বেঁচে থাকলে যে দু-একজন গুরুর চরণ সেবার করার সাধ জেগেছে মনে, তাদের একজন জহির রায়হান।
"আমিও একদিন একটা সিনেমা বানাবো" নামক মাথার পোকার যোগানদাতাও এই মানুষটির মুক্তির চেতনা আর ৬০-৭০'র দশক জুড়ে নানা যুগান্তকারী সৃষ্টিগুলো। Master of suspension আলফ্রেড হিচকক কিংবা ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা বা আকিরা কুরোশাওয়ার পাশে যদি কাউকে পাশাপাশি দাঁড় করাতে বলে আমি অবশ্যই জহির রায়হান কে রাখবো পূজ্যজ্ঞানে।
তার “জীবন থেকে নেয়া” – ছবিটা যতবার দেখি ততবারই নতুন লাগে। খুব অবাক লাগে ভেবে, এতো যুগ আগে বানানো কাহিনীটি এখনো আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটের সাথে দারুণভাবে মানিয়ে যায়। সেই সময়টা ছিল পাকিস্তানীদের শোষণের সময়, আর এখন আমাদের নিজেদের লোকেরা আমাদের শোষণ করে।
জহির রায়হান ছিলেন কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে পরিপুষ্ট। এই মানুষটি ছিলেন যেমন প্রতিভাধর, তেমনি একরোখা, সংগ্রামী, ঋজু চরিত্রের। সুতরাং অন্যান্য বামপন্থী লেজুরবৃত্তীয় বুদ্ধিজীবীদের মতো তিনি কখনই সরকারের পছন্দের ব্যক্তি ছিলেন না, তা বলাই বাহুল্য।
জেনে অবাক হবেন,
'৫২র ২১ ফেব্রুয়ারীতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গে সর্বপ্রথম যেই দশ জন ছাত্র মিছিল বের করেছিলেন তাদের একজনের নাম "জহির রায়হান"।
শুধু তাই নয়, '৬৮ তে তার তৈরি "জীবন থেকে নেওয়া" (https://goo.gl/OEsnZq) চলচিত্রে প্রথম "আমার সোনার বাংলা" গানটি প্লে ব্যাক হয়।
এছাড়া '৭১ এর তার তৈরি "STOP GENOCIDE" (https://goo.gl/CX7YZ5) যা স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য বিশ্বব্যাপী জনমত তৈরি করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছিলো
১৯৭১ সালের ১৬-ই ডিসেম্বর পাকিস্তানীরা আত্মসমর্পন করলেও করেনি মিরপুরের সশস্ত্র বিহারীরা। তাই তাদের নিরস্ত্র করতে ৩০শে জানুয়ারী ১৯৭২ সালে অভিযান চালায়া পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর একটি দল। এই দলের সাথে জহির রায়হান যুক্ত হন আল বদর কর্তৃক অপহৃত তার ভাই শহিদুল্লাহ কায়সারের খোঁজে এবং নির্মম ভাবে খুন হন বিহারীদের হাতে। অথচ তার অন্তর্ধানের দীর্ঘ আঠাশ বছর পর্যন্ত তাকে অপহরন করে গুম করে ফেলার খবর প্রচার করা হয়। কিন্তু পহেলা সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ দৈনিক ভোরের কাগজের এক রিপোর্টে বেরিয়ে আসে জহির রায়হান খুনের আসল রহস্য।
স্বাধীন স্বদেশের মাটিতে নির্মল বাতাসে নি:শ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের এই অন্যতম সংগঠক, খ্যাতিমান সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকার, অথচ সদ্য স্বাধীন রাজধানী ঢাকাতেই তিনি হারিয়ে গেলেন দিনের আলোয় ।
১৯৩৫ সালের এই দিনে বর্তমান ফেনী জেলায় জন্ম নেন এই অসামান্য প্রভাধর মানুষটি।
শুভ জন্মদিন হে গুরুদেব
তথ্যসূত্রঃ
উইকিপিডিয়া |
সেন গুপ্ত, আশিষ (মে ১৫, ২০০৯) |
রাজীব নূরের ব্লগ |
দৈনিক প্রথম আলো, 17 August 2006 |
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৫২