somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগগুলার পিছনে একটু যুক্তি খুঁজি।

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৩ শে অক্টোবর, ২০১৩ একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম। শেখ হাসিনা কি বাংলাদেশের মাহাথির মোহাম্মদ হতে পারবে? শিরোনামে। সেখানে যারা কমেন্ট করেছেন তারা কিছু পাল্টা যুক্তিও তুলে ধরেছেন। অনেক গুলো অভিযোগের কথা বলেছে যেগুলোর যুক্তি খণ্ডন করার জন্য এই লেখা।

অভিযোগ ১: আওয়ামী লীগ শেয়ার বাজার ধ্বংস করেছে।

আমার যুক্তি: বলা হয় আওয়ামী লীগ শেয়ার বাজারে লুটপাট করে হাজার কোটি টাকা কামিয়েছে। শেয়ার বিষয়ে কথা বলার আগে একটু ভূমিকা নিচ্ছি। বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম বেড়ে হয়েছিল ৬০০০০/= পরে কমতে কমতে সেই স্বর্ণের দাম ৪০০০০/= টাকা পর্যন্ত এসেছিল। মনে করুন আমি ৬০০০০/= টাকা দিয়ে এক ভরি স্বর্ণ কিনেছি। পরে দাম কমে স্বর্ণের দাম ৪০০০০/= টাকা হয়ে গেল। এখন আপনার কাছে প্রশ্ন, আমার ২০০০০/= টাকা নিল কে? আমি আপনার স্বর্ণ কম দামে বিক্রি করলাম না, তাও আমি কি লস হয়েছে বলে ধরে নেবে? জবাব টা অবশ্যই দেবেন, দিতে না পারলে এখনই এই ব্লগ থেকে কেট পড়ুন।

শেয়ার বাজার ধসের জন্য অবশ্যই সরকার কিছু দায় এড়াতে পারবে না, কিন্তু সবচে বড় দায় হলো মূর্খ বিনিয়োগকারীদের, যার সংখ্যা কম করে হলেও মোট বিনিয়োগকারীর ৯০%। শেয়ার বাজারের কিছু বুঝে না, কিন্তু না বুঝে অতিমুনাফার আশায় অন্যের কথা ধরে, ধার করে, জমি বেচে, গুরু বেচে, আলু বেচে, তুষ বেচে শেয়ার বাজারে চলে এসেছে 'ব্যাবসা' করতে এবং কোন বাচ-বিচার না করে শেয়ার কিনে বাজারটাকে অতিমূল্যায়িত করেছিল। আর অতিমূল্যায়িত বাজারে ধস ঘটে এটা সারা পৃথিবীর শেয়ার বাজারের নিয়ম। ডিএসসি এই নিয়ে অনেকবার সতর্ক করার পরও সেইসব তথাকথিত বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেছে এবং বাজার ধসের গুজবে শেয়ার বিক্রি করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। শুধু শেয়ার বাজার নয়, দুনিয়ার সকল পণ্যর দাম উঠা নামার জন্য যা দায়ী তা হলো ডিমান্ড এন্ড সাপ্লাই। সুতরাং শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়াতে বাজার স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশী ধসে গেল। ঐ যে স্বর্ণের দাম দিয়ে উদাহরণ দিলাম মনে আছে? আচ্ছা বলুন তো স্বর্ণের দাম যখন পড়ছিল তখন কেন সবাই যার যা স্বর্ণ আছে তা বিক্রি করার জন্য জুয়েলারি দোকানে লাইন ধরলো না? আপনি হয় তো বলবেন দরবেশ বাবাদের কথা। দুনিয়ার এমন কোন শেয়ার বাজার নাই যেখানে দরবেশ বাবা নাই, দরবেশ বাবা আছে যেনেও আপনি শেয়ার বাজারে গেলেন কেন? আর মনে রাখবেন, দরবেশ বাবারা অনিয়ম অবশ্যই করেছে, টাকা লুট অবশ্যই করেছ এবং সেটা আইনের মধ্যে থেকে এবং মূর্খ বিনিয়োগকারীরা তাদের সুযোগ করে দিয়েছিল বলে।

অভিযোগ ২. আওয়ামী লীগ হলমার্ক কেলেংকারী করেছে।
আমার যুক্তি: আওয়ামী লীগ হলমার্ক কেলেংকারী করেনি। যারা কেলেংকারী করেছিল তাদের ধরে লাল দেয়ালে ঢুকিয়েছে। হলমার্ক কেলেংকারী বিষয়টা কি তা আগে বুঝতে হবে, বুঝে অভিযোগ করবেন। হলমার্কের এমডি তানভির কিছু অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাকে হাত করে ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নিয়েছিল। এবং সেটা অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। পরে সরকার ঐ কেলেংকারির হোতাদের গ্রেফতার করেছে এবং চৌদ্দ সিকে ঢুকিয়েছে। এতবড় অনিয়ম, দুর্নীতি করে রক্ষা পাওয়া যায় না এটা আওয়ামী লীগ সরকার ঐ কেলেংকারির সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে এবং বিচারের মুখোমুখি করে প্রমাণ করেছে। এর জন্য আওয়ামী লীগকে বরং আমরা বাহবা দিতে পারি, কি বলেন?

