যাই হোক মিঃ অনিয়নের সেঞ্চুরী, গরু ছাগলের কোলাকুলি আর মোজো উট্ভট অফারের মধ্য দিয়ে এসে গেল পবিত্র ঈদুল আযহা। চারদিকে জমে উঠেছে বিরাট গরু ছাগলের হাট। সেসব হাটে গরু ছাগলের পাশাপাশি নানা পেশা ও বয়সের মানুষের ভীড় লেগে আছে। ব্লগারেররাও এই দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই।
তো ব্লগার নেক্সাস গেল গাবতলীর হাটে। সেখানে বেশ কিছু ব্লগারের সাথে দেখা এবং কথোপকথন....
প্রথমে দেখা ব্লগার মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে।
- আসসালামুআলাইকুম মন্ত্রী সাহেব।
- ওয়ালাইকুম আস সালাম। সালামের উত্তর দিয়ে মন্ত্রী মহোদয় কোলাকুলি করতে এগিয়ে এলেন। আমি অবাক হলাম। গত চার বছর চেষ্টা তদবীর করেও মন্ত্রী সাহেবের দেখা পেলাম না। আজ উনি স্বয়ং গরুর বাজারে এবং যেচে এসে কোলাকুলি করতে চাইছেন ! আমি হালকা টাসকি খাইয়া কোলাকুলি করতে গিয়ে দেখি পেছনে দাঁড়িয়ে চেয়ারম্যান০০৭ সাহেব ক্যাবলা কান্তের মত মুচকি মুচকি হাসছেন।
- কি ব্যাপার মন্ত্রী সাহেব আপনি নিজেই গরুর বাজারে?
- আর বইলেন না নেক্সাস ভাই। সামনে ইলেকশান। বুঝেনতো জনগনের সেবা করার এটাই সুযোগ। ৭ টা গরু কিনছি । এবার গ্রামের গরীব দুঃখী কেউই মাংস না খেয়ে থাকবেনা। ঐ যে দেখেন চেয়ারম্যান সাহেবও আছে। উনিই সব তদারকি করছেন। আমি চেয়ারম্যান সাহেবের দিকে তাকালাম। উনার মুখে তৃপ্তির মোসাহেবি হাসি।
এবার আমি মন্ত্রী মহোদয়ের উদারতার মোজেজা বুঝতে পারলাম।
আমার খুব ইচ্ছে হল মন্ত্রী মহোদয় কে জিজ্ঞেস করি গরু কেনার টাকা হালাল তো? কিন্তু চেয়ারম্যান পাশে ব্লগার করিম লাঠিয়াল , গুন্ডাপোলা, আর ডাকাত কে দেখে আমি শান্ত হলাম এবং কোন রকমে সেখান থেকে গা ঢাকা দিয়ে সামনে এগিয়ে এলাম।
কিছুক্ষন পর ব্লগার রেজোওয়ানার সাথে দেখা...
- আরে রেজুপা যে। আপনি গরুর হাটে কি করেন। গরু না ছাগল কিনবেন?
- আরেনা গরু তো কিনবে সোহার বাপে।
- তা আপনি কি জন্য আসলেন।
- সেটা বলা যাবেনা। পরে ব্লগে আর হেরিটেজ বাংলাদেশ পেইজে পাবা।
- দুর রেজুপা। আপনি এমন কেন? সব কিছুতে হেয়ালী। আমি আপনার ব্লগের নিয়মিত পাঠক। আমাকে বলা আপনার উচিত।
আমার অভিমানে রেজুপা কিছুটা নরম হলেন। এবার আমাকে একটু আড়ালে ডেকে নিয়ে বল্লেন,
-শুনো ২০০ বছর আগের ঢাকার কুরবানীর ঈদ নিয়ে একটা আর্টিকেল লিখব। সেটা হবে সচিত্র আর্টিকেল। কিন্তু আমার কাছেতো কোন ছবি নাই। তাই এখান থেকে কয়েকটা সাদাকালো ছবি তুলে ২০০ বছর আগের ছবি বলে চালিয়ে দেব। তুমি আমার ছোট ভাই হিসেবে বল্লাম। খবরদার কাউকে বলবেনা।
আমি মনে মনে হাসলাম আর রেজুপা কে তার ছবি কারিশমার কথা কাউকে না বলার আশ্বাস দিয়ে অন্যদিকে মোড় নিলাম।
আমি আনমনে হাঁটছি আর বাদাম খাচ্ছি। হঠাৎ দেখি ব্লগার শিপু ভাই। শিপু ভাইয়ের কাঁধে ফুটফুটে একখান পোলা। পোলাটা কে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন হলনা। কারণ শিপু ভাই তার বাম পকেটের উপর উর্ধমুখি এ্যরো চিহ্ন দিয়ে লিখে রেখেছেন "উপ্রে এইডা আমার পোলা'' যাই হোক সামনে এগিয়ে গেলাম।
- কি ব্যাপার শিপু ভাই গরু না ছাগল কিনবেন?
