বাংলাদেশী ছায়াছবি’র প্রোটেকশনের জন্য অনেক ডিরেক্টর, প্রযোজক কথা বলছে। অনেক ডিরেক্টর, প্রযোজক বিদেশী বা ভারতীয় ছবি আমদানীর বিপক্ষে কথা বলছে। এখন কিছু কথাঃ
সম্ভবত ১৯৬৫ সালে এখানে ভারতীয় ছবি আমদানীর বিপরীতে একটি আইন করা হয়। যে আইনে ভারতীয় ছবি আমদানী বন্ধ হয়ে যায়। মানুষ এক কথায় উত্তম কুমার – সুচিত্রা সেনের ছবি দেখা থেকে বঞ্চিত হয়। স্বাধীনতা এলো। পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হলো। সেই আইন সেই আইনই রইলো। কালের বিবর্তনে কি হলো? মানুষ কি ভারতীয় ছবি দেখা বন্ধ করলো? অথবা হলিউডের ছবি দেখা বন্ধ করলো? নাকি বাংলাদেশের মুভির মান ভাল হলো? (হাতে গোনা কয়েকটা ছবি ছাড়া।)
বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি আজকে বলতে গেলে নাই। শিল্পীরা আছে কোন মতে (গুটিবাজ শিল্পীরা বাদে, এরা আমার মতে কোন শিল্পীই না, সব ধান্দাবাজ)। অথচ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের ব্যান্ড কত খানি আগানো ছিল জানেন? প্রথমসারিতে ছিল বাংলাদেশের ব্যান্ড দলগুলো। এর থেকে বড় বড় শিল্পীদের কথা বাদই দিলাম। এই ক্ষেত্রেও যদি প্রোটেকশনের কথা ওঠে? বাংলাদেশের গান বাদে বাইরের গান কেউ শুনবে না। তাহলে? লাভ কার? শিক্ষা বাড়বে না কমবে?
বাংলাদেশের লেখকদের কথা যদি বলা হয়, তারাও যদি প্রোটেকশনের কথা বলে? বাংলাদেশে কোন বিদেশী লেখকের বই আসবে না। বাংলাদেশের লেখকরা যা লিখবে তাই পড়তে হবে। কি হবে তাহলে? জ্ঞান বাড়বে না কমবে?
১৯৬৫ সালে থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারতীয় বা বিদেশী ছবি আমদানী করা হয় নি। দেশের ছবির মান ধরে রাখা ছিল এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। লাভ কি হয়েছে? “ব্যাচেলর” ছবি রিলিজ হওয়ার আগ পর্যন্ত কি দিনকে দিন বাংলাদেশের ছবির মান নিম্নমুখী ছিল না? একটা একটা আটার বস্তা ময়দার বস্তা দিয়ে ছবি বানানো হয়নি? যেখানে অভিনয় বা কাহিনীর কোন ঘ্রাণ পর্যন্ত ছিল না। রিক্সাওয়ালা ছাড়া বা এক টিকিটে দুই ছবি দেখার দর্শক ছাড়া কয়জন মানুষ সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখেছে ঐ সময়টায়? কিছু ভালো দর্শক তো হতে পারতো ওদের মধ্যে থেকে। যারা ভাল মানের ছবি দেখতে না পেরে যা তা দেখতে গেল শুধুমাত্র তার একটু মেন্টাল এনটারমেইন্ট দরকার তাই। পড়ে সে অভ্যস্ত হয়ে গেল। দোষটা কার তাহলে? (আমি বলছি না রিক্সাওয়ালারা বা গরীব মানুষরা বাজে দর্শক বা তারা বাজে ছায়াছবি দেখতে চায়, আমি বলতে চাই অনেক সময় নিজের বানানো ছায়াছবির জন্য দর্শক বানিয়ে নিতে হয়।)
মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী’র “ব্যাচেলর” ছবিটা একটা সময়কে সম্পূর্নভাবে মাথা তুলে দেখতে বাধ্য করেছিল। কিন্তু তারপর কি হল? “মেইড ইন বাংলাদেশ” “থার্ড পারসন সিঙগুলার নাম্বার” “টেলিভিশনে”
কি দিল মানুষকে জানিনা। কিন্তু আমাকে কোন কিছু বা কোন ম্যাসেজ দিতে পারে নাই। রেওদয়ান রনি’র
বানানো নাটক দেখে কখনওই ভাল লাগে নাই। আজাইরা প্যানাপ্যানী মনে হয়েছে। কিন্তু “চোরাবালী” ভাল একটা কাজ হয়েছে। বাংলাদেশের ছায়াছবি’র জগতে অনেক নতুন কিছু দেখাতে পেরেছে। ইফতেখার আহমেদ ফাহমী’র কাজ ভাল লাগে। মেকিং বেশ ভাল। ওর “আমি হিমু হতে চাই” নাটকটা ৩-৪ বার দেখেছিলাম। অপেক্ষায় আছি “টু বি কন্টিনিউড” দেখার।
এত কথা বলার কারণ ভাল কিছু হলে মানুষকে ডেকে হলে নিতে হবে না। মানুষ এমনিতেই যাবে। আরাম আর তৃপ্তি নিয়েই দেখবে। কাজ ভাল হলে কোন প্রোটেকশনের দরকার হবে না। প্রতিযোগিতায় টিকতে পারলে টিকবে আর না হলে নাই। আর প্রতিযোগিতা না থাকলে তো হবেনা। এতে যা মন চায় তাই খাওয়ানোর সুযোগ থাকে। মান ভাল করার মনোযোগ অন্য দিকে চলে যায়।
মানুষের সামনে খাবার আইটেম ২-৩ রকমের থাকলে ভালটা বেছে খায়। আর যদি আইটেম একটি থাকে তাহলে সে যা থাকে তাই খায়। মানে বাধ্য হয়। ভাল যে কোন কিছু গ্রহণ করা মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ আমাকে ভারতীয় ছবির দালাল ভেবে নিজেকে আহাম্মক হিসেবে পরিচয় দিবেন না। তবে আমার ভাল কাজকে ভাল বলার সাহস আছে। যেটা ভাল সেটাকে ভাল বলবো সেটা যে দেশেরই হোক। শুধু পাকিস্তান বাদে, রুচি নাই।
** আর এখন সবার কাছেই মোটামোটি ইন্টারনেট সংযোগ আছে। ভাল কিছু তাদের দিতে না পারলে বা দেখাতে না পারলে মানুষ ভাল কিছু খুঁজে নিতে জানে। ইন্টারনেটে কোন প্রোটেকশন নেই।