প্লেটোর দেখায় দৃশ্যমান জগত ক্ষ্যাপাটে এবং স্ববিরোধী। ক্ষ্যাপাটে এই অর্থে যেমন আমরা স্বপ্নে দেখি। স্বপ্ন দেখার সময়ে সেটাকে যদিও তেমন মনে হয় না। উদাহরণ হিসেবে স্বপ্নে যেমন আমি দেখলাম একটা স্যান্ডঊইচ খাচ্ছি, পরক্ষণেই সেটা হঠাৎ করেই স্ট্যাচ্যু অফ লিবার্টি হয়ে গেল কিন্তু স্ট্যাচ্যু অফ লিবার্টি আবার আসলে আমার মা যে কিনা সমুদ্রের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার স্পেগাটি হয়ে গেল...ইত্যাদি ইত্যাদি...কিন্তু স্বপ্ন দেখার সময় এসব কিছুই অসম্ভব বা অস্বাভাবিক মনে হয় না, কেবল স্বপ্ন ভেঙে জেগে উঠলে পরে স্বপ্নটা নিয়ে ভাবলে স্বপ্নের অস্বাভাবিকতা চোখে পড়ে। আর স্ববিরোধী এই অর্থে যে আমরা যখন বলি একটা বাচ্চা হাতি তখন সেটা তো আকৃতিতে ছোট, কিন্তু এটা যেহেতু হাতির বাচ্চা, সুতরাং সেটা আকারে আবার বেশ বড়ই, একই ভাবে আমরা যখন একজন বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের কথা ভাবি তাকে বেশ দীর্ঘকায় মনে করি, কিন্তু এক্ষেত্রে সে হয়ত কেবল ছয় ফুট লম্বা, বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের তুলনায় তাহলে সে ততটা লম্বা তো নয়ই বরং খাটোই...এরকম অসংখ্য পরস্পরবিরোধীতা রয়েছে।
প্লেটোর দর্শনে দৃশ্যমান জগৎ ক্রমাগত বিভিন্ন আকৃতির (form) বা ধারণায় পরিবর্তিত হচ্ছে, আর তাই এই দৃশ্যমান জগতের অর্থ দাঁড় করানো মুশকিল, যেভাবে হ্যানস ক্রিশ্চান এন্ডারসনেররে একটি কুৎসিত বাচ্চা হাঁস সুন্দর হংস হয়ে উঠে; সুতরাং একই সাথে কুৎসিত আবার সুন্দরও হয়ে উঠতে পারে। অন্য দিকে, প্লেটোনিক ফর্ম স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য, কেননা এগুলো অবিনশ্বর, প্লেটোর দর্শনে আত্মাও তাই। সুতরাং আত্মাই এসব প্লেটোনিক ফর্মকে ধারণ করতে পারে। যেহেতু দেহ এবং তার বিভিন্ন চাহিদা; যেমন ক্ষুধা, সঙ্গমেচ্ছা ইত্যাদি এক্ষেত্রে এক ধরনের সংঘাত বা বিক্ষেপ তৈরী করে; সুতরাং, আত্মার মুক্তি চাইলে দেহগত এসব বোধ থেকে মুক্ত হয়েই দেখতে হবে।
এখানে ফর্ম কিন্তু কোন বস্তুগত বিষয় নয়, বরং এসব অবস্তু, যেমন আমরা কমবেশী ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বা ন্যায়পরায়ন কোন ব্যাক্তির দেখা পেতে পারি, কিন্তু এমন নয় যে আমরা ন্যায় বা সৌন্দর্যের দেখা পাব। বলা চলে এসবের কোন দেহগত অস্তিত্ব নেই। এবং একারনেই সক্রেটিসে, দেহের মত বস্তুগত বিষয়ের পক্ষে ফর্মের মত অবস্তু বা অশরীরীকে ধারণ করতে পারেনা, এটি কেবল আত্মার মত অবস্তুর বা অশরীরীর পক্ষেই ধারণ করা সম্ভব, সুতরাং, আত্মাও তাই অবস্তু এবং ফর্মের মতই অবিনশ্বর।
