শব্দের সোনারু
মাদল হাসান
আমরা শব্দের সোনারু। সোনারুর সোনা কিনতে লাভ, বেচতে লাভ। কিন্তু শব্দের সোনারুর কিনতে লস, বেচতেও লস। কারণ বিগত-আগত-সমাগত কবিদের কাব্যগ্রন্থ কিনতে হয় গাঁটের পয়সায়। কিন্তু বেচতে গেলে গ্রাহক নাই। তাই তরুণ কবিদের গাঁটের পয়সা খরচ করে কাব্যগ্রন্থ বিইয়ে তা বিমাতার বাৎসল্যহীনতায় বিলাতে হয়।
সোনা চোরাচালানের রুট বাংলাদেশ। তাই ভারতে সোনার দাম বেশি। তাই বাংলাদেশ থেকে ভারতে সোনা পাচার হয়ে যায়। শব্দের সোনারুরাও তেমনি। বাংলাদেশে জন্ম নেয়া সোনার কবিরা পাচার হয়েছে, ভারতে, পশ্চিমবঙ্গে। বর্তমানে পাচার বন্ধ বলে সেখানে আর বড় কারিগর নাই। আমরা খুলেছি বড় কারিগর বানাবার বিদ্যালয়। সোনার বাংলার সোনার দোকান। ভবিষ্যতে সাগরিদ ভারত থেকে পাচার হয়ে আসবে আমাদের আখড়ায়। তাদের হেদায়েতের দায়িত্বও আমাদের।
আজকাল সোনার দাম বাড়তি। তাই ব্যবসা কম। তবু আজও মানুষকে সোনা দিয়ে সোনা কিনতে হয়। তাই সোনারুরাও সদম্ভে আছে। সাহিত্য সম্পাদকেরা মহাজনের মতো কয়Ñ ‘কী সরকার মশায়, কাজ কদ্দুর?’ আমরা সোনারুরা সন্দিগ্ধ স্বরে কইÑ ‘ সোনাইতো গালানো হয় নাই’।
লিটল ম্যাগাজিনের মহাজনেরা আরও বেশি তাড়া দেয়। কিন্তু মুজুরি নাই। তাই ছিলাকাজে মন বসে না। তবু লিটলম্যাগাজিনের মহাজনেরাই সহোদর। আর দৈনিকের সাহিত্য সম্পাদকেরা বৈমাত্রেয় ভাই। কারণ তাঁরা তাদের মনমতো গহনা চায়। চোদ্দ আনার গহনার কাজ ষোল আনা বা এক ভরিতে করে দিলে দারুণ বেজার। তাঁরা ত্যাঁদর পোলাপানের মতো প্যাংছা করে। ‘কলা অতো ছুললে কেন, বুজায়া দেও’। কিন্তু গহনা বানাতে গেলে, শেপ দিতে গেলে ঊনিশ-বিশ হয়। কিন্তু তাদের পাই-পাই শব্দের হিসাব। কারণ, গহনার জন্য তাদের বাক্সগুলো সুনির্দিষ্ট। মাপা। পোষমানা প্রাণ। পোষমান প্রাণ ভোমরাই সেখানে রাখা যায়। খাপে খাপে না মিললে সেই গহনা যত নিখাদ, দৃষ্টিনন্দনই হোক না কেন, তা ত্যক্ত। কারণ সোনা কখনো পরিত্যক্ত হয় না। সত্যমূল্যের সোনা জহুরির নজর কাড়ে। পাঠকের কষ্টি পাথরে তা পূজ্য। আমরা শব্দের সোনারুরা সবাই জানি; সোনায় (শোনায়) কিছুটা খাদ না মেশালে গহনা সুন্দর হয় না। কেউ খাদ বেশি দেয়। কেউ কম। আমরা শোনা কথায়, শোনা সত্যে( সোনাসত্যে) পরিমাণ মতো খাদ মিশাই। রূপকেই রূপা মেশাই। মিশাই তনু তাপের তামা। কিন্তু আমরা উচ্চস্বরে ঘোষণা করি ‘আমাদের গহনা নিখাদ’। কারণ পৃথিবীতে সবসময় সত্যের জয় হয় না। মিথ্যারও জয় হয়। আমরা সত্যমিথ্যার মখমলে মুড়ে দেই গহনা।
ধীরে ধীরে শব্দের সোনারুরা হয়ে উঠি শব্দব্যবসায়ী। কারণ কেনা জানে এখন বৈশ্যদের কাল। সোনা গলানোর জন্য আমাদের নাইট্রিক এসিড কিনতে হয়। ফলে করতে হয় এসিডের লাইসেন্স। আমরা নেশাখোর বখাটে যুবকদের মতো কিশোরীর মুখে এসিড না মারলেও শব্দের এসিড নিপে করি। তাই এতো এতো কামার্ত, পরকীয়, লাম্পট্যের লালার্ত এসিড কাব্য। এসিড নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে আমরা শব্দসোনারুরা হয়ে উঠি শব্দবিজ্ঞানী। এক ভরি সোনায় আট আনা দস্তা আর সোহাগা মিশিয়ে মাটির ছোট্ট ঘড়ায় নাইট্রিক এসিড ঢালতে থাকি। সোনা আলাদা হতে থাকে। শব্দের সোহাগা দিতে থাকি। যাতে উড়ে না যায়। সোনা আলাদা হতে থাকে। একেই বলে শব্দের সোনায় সোহাগা। এইভাবে আমরা শব্দ সোনার মেদ ঝরাই এবং ডরাই না। কারণ শব্দসোনার দোকানের সোনাগালানো পানি, মেঝের ধূলা সবই সংগ্রহ করা হয়। পরে রিফাইন করে হিসাব করি আশাতীত লাভ।
