বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা যাদের জানা শোনার অনেক ইচ্ছে তারা ছাড়া আসলে আমরা ক’জন জানি সত্যিকার অর্থে একজন কিশোর বা কিশোরের বয়ঃসন্ধিকালে মনোজগৎ ও দৈহিক ভাবে কি কি পরিবর্তন ঘটে? কি আশ্চর্য অথচ আমরা প্রত্যেকেই সেই বয়ঃসন্ধিকাল পার করে এসেছি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের অনেকেই এখন এই বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করছে।
করোনার পরে ছেলেকে নিয়ে বেশ বড় একটা সমস্যার মুখোমুখি হলাম। স্কুল থেকে অভিযোগ আসছে, কোচিং থেকে আসছে। ক্লাসের বন্ধুদের সাথে নিয়মিত মতের অমিল হচ্ছে যার ফলে বন্ধুদের সাথে তাঁর সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে।এত লক্ষ্মীমন্ত একটা ছেলে কেন বেয়াড়া হয়ে উঠল বুঝতে পারছি না। ওর গলার স্বর ভেঙ্গে যাচ্ছে, নাকের নীচে হালকা গোঁফের রেখা, অল্প কথাতেই রেগে যাওয়া, একা একা বেশীক্ষণ থাকতে চাওয়া, আত্মীয় স্বজনদের সাথে মুখোমুখি সাক্ষাতে বিব্রত-বোধ করা, বাবা মায়ের সাথে বাইরে বের হতে অনীহা প্রকাশ এসবই যে বয়ঃসন্ধির সমস্যা সেটা আমরা আঁচ করতে পেরে আগেই সাবধান হয়েছিলাম।
তাঁর মতামতের মূল্যায়ন যদিও আগের থেকে একটু বেশী করছি- কিন্তু সে যেন বিপথে চলে না যায় সেজন্য নজরদারি বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
পরে জানা গেল এই সমস্যা শুধু একা ওর নয় বাকি সব ছেলেদের এক ও অভিন্ন সমস্যা। যাদের বড় মেয়ে আছে তাদের কথা; ছেলেদের থেকে মেয়েদের মানুষ করা অনেক সহজ। ছেলেকে নিয়ে তো অন্য এক উদ্ভট সমস্যায় পড়েছে- এটা তো ভাবেনি কখনো কেউ।
আমরা চলে যাই আমাদের কিশোর বেলায়! যৌনতা ও যৌন বিষয়গুলো আমাদের পূর্বসূরিরা এমনভাবে চেপে গিয়েছেন যে এটা ভয়ঙ্কর অপরাধমূলক কর্ম হিসেবে আমাদের মনোজগতে এমনভাবে আস্তানা গেড়েছে য, এর ঘোর-টোপ থেকে আজ অব্দি আমরা আর কেউ বের হতে পারছি না।
একবার ভেবে দেখুন, একটা মেয়ে কিশোর বয়সে তাঁর শারীরিক সমস্যার জন্য তাঁর মা বোন মহিলা আত্মীয়ের কাছে পরামর্শ নিতে পারে- কিন্তু একটা ছেলে কিশোর কার কাছে বলবে তাঁর সমস্যার কথা? বাবা-তো দূর গ্রহের মানুষ, মা বোনকে বলা যায় না লজ্জায়(বললেও তারা কি সমাধান দিবে? তারা জানেই বা কি পুরুষদের ব্যাপারে?), বন্ধুদের বললে হাসি-তামাশা করবে। সে এক ভয়ঙ্কর বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা!!! আমাদের পাশ্চাত্যের দেশগুলির এইসকল তথাকথিত রক্ষণশীল সমাজে সত্যিই একটা শিশুর বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানো মানে অভিশপ্ত ভয়ঙ্কর এক অন্ধকার কূপে ঝাঁপ দেয়া!
কেন সেক্সচুয়ালি আমাদের উপমহাদেশের ছেলেরা এত এগ্রেসিভ? এ বিষয়টা কি গভীরভাবে কেউ ভেবে দেখেছেন? শুধু নারী দেহ দেখলেই চুলবুল করে বলে পুরুষমানুষ মানেই ‘লুচ্চা’ এমন একটা ট্যাগ দিয়ে সবাই খালাস!!
আমরা ক’জনেই ভাবি ; একটা শিশু সন্তান যখন বড় হচ্ছে যৌবন প্রাপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে জীবনের কঠিন-তম ধাপ অতিক্রম করে। আমরা কি ভাবি তখন তাদের হরমোনাল পরিবর্তন, প্র-জননাঙ্গ পরিবর্তন, মস্তিষ্কে পরিবর্তন হচ্ছে, ধীরে ধীরে তাত্ত্বিক দৃষ্টি ও জ্ঞানীয় ক্ষমতা বাড়ছে। কাল্পনিক এবং বিমূর্ত চিন্তা ধীরে ধীরে বাসা বাঁধছে তাঁর মনোজগতে, মেটাকগনিশন, আপেক্ষিক চিন্তা প্রজ্ঞা। ঝুঁকি গ্রহণ সহ শতাধিক মনো-জাগতিক ও শারীরিক পরিবর্তন হচ্ছে।
আমরা আমাদের কৈশোর কাটিয়েছি স্কুল মাঠ আর পড়ার টেবিলে। বাসায় থাকলে বেশীরভাগ সময় গিয়েছে বয়স্কদের ফরমায়েশি খেটে।
বাইরে বন্ধুদের সাথে দেখা হলেই হৈ হুল্লোড় করেছি,মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছি। কত নতুন নতুন খেলা আবিষ্কার করেছি- সেই কত শত স্মৃতি নিয়ে আমরা জাবর কাটি; ফেসবুকে কখনো লাটিম, ডাংগুলি, শন পাপড়ি ঝুরিভাজার ছবি দিয়ে ক্যাপশন দেই আগে কি সুন্দর দিন কাটাতাম!! আমাদের স্বর্নালী কৈশোর!!!
কিন্তু এর মাঝে একটা ভয়ঙ্কর অসুখে ভুগেছি, ভয়াবহ কাল অতিক্রম করেছি যার ফলে চরম মানসিক বিকৃতি ঘটেছে সে কথা কেউ আমরা বলি না।
~বিস্তারিত যাবার আগে আমরা বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন সমূহ এবং তাই নিয়ে বাস্তব জীবন-সম্মত আলোচনা শুরু করি। আগেই সাবধান করে দেয়া হচ্ছে; লেখাটা কিশোরদের নিয়ে হলেও পাঠে কিশোর উপযোগী নয় সম্ভবত। তবে যারা বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন সমূহের কথা জানেননা বা ভাসা ভাসা জানেন তাদের অবশ্য পাঠ্য। লেখাটা কঠোরভাবে প্রাপ্ত-মনস্কদের জন্য।
কৈশোর বা কৈশোর বা Adolecence হল শৈশব থেকে যৌবনে পদার্পণ করার মধ্যবর্তী সময়কাল। এ সময়কাল জুড়ে বিভিন্ন রকম শারীরিক পরিবর্তন ঘটে ও আকস্মিক হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মানসিক আবেগের তীব্রতার উত্থান পতন ঘটে থাকে, যা বয়ঃসন্ধি নামে পরিচিত। বয়ঃসন্ধিকালের পূর্বে নিষ্ক্রিয় থাকা হাইপোথ্যালামাস* এ সময় হঠাৎ করে সক্রিয় হয়ে ওঠে। সাধারণত ডোপামিন, গ্লুটামেট ও সেরোটোনিন নামক মস্তিষ্ক প্রবাহিত হরমোন এ আবেগীয় পরিবর্তনে প্রধান ভূমিকা রাখে এবং পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত টেস্টোস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোন এবং গ্রোথ হরমোন কৈশোর-কালীন শারীরিক বিকাশ ও যৌন আচরণকে সক্রিয়করণে কাজ করে। ভৌগলিক অবস্থান ভেদে কৈশোরের ব্যাপ্তির তারতম্য দেখা যায়।