শেলী ক্যাগান প্লেটোর এই দর্শনে বেশ কিছু আপাতবিরোধী অবস্থানের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনটি যুক্তি/প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে যা প্লেটোর দর্শনকে চ্যালেঞ্জ করেঃ
প্রথম প্রস্তাবঃ ফর্মের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে প্রস্তাবনা
দ্বিতীয় প্রস্তাবঃ পুনর্ব্যবহারের (রিসাইক্লিং) যুক্তি
তৃতীয় প্রস্তাবঃ স্মৃতির যুক্তি
প্রথম প্রস্তাবঃ ফর্মের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে প্রস্তাবনা
এতক্ষণ উপরের যেসমস্ত যুক্তি তা থেকে নিচের অনুমানগুলো করা যায়ঃ
১। ধারণা (ফর্ম) হচ্ছে অবিনশ্বর/অশরীরী
২। অবিনশ্বর/অশরীরী কেবলমাত্র অবিনশ্বর/অশরীরী দ্বারাই ধারণ করা সম্ভব
এই দুই অনুমান থেকে সুতরাং পাওয়া যাচ্ছেঃ
৩। যা ফর্মকে (ধারণাকে) ধারণ করতে পারে তাকেও অবশ্যই অবিনশ্বর/অশরীরী হতে হবে। এখানে,
অশরীরী– দেহহীন
অবিনশ্বর – অমর
প্লেটোর এই দর্শনে শেলী ক্যাগান যেসব আপাতবিরোধীতা ব্যাখ্যা করছে। প্রথমত, সিদ্ধান্তের দুটি অংশ, ফর্ম অবিনশ্বর/অশরীরী। এখানে অ-শরীরী অংশটিতে জোর দিলে দেখব, মানুষের মৃত্যু হয়, তারে আসে যায়, কিন্তু ফর্ম বা ধারণা অপরিবর্তনীয়, যা কখনও পরিবর্তিত হবে না। যেমন ২+৩=৫, আগেও আগেও যেমন সঠিক ছিল, এখনও সঠিক, সব সময়ের জন্যই এটি সত্য। কিংবা সৌন্দর্য্য বা ন্যায়ের ধারণা, এসব একই সাথে অশরীরী বা দেহহীন এবং অবিনশ্বর। এখন, প্লেটোর প্রথম সিদ্ধান্তটা যদি আমরা সঠিক বলে ধরে নেই, তাতেও আমদের আলোচনার জন্য দ্বিতীয় সিদ্ধান্তটা জরুরী। যদি আমরা সক্রেটিসকে দ্বিতীয় সিদ্ধান্তটা দেই, যে অশরীরী কোন কিছুকে বুঝতে হলে তাকেও অশরীরী হতে হয়, সেখান থেকে তৃতীয় সিদ্ধান্তে যে আত্মা বা মন যেহেতু সংখ্যার মত অশরীরীকে বুঝতে পারে সেটিও তবে অশরীরী, এবং যেহেতু অশরীরী তাই অবিনশ্বর, এই সিদ্ধান্তে সহজেই যাওয়া চলে। কিন্তু সক্রেটিসের এই অনুমান সঠিক মনে করার যথেষ্ট যুক্তি নেই।
সক্রেটিস বলছে, অপবিত্র বা অশুদ্ধ বস্তুর পক্ষে পবিত্র বা বিশুদ্ধকে ধারণ করা সম্ভব না। যেমন দেহ, যা কিনা ধ্বংস হয়ে যায়, ক্ষণস্থায়ী; আত্মার মত অশরীরী, যা কিনা অবিনশ্বর, কোন কিছুকে ধারণ করতে পারে না। সক্রেটিসের অনুমান, কোন বস্তু বা বিষয় সম্পর্কে জানতে হলে তাকেও তেমনটিই হতে হয় (It takes one to know one), যা থেকে ‘অবিনশ্বর/অশরীরী কেবল অবিনশ্বর/অশরীরী ধারণ করতে পারে’ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো চলে তার বিপক্ষে বলা চলে, অনেক বিজ্ঞানী বা ডাক্তার মৃতদেহ নিয়ে