স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে তৎকালীন পূর্ববাংলায় যে কয়জন বাঙ্গালী প্রতিভাবান ক্রিকেটার ছিলেন তার মধ্যে আব্দুল হালিম ছিলেন অন্যতম। ডাকনাম তার জুয়েল।
পূর্ববাংলার আজাদ বয়েজ ক্লাবের হয়ে ওপেনিং করতো জুয়েল। ব্যাট হাতে যখন মাঠে নামতো তখন মনে হতো তার জন্মই হয়েছে প্রতিপক্ষ বোলারদের শাসন করার জন্য। স্লগ সুইপ ছিল তার ফেবারিট শট। খুব অল্প দিনেই সুনাম অর্জন করেছিলেন তিনি।
১৯৬৯ সালে তখনকার পাকিস্তানি ওপেনারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণে প্রথমবারের মত তিনি ডাক পেয়েছিলেন পাকিস্তানের টেস্ট দলে। কিন্তু পাকিদের বৈষম্যের কারণে মুল একাদশে জায়গা হয়নি তার। কারণ রাজনৈতিকভাবে পাকিদের কড়া নির্দেশ ছিল যাতে কোন বাঙ্গালী তাদের অভিজাত টিমে খেলতে না পারে। এবং বাঙ্গালী মাত্রই একথা তখন সকলের জানা ছিল। জুয়েল লাথি মেরে দেশে ফিরে আসেন, এবং স্বাধীন বাংলার হয়ে ওপেনিং এ নামার স্বপ্ন দেখতে থাকেন।
৭১ এর ২৫শে মার্চ পাকি হানাদাররা তার প্রিয় বন্ধু মুশতাককে নির্মমভাবে হত্যা করলে তিনি যুদ্ধে যাবার শপথ নেন। মায়ের বাধা থাকা সত্তেও যুদ্ধে যোগ দেবার উদ্দেশ্যে তিনি ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে পরেন।
প্রথমে ট্রেনিং নেন, এরপর তিনি রুমি, বদিদের ক্রাক প্লাটুনে অন্তর্ভুক্ত হন। ফার্মগেট, এলিফেন্ট রোড, যাত্রাবাড়ি পাওয়ার ষ্টেশন উড়িয়ে দেয়ায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া ব্রাহ্মনবাড়িয়া, আশুগঞ্জ পাওয়ার ষ্টেশনেও তিনি বীরত্তের সাথে যুদ্ধ করেন।
কিন্তু আশুগঞ্জে অপারেশনের সময় গ্রেনেড বিস্ফোরণে তার ডান হাতের আঙ্গুলগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরবর্তীতে তিনি তার বোনকে বলেন-
“ দেশ স্বাধীন হলে আমি আবার ক্রিকেট খেলতে পারব তো??”
তার এ উক্তিটি প্রমাণ করে ক্রিকেটকে তিনি কতটা ভালবাসতেন।
১৯ অগাস্ট সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার ষ্টেশনে অপারেশনের সময় তিনি আহত হলে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় চিকিৎসার জন্যে। চিকিৎসা চলাকালে ২৯শে অগাস্ট তিনি মগবাজার থেকে স্থানীয় রাজাকারের সহায়তায় পাক-হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পরেন। প্রচণ্ড রকমের পাশবিক অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করেও তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কোন তথ্য ফাঁস করেননি।
ক্রিকেট খেলতে তিনি খুব পছন্দ করতেন। তাই পাকি শুওরেরা তার হাতের আঙ্গুল কেটে দেয়, যাতে জুয়েল আর কখনো ব্যাট ধরতে না পারে।
৩১ অগাস্টের পর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় ৩১ অগাস্ট রাতেই তাকে হত্যা করা হয়। এভাবেই বাংলার বীর সন্তান স্বাধীন বাংলায় ওপেনিং করার স্বপ্নকে বিসর্জন দিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন।
স্বাধীন দেশের মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে জুয়েলের স্মরণে একটি গ্যালারির নাম রাখা হয় “শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ড”। খুব বড় করে লিখা ছিল ।
গতকাল মিরপুর স্টেডিয়ামে গিয়েছিলাম। শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ডটা খুজছিলাম কিন্তু কোথাও আগের সেই বড় লিখাটা দেখলাম না। স্পন্সরদের মোড়কের নিচ থেকে তার নামটা ওপরে তুলে ধরার সময় কোথায়...?? কিংবা হয়ত তার নামটাই মুছে ফেলা হয়েছে... দেশ তো এখন স্বাধীন, এখন এদের মনে করে কি লাভ.........