শব্দবিজ্ঞানী থেকে শব্দসোনারুরা পুনরায় হয়ে উঠি বেদনার্ত বৈশ্য। কারণ বড় কবিদের (কাব্যগুণে নয়, বয়সে বড়) কাছ থেকে আমাদের ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়। গুরু ধরার মধ্যে দিয়ে আমরা দৈনিক পত্রিকার ট্রেড লাইসেন্স পেয়ে যাই। এজন্য গুরুকে গরুখোঁজা খুঁজতে হয়। এজন্য আমাদের আয়কর দিতে হয়। যা আদতে গুরুর প্রতি অর্থহীন আজীবন আনুগত্য। এবং লেখার বিল ও বইবিক্রির টাকায় সতীর্থ, অনুজ বন্ধুদের পেট ভরানো, মিসকল ব্যাক করা ইত্যাদি। ভাবি, আমাদের ডিলারশিপ থাকা দরকার। কারণ সোনারুর সোনা কিনতে হয় চোরাই পথে। কিন্তু গহণা বেচার সময় ঠিকই রশিদ দিতে হয়। আমাদের কতিপয় কুম্ভীলক সোনারু অন্যের (শোনা শব্দ) সোনাশব্দ ট্যাঁকে গুঁজে ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করতে থাকে। আর ভাবতে থাকে কিভাবে সমালোচক পুলিশ সার্জনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তা নিজের দোকানে নিয়ে আসা যায়।
গহনা তৈরি করেই শব্দ সোনারুর কাজ খতম হয় না। দিতে হয় বিক্রয়োত্তর সেবা। আমরা যতটুকু খাদ দিয়ে গহনা বানিয়েছিলাম বিক্রয়োত্তর সেবার সময় সেসব বানিয়া বন্ধুরা বলি তার চেয়ে বেশি খাদ আছে। কারণ পাঠক বা গ্রাহক ততদিনে রশিদ হারিয়ে ফেলেছে। টুঁ শব্দ করার সুযোগ নাই। বিক্রির সময় ব্যবহার করি পেশীবহুল পাথর আর বড় কুঁচ। চার আনার পাথর হয় তিন আনা। আর কচি কুঁচ রতিতে কমায়। এই আমাদের ঋতপথ, রতিপথ। কুঁচ স্পর্শ করতে করতে আমরা কুঁচবরণ কন্যার দেশে চলে যাই। আর তখনই সমালোচক ম্যাজিস্ট্রেট বাটখাড়ার উপর অভিযান চালায়। ইলেক্ট্রিক নিক্তি ব্যবহার করতে বলে রাষ্ট্র। অথচ পাবলিক চায় ভরির মাপ। ‘গ্রাম’ এসে কুঁচবরন কন্যার ‘গ্রাম’ উচ্ছেদ করতে চায়। তখন গুরু আর গ্রামসীরা গরু হারিয়ে গ্রামার খুঁজতে যায়...

আলোচিত ব্লগ
A Humanitarian Appeal for the Innocent Children of Palestine
A Humanitarian Appeal for the Innocent Children of Palestine
Dear President Donald Trump,
Every word of this letter is an outcry rising from the blood-soaked soil... ...বাকিটুকু পড়ুন
জালিম ও তাদের সেসব সহযোগীরা আজ কোথায়?
জালিম ও তাদের সেসব সহযোগীরা আজ কোথায়?
আজ বাংলাদেশের আকাশে এক নতুন সূর্য উঠেছে, যার আলোয় জালিমদের ছায়া ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে। কোথায় আজ সেই জালিমেরা, যারা একদিন নিরীহ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আপনি ইউনুস সরকারকে সফল নাকি ব্যর্থ মনে করেন?
ইউনুস সাহেব মেহমান। উনি এসেছেন স্বল্প সময়ের জন্য।
নির্বাচনের পরে উনি টাটা বায় বায় খতম। উপদেষ্টাদের থাকার নিয়ম তিন থেকে ছয় মাস। ৯০ দিনের মধ্যে তারা একটা নির্বাচন দেবেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শেখ মুজিব, জনপ্রিয় নেতা থেকে স্বৈরশাসক?
শেখ মুজিবুর রহমান এই দেশের সব থেকে জনপ্রিয় নেতা। জীবনের শুরু থেকেই তিনি কাজ করে গেছেন দেশের মানুষের জন্য। তবে জীবনের শেষ দিকে এসে তিনি এমন সব কাজ করেছে যা... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঢাকা টু দিল্লী : শেখ হাসিনার ভাগ্য ঘুরপাক খাচ্ছে রাউন্ডটেবিলে !
তিনি ছিলেন এক সময়ের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি ছিলেন সেই নারী, যিনি অফিসের চেয়ারে বসে দেশ চালাতেন আবার অফিসের বাইরেও সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমনকি বিরোধী দলের বাথরুমেও কী হচ্ছে,... ...বাকিটুকু পড়ুন