গবেষণা করে, সুতরাং মৃতদেহ নিয়ে গবেষণা করতে হলে মৃত হতে হয় না। কিংবা ফ্রেঞ্চদের নিয়ে গবেষণা করতে গেলে ফ্রেঞ্চ হতে হবে এমন কিছু কথা নেই, জার্মান হয়েও সেই কাজ করা চলে। সুতরাং, প্লেটোর দ্বিতীয় অনুমান ‘অবিনশ্বর/অশরীরী কেবলমাত্র অবিনশ্বর/অশরীরী দ্বারাই ধারণ করা সম্ভব,’ অন্তত সাধারণ অনুমান হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়, বিশেষ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও হতে পারে, সেটি আমরা আরও আলোচনায় দেখতে পাব। কিন্তু, প্লেটো তার ডায়ালগে সক্রেটিসের দ্বিতীয় অনুমান ‘অবিনশ্বর/অশরীরী কেবলমাত্র অবিনশ্বর/অশরীরী দ্বারাই ধারণ করা সম্ভব’ এর স্বপক্ষে তেমম কোন প্রমান হাজির করে নাই যা থেকে তৃতীয় অনুমানে পৌঁছানো চলে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবঃ পুনর্ব্যবহারের (রিসাইক্লিং) যুক্তি
বস্তু এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় যায়, একই ভাবে বস্তু বারবার ব্যবহৃত হয়। প্লেটো যেমন উদাহরণ দিচ্ছেঃ এখন আমরা সবাই জেগে আছি (যারা পড়ছি এই লেখা), কিন্তু আমরা আগে ঘুমিয়ে ছিলাম, আমরা আবারও ঘুমিয়ে পড়ব। এবং এই ঘুম এবং জাগরণের মাঝে আমরা ক্রমাগত ঘুরপাক খেতে থাকি। প্লেটোর যুক্তি বোঝার জন্য অন্য গাড়ির উদাহরণটা দেয়া যেতে পারে; যেমন, গাড়ির যন্ত্রাংশগুলো গাড়িটির গাড়ি হয়ে ঊঠার আগেও বর্তমান ছিলঃ গাড়ির ইঞ্জিন, কার্বোরেটর, স্টিয়ারিং হুইল, চাকা, ইত্যাদি ইত্যাদি একসাথে মিলিয়েই গাড়িটি বানানো হল। এবং এক সময়ে গাড়িটি আর থাকবে না, কিন্তু গাড়ির ওইসব যন্ত্রাংশগুলো, ইঞ্জিন, কার্বোরেটর, স্টিয়ারিং হুইল, চাকা, ইত্যাদি ইত্যাদি কিন্তু ঠিকই টিকে থাকবে, এবং অন্যত্র ব্যবহৃত হবে। প্লেটোর কাছে এটাই বাস্তবতা; বস্তু, বস্তু হয়ে ওঠার আগেও অস্তিত্বমান ছিল, এবং এখনকার এই ফর্মের বিনাশের পরেও আবার অন্যভাবে পুনর্ব্যবহৃত (রিসাইক্লিং) হবে। আগেই বলেছি প্লেটো আত্মা আছে কি নেই সেই যুক্তি তর্কে যায় নি, বরং আত্মা আমাদের অস্তিত্বেরই একটা অংশ, অর্থাৎ যেসব খন্ডাংশ দিয়ে এই ‘আমরা’ গড়ে উঠেছি তারই একটা ধরে নিয়ে বরং আত্মার অবিনশ্বরতা প্রমানেই অধিক আগ্রহী হয়েছে। প্লেটোতে তাই আত্মা আমদের দেহের অংশ, অস্তিত্বের অংশ যা পুনর্ব্যবহার (রিসাইক্লিং) যুক্তিতে এই শরীর ধ্বংস হবার পরও টিকে থাকবে এবং পুনরায় ব্যবহৃত হবে। আমাদের শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন আমাদের মৃত্যুর পরও টিকে থাকে (অন্তত কিছু সময়, দিন অথবা বিভিন্ন অংশ যেমন কর্ণিয়া, বৃক্ক ইত্যাদি পুনর্ব্যবহৃত হয়) তেমনই ভাবে।
