somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারায়নগঞ্জের নির্বাচন এবং সেনাবাহিনী বিতর্ক

২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নারায়নগঞ্জের নির্বাচন এবং সেনাবাহিনী বিতর্ক
শওগাত আলী সাগর
নারায়নগঞ্জের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনটি এমনতেই দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বেশ আগ্রহ তৈরি করেছে। নির্বাচনের ঠিক আগ মূহূর্তে সেনা মোতায়েন নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি নারায়নগঞ্জের প্রতি সকল মহলের আগ্রহকেই যে কেবল উসকে দিয়েছে তা নয়।নতুন করে শংকা এবং প্রশ্নেরও জন্ম দিয়েছে।নির্বাচন কমিশনের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে সেনা মোতায়েন না হলে সেটি নিয়ে প্রার্থীদের কারো কারো মনে হয়তো ক্ষোভ জন্ম নিতো, কিন্তু সর্বমহলে প্রশ্নের তৈরি করতো না। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেনা মোতায়েন বন্ধ করে নি, তারা নিয়মানুসারে সরকারকে অনুরোধপত্র পাঠিয়েছে।ফলে নির্বাচন কমিশনও জানতো শুক্রবারের সকাল থেকেই নারায়নগঞ্জে সেনাবাহিনী থাকবে। কিন্তু বাস্তবে সেটি হয় নি।যেটি নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতাকে প্রশ্ন এবং সন্দেহের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আর নির্বাচন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে সেই কমিশনের হাতে একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের আশা করার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারনই থাকে না।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সরকারি দলের সমর্থিত একজন প্রার্থী আছেন। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা দলে দলে নারায়নগঞ্জে গিয়ে তার পক্ষে ভোট চাইছেন।নির্বাচনী আচরণবিধি তাতে লংঘিত হচ্ছে কী না, সেদিকটায় নজর দেবার মতো ফুসরত তাদের ছিলো না। পুরো নির্বাচনী প্রচারনার সময়টায়ই সরকারি দলের প্রার্থী শামীম ওসমান যে বাড়তি কিছু সহযোগিতা প্রশাসন থেকে পেয়েছেন তা বিভিন্ন সময়ের মিডিয়া রিপোর্ট থেকেই জানা যায়। একটি এলাকায় একাধিক নির্বাচনী ক্যাম্প না থাকার বিধিটির প্রতি বুড়ো আঙুলি দেখিয়ে শামীম ওসমানের একাধিক ক্যাম্প সক্রিয় থেকেছে দিনের পর দিন। যদিও প্রচারনার শেষ দিনে এসে প্রশাসন সেগুলো বন্ধ করে দিযেছে। আগে পরে যাই হউক না কেন, শেষ সময়টায় নির্বাচন কমিশন যে খানিকটা নড়েচড়ে বসেছে, তার বার্তা আমরা পেয়েছি দুই ওসি বদলিসহ কয়েকটি ঘটনায়। সম্ভবত: নির্বাচন কমিশনের সেই নড়েচড়ে বসাটা সরকার দলীয় প্রার্থীকে খুশি করতে পারেনি স্বাভাবিকভাবেই। সেনাসদস্যরা সক্রিয় থাকলে ওই প্রার্থীর পেশি প্রদর্শণী জবরদস্তির সুযোগ সীমিত হয়ে পড়বে- সেটাও তারা ভালোই বুঝে গিয়েছিলেন।
নারায়নগঞ্জের জনগন, প্রতিদ্বন্ধী দুই হেভিওয়েট প্রার্থী শুরু থেকেই নারায়নগঞ্জে ভোটের দিনে সেনা মোতায়েনের দাবি তুলেছেন। শুরুটায় নির্বাচন কমিশন সেই দাবিকে খুব একটা পাত্তা দেয়নি। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সেনা মোতয়েনের অপ্রয়োজনীয়তা অনেকবারই জানানো হয়েছে। সেই নির্বাচন কমিশন যখন সেনা মোতায়েনের পক্ষে অবস্থান নেয়, তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না, নারায়নগঞ্জের পরিস্থিতিটা আসলে তেমন সুবিধাজনক নয়। আর সুবিধাজনক নয় বলেই শেষ পর্যন্ত ইসি সেনা মোতায়েনের জন্যে সরকারের কাছে অনুরোধ জানায়। যদিও শুরু থেকেই সরকার সমর্থিত প্রার্থী সেনা মোতায়েনের বিরোধীতা করছিলো।