পদদলিত স্বপ্ন ও একজন আনু মুহাম্মদ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
শাহতাব সিদ্দিক অনিক, ইমরান হোসেন ইমন, নাজমুল হাসান রাহাত, আহসান উলল্গাহ, নাদিয়া সারোয়াত, আশিকুর রহমান, খালেকুর রহমান, সালাহ উদ্দিন শুভ্র, ইফফাত জাহান, একরামুল হক শিপলু, ইফতেখারুল বারী, মির্জা আতিকুর রহমান, মিলি ত্রিপুরা, উম্মে সালমা,
সামিউল ইসলাম, ইমরুল হাসান
আমাদের স্বপ্ন দেখা তবুও থামেনি। আমরা জানতাম আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন একদিন শেষ হবে, নিজেদের স্বপ্নটাকে আড়াল করে উপার্জনের জীবনে ছুটে বেড়াতে হবে। তবুও কখনও মানবিকতায়, বিদ্রোহের আঁচে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ঠিকই ফিরে আসে আমাদের কাছে। আমরা অহঙ্কার করি, গর্বের বাতাস আমাদের বুকে দোলা দেয়। আমাদের শিক্ষকদের অবহেলায় সেশনজটের পাহাড় জমা হয়েছিল তাও আমরা টপকে গিয়েছি, আমাদের শিক্ষকরা গুণ্ডাবাহিনীর সঙ্গে গলা মিলিয়ে হেঁটেছেন, আমরা দেখেছি, তাদের হাতের ইশারায় লাঠি উঠে আসত কোনো কোনো শিক্ষার্থীর হাতে, তাদের চোখে নারী হয়ে উঠত ভোগ্য। তবুও আমরা স্বপ্ন দেখা থামাইনি। কারণ আমরা জানতাম একজন আনু মুহাম্মদ আছেন_ যাকে ভালোবাসা যায়_ যার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের স্বপ্নও বেঁচে থাকে।
কোনো ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারছে না হয়রানির ভয়ে, তার ভরসা আনু মুহাম্মদ। যৌন নিপীড়নের আন্দোলন চলছে_ অনশনে আছে আন্দোলনকারীরা_ আনু স্যারই পারেন কেবল সেই অনশন ভাঙাতে। তাকে দেখিয়ে দিতে হয় না_ বলে দিতে হয় না তিনি জনতার লোক। সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক সবাই স্বস্তি পেতাম তার উপস্থিতিতে। আমাদের শিক্ষকরা যখন ভাগবাটোয়ারা আর ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত, আমাদের শিক্ষকরা যখন উপাচার্যের গুণকীর্তনে গলা মেলায়, ফন্দি আঁটে নতুন কোনো দালানের ইট-সিমেন্ট নিয়ে; তখনও আমরা আশাবাদী হই একজন আনু মুহাম্মদের সততা দেখে, তার দৃঢ়তা আমাদের শেখায়_ শক্তি জোগায়। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন_ 'বাংলাদেশে অর্থবিত্ত-দাপট-ক্ষমতাওয়ালা হিসেবে যারা পরিচিত, যারা নীতিনির্ধারণ করেন এমনকি সংস্কৃতি জগতেও যারা হোমরাচোমরা তাদের অনেককে দেখলে আমার সেই বৃদ্ধ দাসের কথাই মনে পড়ে। কী পরম যত্নে আগ্রহে এবং আনন্দে এরা দাস হিসেবে নিজেদের জাহির করে। আর যারা ভেতর থেকে দাস তারা আবার স্বাধীন মানুষ দেখলে সন্ত্রস্ত হয়, শক্তি থাকলে তাকে গুঁড়িয়ে দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু এই দাস সংস্কৃতির আধিপত্য মানুষ মানবে কেন? '
কখনওই আধিপত্য মানতে রাজি ছিলেন না আনু মুহাম্মদ। তেল-গ্যাস সম্পদ রক্ষার আন্দোলন নতুন নয়_ শুরু থেকেই এর সঙ্গে আছেন তিনি। ফুলবাড়ী থেকে বহুজাতিক কোম্পানিকে তাড়া করেছে জনতা_ তাদের সঙ্গেই ছিলেন আনু মুহাম্মদ। আমাদের জন্য প্রয়োজন যে মানুষটির, একজন বিদ্রোহীর, জনতার কাতারে দাঁড়িয়ে যিনি লড়াই করে যাবেন, সেই মানুষই হয়ে উঠেছেন আনু মুহাম্মদ। তার শরীরে আক্রোশে নেমে আসা বুটের লাথিগুলো কার? যে হাত হিংস্র হয়ে ওঠে তাকে আঘাত করতে সেই হাত কার? কার বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছেন আনু মুহাম্মদ, কার এমন চক্ষুশূল হয়ে উঠলেন তিনি? এই রাষ্ট্রেরই গোপন কুঠুরি থেকে বেরিয়ে আসা এই হাত, যাদের লোভের জিহ্বায় বারবার কাঁটা ঠেকিয়েছেন আনু মুহাম্মদ এই হাত তার। দেশের কথা বলা যাবে না, সম্পদ যে নিয়ে গেছে নিয়ে যাক, চুপ করে থাকাই আমাদের শিক্ষা, বহুজাতিকের পণ্য হয়ে ওঠা মন-মগজের শিক্ষাই আধুনিকতা_ এমনটা আমরা শিখিনি আনু মুহাম্মদের কাছ থেকে। তাই হয়তো ক্রোধান্ধ রাষ্ট্র তার মনের আশা মিটিয়েছে_ লালায় চিটচিটে হাসি ফুটেছে সেদিন কত কত লুটেরার মুখে।
তারা হয়তো ভেবেছে পা ভেঙে দিলে আর মিছিলে আসবেন না আনু মুহাম্মদ, রাস্তায় ফেলে তাকে বেদম পিটিয়ে আহত করলে তিনি ভয় পাবেন, আর নামবেন না রাস্তায়, আর প্রতিবাদ করবেন না লুটপাট নিয়ে। কী নির্মম এক ছবি জাতীয় দৈনিকে এসেছে_ কী অমানবিক হয়ে উঠতে পারে রাষ্ট্রযন্ত্রের লোকেরা। কতগুলো আঘাত করার পর রাষ্ট্রের মনে হয়েছে যথেষ্টই হয়েছে, কতগুলো বুটের লাথি ছুটে গেছে আমাদের শিক্ষকের শরীরে। আমরা জানি না। কিন্তু আমরা জানি তিনি আমাদের শিক্ষক, তিনি আমাদের ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। আমরা জানি এই তেতো লবণাক্ত জীবনের বাঁকে বাঁকে মানুষের জন্য অপেক্ষা করে রূপান্তর। কিন্তু সে কি এতই সহজ! তার জন্য আছে অশ্রুঘামরক্তমৃত্যুদুয়ার। আছে দীর্ঘ পথপরিক্রমা।
লেখকগণ : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন
মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সত্যি বলছি, চাইবো না
সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শেখস্থান.....
শেখস্থান.....
বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন