কথন ১:
প্রয়োজনের সাথে ইচ্ছাময়ী কিছু যোগসাজশ ব্যপার থাকে।
যেমন আমার স্যান্ডেল পুরাতন হয়ে গেছে, পায়ের পাতা চাইছে নতুন স্যান্ডেল।
কিন্তু আমার ইচ্ছামত বিপরীত কাজ করছে।
আমার ইচ্ছাময় জগত বিচিত্র, বরারর ইচ্ছের বিরুদ্ধতা করা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই যে ইচ্ছের সাথে দ্বিমুখী ভাবনা আমার, এটাও কিন্তু ইচ্ছের বিপরিতেই করছি আমি।
প্রয়োজনের তাগিদ না হলে ইচ্ছে পুরন না হওয়াই ভালো।
পায়ের পাতার ইচ্ছাই মেনে নিব আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধমতাবলম্বী থেকে প্রয়োজনের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থিত করে।
এরকম বেশ কিছু বিষয় আছে যেখানে প্রয়োজন এর কাছে হার মেনে নিতে হয়।
আজকাল মোবাইল যন্ত্র আমার যন্ত্রণার কারণ হয়ে গেছে।
হঠাৎ মনে হচ্ছে এটা আমার ইচ্ছের অমতে প্রয়োজনীয় ছাড়া আর কিছু না।
তবে কিছু কিছু জিনিষ ইচ্ছের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছি।
মাথা ব্যথার ভালো একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো যেতে পারে,
কিন্তু প্রয়োজনবোধ করছি না।
প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করলে ঘণ্টা খানিক সাওয়ার নিচে মাথা রেখে একটা নাপা এক্সট্রা খেয়ে ঘর অন্ধকার করে শুয়ে থাকাটা মন্দ লাগে না।
এসময় ব্যথাটা নেশার মতো লাগে ব্যথার অসস্থীভাব কাটতে থাকে তখন অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে।
আর ব্যথা তীব্রগম্ভীর হলে তিন চার বমি তারপর আশ্চর্যজনক ব্যথা উধাও!
গতরাতে আমার প্রয়োজন অধিক মাত্রা অতিরিক্ত ঘুম হয়েছে।
এই মাত্রাতীত ঘুম সেও ইচ্ছের বিপরীতা।
এরকম মাঝেমধ্যে হয় দেখা যায় অফিস ফিরে সন্ধ্যা আমি শুয়েছি তো জেগে দেখি সকাল।
দীর্ঘ কয়েকরাত নির্ঘুম হলে মানব শরীর ঘুম প্রয়োজন অনুভব করে, তখন ইচ্ছে উহ্যমান।
বিগত রাতের এই দীর্ঘ ঘুমের পর মাথা ব্যথার কারণ একটা রহস্য আমার কাছে।
তীব্র মাথা ব্যথা সহনশীল অবস্থায় অফিস শেষ করে ইচ্ছাময় ইচ্ছে পুরন করব ভেবে দ্রুত বাসায় এসে দরজা জানালা বন্ধ ঘর অন্ধকারময় করে ব্যথার সাথে ভাব জমবে আজ।
কিন্তু হঠাৎ প্রয়োজনীয় যন্ত্রের যান্ত্রিক রিংটোন এর যন্ত্রণা,
হ্যাঁ নানা বল, কেমন আছো?
আমি ভালো আছি, ঢাকা এসেছিলাম কাজে।ভাবছি তোর সাথে দেখা করে যাই। তুই কোথায়? আমি তোর বাসা চিনি না, ভালো হয় তুই এয়ারপোর্ট এসে আমাকে নিয়ে যা।
আচ্ছা কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর আমি আসছি।
নানার সাথে দেখা করার ইচ্ছে তীব্রতর নয়, তবু যাচ্ছি প্রয়োজনবোধ করছি।
অনেকদিন আপনজন দেখিনা,জমিয়ে গল্পগুজব হয়না।
নানার সাথে আজ আড্ডা হবে।
নানা এখন ঘুমাচ্ছে।খুব জমিয়ে গল্প হল।
অনেক গল্পগুজব, সে কথা পরের লেখায় লিখবো।
ফোনের বাটন চেপে টাইপ করতে বিরক্তিকর অসস্থীবোধ কাজ করছে।
এখন মস্তিষ্কে মাকড়শারজাল খেলা করছে।
এই মাকড়শা বেশকিছুদিন হয় আমার প্রাত্যহিক দৈনন্দিন জীবনে অবিচ্ছেদ্য অংশ।
মস্তিষ্কে অবিরত জাল বুনে যাচ্ছে।
...(চলবে)
June 25, 2015 at 2:50am
কথন ২:
সকালে নানাকে বাসায় রেখে অফিসে চলে আসলাম।
জানি একা একা ভীষণ বিরক্ত হবেন।
ঘুম ভেংগে দেখলাম সেল্ফ থেকে বই বের করে পড়া শুরু করছেন।
এসব বই পড়ে বিরক্ত আরও খানিকটা বেড়ে যাওয়ার কথা, কেননা কবিতার বই ই বেশি এখনে।
গতকাল কবি কবিতা নিয়ে নানাকে এমনিতেই বিরক্ত করেছি, রেগেও আছে আমার উপর ভীষণ।
গতকাল যখন নানাকে আনতে গেলাম এয়ারপোর্ট রোড এ তখন প্রায় ইফতারের সময় হয়ে গেছে।
- নানা, চল বাসায় যাই ইফতার শেষে কথা হবে, এখন সময় নেই দ্রুত যেতে হবে না হলে রাস্তায় ইফতারের সময় হয়ে যাবে।
- রোজা রাখছিস! নিশ্চয় না। তবে তুই এতো ব্যস্ত কেন? তাছাড়া বাসায় ইফতারি করিস কেন?
