আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
শেষ প্রণয়
মাঝে মধ্যেই ওর মায়ের প্রেমিক আসলে আমাদের পায়ের কাছের ছোট্ট একটা ডিভানে নাদিয়া এসে শুয়ে পড়ত। প্রথম প্রথম আমি ভীষণ অবাক হতাম, বিব্রত বোধ করতাম! খানিকটা লজ্জা যে এলিনা পেত না তা নয়- কিন্তু আমরাতো কিছুই করছিনা ছোট বোন থাকলে সমস্যা কি এমন ভাব করে সে সহজ হয়ে যেত।
আমি কিন্তু প্রথম প্রথম অত সহজে সহজ হতে পারতাম না। মাঝে-মধ্যেই ঘাড় উঁচু করে দেখতাম নাদিয়া এদিকে তাকিয়ে আছে কি-না। কিন্তু কি আজব মেয়ে; উল্টো দিকে ফিরে গুটিসুটি মেরে ভোর অব্দি ঘুমিয়ে থাকত।
একসময় ব্যাপারটা সহজ হয়ে গেল! ওকে আর পাত্তা দেইনা তেমন, ও থাকলেও যা না থাকলেও তা।
সকাল হতেই সে বেরিয়ে যেত স্কুলে পড়াতে। আমি ঘুমোতাম প্রায় বারোটা’তক সে ফিরে এসে আমাকে আদর করে ঘুম থেকে তুলে খাইয়ে দাইয়ে ফ্রেস করে বাসায় পাঠাত। ও চাইত যে প্রতিদিনই ওর সাথে থাকি কিন্তু আমি ইচ্ছে করেই সপ্তাহে দু’য়েকদিন যেতাম। এজন্য কত মান অভিমান।
দিন চলে যায়- ভালবাসা ফিকে হয়ে আসে। অতি সহজে পাওয়া বিষয়গুলো মনে হয় এ আর এমন কি? এমন-ইতো হবার কথা ছিল।মানুষের সেরা দান আদর ভালবাসাকে একসময় মনে হয় অত্যাচার ‘Like Bitter Moon’!!!!!
এক সময় তার এই আদর কেন যেন আমার কাছে একঘেয়ে মনে হল।
তাছাড়া সে প্রায়ই বিয়ে করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু আমিতো বাবনিকে’র জিগার দোস্ত। আধা বাবনিক। আমরা মদ খেয়ে পুরো মাতাল হলে শপথ করেছিলাম- বিদেশী নারীকে বিয়ে করব না। সব মৌজ মাস্তি করে দেশে গিয়ে স্বতী-সাধ্বী, সুপার কিউট টাইপের একটা মেয়েকে বিয়ে করে কোমায় যাব! এজন্য প্রেম খানিকটা এগোলেই তাকে বলে দিয়েছিলাম যাই হোক না কেন আমি বিয়ে করতে পারবনা- আমার বাবা মায়ের বারণ আছে।
সুযোগ বুঝে প্রতিজ্ঞা করিয়ে ছিলাম সে কখনো আমাকে বিয়ে করতে বলবে না। কিন্তু গান্ডু মেয়ে সে প্রতিজ্ঞা ভুলে সেই কথাটাই বারবার বলে। সেজন্য সে ধর্ম পরিবার জাতীয়তা থেকে কত কিছুই না পাল্টে দিতে রাজী ছিল।
তবুও হপ্তায় দু-চার দিন বিরতি তাঁর আদর সোহাগ ভালবাসা আর পার্টি -সার্টিতে দীর্ঘ শীতকালটা বেশ কেটে গেল।
ববি তখন রোমানিয়ায়- রুশ মুল্লুক ছেড়ে সে রোমানিয়ান মেয়ের প্রেমে মজেছে! এবার যাকে কব্জা করেছে তাঁর হাত থেকে সহজে নিষ্কৃতি মিলেছে বলে মনে হয়না। বেশ কয়েকমাস তাঁর সাথে একদম যোগাযোগ নেই- মনে হচ্ছে এতদিনে রোমানিয়া ছেড়ে ভেনিস অব্দি চলে গেছে- সেখানে নিশ্চিত ফরাসী মেয়েকে বগলদাবা ঘুরে বেড়াচ্ছে!
গ্রীষ্মের শুরুতেই কেন যেন বেশ করে বিয়ের ভুত মাথায় চাপল এলিনার। আমার তখন নেহায়েত চ্যাংড়া বয়স। বিয়ে শাদীর কথা এই বয়সে ভুলেও মাথায় আনি না। তাছাড়া অকৃত্রিম বেকার তখন।
বিয়ে নিয়ে ক্যাচর-ম্যাচর একঘেয়েমি ছাড়াও অন্য নারীর আসক্তিতে তার সাথে যোগাযোগ ধীরে ধীরে কমিয়ে দিলাম।
সে ফোন করে ইনিয়ে বিনিয়ে তার কাছে যেতে বলে। আমি মজে আছি তখন নতুনে- পুরনোতে কি আর সোয়াদ মেটে।
গ্রীষ্মকাল- ওডেসার শীত রাশিয়ার মত দীর্ঘস্থায়ী নয়। খানিকটা ট্রপিক্যাল কান্ট্রির মত ঝুপ করে নেমে টুপ করে চলে যায়। মস্কো আর কিয়েভের বাসিন্দারা যখন ফার কোট থেকে বরফ ঝাড়ছে- কৃষ্ণ সাগরের বালু-তটে তখন প্রায় উদোম গায়ে নারী পুরুষ জলকেলি আর রৌদ্রস্নানে মশগুল!