- আস্তাগফিরুল্লাহ আমার সামনে ছাগুর নাম নিয়েন না।
- ওহ সরি ভাই! তা ছবিতে দেখলাম ৩ মইন্যা গরু একাই কাটলেন। এবার কয় মইন্যা কিনবেন।
- তাতো জানিনা। গরু কিনবে গ্রামে।
- ওহ তাহলে আপনি গরুর- ছাগলের হাটে ক্যন?
- আর বইলেন না ভাই। শুনলাম কিছু লোক দেশী ছাগুর গায়ে রং লাগাইয়া আরবের ধার্মিক দুম্বা বলে ক্রেতাদের ঠকাইতেছে। তাই আমরা কয়েকজন মিলে একটা কেপি টেষ্ট সেন্টার চালু করছি। এতে ক্রেতাদেরও উপকার হইলো তারা আসল ছাগু চিনতে পারবে তেমনি আমাদেরও দুই পয়ষা আয় হবে। বুঝেন না নতুন বিজনেস আইডিয়া আরকি
শিপু ভাইয়ের নতুন বিজনেস আইডিয়ায় মুগ্ধ হয়ে তার পোলার নাকে একটা আদর দিয়ে বিদায় জানালাম।
যাই হোক শিপু ভাইকে বিদায় দেওয়ার কিছুক্ষন পর দেখা স্বপরিবারে ব্লগার জুন । এগিয়ে গেলাম সেদিকে। জুনাপা দুলাভাই ব্লগার মুরশীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
- কি ব্যাপার দুলাভাই আপনি গরু না ছাগল?
- শ্যালকের হালকা রসিকতা বুঝতে পেরে দুলাভাই বল্লেন আরে ভাই গরুও না ছাগলও না। বলতে পারো ঘোড়া। আসছি অন্য কাজে।
- কি কাজ?
- সেটা জুন কে জিজ্ঞেস কর
-কি ব্যাপার জুনাপা সপরিবারে গরু -ছাগলের হাটে কেন?
- না ভাই তেমন কিছু না? বিশ্বের অনেক দেশের গরু ছাগলের হাট দেখেছি। ভাবলাম এবার একটা পোষ্ট দেবো " দেশে দেশে গরু ছাগলের হাট"নামে । তাই আমাদের গাবতলীর হাটের কিছু তথ্য জানতে ও ছবি নিতে এসেছি। আমার ছেলে হোল আমার অন্যতম সহযোগী। তাই তাকে নিয়ে এসেছি।
- তাহলে দুলাভাই কি জন্য?
- আরে ভাই বুঝস না ---ব্যাগ,ক্যামেরা, পানির বোতল, খাতাপত্র এসব আলগানোর জন্যও তো একটা লোক লাগে তাইনা !
দুলাভাইয়ের জন্য একটু মায়া হল। দুনিয়ার সব জামাইরা ঘোড়া হয়ে শান্তি পাক- মনে মনে এই দোয়া করতে করতে জুন পরিবার কে বিদায় জানালাম।
যাই হোক আমিও হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত। একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্য এসে দাঁড়ালাম গাবতলী হাটের গেইটে। ওমা হঠাৎ দেখি একপাশে নাদুস নুদুস চেহারা নিয়ে চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে জলন্ত অনিলের মত দাঁড়িয়ে আছে আমাদের কাল্পনিক ভালবাসা । আমি আস্তে গিয়ে পিছন দিক থেকে তার ঘাড়ে হাত রাখলাম-
- কি ব্যাপার হিরো গরুর বাজার কি গার্লস কলেজের গেইট নাকি? এই খানে এমনে দাঁড়িয়ে আছেন যে?
