নিম্ন মধ্যবিত্ত সংসারের ছেলেদের একটা জন্মগত গুন থাকেই, ধরুন চকচকে শপিং মলে ঈদ কিংবা পূজার মার্কেটিং এ হঠাত কোন একটা জামা পছন্দ হয়ে গেল ছেলেটার, সেই জামাতেই চোখ আটকে ঘুরতে থাকে পুরো মার্কেট জুড়ে...পছন্দের কথা বাবাকে বলতে গিয়েও গলার স্বর শুকিয়ে আসে বারেবার। শেষমেশ বিজ্ঞ বাবারা ছেলের চোখে মনের কথা বুঝতে পেরে সেই দোকানে ছুটে সেই জামার আশায়। কিন্তু বিধিবাম, খানিক পরেই যখন প্রাইজ ট্যাগে দামের অংকটা দেখে বাবাদের মুখ চোখ শুকিয়ে যায় তখন ছেলে গুলো নির্দিধায় বলে ওঠে "এই জামার কালার টা একদম ক্ষ্যাত বাবা, I didin't like it so much চলো অন্য দোকানে যাই"
নিম্ন মধ্যবিত্ত সংসারের বাবা গুলোও হয় অদ্ভুত ধরনের, এই ধরুন অফিস পাড়ায় আজ ভালো কিছু খাবার সার্ভ করেছে, সব কলিগদের চোখলজ্জা এড়িয়ে টেবিলের নিচে আটটা পাঁচটা চাকরীর ৭/৮ বছরের পুরানো ভ্যাল্ভ্যাট ব্যাগটার কোনায় অল্প একটু হলেও খাবার নিয়ে বাসায় ফিরবেন তার রাজপুত্র আর রাজকুমারীদের জন্যে।আবার হয়তো দেবতার কোন বরে ৬ মাসের পুরাতন বকেয়া একটা প্যা-মেন্ট পেয়েছেন বহুকষ্টে, সেদিনই নিজের ২ বছরের আগের শোল ক্ষয়ে যাওয়া ছেঁড়া জুতাটা পড়েই উপস্থিত হবেন বাটা/এপেক্স এর শোরুমে । গেল ঈদে মেয়েটা কোন জুতাটা আবদার করেছিল যেটা কিনে দিতে পারেন নি, সেটা খুঁজে খুঁজে ঠিকই কিনে ঘরে ফিরেন সেদিন
হয়তো এটাই তাদের শখ এটাই তাদের নিম্ন মধ্যবিত্ত সুখ...
নিম্ন মধ্যবিত্ত সংসারের ছোটবোন গুলাও হয় মহা পন্ডিত, ভাইয়ের মানিব্যাগের স্বাস্থ্য কেমন সে খবর তারা তরঙ্গের আগেই জেনে যায় কিভাবে জানি। উৎসব পার্বনে যখন আসেপাশের সমস্ত বান্ধবীরা মহাসাজে বের হবে বলে প্ল্যান করছে তখন তাদের ড্রেসিং টেবিলে ৪০ টাকার এক ছড়া চুড়ি আর ৭টাকার এক পাতা লাল টিপ ছাড়া তেমন কিছু থাকে না। তবু সেই অভাবে তার ভাইটিকে যাতে ছোট হতে না হয় সেজন্যে আগাম এলার্ম বাজতে থাকে, "জানিস দাদা, আমার না কসমেটিকে ভীষণ এলার্জি, আমি তো একদমই পছন্দ করি না এগুলা use করা, মুখে র্যাশ উঠে আরও কত কি জানিস না তো ! আর দেখ না ওদের কেমন পেত্নীর মতো লাগলে মেক আপ করলে"(তারপরে মিথ্যা হি হি হাসি দিয়ে সেই লাল টিপ আর চুড়িতেই স্বস্তি প্রকাশ)
আর নিম্ন মধ্যবিত্ত সংসারের মায়েরা যেন একেকজন সর্বকরুনাময়ী দেবী...রাতে খাবার টেবিলে ভাতের পাতিলে টান পড়েছে, বাসস "আমার আজ খিদে নেই, তোরা খা"। আনন্দের মোহে পিঠা খাওয়া শেষে যখন বাড়ির সবাই তাকিয়ে দেখে বাটিতে আর একখানা পিঠা ও বাকি নেই, তখনই "আমি তো পিঠা খাই না, তোরা খা" । বাড়ির সবাই কোথাও ঘুরতে যাবে, পড়ে যাওয়ার মতো একটা ভালো কাপড় নেই তার, তখন "আমার আজকে শরীর টা ভালো না, তোরা সবাই যা"। সব থেকে বড় কথা, মাসের শেষের দিনগুলো গোটা একটা সংসার কে কোন সাহসের সম্বলে তারা টেনে নিয়ে যায় তা প্রভু স্বয়ং নিজে ছাড়া আর কেউই হয়তো জানেন না।
এই হলো নিম্ন মধ্যবিত্তের সংসারের প্যাচালী কীর্তন।
এই হলো বিধাতার রঙ্গে আকা এক অস্পষ্ট সুখের ছবি
এই আমাদের নিম্ন মধ্যবিত্ত সংসার
উৎসর্গঃ সেই সমস্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত সন্তানকে, যারা নিজের "নিম্ন মধ্যবিত্ত" পরিচয়টা নিয়ে আত্মকষ্টে ভুগতে ভুগতেই জীবনের অর্ধেকটা কাটিয়ে দেই কেবল আনন্দগুলো বাদ দিয়ে