somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'৭১ এর ঘাতক-দালাল : বাহিনী পরিচিতি ১- রাজাকার

১০ ই জুন, ২০০৭ রাত ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজাকার বাহিনী ও রাজাকারদের সংগঠন করেছিল তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। জেনারেল টিক্কা খান ১৯৭১ সালের জুন মাসে রাজাকার অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন। পূর্বতন আনসার, মুজাহিদদের নিয়ে প্রাথমিকভাবে এ দল গঠিত হয়। কিন্তু পরে বিভিন্ন শ্রেণীর পাকিস্তানপন্থীরা এই বাহিনীতে যোগ দেয়। এরা ছিল সশস্ত্র। হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবেই তারা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়েছে। জেনারেল নিয়াজী এক সাক্ষাৎকারে আমাকে বলেছিলেন যে, রাজাকার বাহিনীর তিনিই স্রষ্টা। তারা যথেষ্ট খেদমত করেছে পাকিস্তানী বাহিনীকে, যে কারণে তার বইটি তিনি তাদের উদ্দেশ্যেই উৎসর্গ করেছেন।

রাজাকারের শুদ্ধ উচ্চারণ 'রেজাকার'- ফারসি শব্দ। 'রেজা' হল স্বেচ্ছাসেবী, 'কার' অর্থ কর্মী। এক কথায় স্বেচ্ছাসেবী। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় হায়দরাবাদের নিজাম অনিচ্ছুক ছিলেন ভারতের সঙ্গে মিলনে। আত্মরক্ষার জন্য তিনি গঠন করেছিলেন একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী যার নাম দেওয়া হয়েছিল রেজাকার বাহিনী।

মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত নেতা এ.কে.এম ইউসুফ শব্দটি ধার করেন এবং খুলনায় রেজাকার বাহিনীর সূত্রপাত করেন। 'একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়' গ্রন্থের তথ্যানুযায়ী, ৯৬ জন জামায়াত কর্মী নিয়ে এই বাহিনীর সূত্রপাত যা পরে পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে পরে। পুর্বোক্ত গ্রন্থ অনুযায়ী- 'প্রশাসনিকভাবে এই বাহিনীতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেনীর লোক অন্তর্ভুক্ত হলেও তাদেরকে তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে। প্রথমত, যারা 'পাকিস্তান' ও ইসলামকে রক্ষার জন্য বাঙালীর হত্যা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধ করাকে কর্তব্য মনে করেছিল; দ্বিতীয়ত, যারা লুটপাট, প্রতিশোধ গ্রহণ, নারী নির্যাতন করার একটি সুযোগ গ্রহণ করতে চেয়েছিল এবং তৃতীয়ত, গ্রামের দরিদ্র অশিক্ষিত জনগণ যারা সীমান্তের ওপারে চলে যেতে ব্যর্থ হয়- এ ধরণের লোককে প্রলুব্ধকরণ, বল প্রয়োগ বা ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে রাজাকার বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।'

রাজাকার বাহিনী যাদের নিয়েই গঠিত করা হোক না কেন, এই বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করত জামায়াতে ইসলামী। আবু সাইয়িদ তার 'সাধারণ ঘোষণার প্রেক্ষিত ও গোলাম আজম' গ্রন্থে জনৈক রাজাকারের পরিচয় পত্র তুলে দিয়েছেন যেখানে তার প্রমাণ পাওয়া যাবে-
" this is to certify that Mr. Haroon-ur-Rashid Khan, S/o Abdul Azim Khan, 36 Purana Paltan Lane, Dacca-2 is our active worker. He is true pakistani and dependable. He is trained Razaker. He has been issued a Rifle No-776... with ten round ammunition for self-protection.

Sd/-illegible
IN CHARGE
RAZAKAR AND MUZAHID
JAMAT-E-ISLAM
91/92 Siddique Bazar, Dacca"


রাজাকারদের বিভিন্ন স্থাপনা পাহারা দেওয়া, মুক্তিবাহিনীর খোঁজ করা প্রভৃতি কাজে ব্যবহার করা হতো। বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে এরাই ছড়িয়ে পড়েছিল। সে কারণে, বাঙালীদের কাছে রাজাকার শব্দটি বেশি পরিচিত হয়ে ওঠে।

বর্তমানে বাংলাদেশে মোটাদাগে স্বাধীনতাবিরোধীদেরই রাজাকার নামে অভিহীত করা হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যারা ছিলেন তারা রাজকার ও তাদের কার্যকলাপের সঙ্গে সবাই পরিচিত। জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে 'ঘাতক দালাল নির্মূল' আন্দোলন শুরু হলে রাজাকার নামটি আরো পরিচিত হয়ে সাধারণ ভাষ্যে চলে আসে। হুমায়ুন আহমেদের একটি নাটকের সংলাপ ছিল 'তুই রাজাকার'। এসব কারণে স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তি, সে আলবদরই হোক বা দালালই হোক, পরিচিত হয়ে ওঠে রাজাকার হিসেবে। জামায়াত ইসলাম, বাংলাদেশের প্রাক্তন আমীর গোলাম আযম বলেছেন, তারা 'রাজাকার' ছিলেন না, ছিলেন 'রেজাকার'। হতে পারে রেজাকার শুদ্ধ, কিন্তু মানুষের কাছে অশুদ্ধ রাজাকারই পরিচিত।
সূত্র : ডঃ মুনতাসীর মামুন (মুক্তিযুদ্ধ কোষ চতুর্থ খণ্ড)