বয়ঃসন্ধি হল বেশ কয়েক বছরের সময়কাল যেখানে দ্রুত শারীরিক বৃদ্ধি এবং মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটে, যা বয়ঃসন্ধিতে পরিণত হয়। বয়ঃসন্ধি শুরুর গড় বয়স মেয়েদের জন্য ১১ এবং ছেলেদের জন্য ১২। প্রতিটি ব্যক্তির স্বতন্ত্র বয়ঃসন্ধির সময়সূচী প্রাথমিকভাবে বংশগতির দ্বারা প্রভাবিত হয়, যদিও খাদ্য এবং ব্যায়ামের মতো পরিবেশগত কারণগুলিরও কিছু প্রভাব রয়েছে। এই কারণগুলি অকাল এবং বিলম্বিত বয়ঃসন্ধিতে অবদান রাখতে পারে।
[ছেলেদের ১২ বছর বয়সকালকে আমরা একেবারে শিশুর পর্যায়ে ট্রিট করি। যদিও পরিবেশ আবহাওয়া খাদ্য ও কিছু জেনেটিক কারনে আমাদের বয়ঃসন্ধিকাল একটু দেরিতে আসতে পারে যার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।]
বয়ঃসন্ধিকালীন বিকাশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ উচ্চতা, ওজন, শরীরের গঠন, কার্ডিওভাসকুলার এবং শ্বাসযন্ত্রের বৈশিষ্ট্য-গত শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের সাথে জড়িত। এই পরিবর্তনগুলি মূলত হরমোনের কার্যকলাপ দ্বারা প্রভাবিত হয়। হরমোন একটি সাংগঠনিক ভূমিকা পালন করে, যা বয়ঃসন্ধি শুরু হওয়ার পরে শরীরকে কিছু নির্দিষ্ট উপায়ে আচরণ করে, এবং বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত একটি সক্রিয় ভূমিকা যা আচরণগত এবং শারীরিক পরিবর্তন ঘটায়।
আমার কথাঃ
[আমাদের কৈশোরে এই আচরণগত পরিবর্তনটা কে নেগেটিভ-লি দেখা হোতো। মুরুব্বীরা এই নিয়ে বিরক্ত বোধ করতেন। অনেকসময় এই আচরণগত পরিবর্তনের জন্য মানসিকতা বটেই এমনকি শারীরিক পীড়নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। আর শারীরিক পরিবর্তনটা ভীষণ লজ্জার ব্যাপার ছিল। সে কথা কাউকে বলা যায় না!!]
বয়ঃসন্ধি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ঘটে এবং হরমোন উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে শুরু হয়, যার ফলে একের পর এক দৈহিক পরিবর্তন ঘটে। এটি একটি জীবনের পর্যায় যা যৌন বৈশিষ্ট্যগুলির উত্থান এবং বিকাশের দ্বারা চিহ্নিত করা হয় (যেমন, ছেলেদের মধ্যে একটি গভীর কণ্ঠস্বর এবং অণ্ডকোষের বৃদ্ধি এবং হরমোনের ভারসাম্যের একটি বড় পরিবর্তন। যৌবনে পিটুইটারি গ্রন্থি দ্বারা হরমোনাল এজেন্ট নির্গত হয় ও রক্তের সাথে মিলে যায় যার ফলে একটি চেইন প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।) একই সময়ে, পুরুষ এর অণ্ডকোষ সক্রিয় হয়, যা তাদের দ্রুত বৃদ্ধি এবং পরিপূর্ণ বিকাশের দিকে নিয়ে যায়; অণ্ডকোষ তখন ব্যাপক হরমোনের উৎপাদন শুরু করে। অণ্ডকোষ প্রাথমিকভাবে টেস্টোস্টেরন নিঃসরণ করে ও বয়ঃসন্ধিকাল শেষ না হওয়া কিংবা যৌবনপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এই হরমোনের উৎপাদন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। যৌন হরমোন ভারসাম্যহীনতার জন্য কিছু কিশোরদের স্থূলতার কারণে স্তন ও স্তনবৃন্ত বড় হতে পারে।