আমরা তখন রঙ্গিন চশমার ফাঁকে রুশ, উক্রাইনান, মলদোভিয়ান, জর্জিয়ান, আর্মেনিয়ান আর বেলারুশের রমণীদের প্রায় নগ্ন শরীর দেখতে মশগুল। বিনে টিকেটে বে ওয়াচের যে কোন দৃশ্যকে হার মানিয়ে দেয় কৃষ্ণ সাগরের পারের সেই রিয়েল সিন।
এলিনার বাসায় যাওয়া আসা বেশ কমে গেছে। ও হপ্তা খানেক অনুরোধ করলে একদিন যাই। গিয়েই তর্জন গর্জন আর হুকুম আদেশ করি। এলিনা যেন প্রস্তুত হয়ে থাকে আমার হুকুম তামিলের জন্য- সে হাসি মুখে সব মেনে নেয়। নাদিয়া বিরক্ত হয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। ওর মা আমাকে দেখলেই কপাল কুঁচকে থাকে।
একদিন বাসায় গিয়ে দেখলাম গাঁটটি বোঁচকা গোছাচ্ছে কোথাও যাবার জন্য। আমি স্বভাবতই বেশ অবাক হলাম। আমাকে আগে ভাগে না জানিয়ে কোথায় যাচ্ছে সে?
জিজ্ঞেস করলে সে বিরক্তিকর হাসি দিয়ে বলল, -দাচায়( গ্রামের বাড়ি।অনেকেই পুরো গ্রীষ্ম কালটা সেখানে কাটিয়ে আসে; সাতার কেটে, সান-বাথ করে, মাছ ধরে, মাশরুম তুলে, শাক সবজীর চাষ করে – বিশেষ করে সত্যিকারে প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্য পাবার জন্য দাদায় ছোটে সবাই, শহরগুলো এক রকম খালি হয়ে যায়)।
এলিনাদের যে দাচা আছে সেটাই আমি জানতাম না। সান-বাথ করতে চাইলে কৃষ্ণ সাগরের এমন সুন্দর বালু তট ছেড়ে কেউ গাও-গেরামে যায়!!
-আমাকে কেন আগে ভাগে বললে না? বেশ রুক্ষ স্বরে জিজ্ঞেস করলাম?
আঁতে লেগেছে আমার- ওর কাছ থেকে এতটা স্পর্ধা আশা করিনি।
ফের তেমনি করে হেসে বলল, -'সবাই যাচ্ছে। তাছাড়া ঘুরে আসি তোমাকে ছেড়ে একটু দূরে। তুমি এখানে একটু ফুর্তি-টুর্তি কর'।
শেষ কথাগুলো বলার সময়ে ওর কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসছিল! চোখের কোনে জলের ঝিলিক দেখতে পেলাম।
তাঁর সেই অনুভূতি আমার হৃদয়কে বিন্দুমাত্র সিক্ত করল না। আমি ভীষণ ক্ষেপে গেলাম! অযথাই উচ্চস্বরে ঝগড়া করলাম। কিন্তু কেন করলাম- আমিতো মনে মনে এই চেয়েছিলাম। তাঁর থেকে দূরে দুরেই থাকিতে চেয়েছিলাম। আমার প্রতিশোধের ওভারডোজ হয়ে গেছে। আমার ভিতরে কেমন ছট-ফট করছিল, ওর রাহু থেকে মুক্তি পাবার জন্য।
এলিনাকে একসময়ে আমার দাস ভাবতে শুরু করেছিলাম। ভেবেছিলাম ওর প্রতিটা পদক্ষেপ আমার দৃশ্যমান থাকবে। আমার অঙ্গুলি হেলনে সে ডাইনে ঝুঁকবে- অঙ্গুলি হেলনে বায়ে। সে চরম ঘাওরামি করে যেমন আমার শত প্রলোভন, চেষ্টা আর অত্যাচারেও তাঁর সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়নি- তাঁর ভার্জিনিটি অক্ষুণ্ণ রেখেছে – তেমনি সে আজ দাচে যাবার ব্যাপারে বদ্ধ পরিকর! আমার তথাকতিথ পৌরুষে চরম আঘাত লাগায় আমি ক্ষিপ্ত উন্মাদ অনুভূতিহীন পশু হয়ে গেলাম!
তবুও সে আমার সব বাঁধা সে হাসতে হাসতে উপেক্ষা সেই গ্রীষ্মের ছুটিতে মাস দু’য়েকের জন্য দাচে( গ্রামের বাড়ি) গেল সান বাথের জন্য- হয়তো মনের দুঃখে আমাকে ভোলার জন্য, কিংবা নিজেকে নতুন করে পাবার আশায়।
---------------------------------------------------------------
সে যখন ফিরে আসল আমি তখন অন্য মানুষ। পুরোপুরি তা প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। সেবার সে অনেক কাকুতি মিনতি করেছিল অনেক চোখের জল ঝরিয়েছিল আমায় বাঁধার জন্য।
কিন্তু তখন আমার মনুষ্যত্ব অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে।এক নারীতে বাধা থাকতে আমি চাইছি না।
সে কথায় আমায় বাধতে না পেরে লোভ দেখাল শরীরের। নিজেকে পুরোপুরি বিলিয়ে দিয়ে আমি যখন যেভাবে তাকে সেভাবেই হবে সব-তুবুও যেন তাকে ভালবাসি।
পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link/30327377
প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link/30326898