বিষয়।
সেই প্রভাবে আজকের অনেক অর্জন হয়তো তখন বিস্বাদ হবে। আমাদের যদি ব্যাপক আলোচনার সুযোগ থাকতো তাহলে হয়তো আমরা সিদ্ধান্ত নিতেই পারতাম যে সেতু চাই নাকি দক্ষিণ অঞ্চলে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ চাই।
আলোচনা শুরুর জন্য আজকের দিনটা মন্দ নয়। কারণ সেতু আরো হবে। সব সেতুর গন্তব্য তো ঢাকায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৫:৫৫