কিন্তু এই যুক্তির সমস্যা হচ্ছে, পুনর্ব্যবহৃত তত্ত্বের গোড়ার কথা হচ্ছে আমরা এমন কিছু উপাদানে তৈরী যা আমাদের জন্মের পূর্বেও অস্তিত্বমান ছিল এবং কোন কোন অংশ যা আমাদের মৃত্যুর পরও টিকে থাকবে। কিন্তু তার অর্থ এই না যে, আত্মা তেমনই একটা অংশ যা আমাদের মৃত্যুর পরও টিকে থাকবে। আমরা এখন যেমন জানি যে, আমাদের দেহ বিবিধ অনু-পরমানু দিয়ে গঠিত যা আমাদের জন্মের বহু পূর্বেও ছিল এবং আমাদের বিনাসের পরেও টিকে থাকবে, এবং সেসব অন্য কিছু গড়ে উঠতে পুনর্ব্যবহৃত (রিসাইক্লিং) হবে। সুতরাং, মৌলিক এই প্রশ্নে প্লেটো সঠিক যে আমরা এমন কিছু উপাদানে তৈরী যা আমাদের জন্মের পূর্বেও অস্তিত্বমান ছিল এবং যা আমাদের মৃত্যুর পরও টিকে থাকবে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, আমার সমস্ত অংশই আগে অস্তিত্বমান ছিল এবং আমার মৃত্যুর পরও টিকে থাকবে এবং পুনর্ব্যবহৃত হবে। যেমন ধরা যাক হৃৎপিণ্ড, আমার জন্মের আগে এর কোন অস্তিত্ব ছিল না এবং এটি আমার জন্মের সাথে সাথে, একই সময়ে অস্তিত্বমান হয়েছে। আমার মৃত্যুর বা বিনাসের পরেও এটি টিকে থাকবে, অন্তত বেশ কিছু সময়, ক্ষণ, দিন, বা মাস হয়ত।
কিন্তু তারও অর্থ তো আর এই নয় যে, আমার হৃৎপিণ্ড অবিনশ্বর, বা অনন্তকাল টিকে থাকবে। বরং এরকইম ভাবাটাই ভুল। সুতরাং, এটি যদিও সত্য যে, কোন এক প্রকারে আমাদের দেহাংশের পুনর্ব্যবহার ঘটে, তবু আমার সব অংশই পুনর্ব্যবহৃত হয় না এবং আমার এমন কিছু অংশ যার আমার জন্মের পূর্বে কোন অস্তিত্বই ছিল না বরং আমার সাথে সাথেই অস্তিত্বমান হয়েছে, কিন্তু আমার অস্তিত্বের জন্য যা অত্যাবশ্যকীয় সেটাও আমার মৃত্যুর পর টিকে থাকবে। যদি তাই সত্যি হয়, তবে এটি ভাবার কোন কারণ নেই যে আমার অস্তিত্বের জন্য অত্যাবশ্যকীয় কিছু অংশ যার আমার জন্মের পূর্বে অস্তিত্ব ছিল না কিন্ত আমার সাথে সাথেই অস্তিত্বমান হয়েছে তা টিকে থাকবে। আত্মার ক্ষেত্রেও এটি একইভাবে প্রযোজ্য, যদিও আত্মার মত ‘অশরীরী’ কিছু আমার অংশ হয়েও থাকে, তথাপি এতে তার অবিনশ্বরতা প্রমানিত হয় না। সুতরাং এটি মনে করার মত যথেষ্ট কারণ নেই যে, আত্মার মত মৌলিক কোন অংশ যা আমার দেহগঠনে অত্যাবশ্যকীয় তা আমার মৃত্যুর পরও টিকে থাকবে এবং পুনর্ব্যবহৃত হবে। সুতরাং দ্বিতীয় প্রস্তাবনা 'পুনর্ব্যবহারের (রিসাইক্লিং) যুক্তিও' খুব টেকশই যুক্তি না।
তৃতীয় প্রস্তাবঃ স্মৃতির যুক্তি