আমার কথাঃ
[ ~এই সময়টা ছেলেদের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সময়। যখন প্রয়োজন অভিজ্ঞদের পরামর্শ ও গাইডেন্স। আর কি চরম অবহেলা ভরেই না শুধু নিষিদ্ধ আর লজ্জাজনক বলে আমরা এই সময়কালটা কাটিয়ে এসেছি। হঠাৎ গলার স্বর পরিবর্তনের জন্য বেশীরভাগ কিশোরদের এমন টিকা টিপ্পনী বা পরিহাসের সম্মুখীন হতে হয় যে, তারা বাড়িতে যত-সম্ভব কম কথা বলে- পরিবারের সাথে দুরত্ব সৃষ্টি হয়। তখন বন্ধুদের সহচর্য বেশী আকর্ষণীয় মনে হয়। হরমোনের ভারসাম্যহীনতার জন্য বড় স্তনের জন্য কত ছেলেকেই বিরূপ মন্তব্য নোংরা বা তির্যক দৃষ্টির সম্মুখীন হতে হয়; এইসব ছেলেরা নিজেদেরকে গুটিয়ে নেয়। মেয়েদের মত খালি গায়ে থাকতে লজ্জা পায় এবং ঢিলে ঢালা পোশাক পরে। এখনকার শহুরে বাবা-মায়েরা তা ও সচেতন। আমাদের সময়ে এটাকে শুধু বিকৃত শারীরিক অঙ্গ হিসেবে দেখা হোতো- এবং ভাবা হোতো বয়সের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে। ঠিক হয়তো একদিন হয় কিন্তু সেই দীর্ঘ সময় ধরে চলা উপহাস তাদের মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে দেয়।]
পুরুষদের দাড়ি-গোঁফ সাধারণত বয়ঃসন্ধির সময় থেকে ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। প্রথম মুখের চুল উপরের ঠোঁটের কোণে বৃদ্ধি পেতে থাকে, সাধারণত ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সের মধ্যে। তারপর এটি গোঁফের আকারে ছড়িয়ে পড়ে উপরের ঠোঁটের সমস্ত অংশে। এর পরে গালের উপরের অংশে এবং নীচের ঠোঁটের নীচের অংশে চুলের উপস্থিতি দেখা যায়। চুলগুলি শেষ পর্যন্ত চিবুকের পাশে এবং নীচের সীমানা পর্যন্ত প্রসারিত হয়, সেইসাথে নীচের মুখের বাকি অংশে বিস্তৃত হয়ে পরিপূর্ণ দাড়ি প্রকাশ পায়। বেশিরভাগ মানুষের জৈবিক প্রক্রিয়ার মতো দাড়ি গোঁফের এই গঠন প্রক্রিয়া কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। মুখের লোম প্রায়শই বয়ঃসন্ধিকালের শেষের দিকে, ১৭ বা ১৮ বছর বয়সে দেখা যায়, তবে অনেক পরে দেখা দিতে পারে। কিছু পুরুষের বয়ঃসন্ধির পর ১০ বছর পর্যন্ত মুখের চুল গজায় না। বয়ঃসন্ধিকাল পার হবার পর আরও ২-৪ বছর পর্যন্ত মুখের চুলগুলি মোটা, গাঢ় এবং ঘন হতে থাকে।
আমার কথাঃ
