আগের পর্বের জন্যঃ Click This Link
বিত্ত ও প্রভাবশালী লোককে রাশিয়ায় বলে ‘ক্রুতোই’! আমাদের ক্রুতোই রনি ভাই-এর একজন স্যাঙ্গাত নিয়ে পথচলা ভীষণ দুস্কর! আমাদের চ্যালা চামুন্ডার মত সাথে ঘুরতে হবে- তা ছাড়া আগে আসায় গোল বেঁধেছে! ওডেসার অলিগলি আমাদের নাকি চেনা তাই আমাদের সঙ্গ অতীব প্রয়োজন!
বড় ভাইয়ের পয়সায় কয়েকদিন বড় বড় হোটেলে উদরপূর্তি করলাম। আবতোবুশ’কে ঠ্যাঙা দেখিয়ে পুরো শহরময় আমরা ট্যাক্সি ক্যাবে ঘুরে বেড়ালাম! তবে এত রাজকীয় ভাবসাবে থাকার পরেও ববির মুখের ফ্যাঁকাসে ভাব যায় না। তাঁর কচি সম্পর্কের ধেড়ে বান্ধবীটাকে সময় দিতে না পারায় সে নিদারুন মর্মাহত!
রনি ভাই কেমন করে যেন জানতে পেরেছেন রেনেতা ও আমার প্রণয়ের ব্যাপারটা! আমার ধারনা উজ্জ্বল ব্যাটা বলেছে। কিন্তু সে স্বীকার করছে না!
আমাকে মোওকামত একদিন ধরে বললেন, চল তোমার বান্ধবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দাও?
আমি লটকে গেছি। কি করা যায় ভাবতে ভাবতে আত্মহননের জন্য বেশ বড়সড় একটা গর্ত খুড়লাম...
ভাবলাম প্রথম পরিচয়টা করিয়ে দেই রেনেতার বাবা-মায়ের সাথে। এর পড়ে পুরো ফ্যামিলি- মুরুব্বিদের সাথে জমবে ভাল। ওদের যে বড় হলরুমখানা আছে সেটা যদি রনি ভাই সাবলেটে নেয় তাহলেতো উত্তম! তাহলে সে বাড়িতে আমার বেশ কদর হবে।
রনি ভায়ের রুশ ভাষায় দখল আমার থেকে বেশ ভাল। নিজের শান শওকত জাহির করে- জিম করা শরিরের বাইসেপ দেখিয়েদ জমিয়ে ফেললেন। আমি তখন ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা- লাফাই আর ম্যা ম্যা করি। দু নম্বর বাচ্চাটা হল সজল- ভায়ের খাস পেয়াদা বলে।
রেনেতা যথাসম্ভব শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতার সাথে তাদের সাথে ভাব বিনিময় ও আপ্যায়ন করল। তাতিয়া আর নাতাশাও তেমনিধারা।
বিদায়ের সময় ওর বাবা মা মুল ফটক তক পৌছে দিল। রনি ভাই এমনি ধানাই পানাই করে আমার বোঁচকা ভর্তি প্রশংসা করলেন। এত প্রশংসার বানে আমিতো মরমে মরে যাই!
রনি ভায়ের রেনেতাদের পুরো পরিবারটাই ভীষণ ভাল লেগেছে নাকি! ওদের হলরুম সদৃশ বড় রুমটা তাঁর মস্কো থেকে সদ্য প্রস্থানরত অভিজাত আদমদের জন্য বেশ হবে।
আমাকে ঘাড় থাবড়ে বাহবা দিলেন, বাঃ ভাল একটা পরিবারে তুমি রিলেশন করেছ। এখানেই বিয়ে সাদি করে তুমি থিতু হয়ে যাও। রেনেতার মত এমন সুন্দরী আর লক্ষ্মী মেয়ে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার!
সেদিনের পরে রেনেতাদের বাসায় আমার খানিকটা ভাব বেড়েছে- কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমি ও বাসায় গেলেই ওর বাবা মা এত্তেলা পাঠায়- উঁকি দিলেই জিগায়, রনির খবর কি? ও কবে আসবে?
কি এক বিষম ঝামেলায় পড়লাম। অগত্যা উপায় না দেখে রনি ভাইকে গিয়ে পেড়ে ধরলাম- বিগ ব্রাদার কিছু একটা করেন?
রনি ভাই মনে হয় আমার পক্ষ থেকে এমন আব্দারের অপেক্ষা করছিলেন। বুদ্ধিমান মানুষ তিনি- খেলা বুঝে চাল দেন।
পরদিন একগাদা উপহার ঘাড়ে করে সজলকে নিয়ে হাজির। সজলকে দেখে আমার গা জ্বালা করছে কিন্তু মেনে নিলাম হাসিমুখে। ববিও আজ উপস্থিত ওর বান্ধবীকে নিয়ে –বড় ভাইয়ের সামনে চক্ষু লজ্জা করলে যে আর চলে না আর।
রেনেতার দুই বোনের জন্য খেলনা আর চকলেট এনেছেন তিনি। রেনেতার বাবার জন্য দামী দুবোতল মদ, ওর মায়ের জন্য একটা স্কার্ফ আর রেনেতার জন্য ফুল আর পারফিউম!
এত গিফট ওরা কস্মিনকালে দেখেনি নিশ্চিত। গরিবের গ্রান্ড রিসেপশন হয়ে গেল-রেনেতা ও তাঁর মা তোড়জোড় করে রান্নার কাজে লেগে গেল!
হরিকে সবাই ভজছে আজ- আমি যেন ব্রাত্য! গল্পে আড্ডায় রনি ভাই জমিয়ে ফেললেন আজ- ববিও কম যায় না। গল্পবাজ আর রসিক মানুষ সে! ভাষায় যতদুর দখল তাঁর –সম্ভবত সবটুকু এলেম ঢেলে দিল আজ সে।
খাবার টেবিলের এক কোনে বসে আমি সামনে যা পাচ্ছি তাই চিবোচ্ছি। রেনেতা বড্ড বেশী হাসি হাসি মুখ করে যেন ওদের দু-ভায়ের ঘাড়ে ঢলে-গলে পড়ছে।
খাবার শেষে বেশ আকর্ষণীয় ভাড়ায় ওদের বড় রুমখানা ভাড়া নিয়ে একগুচ্ছ কুপন রেনেতার মায়ের হাতে গুঁজে দিলেন তিনি।
তবে প্রথম আদম কিন্তু তিনি এ বাসায় এনে তুললেন না। সেই দল গিয়ে উঠল এলিনাদের বাসায়- তাদের দল নেতা সজল। এলিনার সাথে তখনো আমার পরিচয় হয়নি। নাম শুনেছি মাত্র।
আমি রনি ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম; ভাই , বিষয় কি?
ওদের যে এখানে এনে রাখলেন না- তবে এত পয়সা দিয়ে ঘর ভাড়া নিলেন কেন?
তিনি অমায়িক হেসে আমার কাধে হাত রেখে বললেন,
দ্যাখো এটা তোমার ভবিষ্যত শ্বশুরবাড়ি। যেনতেন লোক তো আর এখানে এনে রাখা যায় না।
একদম সহি বাত! আমি পারলে সেদিনই বড় ভাইকে গুরু মেনে দীক্ষা নিয়ে ফেলি।
পরের পর্বের জন্যঃ Click This Link
প্রথম পর্বের জন্যঃ Click This Link