বার্লিনের ডায়েরি ১, ১৭ ঘন্টা ফ্লাইট, প্রথম ডিনার, বুন্ডেসটাগ
বার্লিনের ডায়েরি ২, বিদেশে বাংলাদেশ এবং মিটিং মিনিটস (ছবি কম কথা বেশি)
সেদিনের প্রথম মিটিং এ যাবার পথে ইন্টারেস্টিং একটা বিল্ডিং। এই বাড়ীর মালিক আশির দশকে অনেক বড়লোক হয়। এবং এই ঐতিহাসিক বিল্ডিংটা খরিদ করে। খরিদ করেও সে তৃপ্ত হয়নি, এর ভেতরে সে দুর্লভ চিত্র শিল্পের একটা গ্যালারি তৈরি করে এবং উপরে সে বসবাস করে। লোকজন টিকিট কেটে সেটা দেখতেও যায়।
জার্মানী একটা গরীব দেশ
দক্ষিন কোরিয়ার ইয়ং যখন ফিসফিস করে এই কথা বলছিল তখন কিছুক্ষণের জন্য আমিও অবাক হয়েছিলাম। কাহীনি সেই রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের অফিস থেকে শুরু। সবাই মনোযোগ দিয়ে কথা শুনছে, তর্কে যুক্ত হচ্ছে কিন্তু কেউ কেউ কোন কথা না বলে কেবল ইতিউতি করছে। কারণটা কি সেটা জানা গেল একটু পরেই। অনেকেরই গরম লাগছে। একেতো ব্রেকফাস্টে, লাঞ্চে, ডিনারে জার্মানীর স্পার্কলিং পানি (মানে পানির মধ্য বুদ্বুদ মেশানো এক বিচিত্র তরল) যা তারা বিগত ষাট বছর ধরে অত্যন্ত আগ্রহের সাথে পান করছে। কি বিচিত্র! পানির মধ্যে ঝাঁঝ মেশানোর কি হল? তো সেই পানি খেয়ে আসলে তৃষ্ণা নিবারণ না হয়ে অতৃপ্তিটাই যেন জোরালো হয়েছে। অন্যদিকে বড় অফিস এবং হোটেল ছাড়া জার্মানীতে এয়ার কুলার বা কন্ডিশনার নামক বস্তুটি নেই। সেই অভাব প্রকট হয়ে দেখা দিল “পাবলিক্স স্ফিয়ার” নামক এনজিওর অফিসে। ফলে ইয়ং যখন জার্মানীর গরীবি নিয়ে বিরক্ত তখন বুঝতে হবে গরমটা ভালৈ। আমরা জানালা খুলেটুলে একটা কাজ চালানোর ব্যবস্থা করলাম, কিন্তু তাতে বিশেষ কোন লাভ হল না।
রৌদ্রোজ্জ্বল দিনই বটে
গণতন্ত্র বিকাশে, ডিবেটে অংশগ্রহণে উৎসাহ দেবার জন্য এনজিও
ঠিক এই জায়গাটাতেই আমি বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেছি যে বাংলা ব্লগোস্ফিয়ার ও সোশ্যাল মিডিয়া অনেক এগুনো। পাবলিক স্ফিয়ার নিয়ে গবেষণা শেষ করে “পাবলিক্স স্ফিয়ার” প্রতিষ্ঠানের প্রধান ড. মাইটি পিটার্সের মনে হয়েছে যে তরুণদের সোশ্যাল মিডিয়ায় গণতন্ত্র এবং বিভিন্ন মতামত ও তর্কের বিষয়ে উৎসাহ দেয়ার জন্য ওয়েব সাইট খোলা দরকার। ছয় মাসে রেজিষ্ট্রার্ড এবং নিয়মিত ইউজারের সংখ্যা মোটেও আশা ব্যাঞ্জক নয়। বাংলাদেশের সাথে তুলনীয় নয় তো বটেই। ২০০৮ এর নির্বাচন, বিডিআর বিদ্রোহ, তিতাস নদী বাঁচানো, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদ, রূপগঞ্জ, লংমার্চ, সুন্দরবন, গণজাগরণ আমি বলতে বলতে হাঁপিয়ে যাবো তবুও এদেশের ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টদের কাজের তালিকা শেষ হবে না। তাদের কোন এনজিও উৎসাহও দেয়নি, মোটিভেটও করেনি। তারা নিজের উদ্যোগে উদ্যমে হেন কোন বিষয় নেই তা নিয়ে সমানে তর্করত এবং আলাপরত। আর এর কৃতিত্ব প্রথমত সবগুলো লোকাল প্লাটফর্ম এবং ব্লগার, অনলাইন এক্টিভিস্টদের আর দ্বিতীয়ত গ্লোবাল সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মের। আমি বললাম বাংলাদেশের শাহবাগ নিয়ে তাদের জানাশোনা আছে কিনা। উত্তরে স্পষ্ট আছে, আলবৎ আছে।
বিটকমে দুই দফা মিটিং
এরপর প্রায় মনোলোগ মিটিং। একটানা কথা শুনে যাওয়া। ১৯ বিলিয়ন ইউরোর মার্কেট, আর আইএসপি নিয়ে আলাপটা কেন যেন জমে উঠল না। তথ্য উপস্থাপণ কেবল আলোচনা হতে পারেনা। আলাপটা আকর্ষনীয় হয়ে উঠলো তখন যখন, রাশিয়ার ইরিনা প্রশ্ন করল, “তোমরা আইএসপিদের মাসিক কত টাকা চাঁদা নির্ধারণ করেছো?” এই প্রশ্নের উত্তর তারা দিলেন না। ডাটা প্রোটেকশন, সিকিউরিটি র আলাপে আমরা প্রায়ই ভুলে যাই ইন্টারনেট ভিত্তিক বানিজ্যের কথা। এক্সেস এবং সেই কেন্দ্রীক বিশাল মার্কেটের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ দিক হল রাষ্ট্রের পলিসি। ইনফ্রাসটাকচারের খবর, ব্যান্ড উইথ ও তার ডিস্ট্রিবিউশনই এক্সেস নির্ধারণ করে দেয়। মার্কেট ভ্যালু খুব গুরুত্বপূর্ণ। ক্লাসিফায়েড এ্যাড ছাড়াও নতুন স্টার্ট আপ অনেক কোম্পানী আছে যারা মার্কেট শেয়ার করছে। বানিজ্য এবং প্রাইভেসি পলিসি খুব ইন্টারডিপেন্ডেন্ট।
