আহ্লাদের সাথে পরিচয় নেই এমন মানুষ পৃথিবীতেই বিরল। পরিবার, নিকটজনের কাছে আহ্লাদ করার চর্চা বহুত পুরানা।
আহ্লাদের অাভিধানিক অর্থ খুঁজতে যেয়ে পাওয়া গেল:
আহ্লাদ [ āhlāda ] বি.
১. আনন্দ, হর্ষ (আহ্লাদে আটখানা);
২. মজা;
৩. স্নেহ বা আশকারা (বেশি আহ্লাদ পেলে ছেলে বিগড়ে যাবে, আহ্লাদ পেলে কুকুর মাথায় ওঠে)।
[সং. আ + √ হ্লাদ্ + অ]।
আহ্লাদন–বি. আহ্লাদ উত্পাদন।
আহ্লাদিত–বিণ. আনন্দিত, হৃষ্ট।
আহ্লাদী (-দিন্)–বিণ. (স্ত্রী.)
১. আমোদপ্রিয়া;
২. নেকি;
৩. অতিরিক্ত স্নেহ বা আশকারা পেয়েছে এমন।
পুং. আহ্লাদে।
আহ্লাদে আটখানা–আনন্দে আত্মহারা।
এই দেশে অবশ্য রাষ্ট্রীয় আহ্লাদের উদাহরনও কম নয়। এই যেমন, নেত্রীইইই আমাদের শুল্কমুক্ত গাড়ী চাই, ম্যাডাআআম আমার পূর্বাচলে প্লট চাই, নেতাআআআ আমার ন্যাম ফ্ল্যাটের দুইটা ফ্লোর চাই।
রাষ্ট্রপতিইইইই আমি খুনী কিন্তু এখন বিশেষ ক্ষমা চাই, প্লিজ প্লিজ প্লিজ। এই ধরণের আহ্লাদের শুরুটা আমরা দেখতে পাই, বিভিন্ন সরকারী বা বে-সরকারী ভবনের কেরাণীদের মধ্যে, তারা পান চা সিগারেটের নামে, নামাজের বিরতির নামে খালি আহ্লাদ করেই যাচ্ছেন। আইন শৃঙ্খলা কর্মকর্তাও আহ্লাদে পরিপূর্ণ, "আমি তো ঘুষ খাইনা; তবে আমার বউ একটু শপিং এ যাবে একটু সাথে যাইয়েন"।
খুবই নিরিহ লেভেলের আহ্লাদ। তবে যিনি পূরণ করেন তিনি জানেন। আরেক ধরণের আহ্লাদ আছে, সেটাও চমৎকার, এটা মুখ্যত গড ফাদার মূলক আহ্লাদ।
আসলে নাম হওয়া উচিৎ ছিল উল্টোটা, কারণ এরা নিজেকে গডের ও ফাদার মনে করে। তাই এদের আহ্লাদটাও একটু বেশি। যেমন: "আন্টিইই সেদিন বিকালে খুব বোর লাগছিল তাই সাতজনকে মেরে দিসি, তুমি একটু দেখোনা প্লিজ।"
মানুষ এবং পিঁপড়ার মধ্যে এরা খুব পার্থক্য করেনা। করার কথাও তো না। সামগ্রিকভাবে এদের সন্তান, মানে পরবর্তী প্রজন্মও ভীষণ আহ্লাদ-প্রবণ। আব্বুওও গাড়ী কিনবো, "কি গাড়ী বাবা?" বিএমডাব্লু এক্স ফাইভ। আম্মু বিয়ে করবো, "কাকে মা?" শাহরুখ খান কে।
গোটা জাতি যখন ভীষণ আহ্লাদ-প্রবণ তখন জাতির এই মহান বৈশিষ্ট্য সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে এসেছে এফএম রেডিও গুলো। কেউ হবে কেউ হবেনা তাতো আর হতে দেয়া যায় না। আহ্লাদ সবার অধিকার।
দুই আরজের মধ্যে ছেলেটির আহ্লাদ, 'এ্যাইইইইই খিচুড়ী খাবো"। মেয়েটি বলছে, 'বাইরে ঘণ কালো মেঘ, চাপরপাশ অন্ধকার করে আসছে" ও কি ফাইন, কি দারুউউউউউউউউন, "বেগুন ভাজিইইইই"- ছেলেটি বলল। ঠিক এই সময়ে এসএমএস, উপল+ও এর কাছ থেকে। আপুনি ভাইয়ুনি প্লিইইইইইইইইইজ তোমরা "ও"র জন্য কিছু করো। মনে হচ্ছে যেন সকালের ঠান্ডা বাতাসে আহ্লাদ ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে। কেউ কাউকে না করে থামবেই না। ঠিক সেই সময় আরেকটি এসএমএস, "আপুনি ভাইয়ুনি, আমি একজন প্রতিবন্ধী, আমি গান করতে চাই, প্রতিষ্ঠিত হতে চাই, তোমরা কি আমাকে সাহায্য করতে পারো?"। আপুনি উত্তর দিচ্ছে, "অবশ্যই পারি, নিশ্চয়ই পারি, আমরা তোমাকে অনেক এনকারেজ দিতে পারি, অনেক উৎসাহ দিতে পারি, তুমি অনেক অনেক অনেক চেষ্টা কর, সারাদিনরাত প্র্যাকটিস করো, এত্ত এত্ত এত্ত ট্রাই করো, নিশ্চয়ই তুমি অনেক অনেএএএএএএক অন্নেএএএএএএক বড় হবা", তাইনা ? তুমি কি মনে করো? বলে ছেলে আরজের দিকে ঘুরলো, "হুমমম ঠিক বলেছো ...দিয়া, আসলে বিষয়টা হল উদ্যোম, প্রচেষ্টা, ট্রাই" তাই এখন আমরা শুনবো, পরপর তিনটি নতুন গান,"। আবার গানের আহ্লাদে ভেসে যেতে থাকলো এই দেশ। আমার সৌভ্যাগ্য যে কিছুক্ষণের মধ্যে শুরু হল, স্প্রীং এয়ার ফ্রেশনার হলুদ বাতি। কি টাইমিং। খুব দরকার ছিল। আহ্লাদের চোটে দম বন্ধ হয়ে আসছিল, একটু এয়ার ফ্রেশনার না দিলে নির্ঘাত বমি করে দিতাম।