somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা’রা আজব প্রাণী

০৮ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেইদিন টিভিতে চাকা সাবানের একটা এ্যাড দেখলাম। মা’রে সবাই মিলা ধন্যবাদ দিতেছেন উনাদের কাপড় ধুইয়া দেওয়ার জন্য। আমার খুব খারাপ লাগলো এ্যাডটা দেইখা। মেজাজও খারাপ হইলো। বাংলাদেশে মানুষ কোন্‌ দেশি ঘাস খাইয়া এইসব এ্যাড বানান্‌ আমি জানি না।

মা’রে কাপড় কাঁচার জন্য ধন্যবাদ দিবেন, এই কথার মানে কী? আপনি একজন পূর্ণবয়ষ্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ। আপনার নিজের কাপড় আপনার নিজের ধোয়া উচিৎ। লন্ড্রিতে দেন বা ওয়াসিং মেশিন ঘুরান বা নিজের হাতে ধোন, নিজের নোংরা কাপড় আরেকজনরে দিয়া ধোয়ানো যে অসভ্যতা এবং নিচু মানসিকতার লক্ষণ তা আমাদের এই যুগে জানা থাকা উচিৎ! আমাদের দেশে বাসায় অত্যন্ত সস্তায় কাজের মানুষ আছেন। মানুষ তাদের দিয়াও এইসব করেন। টাকার বিনিময়ে সেবা যেহেতু কেনা যায়, তাই উনাদের দিয়াও আপনি নিজের ময়লা পরিষ্কার করাইতে পারেন। কিন্তু মা ক্যানো?

মা’র দায়িত্ব আপনার কাপড় কাঁচা? আপনারে সকাল বিকাল মুরগ মুসল্লম আর ইলিশ পোলাও আর কাউনের চাইলের পায়েশ রাইন্ধা খাওয়ানোর? জন্ম দিছেন বইলা আপনারে ২৪ ঘন্টা গ্রাহক সেবা দেওয়া উনার নৈতিক ও সামাজিক ও রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক দায়িত্ব?

আমাদের দেশের সব মা’রা- সব অর্থনৈতিক অবস্থার, সব সামাজিক অবস্থানের, সব পেশার, সব শ্রেণির ও সব ধর্মের মা’রাই আমাদের বিনামূল্যে বিনা বাক্যব্যয়ে শারীরিক ও মানসিক শ্রম দিয়া আসতেছেন। ক্যানো? শুধুমাত্র মাতৃত্ব জাতীয় অপত্য স্নেহ থিকা? শুধুমাত্র আপনারে উনার শরীরের অংশ, নিজের অংশ বইলা মনে করেন, তাই? শুধুমাত্র ভালোবাসা থিকা?

না!

উনারা করেন, কারণ করার আর কেউ নাই। উনারা করেন, কারণ, উনারা যুগে যুগে ঘরে ঘরে আপনার মত অকর্মণ্য অথর্ব শিশুদের জন্ম দিছেন। আপনার মা একদিন রান্না ফালায়ে রাখলে আপনি বা আপনার মহান বাপে গিয়া একদিনের জন্য আধাদিনের জন্য হইলেও রান্নাঘরের হাল ধরবেন না। কারণ আপনি খুব উচ্চপদস্থ একজন ব্যক্তি। কারণ, আপনি খুব রিক্সাওয়ালা, খুব শারীরিক পরিশ্রম গেছে আপনার। কারণ, আপনি রান্না জানেন না। কারণ, আপনি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়া মাথা ঘামান। কারণ, রান্না ‘মেয়ে’দের বিষয়! কারণ, রান্না জানা ছেলেরা ‘হাফ-লেডিস’, ‘হিজরা’ এবং ‘স্ত্রৈণ’! কারণ, মা না থাকলে কাজের লোক আছে, রেস্টোরেন্ট আছে, টেইকওয়ে আছে, কিন্তু আমি নাই, কারণ, আমি পুরুষ! আমি সিংহ! কারণ, রান্নার মত ছোট জিনিস আমারে মানায় না!