[~দাড়ি-গোঁফ; কিশোর বয়সের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বয়ঃসন্ধিকালের যেই পরিবর্তনটা চাক্ষুষ উন্মোচিত হয় সেটা হচ্ছে গোঁফ দাড়ি। পরিবার ও মুরুব্বীদের সামনে লজ্জার একটা বিষয়, ছোটদের সামনে ভাবের আর আর বন্ধুদের সামনে প্রতিযোগিতার। যার আগে দাড়িগোঁফ উঠে ক্লাসে বা আড্ডায় একটু ভাবে থাকে আর যার ওঠে দেরিতে সে একটু হীন- মনস্কতায় ভোগে। তাকে বন্ধুরা বাচ্চা পোলাপান বলে ক্ষেপায় আর বড়রা তুচ্ছ করে কিংবা উপহাস করে। এ ব্যাপারে চরম ভুক্তভোগী আমি নিজে। আমার কিছু বন্ধুর যখন মুখ-ভর্তি দাড়িগোঁফের জঙ্গল তখন আমার সবে লোম কালচে হচ্ছে। এই নিয়ে বহুবার বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হয়েছি। ক্লাসে বাচ্চা হিসেবে ট্রিট করা, খেলাধুলায় মেয়েলি ধরন বলে সাইড লাইনে বসিয়ে রাখা থেকে শুরু করে সবখানেই একটা ভীষণ চাপের সম্মুখীন হয়েছি। এরপরে উপদেশ-তো আছেই; সব অপরিপক্ব বাচ্চা পোলাপান ভীষণ বিজ্ঞের মত পরামর্শ দিয়ে চলছে অনবরত। এর মধ্যে সবচেয়ে সলিড পরামর্শটা হোল শেভ করা। সে সময়ে শেভিং- সেই সময়ে ওয়ান টাইম রেজর মার্কেটে ছিল না। নাপিতেরা ব্যবহার করত ক্ষুর-আর বাড়িতে ব্লেড। ব্লেড,রেজর, সাবানের ডিব্বা আর বুরুশ মিলে বেশ ব্যাপক একটা আয়োজন ছিল। সিকি বা আধুলি মূল্যের একটা বলাকা ব্লেড তখন মুরুব্বীদের কাছে মহার্ঘ ছিল। দোকানে গিয়ে ব্লেড হয়তো কেনা যায় নখ কাটার কথা বলে শেভিং এর সরঞ্জাম- অসম্ভব!! নাপিতের ঘরে গেলে নাপিত নিজেই যে হাস্য পরিহাস করবে সে কথা ভেবেই সব ইচ্ছা মরে যায়। একমাত্র উপায় হচ্ছে শেভিং কিট চুরি করা। সেটাও না হয় চুরি করা গেল কিন্তু শেভের পরে ঘরে মুখ দেখাব কেমনে??~ সে অন্য এক গল্প! এক জীবনে পুরুষ হবার যন্ত্রণা কম নয়।]
পুরুষদের মধ্যে বয়ঃসন্ধির প্রধান ল্যান্ডমার্ক হল স্পার্মার্চ বা প্রথম বীর্যপাত, যা গড়ে ১৩ বছর বয়সে হয়। বয়ঃসন্ধির সময় গুরুত্বপূর্ণ মানসিক এবং সামাজিক প্রভাব থাকতে পারে। প্রারম্ভিক পরিপক্ব কিশোরেরা তাদের বন্ধুদের চেয়ে লম্বা ও শক্তিশালী হতে থাকে। তারা দৃষ্টি আকর্ষণ করার ও খেলাধুলার জন্য প্রথম নির্বাচিত হওয়ার সুবিধা পেয়ে থাকে। বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলেদের প্রায়ই ভাল শারিরিক গড়ন থাকে যা তাদেরকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে এবং সুরক্ষিত ও আরো স্বাধীন ভাবনায় প্ররোচিত করে । দেরিতে প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেরা দুর্বল শারীরিক গড়নের কারণে কম আত্মবিশ্বাসী হতে পারে, নিজেদেরকে সমবয়সী যারা লম্বা স্বাস্থ্যবান মজবুত গড়নের, তাদের সাথে তুলনা করে।
আমার কথাঃ
