একটা দৃশ্য কল্পনা করুন। একটা মেয়ে একাকী হেঁটে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে, সে হয়তো আপনার বোন, প্রেমিকা কিংবা বান্ধবী। একটা ছেলে এসে তার পথরোধ করে দাঁড়ালো। তারপর বললো, আমি আপনাকে চুমু খেতে চাই। মেয়েটা চিৎকার শুরু করতেই লোক জড়ো হলো। তখন আরেক নাটক, সেই ব্যক্তি/ছেলেটা দাবী করলো সে প্র্যাঙ্ক ভিডিও বানাচ্ছিল, এদিক সেদিক কোথাও লুকোনো ক্যামেরাও রাখা আছে। তার কথাবার্তায় লোকজনের কি প্রতিক্রিয়া হয় সেটা দেখার জন্যেই সে এই কাজটা (তাদের ভাষায় গবেষণা) করছে! মানুষরূপী ছাগলটার কানের নীচে কষে দুটো চড় মারার ইচ্ছেটাতে লাগাম দিতে পারবেন তখন আপনি?
গুগলে সার্চ দিলাম Prank শব্দের মানে জানতে চেয়ে। গুগল জানালো শব্দটার অর্থ তামাশা বা কৌতুক করা, কারো জন্যে দুষ্টুমি করে মজার কোন ফাঁদ বানিয়ে রাখা। দুষ্টুমি, মজা, তামাশা বা কৌতুক- সবকিছুরই তো একটা সীমা আছে। সেটা আমরা ক’জনে মানছি?
.
এই বঙ্গে প্র্যাঙ্ক নামের অখাদ্য বস্তুটার আমদানী ঘটেছিল সম্ভবত ইউটিউবার সালমান মুক্তাদিরদের হাত ধরে। তবে সেখানে একটা লাগাম ছিল। এখন যেগুলো হচ্ছে ‘প্র্যাঙ্ক’ শব্দের নামে, সেগুলোকে নোংরামি বললেও কম বলা হয়।
বিশেষত মেয়েরাই বেশী আক্রান্ত হচ্ছে এই নোংরামীর, জনসম্মুখে লুঙ্গি খুলে ফেলা, গায়ে প্লাস্টিকের সাপ ছুঁড়ে মারা বা চুমু খেতে চাওয়াটা ঠিক কোন ধরণের প্র্যাঙ্কের আওতায় পড়ে সেটা কি বুদ্ধিশুদ্ধি পকেটে ঢুকিয়ে রেখে রাস্তায় নামা এই ছেলেগুলো কখনও ভেবেছে কি?
.
আমার খুব জানতে ইচ্ছে হয়, এরা কি ঘরে বাইরে সব জায়গাতেই একই রকম? এদের মা-বোনদের সামনে হুট করে লুঙ্গি খুলে ফেলেও কি এরা বলে, স্যরি প্র্যাঙ্ক করছিলাম, ওই যে হিডেন ক্যামেরা!
.
কিংবা অফিসফেরত ক্লান্ত বাবার গায়ে প্লাস্টিকের সাপ ছুঁড়ে দিয়ে সোশ্যাল এক্সপেরিমেন্ট করে? করতেও পারে, এদের দ্বারা এসব খুবই সম্ভব। মানুষের নৈতিক শিক্ষাটা তো পরিবার থেকেই আসে, পরিবার সেটা সন্তানদের ঠিকঠাকভাবে দিতে না পারলে কি হয় তার প্রমাণ প্র্যাঙ্ক ভিডিও নির্মাণকারীরা দেখিয়ে দিচ্ছে ইদানিং।
.
রসিক জাতি হিসেবে আমাদের জুড়ি ছিল না কখনোই। এই ভারতীয় উপমহাদেশেরই মানুষ ছিলেন বীরবল, হাস্যরসের সাগর গোপাল ভাঁড়ের জন্মই তো হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ায়।
.
অথচ সেই একই অঞ্চলের মানুষ হয়েও আমাদের ছেলেমেয়েরা এখন বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছে প্র্যাঙ্ক ভিডিও নামের নোংরামীকে, যেখানে হাস্যরসের ছিটেফোঁটাও নেই, আছে কুৎসিত মানসিকতার কদর্য বহিঃপ্রকাশ!
ডোবার ব্যাঙের গল্পটা সবাই জানেন, একজনের জন্যে যেটা খেলা, অন্যকারো জন্যেই সেটা মরণ হতে পারে। রাস্তাঘাটে প্র্যাঙ্কের নামে এসব নোংরামিতে কেউ কেউ মজা পেতে পারেন, তবে ভুক্তোভোগী মানুষটা সেই মজার অংশ হতে পারেন না কখনোই। তার মন থেকে আপনাদের জন্যে একরাশ ঘৃনা ছাড়া আর কিছুই উৎসর্গ হয় না।
.
আর মানুষের সহ্যক্ষমতাও খুব বেশী না এখন, কাল আপনার প্র্যাঙ্ক নামের কদাকার নাটকগুলো নিতে না পেরে যদি কেউ আপনারই গায়ে হাত তুলে বসে, খারাপ কোন দুর্ঘটনা ঘটে যায়, সেটার দায় কে নেবে? এ কারণেই সম্ভবত প্র্যাঙ্কের পুতুল হিসেবে মেয়েদেরকেই বাছাই করা হচ্ছে বেশী।
.
জীবনে আনন্দ বিনোদনের খুব অভাব? মানুষকে হাসাতে চান? গায়ে রং মেখে সং সেজে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ুন, সামনে একটা থালা বাটি কিছু রাখুন। লোকের পছন্দ হলে দু-চারটে টাকা ফেলে যাবে, কিছু বাড়তি আয়ও হবে আপনার! গান জানা থাকলে সেটাও গাইতে পারেন, সমস্যা নেই কোন।
.
আরো ভালো কিছু করতে চাইলে স্ট্যান্ডআপ কমেডি করুন, কেউ নিষেধ করবে না। শুধু প্র্যাঙ্ক ভিডিও বানানোর নামে অযথা মানুষকে উত্যক্ত করে নিজের অসভ্যতার পরিচয় দিয়ে বেড়াবেন না দয়া করে।
সুত্র- ইন্টার নেট ।।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:২৮