রাজাকার হাইকমাণ্ড

এ.এস.এম সামছুল আরেফিন সম্পাদিত মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান বই থেকে যোগ করছি :
১৯৭১ সালের মে মাসে মওলানা এ.কে.এম ইউসুফের নেতৃত্বে ৯৬ জন জামাত কর্মী নিয়ে খুলনায় আনসার ক্যাম্পে প্রথম এই বাহিনী গঠিত হয়। মওলানা একেএম ইউসুফ এই বাহিনীর নামকরণ করেন রাজাকার। জুন মাসের সরকারী অধ্যাদেশে এই নাম রাষ্ট্রীয়ভাবে গ্রহণ করা হয়। ইসলামী ছাত্র সংঘের প্রধান মোঃ ইউসুফকে রাজাকার বাহিনীর সর্বাধিনায়ক করা হয়। প্রাথমিক অবস্থায় ১০টি জেলায় ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতাদের রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্বে দেওয়া হয়। অ্যাডজুটেন্ট বা কোম্পানি কমান্ডার থেকে নিচের স্তরের সকলেই রাজাকার কমান্ডারদের নেতৃত্বে পরিচালিত হত। কিন্তু ওপরের স্তরের সকলেই ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্য। শান্তি কমিটির মাধ্যমে রাজাকারদের রিক্রুট করা হত। এই বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্যই ছিল মাদ্রাসার মোহাদ্দেস ও মোদাচ্ছের। দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দলের সদস্য ছাড়াও বহু গ্রামের যুবককেও এই বাহিনীতে ভর্তি করা হয়।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে রাজাকার বাহিনীর প্রশিক্ষণ পরিচালিত হত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের মাঠ ও ফিজিক্যাল কলেজের মাঠে মূলত রাজাকারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হত। এই বাহিনীর প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছিল দেড় সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহ। প্রশিক্ষণ শেষে রাজাকারদের হাতে ৩০৩ রাইফেল তুলে দেওয়া হত। শুধু উচ্চ স্তরের কমান্ডারদের জন্য বরাদ্দ ছিল স্টেনগান।

ছবি পরিচিতি : রাজাকারদের ট্রেনিং, রাজাকারদের শপথ নামা, রাজাকার কমাণ্ডারদের তালিকা ১, ২, ৩

মুল লিখাঃ অমি রহমান পিয়াল
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০০৭ রাত ১১:১৫
১৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এসব লুটপাটের শেষ কোথায়!

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:১৮

আধা লিটারের পানির বোতল দোকানদার কেনে সর্বোচ্চ ১২.৫০ টাকায় আর ভোক্তার কাছে বিক্রি করে ২০ টাকা। এগুলো কি ডাকাতি না?

গোপন সূত্রে যতটুকু জানা যায়,
প্রাণ ৮.৫ টাকা কেনা
ফ্রেশ ১০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চারুকলায় আগুনে পুড়ে গেল ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৪৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষের শোভাযাত্রা উদ্‌যাপনের জন্য বানানো দুটি মোটিফ আগুনে পুড়ে গেছে। এর মধ্যে একটি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও আরেকটি শান্তির পায়রা।



আজ শনিবার সকালে চারুকলা অনুষদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৬

ঘোষণাপত্র ও অঙ্গীকারনামা
March for Gaza | ঢাকা | ২০২৫

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম
আল্লাহর নামে শুরু করছি
যিনি পরাক্রমশালী, যিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী,
যিনি মজলুমের পাশে থাকেন, আর জালেমের পরিণতি নির্ধারণ করেন।

আজ আমরা, বাংলাদেশের জনতা—যারা জুলুমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডক্টর ইউনুস জনপ্রিয় হয়ে থাকলে দ্রুত নির্বাচনে সমস্যা কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪১



অনেকেই ডক্টর ইউনুসের পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার কথা বলছেন। এর জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় নির্বাচন। আদালত যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বহাল করেছে সেহেতু ডক্টর ইউনুস তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডিসেম্বরে নির্বাচন : সংস্কার কাজ এগিয়ে আনার পরামর্শ প্রধান উপদেষ্টার

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪৯


ড. ইউনূস সাহবে কে বুঝি পাঁচবছর আর রাখা যাচ্ছে না। আজ বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সাথে মত-বিনিময়ের সময় ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন কে সামনে রেখে তিনি দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কারের এগিয়ে আনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×