[ আহ!! এটা একটা বিষয় বটে। একেতো অণ্ডকোষ বড় হচ্ছে,পুরুষাঙ্গের আকার বেড়ে যাচ্ছে- কচি পুলাপানগুলো অভাব অনুভব করছে তখন অন্তর্বাসের। এরপরে উটকো ঝামেলা; হয় কথায় নয় কথায় ‘ইরেকশন’- কি এক বিদঘুটে অবস্থা! এর পরে প্রি সেকচুয়াল ফ্লুইড-তো আছেই। কিশোরদের এটা ভয় ধরিয়ে দেয়। স্পামার্চের আগে অনেক কিশোরেরা এই স্বচ্ছ, পিছলে স্রাবটাকে স্পার্ম হিসেবে ভাবে- এবং ভাবে তাঁর অকালে বীর্যপাত হচ্ছে!( তবুও যারা একটু জানে- যারা জানে না কিছুই তাদের কাছে এটা ভয়ঙ্কর রোগ বিশেষ। এই সময়টা নারী দেহের প্রতি দারুণ আকর্ষণবোধ হয়। সব অজানাকে জানার ইচ্ছে আর সব নিষিদ্ধকে ছোঁয়ার ইচ্ছে জন্মে। তবে সবার একরকম নয়। দেরিতে যৌবনপ্রাপ্ত কিশোরদের আগ্রহ কম থাকে- কিন্তু যারা আগেভাগে যৌবনপ্রাপ্ত হয় তারা তাদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য কিংবা নিজেকে বিরাট কামিল বোঝানোর জন্য ইতিমধ্যে তাদের আবিষ্কৃত যব গোপনীয়তা উন্মোচন করে। নারীদের নিতম্বের দুলুনি, বক্ষ-দ্বয়ের কাঁপুনি। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সরস ও কামজ বর্ণনা নতুন এক ফ্যন্টাসীর জগতে নিয়ে যায়। সময়মত জানার অভাব দেখার অভাব ছোঁয়ার অভাব এক সময় বিকৃত কামে প্রলুব্ধ করে কিংবা বিকৃত মানসিকতার জন্ম দেয়। নারী দেহ যত বেশী আবডালে থাকবে তত বেশী দেখা আর ছোঁয়ার আগ্রহ বাড়বে আর এই কামনা বাসনা চেপে রাখায় প্রকাশ পাবে বিকৃত, বিকল্প কাম ও আচরণে। ওদিকে যে সমাজে খুব বেশী খোলা মেলা, তারা অতিদ্রুত নারী দেহের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে অন্য কোন বিকৃত উপায়ে তাদের কাম চরিতার্থ করে। বেশীরভাগ পুরুষ সুস্থ স্বাভাবিক উপায়ে তাদের কাম নিবৃত করতে না পারলে ধর্ষণের মত বিকৃত ও নীচ উপায় অবলম্বন করে। সমাজ সংস্কার ধর্মীয় বা পারিবারিক চাপে তাদের এই অবদমিত যৌন আকাঙ্ক্ষা ভিন্ন কোন উপায়ে প্রকাশ পায়। মেয়েরা কখনো ভাবতে পারবে না; আচমকা ওই ইরেকশনের সময়কাল ছেলেদের কি ভয়ানক মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার হয়। তখন বেশীরভাগ পুরুষেরা কিছু বা দীর্ঘ সময়ের জন্য হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। শরীরে বিশেষ হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণের ফলে; স্বাভাবিক জ্ঞান লোপ পায়। তখন যে কোন উপায়ে নিজেকে হালকা করার জন্য অনেকেই ভয়ঙ্কর কোন পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করে না। প্রকৃতি পুরুষকে নাজেহাল করার নিদারুণ একটা অস্ত্র বেছে নিয়েছে। আজ সারা বিশ্বব্যাপি পুরুষদের নিত্য গালাগাল শুনতে হচ্ছে!!
