উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু,
যুগ হতে যুগান্তরে, সাগর-মহাসাগরে
যাযাবর পাখির মত দেখেছি ঘুরে ঘুরে;
অক্ষীর তিক্ষ্নতায় বিন্যস্ত জনপদ;
সভ্যতার ষড়ভূজ মানচিত্র,ঈশ্বরের বহুরূপী লীলা-
কত আলোক নগরী, আকাশ চুম্বি অট্টালিকা-
হিমালয় থেকে এন্টার্কটিকা।
তবুও আমি এইখানে-
এই নীল ও জলের সঙ্গমে
পাতি হাসের নরম বুকের স্পর্শ মাখা নদীর তীরে
বেঁধেছি ঘর ঘাষফুল বুকে নিয়ে।
যেখানে
একদিন এসেছিল বর্গী আরব বনিক,
ফিরিঙি, পূর্তগীজ আর মোঘল পাঠান
লুটে নিয়ে ছিল মনিমুক্তা, মাটির নির্যাস
চন্দ্রমল্লিকা আর বাতাবি নেবুর ঘ্রাণ
যেখানে
সজনে পাতার গন্ধে বুঁদ হয়ে থাকা নরম বিকেলে-
উড়ে যায় প্রজাপতি স্বর্ণ লতার বনে,
কামরাঙার নরম শরীরে হাসে হলুদ রোদ,
নিম-নিশিন্দার বিশুদ্ধ বাতাসে দোল খায়
পোয়াতী ধানের শীষ গন্ধ মর্মরে,
হিজলের ডালে ঘুঘুর প্রণয় উৎসবে
জেগে থাকে উদাস দুপুর,
দুরন্ত কিশোর সরিষার ছবি আঁকা পথে
ওড়ায় ঘুড়ি অনিকেত মেঘের সাথে ।
আঁধারের বুকে মাটির প্রদীপ ঝিলমিল,
সহস্ত্র নক্ষত্রের কোলাহলে মায়াবী রাতে
জেগে থাকে রূপালী চাঁদ নির্ঘুম
জোনাকী মেয়ের প্রেমে।
আমি এই স্নিগ্ধ সূবর্ন ভূমে এসে
পদ্মা-মেঘনা-সোমেশ্বরীর ঢেউ বিন্যাসে
ভুলিয়াছি আর পৃথিবীর যত রূপ
আমারে শুধু কাছে ডেকেছে বিস্তৃত ধানক্ষেত,
ধূলার মেঠোপথ, মাঠের পরে বটের ছায়া।
আমার প্রতিক্ষায় যেন তারা বহুকাল বসে আছে চুপ।
আমি এইখানে
এই কোজাগরী পূর্নিমার দেশে,
তাঁতের শাড়ির প্রেম আলিঙ্গনে
বাবুই পাখির মায়ায় বেঁধেছি ঘর
শ্যামল মৃত্তিকার কোল ভালবেসে।