একদিকে ডাটা প্রোটেকশন, অন্যদিকে বানিজ্য হিসাবটা সহজ নয় মোটেও। আইএসপিদের নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে খুব বড় জায়গার নিয়ন্ত্রণ খুবই সব সম্ভব। আবার মার্কেট তার নিজের পক্ষে সব সময় টেকনোলজিকে শেইপ করতে চাইবে। রাষ্ট্রও মার্কেটের উপর খুব নির্ভরশীল। এদিকে জায়ান্ট কর্পোরেশনগুলোর পক্ষে নতুন নতুন দেশের নিজস্ব পলিসির মত করে সার্ভিস প্রোভাইড করা আর আইনী লড়াইয়ের খরচ চালানো সম্ভব কিন্তু ছোটদের জন্য এটা ভীষণ কঠিন। আর তাই স্থানীয় সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোয়োজনটা সবচেয়ে বেশি। তাদের টিকে থাকাও ভীষণ যুদ্ধের।
বিটকমের বাইরে আমরা
একটা ইন্টারেস্টিং কম্পিউটার: ১৯৮০ এর। কয়েক বছরে পুরো পৃথিবীটাই পাল্টে দিল তাই না?
হুররে!!!! রিভার ক্রুজ
জার্মান শিডিউল আর গরমে আমরা যখন অতিষ্ঠ তখনি খবর আসলো আমাদের জন্য রিভার ক্রুজের আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের ফূর্তি আর দেখে কে? স্প্রী নদীর কাছে যেয়ে মনে হল, “হেইয়া কি নদী? হেইয়া তো খালেরও কম”। “আঁই ফুস করি হাসি দিলাম গই”। জার্মানীর লোকজন আঙ্গো লগে কি বাইচলামী ই না শুরু কইচ্চে। যাই হোক দল বেঁধে রিভার ক্রুজে রওয়া হলাম। আসুন দেখা যাক রিভার ক্রুজের ছবি ও দূর থেকে দেখা মিউজিয়ার আইল্যান্ড।
রিভারক্রুজে যাবার রাস্তায়
ডুকাটিটা দেখে একটু থমকে যেতে হলই।
এই ব্রিজটার একটু বিশেষত্ব আছে। বর্ণ সিরিজের একটি পর্বে জেসন বর্ণ এই ব্রীজ থেকেই গুলি খেয়ে পড়ে যায়। মানে সিনেমায়।
এবার শুরু করি রিভারক্রুজ এবং আশে পাশের দৃশ্য, বিশেষত মিউজিয়াম আইল্যান্ড।
এই যাহ! এল বুঝি বৃষ্টি। বার্লিনে বৃষ্টি। তবে যে বৃষ্টিতে ইউরোপীয়ানরা আহা উহু করছে, তার দিকে তাকিয়ে আমি বললাম যে, আমাদের দেশের শিশু মেঘগুলো হাঁচি দিলেই এরচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়।
এই বিল্ডিং এর একটা ঘটনা আছে। এখানে এঞ্জেলা মার্কেলের জন্য একটা রূম আছে যেখানে তিনি চাইলে থাকতে পারেন। তবে তার জন্য কোন প্রাসাদ নেই। তিনি প্রাইভেট এপার্টমেন্টে থাকেন।
দুপুরে খাওয়া হল চমৎকার এই রেস্তোরায়। আলভিস। বসার ব্যবস্থা চমৎকার।
আমাদের ডিনার বেশ আর্লি ই হল। বৃষ্টি ভেজার বিকেলটা মন্দ ছিলনা। সেটা পূর্ণতা পেল ডিনারের ব্যাবস্থায়। ইংলিশ গার্ডেনের টি হাউজ রেস্টুরেন্ট একেবারে সেই লেভেলের। আর এখানকার চীজকেক হল বিশ্বের সেরা। হাইলি রেকোমেন্ডেড।
আমাদের এ্যাংগোলার বন্ধু ক্যাডি দুই দিন পর অবশেষে আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারলো। ফ্লাইট মিস, ভুল এয়ারপোর্ট, সে এক ইতিহাস। যাক অবশেষে সে যে উপস্থিত হতে পারলো তাতেই আমরা খুশী।
জার্মান ওয়েটারদের সবচেয়ে বেশী জ্বালিয়েছিও এই রেস্তোরায়। আয়োজন ছিল ভেতরে বসার। সেটাকে পাল্টে বাইরে করা হল। কারো দরকার এটা কারো দরকার ওটা জার্মান ওয়েটার পুরাই বিরক্ত। তবে খাওয়া দাওয়া আর আড্ডায় মজা হল খুব।
ব্যাপক আড্ডা আর হইচই করে শেষ হল ৫ই আগস্টে আমাদের দিনভর ঘোরাঘুরি। পোনে নয়টায়, মানে সন্ধ্যার আলোতে আমরা ফিরে চললাম হোটেলের দিকে।