অভিযোগ: ডেস্টিনি কেলেংকারী।
আমার যুক্তি: কিছু লোক ডেস্টিনি নামক প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা মেরে মিলিওনিয়ার হয়ে গেল, বিদেশে টাকা পাচার করল এবং দাপটের সাথে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যেতে লাগল। তারা এত টাকার মালিক বনে গেলে যে, এমনকি সরকারকেও থোয়াই কেয়ার করছিল। শেষ পর্যন্ত সেইসব দুর্বৃত্তকে আওয়ামী লীগ সরকার ধরলো এবং আইনের আওতায় আনল। এটাও আওয়ামী লীগের একটা সাফল্য। আওয়ামী লীগ দেখিয়ে দিল তুমি যত টাকার মালিক হও আর ক্ষমতাধরই হও না কেন, অপরাধীর শেষ রক্ষা হবে না। বিচার তোমাদের হবেই। সুতরাং ডেস্টিনি প্রসঙ্গেও আওয়ামী লীগকে সাধুবাদ জানাতে হয়। আওয়ামী লীগ ওদের না থামালে আরো অনেক মানুষের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারত ।

অভিযোগ: সাগর-রুনীর খুনীদের গ্রেফতার করা হলো না কেন?
আমার যুক্তি: এই ক্ষেত্রে আমিও হতাশ। এত বড় একটি ঘটনার কোন রকমের কুল-কিনারা করতে না পারা নিশ্চয় একটি বড় ব্যর্থতা। তবে মনে রাখতে হবে, ঘটনা কিন্তু এখানেই শেষ নয়, অদূর ভবিষ্যতে যে খুনিরা ধরার পড়বে না এমন গ্যারান্টি দিতে পারি না।

অভিযোগ: ফেলানী হত্যা।
আমার যুক্তি: ফেলানী কে আওয়ামী লীগ গুলি করেনি। কিছু লোক এমন ভাবে এই প্রসঙ্গে কথা বলে যেন শেখ হাসিনা গুলি করে ওকে মেরেছে । ফেলানী তার বাবাসহ অবৈধ ভাবে সিমান্ত পার হওয়ার সময় বিএসএফ ফেলানীকে গুলি করে মারা। এটি অবশ্যই খুব দুঃখের একটি ঘটনা। বুঝলাম ফেলানী অবৈধ ভাবে সিমান্ত পাড়ি দিচ্ছিল, তাই বলে মেয়েটাকে গুলি কররে মেরে ফেলতে হবে? এখানে আওয়ামী লীগ কি করতে পারে? ভারতকে এই হত্যার বিচারের জন্য চাপ দিতে পারে? তা দিয়েছেও। কিন্তু বিএসএফ এই হত্যাকে বৈধতা দিয়ে একটি প্রহসনের বিচার করেছে। ফেলানীর পরিবার সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। আমরা আসা করছি এবার সঠিক বিচার আমরা পাব। সুতরাং ফেলানীর ঘটনায় আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে যেটা হচ্ছে পুরোটাই অপ্রপচার।

অভিযোগ: কুইক রেন্টাল।
আমার যুক্তি: এই যে আপনি আমার এই লেখা পড়ছেন ঠিক এই সময় কুইক রেন্টাল না হলে হয় তো এখন লোডশেডিং-এ বসে শরীরের ঘামাচি চুলকাতেন। যেকোন প্রকারে আমাদের বিদ্যুত দরকার ছিল, আমরা সেটা পেয়েছি এটাই বড় কথা। কই, আপনারা যারা কুইক রেন্টালের বিপক্ষে কথা বলছেন তারা তো কখনো বলেন নি যে, কুইক রেন্টাল চাই না, নিজেরা বিদ্যুত কেন্দ্র করো, প্রয়োজনে আমরা বিদ্যুতের জন্য ১০ বছর অপেক্ষা করব। বলেছিলেন? কুইক রেন্টালের বিপক্ষে বলার আগে নিজের ঘরের বিদ্যুত লাইন অফ করুন, তারপর বলুন। যেভাবেই হোক বিদ্যুত দিতে পেরেছে এটা আওয়ামী লীগের সাফল্য, আওয়ামী লীগই তা পারে।

অভিযোগ: বিশ্বজিৎ হত্যা।
আমার যুক্তি: খুবই হৃদয় বিদারক একটা ঘটনা। সত্যি বলতে ছাত্রলীগ অনেক কুকর্ম করেছে যার মধ্যে এটা নিঃসন্দেহে সবচে বড়। ছাত্রলীগকে আরো কঠিন ভাবে হেন্ডেল করা উচিত ছিল। বিশ্বজিত হত্যার সাথে জড়িত অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন এবং তাদের বিচার হচ্ছে এটা কিন্তু কম কথা নয়। অতীতে শিবির-ছাত্রদল অনেক খুন-খারাবি করেছিল কিন্তু তাদের বিচার হয়েছে এমন কোন নজির আছে কি? নিজ দলের কর্মীদের বিচার করা যায় এটাও সম্ভবত আওয়ামী লীগই দেখাল।


আওয়ামী বিরোধীদের অনেক অভিযোগ। বড়বড় অভিযোগ গুলোর জবাব যথাসম্ভব দিলাম। আওয়ামী লীগের সাফল্যর কাছে এই অভিযোগ গুলো কি অনেক বেশী ম্লান নয়? আবারও বলি, চোখের সামনে থেকে অপরাজনীতির কালো পর্দা সরিয়ে আওয়ামী লীগের সাফল্য আর ব্যর্থতাকে একটু পাল্লায় তুলুন। দেখবে সাফল্যর পাল্লাটা আওয়ামী লীগের দিকে হেলে আছে। সবচে বড় কথা আমরা আওয়ামী লীগকে আরেকবার সুযোগ দিয়ে দেখতে পারি তারা তাদের ভুলগুলো সংশোধন করতে পারে কিনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৬
১৬টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×