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে সরকার নারায়নগঞ্জের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের অনুরোধ উপেক্ষা করলো কেন? সে কি কেবল শামীম ওসমান চায়নি বলে? সন্ত্রাসের দায়ে মামলার আসামী, যার পরিচিতি গডফাদার হিসেবেই সমধিক পরিচিতি, এমন একজন প্রার্থীর আকাংখা পূরনে একটা দেশের সরকার ‘রাজনৈতিকভাবে এতো ব্যয়বহুল’ একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে? ‘রাজনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল’ বললাম- কারন সেনা মোতায়েন নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতির একটি political consequences আছে। যার মূল্য অনেক অনেক বেশি।
এটা পরিষ্কার সরকারের ডজন ডজন কেন্দ্রীয় নেতাদের সফর,প্রচারনা সত্ত্বেও শামীম ওসমানের নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়াটা নিশ্চিত করা যায় নি। বরং শামীম ওসমান হেরে যাচ্ছেন- সেটাই প্রকাশ্য হয়ে পড়েছিলো।শামীম ওসমানের জেতার একটা পথই বাকি ছিলো সেটা হচ্ছে জবরদস্তি করা, ভোটারদের আতংকিত করে ভোটকেন্দ্র থেকে দূরে রাখা। সেনাবাহিনী থাকলে এই কাজটি করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আমাদের সেনাবাহিনী, বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ের সেনা সদস্যরা দায়িত্ব পালনকালে রাজনৈতিক প্রভাবে প্রভাবিত হয় না- এটা প্রমানিত। সেনা বাহিনী থাকলে সরকার সমর্থিত প্রার্থীর জন্যে বেশ অসুবিধা বইকি। তা ছাড়া খোদ শামীম ওসমানই যেখানে নানা মামলার আসামী সেখানে সেনাবাহিনী ধারে কাছে থাকলে, তারও খানিকটা অস্বস্থি লাগারই কথা।
সেনা বাহিনী মোতায়েন না হওয়ার খবরে শামীম ওসমান সমর্থকদের মধ্যে বেশ উল্লাস দেখা গেলেও প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীরা যে দমে গেছেন তেমনটি মনে হয়নি। আইভিতো বলেই দিয়েছেন,নারায়নগঞ্জের লক্ষ জনতাই আমার আর্মি। তবে তাদের সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে এবং তারা সেটি প্রকাশও করেছেন। আর জাতীয় রাজনীতিতে বিএনপি জামায়াত জোট নতুন করে একটি ইস্যূ পেয়েছে। এমনিতেই তারা তত্ত্বাবধাযক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। তারা এখন হাতে নাতে প্রমান পেলো নির্বাচন কমিশন স্বাধীন তো নয়ই, তাদের হাতে কার্যত কোনো ক্ষমতা নেই। নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করে, তাদের প্রতি অনাস্থা প্রদর্শনের প্রমানপত্র বিরোধীদলের হাতে তুলে দিয়ে সরকার কি উদ্দেশ হাসিল করতে চায় তা অবশ্য আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলার সুযোগ আছে। একটি চিঠি পাঠিয়েই নির্বাচন কমিশন কিভাবে নিশ্চিত হয়ে বসে থাকতে পারলো? পত্রপত্রিকার খবর থেকে জানা যায়, নারায়নগঞ্জে সেনাবাহিনী না যাওয়ার তথ্য রিটার্নিং অফিসার না পাঠানো পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে কিছ জানতেই পারেনি। অথচ পরিস্থিতির স্পর্শকাতরতা এবং গুরুত্ব বিবেচনায় নির্বাচন কমিশন থেকেই এ ব্যাপারে ফলো আপ করা উচিত ছিলো। তারা সেটি করেন নি। আর সেই সুযোগ নিয়েই অনেকে বলার চেষ্টা করছেন, এটি আসলে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের সম্মিলিত উদ্যোগে একটি পাতানো খেলা। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করার পরও নির্বাচন কমিশন সংবাদ সম্মেলন ডেকে নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন, কিন্তু সেনাবাহিনী পাঠাতেই হবে- এমন শক্ত অবস্থানে দাড়াতে পারেন নি। অথচ একটি আত্মমর্যাদা সম্পন্ন কমিশনের সেটি হওয়াই উচিত ছিলো।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×