- ঊফফ!! নানা ব্যস্ততা আমাকে নিয়ে না।তোমার তো ইফতার করতে হবে নাকি! আর বাসায় ইফতারি করার বড় উদ্দেশ্য আমার বোয়া রোজা রাখে, আমি ব্যবস্থা না করলে সে কোথায় ইফতার করবে? রাতে তো আমার এখানেই আসে রান্না করতে।
আচ্ছা চল বাসায় গিয়েই কথা হবে।
রাস্তায় আরও অনেক কথা হল আমাদের মাঝে,নানা আমার উপর মোটামুটি বিরক্ত।
আমি ইচ্ছে করেই আরও উনার বিরক্তি বাড়িয়ে দিচ্ছি কথায় কথায়।
- নামাজ পরিস না তবে দাড়ি কাটিস না কেন? খোঁচা খোঁচা দাড়ি রেখেছিস।
- নানা, আমি কবি মানুষ কিন্তু কবিতা লিখতে পারছি না আজকাল তাই দাড়ি রেখে চেহেরায় কবি কবি ভাব আনার চেষ্টা করছি।
- তুই লিখিস কবিতা!!! তা কে কোথায় ছাপে সে সব! শুনি।
- কে ছাপবে, আমার কবিতা আমিই ছাপি ফেসবুকে। এখানে আমার বেশ কয়েকজন ভক্ত আছে যারা আমার কবিতার ভীষন ভক্ত। সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা ঝাড়ুদারনিদের একজন মহিলা সুপারভাইজার আমার কবিতার ভীষণ সুনাম করে। এছাড়া মাকড়শাও আছে যে কবি কবিতা দুটারই পাগল।
- তুই কি চাকরি ছেড়ে দিয়ে এসব পাগলামি করে বেড়াচ্ছিস?
- না এখনও ছাড়িনি, তবে টাকার ব্যবস্থা হলে ছেড়ে দিব।
- কে দিবে টাকা তোকে? আর টাকা দিয়ে কি করবি চাকরি ছেড়ে বসে বসে খেলে টাকা কতদিন থাকবে?
- তুমি দিবে টাকা।টাকা ব্যাংক এ রেখে দিব।
- আমি কোথায় পাবো টাকা।
- মা সেদিন বলল তুমি নাকি ফাউ ফাউ আজাইরা বেশ কিছু সম্পতি পেয়েছ তোমার বড় ভাই মারা যাওয়ার পর, তিনি নিঃসন্তান থাকায় পেয়েছ। সখিপুর এ চালা(গজারি বন) পেয়েছ, সেটা আমাকে দিয়ে দাও। তোমার তো আর বেশিদিন নাই ভবের দুনিয়াদারি শেষ।
- বিয়ে কর তখন দেখা যাবে। এখন টাকা দিয়ে কি করবি।
- আমি কি তোমার মতো নাকি বিয়ের পর টাকা চাই, আমার আগেই লাগবে। নানী কেমন আছে? নানী কে যে লোভে বিয়ে করেছিলে তার কিছুই তো পেলে না, এখনও কি আফসোস কর??
- কিসের আফসোস?