আমার বাবার সাথে আমার মতের পার্থক্য আছে। আমার একমাত্র ভাইয়ের সাথে আমার দিনে পঞ্চাশ হাজারবার ঝগড়া হয়। কিন্তু আমি ‘গোপনে’ তাদের অসম্ভব ভালোবাসি, কারণ তারা আমার মা’রে কাপড় কাঁচা, রান্না জাতীয় জায়গায় অত্যাচার করেন না। আমার বাপ, মা, ভাইয়া এবং বৌদি সবাই নিয়মিত অফিসে যান এবং সবাই নিয়মিত বাসায় কাজ করেন। বাসায় দুপুর বা রাত্রের খাবার পরে বাসায় কাজের মানুষ বা ডিসওয়াশার থাকার পরেও আমার বাপ সমস্ত খাবারের প্লেট রান্নাঘরে নিয়া নিজ হাতে ধুইয়া দেন। আমার ভাই একদিন অন্তর অন্তর রান্না করেন। সেই ডালের ভিতর পাকা আপেল দেওয়া বা চেরিফল দিয়া রান্ধা মুরগী কোনো মানুষ বা অন্য সুস্থ কোনো প্রাণীর পক্ষে খাওয়া সম্ভব না, সন্দেহ নাই, কিন্তু উনার উৎসাহে কোনো কমতি নাই তাতে!

মেয়েরাও যে কোনো অংশে ভালো, তা বলতেছি না। আমার নিজের পরিচিত এমন অনেক মেয়ে আছেন, যারা ঘরের কাজ করারে অসম্মান ভাবেন। সেই অসম্মান ‘মা’ করুক, সমস্যা নাই, কিন্তু আমি করতে পারবো না! যেন কাজের বেলায় মা এবং কাজের মানুষের শ্রেণি একই! কাজ শেষ হইলে মা'রে জড়ায়ে ধইরা চুমা দিয়া ‘মাদার্স ডে’র কেক নিয়া স্ন্যাপচ্যাট আর ফেইসবুক আর ইন্সটাগ্রামে ছবি দেওনের সময় মা’র আবার শ্রেণিউত্তরণ ঘটে। সেই সময় ‘আমার মা দুনিয়ার বেস্ট মা’, ‘আমার মা দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দরী মা’, ‘আমার মা’র মত ভালো মানুষ দুনিয়াতে একটাও নাই’, ‘আমার মা না থাকলে আমি বাঁচবো না’ টাইপ ডায়লগ টপাটপ বাইর হইতে থাকে।

মা’রা আজব প্রাণী। তাদের যে এই যে একবার উঁচু শ্রেণিতে উঠানো হইলো, একবার বান্দি শ্রেণিতে নামানো হইলো, এইটা উনারা টের পান। উনারা তো নির্বুদ্ধি প্রাণী না, নাকি? টের পাইয়াও উনারা আপনার নোংরা আন্ডারওয়্যার কাঁইচা আপনার ও আপনার বন্ধুদের ‘মা দিবস’ সেলিব্রেট করার জন্য চায়নিজ ফ্রায়েড রাইস আর চিকেন উইংস রাইন্ধা আপনার সাথে সেলফি তুলতে আসেন। আপনে কন, ‘মা উফফফ, এইসব কী কাপড় পরে আছো? এই ছবি তো ফেইসবুকে দেব!’

আপনার মা নিরবে শ্বাস ফেইলা কাপড় পাল্টাইতে পাল্টাইতে বান্দি শ্রেণি থিকা ‘আপনার’ শ্রেণিতে ওঠেন। মানে ভান করেন ওঠার। তারপর আপনারা একসাথে ‘মা দিবস’ পালন করেন। এবং ফ্রায়েড রাইস খান।

আপনাদের সবাইরে মা দিবসের শুভেচ্ছা

সংগৃহীত
লেখিকাঃ নাদিয়া ইসলাম
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৬ দুপুর ২:২১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণপরিষদের সাথে বিএনপির সখ্যতার কারণ কি ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭


বিএনপির নেতাদের সাথে গণপরিষদের নেতাদের ঘন ঘন সাক্ষাতের বিষয়টি মিডিয়াতে প্রচারিত হচ্ছে।বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে যখন বিএনপি হাই কমান্ড থেকে পটুয়াখালী -৩(দশমিনা-গলাচিপা) আসনের নেতাকর্মীদের কাছে চিঠি দেয়া হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কি অন্ধকার?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫২



সুকান্তর একটা কবিতা আছে, দুর্মর।
"সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়:, জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়।" মানুষের ভবিষ্যৎ বলা সহজ কিন্তু একটি দেশের ভবিষ্যৎ কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×