হস্তমৈথুন, স্বপ্নদোষ সহ আরো কিছু যৌন বিষয় নিয়ে আমি পরে বিস্তারিত আলোচনা করব। কিন্তু একটা বিষয় নিয়ে এই দণ্ডে আলোচনা না করলেই নয়( আলোচনার বিষয়বস্তু সহ আমার এই পুরো নিবন্ধটাই নারী পুরুষ নির্বিশেষে ভীষণভাবে প্রাপ্ত মনস্কদের জন্য)
সন্তান উৎপাদনের জন্য আমাদের শৈশব কৈশোরে ধারনা ছিল এটা ঈশ্বর বা প্রাকৃতিক কর্ম। মানুষের কোন হাত নেই। আর শারীরিক মিলন বা যৌন সম্ভোগটা নিচু স্তরের, পাপী নোংরা ও জঘন্য লোকদের কাজ। একাজে অংশগ্রহণকারী নারী-পুরুষ সবাই সমান অপরাধী। কিন্তু আমাদের বাড়ির কাজের ছেলে খোকন( বছর দু-য়েকের বড় ছিল) যখন বলল যে, সেক্স না করলে বাচ্চা হয়না। তখন আমি ভীষণ হতাশ হয়েছিলাম! সে খারাপ ছেলে হয়ে গেছে ভেবে তাকে ব্রাত্য করে বিষয়টা পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু খোকন আমার পেছনে লেগে ছিল।
বাসর ঘরে দরজা লাগিয়ে ছেলে মেয়ে কি করে? তাঁর প্রতি উত্তরে বলেছিলাম ‘গল্প করে’। সেতো হেসেই খুন!!
সে আর আমি বন্ধুর মত ছিলাম বলে, একদিন একটা প্রায় উদোম এক বিদেশিনীর ভিউ-কার্ড এনে আমার সামনে তাঁর সারা অঙ্গের সরস বর্ণনা করে সেটা রেখে গেল আমার কাছে। প্রথমে দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম –পরে আকর্ষিত হলাম। মনে হোল; তাইতো এ এক অন্য ভুবন। শুরু হোল নারী দেহের বিভিন্ন অলি ঘুপচি অনুসন্ধান! মানসিকভাবে আমি বিপর্যস্ত হতাম, পাপবোধ হলেও বিষয়টা ভাল লাগা শুরু হোল।
এর পরে আসে আরেক ধাক্কা! আমি কি পারব –তুই কি পারবি? সেই বয়সে একান্তে বসে যৌন আলোচনা ছাড়া কোন আলোচনাই যেন জমত না। গুরু বন্ধুদের রসময় বর্ণনা যেন এক ভিন জগতের ভ্রমণ ছিল! যৌন সম্ভোগে পটু না হলে বউ টিকবে না সেটা গুরুর দ্ব্যার্থহীন বাণী ছিল। কার মোটা, কার চিকন, কার হেলে পরে কার দুলে পরে, কার ভীষণ শক্ত হয় কার ন্যাতানো থাকে এই নিয়ে বিশেষজ্ঞের ভুরি ভুরি উদাহরণ সহ বিস্তর ভুয়া মতবাদ প্রচার। হস্তমৈথুন আর স্বপ্নদোষ নিয়ে ব্যাপক বাহাস!
কিশোর ছেলেদের তখন বুক কাঁপে! হায় হায় না পারলে বউ কি টিকবে না- এই কয় মিনিট থাকতেই হবে, না হলে-তো আমি শেষ। সেই দুঃচিন্তা অনেক পুরুষের চমৎকার বয়ঃসন্ধিকাল ভয়ঙ্কর তিক্ত এক সময়কাল হিসেবে বিবেচিত হয়। একসময় তারা বিয়ে করতে ভয় পায়- অথবা নিজেকে যাচাই করার জন্য বিপথগামী হয়। আর অতিরিক্ত মানসিক পীড়নে কোন একদিন বাসরঘরে হয় তারা ব্যর্থ পুরুষ!!!!]
যাইহোক, প্রাথমিক বয়ঃসন্ধি সবসময় ছেলেদের জন্য অনুকূলে থাকবে এমনটা নয়; ছেলেদের প্রারম্ভিক বয়ঃসন্ধি তাদের প্রভাবিত হরমোন একটি ঢেউর কারণে তাদের আক্রমণাত্মক প্রবণতা ও রাগ বৃদ্ধি পেতে পারে। যাদের স্বাস্থ্য ভাল ও শারীরিক গড়ন বেশী তাদের সমবয়সীদের চেয়ে বয়স্ক বলে মনে হয়, বয়ঃসন্ধিকালীন এইসব কিশোরেরা প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়ম মেনে চলার জন্য বাড়তি সামাজিক চাপের সম্মুখীন হতে পারে।
পুরুষ হবার যন্ত্রনা ২ঃ Click This Link