নিজের জীবনের গত রাতের কথা বলি। রুমের লাইট নিভানো, ল্যাপটপে নিজের একটা লেখা ছোটগল্প পড়ছিলাম। টের পেলাম আব্বা আস্তে আস্তে হেটে বিছানার পাশে এসে দাড়াল। তাকালাম না। প্রায়ই করি এই কাজ। তাকাই না। চুপ করে থাকি, চোখ থাকে ল্যাপটপের দিকে, মস্তিস্ক থাকে আব্বার দিকে।
আব্বা হঠাৎ আমার মাথায় হাত বুলায় দিতে থাকলো। আমি আরও চুপ হয়ে গেলাম। হাত বুলানো শেষ হলে আমি আব্বাকে তার বিছানায় শোয়ায় দিয়ে আসলাম। আব্বা আবার উঠে বসে পড়ল। আমি আধা মগ পানি দিলাম। আব্বা খেয়ে দাঁড়ায় গেল। আমি আবার আব্বাকে বিছানায় শোয়ায় দিলাম।
এইবার তার মাথায় হাত বুলায় দিয়ে বললাম "ঘুমাও এখন, আর উইঠোনা।"
আব্বা বলল "আচ্ছা।"
ডাক্তারের ভাষ্যমতে আমার বাপজান আর সুস্থ্য হবেনা। বাকিদিনগুলা এভাবেই কাটবে। স্ট্রোক। মস্তিস্কে পানি জমা, ৭৪ বছর বয়সে একটা অপারেশনের ধকল। কিন্তু আমি এই পৃথিবীর চরম আশাবাদী মানুষগুলার মধ্যে একজন। তার জন্য আমি বাকি জীবনটাও অপেক্ষা করতে রাজী আছি।
মনে পড়ে লাস্ট কবে আমার বাপ আমার মাথায় হাত বুলায় দিছিলো। হয়ত তার পরেও আরও অনেকবার দিছিলেন, আমি টের পাই নাই।
আমি তখন স্কুলে পড়ি। আম্মা কোন এক কারণে মাইর দিছিলো। আব্বা আদর করার সুযোগ পায় নাই। রাতে আমি শোয়ার পর চোখ বন্ধ করে ছিলাম। অভিমান নিয়ে ঘুমের ভান করে ছিলাম। আব্বা এসে মাথায় হাত বুলায়ে দিয়ে আম্মাকে বলতেছিল "আমার লক্ষী একটা পোলা আর তুমি মারলা।"
মা তখন আব্বাকে বলছিল "খালি বান্দারামি গুলা না করলেই তো হয়, মারতে কার মন চায়!"
বাপ মা - দের কখনও কেউ ছেড়ে যাইয়েন না ভাই। জীবনে সব চলে গেলে পাবেন বা বিকল্প কিছু বা তার থেকে ভাল কিছু পাবেন। কিন্তু বাবা মা গেলে কোনদিনও তা পাওয়া সম্ভব না।
আমি এই পৃথিবীর চরম আশাবাদী মানুষগুলার মধ্যে একজন।
যতদিন আশা আছে, আমি আছি। যতদিন আমি আছি, আশা থাকবে।