(অনেক অনেক দিন আগের কথা-
নতুব আলি ছিলেন অগাদ সম্পদের মালিক।তার বাবা মুন্সি আলির একমাত্র সন্তান ছিলেন বলেই বাবার সব সম্পদ এখন তার।
তার জমির পরিমান ছিল ৫২ খাদা। হিসেবটা সহজ করে বললে ১ খাদা মানে ১৬ পাখি, ১ পাখি মানে ৭২ শতাংশ।
অর্থাৎ ৫৯,৯০৪ শতাংশ।
নতুব আলির ছিল চার মেয়ে-
১। হরাতন বিবি
২। চিরাতন বিবি
৩। রুইতন বিবি
৪। ইসকা বিবি।
নতুব আলির মৃত্যুর পর তার চার মেয়ে সমান ভাগে সম্পত্তি পায়।
এদিকে হরাতন বিবির ছিল পাঁচ ছেলে তিন মেয়ে।
হরাতন বিবির তার ভাগের সব সম্পদ পাঁচ ছেলেদের দিয়ে যান মৃত্যুর আগেই।
বাকি তিন মেয়ের মাঝে বড় মেয়ের নাম রেনু বেগম। এখনও রেনু বেগম আফসোস করেন শুধু সম্পদ না পাওয়ার জন্যই না, সেই সমাজে মেয়েরা অবহেলিত ছিল এটা বলে।
রেনু বেগমের স্বামীর মুখেই শুনেছিলাম এই গল্প, আর তখনই বুঝেছিলাম তার স্বামীর সম্পদ না পাওয়ার হাহাকার)
- তোর সাথে দেখা করতে আসাই হচ্ছে মস্ত ভুল। শুধু সম্পতির লোভই যদি থাকতো তবে দীর্ঘ এতগুলা বছর তোর নানীর সাথে কাটালাম কি করে। তাছাড়া তোর নানী ছিল রুপবতি, তার রুপ দেখেই তাকে বিয়ে করেছিলাম।
- আচ্ছা হল বাদ দিলাম এসব কথা, এবার বল রাতে কি খাবে? মাছ আছে মুরগী আছে। তুমিতো ফার্মের মুরগী খাওনা। তবে মাছই রান্না হোক।
- গরুর গোসত নাই?
- না নেই। কাল থাকো, আগামীকাল রান্না করবো গরু।
এরকম কথায় কথায় রাড়তে থাকে, নানাও ঘুমিয়ে গেল।
আমি ফিরে গেলাম মাকড়শার ভাবনায়।
দিনরাত ক্রমশ মাকড়শারজাল এ নিজেকে যেন ইচ্ছে করেই জড়িয়ে যাচ্ছি।
মস্তিষ্কের অর্ধেক মাকড়শার দখলে।
মায়াজাল এড়িয়ে মাকড়শারজাল একদিক থেকে মন্দ না।
মায়াজাল খারাপ জিনিষ, এর চেয়ে মাকড়শা ঢের ভালো।
ভাবানাগুলি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, ক্লান্তিজনিত কারনে বিবশ হয়ে যাই আজকাল খুব সহজে।
কথায় কথায় রাগ, মেজাজি ভাব চলে আসে অজান্তে।
এসব থেকে মুক্তির একটাই পথ কিছুদিন নিজেকে গুটিয়ে রাখা।
পিঁপড়ার মতো মাস কতেক আপন গর্তে থাকা
মোবাইলবিহীন থাকতে পারলে বেশ হত।
কিন্তু নিতান্তই অফিসের জটিলতার কারনে সম্ভব হচ্ছে না।
....(চলবে)
June 26, 2015 at 12:32am
কথন ৩:
নানা চলে গেছেন...
বেশ হাসি গল্পে কেটেছে কিছুদিন। তারপর সেই একঘেয়ে ৯টা ৫টা।
রাত এলেই নিজেক ফিরে পাই কিন্তু আজকাল রাতও কেন যে একঘেয়েমি লাগে।
নির্ঘুম থাকি আগের মতোই তবু অচেনা মনে হয় রাত।
কথা বলি না নিজের সাথে, রাতের সাথে।
ব্যক্তিগত গল্প ঘরে অব্যক্ত কিছু ব্যথা-কথা থাকে যা একটা সময় আর বন্দি থাকতে চায় না।
এসব কথা উড়িয়ে দিতে হয় অসীম আকাশে।
আমার এরকম আকাশ নেই,
রক্তের আপনজনেরা কেন জানি আকাশ হতে পারে না, এরা হয়ে উঠে বট গাছ।
যার ছায়াতলে সাময়িক জিরিয়ে নেওয়ার থাকে, খানিকবাদেই আবার সেই ক্লান্তিহীন অব্যক্ত কথার পাহাড় মগজে চেপে ছুটে চলা।
নানা হঠাৎ আসাতে কিছুটা ক্লান্তি জিরিয়ে নিতে পেরেছি।
একটা সময় ফেসবুকেই পেয়েছিলাম ভার্চুয়াল আকাশ, এখানেই অব্যাক্ত কিছু কথা নিংড়ন হতো।
কিন্তু সেইসব প্রিয়জনদের সেই আকাশকে স্মৃতির ফুলস্টপে সেলাই করেছি অনেক আগেই।
ফেরেস্তার মুখোশে লুকিয়ে থাকা গোপন কসাই যদি আচমকা ছুরিকাঘাত করে হৃদপিন্ডে!
আমি ততোটা আঘাত পাই না যতোটা আঘাত পাই আত্ম-অপমানে!!!
আজ বহুদিন পরে ব্যক্তিগত গল্প ঘরে থেকে কিসের যেন ব্যথিত কান্না শব্দ হয়ে বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে!
যে মন স্বেচ্ছায় বাধা পরে আছে মাকড়শার মায়াজালে,
এবেলায় সে মাকড়শার সাথে মীমাংসিত সন্ধিতেই হেঁটে যেতে যায় কিছুটা পথ........
(চলবে)
July 1, 2015 at 1:58am
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:৪৫