সে তো পুরাই আমতা আমতা
- না ভাই হইছে কি আব্বায় গরু কিনবার আইছে তো। তাই আব্বার সাথে আসছি।
-দুর মিয়া মিছা কথা কম কন। আপনার আব্বারে দেখে আসলাম ক্রিকেট খেলা দেখতেছে আর আপনি কন গরু কিনতে আইছে। হাছা কইরা কন এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
ধরা খেয়ে চান্দু পুরাই ঘেমে গেছে। এবার আমার হাত ধরে কয় নেক্সাস আপনারে কইতাছি তয় তার আগে কন কাউরে কইবেন না।
- ঠিক আছে কমুনা।
- নেক্সাস ভাই হইছে কি কয়দিন আগে বৃষ্টির মধ্যে যাত্রী চাউনিতে এক মাইয়ার সাথে দেখা। সেরাম ফিগার নেক্সাস ভাই। ওর মত আপনি একটা গরুও থুক্কু মাইয়াও পাইবেন না । এর পর থেইক্কা এই মাইয়ার খোঁজে রাত নাই দিন নাই পুরা ঢাকা শহর চষে বেড়াচ্ছি। কিন্তু আর পাইনা। তাই ভাবলাম কোরবানী উপলক্ষে যদি বাবা মায়ের সাথে গরুর বাজারে আসে। তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছি। প্লিজ নেক্সাস ভাই কাউরে কইয়েন না। যাই হোক বন্ধুপ্রতিম সহ ব্লগারের জন্য দুঃখ হল আমার। এই কোরবানির ঈদ উপলক্ষে আল্লাহ যেন তার প্রিয় গরু থুক্কু মেয়েটিকে মিলিয়ে দেয় এই শুভকামনা জানিয়ে বিদায় নিলাম।
আবার আমি আনমনে হাঁটছি। হঠাৎ দেখা ব্লগার মামুন রশিদ ভাইয়ের সাথে। উনার হাতে ক্যামেরা ও খাতা কলম।
- হ্যালো মামুন ভাই! কেমন আছেন?
- আরে নেক্সাস যে। আমি বেশ ভাল। আপনি?
- আমিও ভাল। তা গরু কেনার জন্য সিলেট থেকে গাবতলী চলে আসলেন !
- আরে না ভাই এসেছি অন্য কারণে।
- কি সেটা?
- আসলে হইছে কি এবার গাবতলী বাজারের সব সেরা গরু নিয়ে একটা সংকলন পোষ্ট দেবো ভাবছি। তাই সব গরুর ছবি ও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে এসেছি।
- বাহ ! বাহ!! বেশ ভালো । অনেক পরিশ্রমের কাজ।
মামুন ভাইয়ের কাজের প্রশংসা করলাম। উনি একটা চা অফার করলেন। পাশের টং দোকানে দুজনে চা খেয়ে বিদায় জানালাম।
যাই হোক বিনা কারণে অনেক্ষন হেঁটে হেঁটে আমি ক্লান্ত হয়ে গেলাম। এবার ভাবলাম বের হওয়া যাক। যেই হাটের গেইটে মেইন রাস্তায় আসলাম অমনি দেখি খাতা পত্র নিয়ে বাজারে ঢুকছেন ব্লগার আরজুপনি । ত্রস্ত হয়ে এগিয়ে গেলাম।
- স্লামুআলাইকুম পনিপা।
- আরে নেক্সাস যে। ওয়ালাইকুমস্লাম।
- কি ব্যাপার আপা গরু কিনবেন নাকি? একা আসলেন। দুলাভাই কে সাথে নিয়ে আসলে ভাল হতোনা।
- আরে দুর বোকা গরু কিনতে আসিনি।
-তাহলে?
- নেক্সাস আমি খেয়াল করলাম আমাদের সমাজে কোরবানী আসলে সবাই শুধু ষাঁড়,বলদ গরু কিংবা খাসি ছাগল কিনে । বেশির ভাগ লোক ফিমেইল পশু কিনতে ইচ্ছুক নয়। আধুনিক যুগে এসে এই জেন্ডার বৈষম্য মেনে নেওয়া যায়না । তাই ভাবলাম ঈদের আগে এটা নিয়ে একটা পোষ্ট দেবো। কিছু কেস ষ্ট্যাডি করতে এখন সরাসরি বাজারে চলে এলাম। কাজটা কেমন হবে নেক্সাস।
-খুব ভাল হবে পনিপা। আমি আপনার সাথে আছি।
যাই হোক পনিপা আর দেরি করলেন না। তাড়াতাড়ি বাজারে প্রবেশ করলেন। আমিও এক পা দুপা করে সামনে আগালাম।
হঠাৎ দেখি ব্লগার গরুচোর । ওরে দেখেই আমার মাথা পুরাই হট। ধর! ধর !! বলে ওর পিছনে ছুটলাম।
হঠাৎ দেখি আমি আমার বিছানার পাশে মেঝেতে পড়ে আছি। মাঝায় তীব্র ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলাম। আর আমার বউ মাঝ রাতে আমার কি হপে গো .... বলে বিলাপ শুরু করে দিয়েছে।
( ডিসক্লেইমার: ফান পোষ্ট আমার দ্বারা হয়না। জাষ্ট ঈদ উপলক্ষে প্রিয় ব্লগার কাল্পনীক-ভালবাসার অনুরোধে লিখা। নিছক প্রিয় ব্লগারদের নিয়ে ফান করার জন্য উদ্ভট নিউরনের তাড়নায় এটা করা। কেউ অন্যভাবে নিবেন না আশা করি। সবাইকে ঈদ মোবারক)
উৎসর্গ: ব্লগার কাল্পনিক_ভালবাসা প্রিয়তমেষু