জন্মের আগেই আত্মার অস্তিত্বের ব্যপারে প্লেটোর যুক্তি হচ্ছে, আমরা অনেক বিশেষ বিষয় বা বস্তুর স্মৃতি মনে করতে পারি তা সম্ভব কারণ জন্মের পূর্বেও আত্মার অস্তিত্ব ছিল বলেই কেবল। স্মৃতিতে কিছু মনে পড়া যদি আমরা ভাল করে পর্যবেক্ষণ করি তবে দেখব যে, যখনই একটা কিছু দেখে আমাদের অন্য কোন কিছুকে মনে পড়ে তা কিন্তু আমরা যেটা দেখছি সেটি নয়। যেমন, কোন বন্ধুর একটি ফটো দেখলে তাকে মনে পড়ে, তার সাথে কাটানো সময় এবং আরও অনেক স্মৃতি, কিন্তু ফটোটি তো আর আমার বন্ধু নয়। আবার এমনও নয় যে, ওই একই ছবি এমন কাউকে দেখালে, যে আমার সেই বন্ধুকে চিনে না, তার কিছু মনে পড়বে, কারণ তার আমার সেই বন্ধুর সাথে সময় কাটানোর কোন অভিজ্ঞতা নেই। সুতরাং, স্মৃতির প্রক্রিয়ায় সেই বন্ধুটিকে আগে থেকেই জানা থাকতে হবে এবং পরবর্তিতে তাকে মনে পড়বে এমন কোন একটি অনুষঙ্গ, যেমন ফটো, (খুব একটা ভাল ফটো না হলেও চলবে) প্রয়োজন।
প্লেটোর যুক্তিতে, আমরা প্লেটোনিক ফর্ম, যেমন সংখ্যা ৫, যার এই জগতে বাস্তব বা শরীরী কোন অস্তিত্ব নেই তাকেও চিনতে পারি বা সেসব নিয়ে ভাবতে পারি তার কারণটা কি? যেমন, আমরা খাবার টেবিলে একটা প্লেট দেখে গোল আকৃতির বিষয়ে ভাবতে শুরু করি, যদিও পরিপূর্ণ গোলের দেখা আমরা পাই নাই এই দৃশ্যমান জগতে। তেমনই, সুন্দর কাউকে দেখে আমরা সৌন্দর্য্যের বিষয়ে ভাবতে পারি, যদিও সেই ব্যক্তি বিশুদ্ধ সুন্দর না। প্লেটো বলছে, আমাদের এইসব স্মৃতি জাগানিয়ার শর্ত, ঠিক যেভাবে বন্ধুর একটি ফটো আমাদের তাকে মনে পড়িয়ে দেয়, এই যে তার সাথে আমাদের পূর্ব সাক্ষাত হয়েছিল, একই ভাবে প্লেটোনিক ফর্মের বিষয়ে স্মৃতি মনে হবার পিছনে শর্ত এই যে সেসব ফর্মের সাথে আমাদের পূর্ব যোগাযোগ থাকা অবশ্যম্ভাবী। আর তাই প্রায় গোলাকৃতির প্লেট আমাদের বিশুদ্ধ গোলকের কথা মনে পড়িয়ে দেয় কারণ আমরা অবশ্যই বিশুদ্ধ গোলের দেখা আগেই পেয়েছি। কিন্তু এই যোগাযোগ হল কোথায়, এই জগতে তো কোন বিশুদ্ধ গোল বা বিশুদ্ধ সৌন্দর্য্য নেই? সুতরাং, এই দেখা হওয়া ঘটেছে অবশ্যই এই জীবনের আগে, এটিই প্লেটোর যুক্তি, সুতরাং এই জীবনের আগেও আত্মার অস্তিত্ব ছিল। এটিই প্লেটোর আত্মার অস্তিত্বের বিষয়ে জোড়ালো যুক্তি, তবে এর বিপরীতে বলা চলে, এ জগতে প্লেটোনিক ফর্মের দেখা আমরা পাই না বলে তাদের পূর্বে অন্যত্র অস্তিত্ব ছিল যেখানে আমাদের সাথে দেখা হয়েছে বা পরিচয় ছিল এমন মনে করার কোন জোড়ালো যুক্তি নেই; কেননা, বিশুদ্ধ সরলরেখার ধারণা করতে হলে তার সম্পর্কে পূর্ব ধারণা থাকতেই হবে তার কোন কথা নেই, আমি প্রায়-সরলরেখা থেকে, তেমন বিশুদ্ধ সরলরেখার ধারণা করতেই পারি, যদিও আমি পরিপূর্ণ সরলরেখা এই জগতে কখনও দেখি নাই। এই বিষয়ে পরে আরও বিস্তারে যাব।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৫২