somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।
ঈদের পরদিন ভোর বেলা আমরা পাঁচজন ঢাকা থেকে লোকাল বাসে আর স্থানীয় মাছ ব্যাবসায়ীদের টেম্পোতে করে বান্দরবান শহরে পৌছে কোন হোটেল মোটেলে সিট না পেয়ে হতাশ হয়ে রাস্তায় হাত-পা ছড়িয়ে বসে পড়ব বলে ভাবছি তখনি দেবদুতের মত একজন এসে বলল এই রিসোর্টের কথা। প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। বান্দরবান তখনো পর্যটন এরিয়া হিসেবে তেমন জমজমাট হয়নি। পর্যটনের রিসোর্ট চালু হয়নি তখনো। কিছু মানুষ চিম্বুক পাহাড়ের টানে যায়, বাকি লোক টাইগার হিল আর লেক পাহাড়ের টানে ছুটে আসে।
রাত কাটানোর জন্য উত্তম ব্যাবস্থা গড়ে ওঠেনি তখনো। রুমা হয়ে বগা লেক আর সেখান থেকে কেউক্রাডং ও তাজিংডং এর মত পাহাড়ে যাবার রাস্তা ছিল না। অল্প কিছু দুঃসাহসী মানুষ অমন সুন্দর নির্জন পাহাড়ি পথে ট্রেকিং করত। ডিম পাহাড়, আলী কদম চিনত খুব কম মানুষ। পাহাড়ি নদী বেয়ে নৌকায় যে বড় পাথরের মত দুর্দান্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক্সপ্লোর করা যায় সেটা ছিল কল্পনার বাইরে। এমন খরস্রোতা পাথুরে অগভীর নদী বেয়ে মানুষ সমেয় নৌকা কেমনে উপরে ওঠে সেটা নিজচোখে না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত।
যা হোক বাশের সিড়ি বেয়ে সেই রিসোর্টের বিশাল রেস্টুরেন্ট কাম-ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে চরম হতাশ হয়ে জেনে গিয়েছি ওদের সবগুলো কটেজ বুকড। বোর্ডারের আবার বেশিরভাগ বিদেশী- যারা ঢাকা থেকে বুক করে এসেছেন। ক্যাশ কাউন্টারে যিনি ছিলেন তিনি অতীব দয়ালু ও বাগ্মী নন শুধু এই রিসোর্টের মালিকের ভাইও। তিনি আমাদের আশ্বাস দিলেন, কোন একটা ব্যাবস্থা হবেই। কোন কিছু না হলে তিনি অন্তত রেস্টুরেন্টের ছাদে কিংবা পাহাড়ে তাবু খাটিয়ে দিবেন।
তাঁর একথায় আমাদের উত্তেজনা চরমে! রেস্টুরেন্টে লাগোয়া ওয়াশরুমে ফ্রেশ হয়ে বিশাল অর্ধচন্দ্রাকৃতির রেলিং ঢাকা বারান্দায় দাড়াতেই কুয়াশা এসে আমাদের ঘিরে ফেলল। পাহাড়ের উপরে ঝুলন্ত এই বারান্দা যেন পরাবাস্তব এক জগতে নিয়ে গেল!
চা- নাস্তা আপ্যায়ন স্বাদ সবকিছুতেই যেন ভিন্নধর্মী এক আমেজ, কিন্তু গোল বাঁধল একখানে। সভ্যতা থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন সবাই। এখানে কোন মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই, কোন ইন্টারনেট সংযোগ নেই। কোথাও কোন টিভি রেডিও কিস্যু নেই। পৃথিবীতে অন্য কারো সাথে যোগাযোগ করতে হলে ছয় কিলোমিটার পাহাড়ি পথে দাবড়ে শহরে গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে। আর পাহাড়ি রাস্তা সন্মন্ধে যাদের ধারনা আছে তারা জানেন যে ছয় কিলোমিটার কতটুকু রাস্তা!!
সেদিন আমাদের সারা পৃথিবীর সব সভ্যতা থেকে দুরে বসে আলসে দিন কেটে গেল। চমৎকার উপভোগ্য একটা দিন তবুও বাসায় খবর পৌছানো হয়নি বলে সবার মনেই খচ্‌ খচ্‌ করতে লাগল।
রাতে খোলা আকাশের নীচে পাহাড়ের উপরে লক্ষ তার আর হালকা কূয়াশা ভেজা শীতের আমেজে মোড়া এক রাত কাটালাম তাবুতে শুয়ে।
ভোরে উঠে পাহাড়ি পথ বেয়ে সূর্য বাড়িতে( ছন আর বাশে ছাওয়া টং ঘড়) মেঘের ভেলায় ভেসে ভেসে সুর্যোদয় দেখা ছিল যেন এক অপার্থিব আনন্দ, বিস্ময় আর অমিত উত্তেজনার! পায়ের নিচে পেজা তুলোর মত সোনালী রাঙ্গা মেঘের দেশে মনে হচ্ছিল লাফ দিয়ে হারিয়ে যাই।
আশেপাশের সারা এলাকা চক্কর দিয়ে রেস্টুরেন্টে এসে চা খেয়ে গল্পে মশগুল হলাম।
সকাল নয়টা বাজে- তখন কুয়াশা কাটেনি, দুরের পাহাড়গুলো আবছা দেখা যায়। সামনের রুমা নদী(খাল) তখনো ভারি অস্পস্ট! আচমকা হায়দার চরম উত্তেজিত হয়ে দৌড়ে আসল। কাছে এসে ফিস্ফিস করে বলল, দারুণ এক খবর আছে?
কি এমন খবর আমরা শোনার জন্য উদগ্রীব?
হায়দায় একগাল হেসে বলল। মোবাইলের নেটওয়ার্ক তো পাওয়া গেছে!
- তাই নাকি? কোথায় ক্যামনে?
-এই পাহাড়ের মোড় ঘুরে, ঐ পাহাড়ে উঠলে ওর কোনায় এক খোলা জায়গায়। অল্প অল্প আসে- তবে আমি কথা বলছি।
-কি কও সত্যি?
আমরা সবাই- লাফিয়ে উঠে দৌড়াইতে শুরু করলাম।
এর মাঝে নোমান হায়দারকে সতর্ক করে দিল। এই কথা কাউরে কইও না। 'সবাই জানলে শেষে আমরাই চান্স পাব না'।
***
ভ্রমন গল্পটা এখানে শেষ হয়নি ( এই ভ্রমনটা রুমা খাল দিয়ে হেটে হেটে বগা লেক হয়ে কেউক্রাডাং হয়ে তাজিংডং-এ শেষ হয়েছিল) -তবে আমি এখানেই ইতি টানছি।
কেন যেন মাঝে মধ্যে মনে হয়; সামু হল 'রিগ্রিখ্যাং' এর সেই রিসোর্ট। সারা বিশ্বের সব সোশ্যাল মিডিয়া থেকে এখন এক রকম বিচ্ছিন্ন। এর মোবাইল নেটওয়ার্ক; মানে এই ব্লগে ফিরে আসার জটিল পথ। যার সন্ধান আমাদের মত অতি অল্প কিছু মানুষ অনাকাঙ্খিতভাবে পেয়ে গেছি। আমরা কেন যেন বাইরের পৃথিবীকে এর সন্ধান দিতে চাই না- ভয় হয় 'যদি আমরাই শেষে আর চান্স না পাই'।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮
২৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×