(বাকি অংশ)
১৫ নভেম্বর
লিখছি না প্রতিনিয়ত, ব্যাংকের একঘেয়ে এই কাজে হাপিয়ে উঠেছি, তারই ফলশ্র“তিতে হচ্ছে না কোন ধরনের সৃষ্টিশীল কাজ। ভীষণ বিরক্ত আমি, ভীষণ রকমের ক্ষুব্ধ নিজের উপর!!
এই কাজে কোন রকমের বৈচিত্র নেই, বৈচিত্রহীন বলেই আমি সৃষ্টিহীন। পত্রিকায় যখন ছিলাম তখন কাজের একটি আনন্দ ছিল, নানান বিচিত্র ধরনের মানুষ ও পরিবেশ, নানান ধরনের গল্প ও জীবনের কাছাকাছি হতাম। সমাজের সকল শ্রেনীর মানুষ ও পেশাজীবির মুখোমুখি হবার সুযোগ ছিল।
কত না মজাদার ছিল সে সমস্ত অভিজ্ঞতা! সারা দেশটা চষে বেড়াতাম। আজকে খুলনা তো কাল চাঁদপুর। কখনও সেরাকন্ঠের খোঁজে তো কখনও জাটকা অভিযানে চলে গিয়েছি স্পিড বোটে করে পদ্মার মোহনায়। ফটোগ্রাফিতে দেশকে তুলে এনেছি অবলীলায়, কোন বাঁধা ধরা সময় ছিল না, ছিল না প্রতিদিন সকাল হতে সন্ধ্যা পযন্ত অফিসের চৌহদ্দিতে বন্দী হয়ে থাকার বাধ্যবাধকতা।
ইদানিং খুব বেশী বেশী সে সমস্ত সুবর্ণ সময় আমি অনুভব করি। আমার সৃষ্টিশীল ভিতরটা বেদনার ভারে মুষড়ে যায়। আমি এখন সামান্য এক করণিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছি দিনের পর দিন।
পত্রিকায় থাকাকালীন সময়ে যথেষ্ট সময় পেতাম আমার আরও অন্যান্য সুকুমার প্রকাশের জন্য কাজ করার। ফলে ছবি আকাঁর জন্য সময় দিতে পারতাম, দু-দুটা একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী করেছি। সে সমস্তকে কাজ মনে হত, এখন মনে হয় অর্থ আয়ের জন্য আমি আমার আত্মা বিক্রি করে দিয়েছি। আত্মা বিক্রি হয়ে গেল একজন কবির, লেখকের, চিত্রকরের আর কিছু থাকে না যা তাকে সৃষ্টিশীল উন্মাদনায় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। যা তাকে অত্যুচ্চ কোন আবেগে প্রকম্পিত করবে নতুন কোন প্রনোদনায়। সেই কলুষিত আত্মায় তাই এখন আর নতুন কোন ভাবনার বুদবুদ আন্দোলন তুলে না, আমাকে আর তাড়িয়ে বেড়ায় না!
এ সমস্ত নিয়ে এক ভিতরব্যাপী রণের ব্যাপকতায় আমি প্রতিনিয়ত বিদ্ধ হচ্ছি, আর তাই খুঁজে ফিরি মুক্তির পথ!!
কোথায় আমার মুক্তি? কিসে আমার উদ্ধার? কোথায় তুমি প্রেম? কোথায় শিল্প? সৃষ্টির প্রাণ হচ্ছে মুক্তচিন্তা ও স্বাধীন থাকা।
১৮ নভেম্বর
মনের ভিতরে অনেক কিছু চলতে থাকে। আকাশের মত রং বদলায় ক্ষণে ক্ষণে। কেবলই ইচ্ছা করে কোন একটা সৃষ্টির সাথে নিজেকে জড়াই। একটা সিনেমা বানাই, কিংবা আবারও ছবি আঁকায় মেতে উঠি। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হবে কাল। আজ থেকেই সারাদেশে সর্ব্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। পথে আসতে আসতে দেখলাম সুপ্রিম কোর্টের বাইরে র্যাব-পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
ভিতরে ভিতরে অস্থিরতা গ্রাস করছে। আমার ভিতরে এক তীব্র অনুভূতি হচ্ছে। আমি ভাবনার জগতে হারিয়ে যাচ্ছি ক্রমাগত, ধাবিত হচ্ছি প্রবলভাবে। গন্তব্য অজানা, কোথায় সেই ঠিকানা আগাম বলতে পারছি না।
২৪ নভেম্বর
দিন কেটে যাচ্ছে। ব্যস্ততায়, ভাল লাগায়, ভাল না লাগায়। আর ক’দিন পরই ঈদ-উল-আজহা। বিশেষ কিছু ঘটনা নেই। কেবল ব্যাংকের নানা রকম কর্মকান্ড আর এখানে সহকর্মীদের সাথেই কেটে যাচ্ছে সময়।
শাহবাগে মাঝে মাঝে আড্ডা জমে যায়, তখন ভাল লাগে। হৃদয়ের কথা শুনে কিছু একটা করব এরকম প্রত্যয়ে উদ্বেলিত হই, সৃষ্টিশীল কোন কাজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে নিজের অস্তিত্বকে কিছুটা অর্থবহ মনে হয় তখন। ভাবছি একটা ম্যাগাজিন করব। ইতিপূর্বে যদিও আমি এই ম্যাগাজিনটার উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছি, এখন সম্পাদনা করতে হবে। ম্যাগাজিনের নাম অদ্বৈত। লিখতে পারলে ভাল লাগে কেন? কিংবা আঁকাআঁকি করতে পারলে? এগুলোও তো কাজই, যেমন ব্যাংকে করছি বা অন্য অনেক ধরনের কাজ করে মানুষ!! এগুলোকে আলাদা মনে হয় কারণ সম্ভবত নিজেকে এতে প্রকাশ করতে পারি। এখানে আর কোন লেনদেন নেই। কেবল মাত্র আমার আমিত্বকে তুলে ধরা চলে। সমাজ ও মানুষ সম্পর্কে আমার ভাবনাকে আমি বলতে পারি, দেখাতে পারি। সুন্দরের জন্য যে আকুলতা, ভালবাসার জন্য যে ব্যাকুলতা তাকে মিটিয়ে নিতে পারি নৈর্ব্যক্ত প্রকাশে।
একটু একটু শীত পড়ছে, ভাল লাগে সকালের হালকা রোদে মিষ্টি শীতের আমেজ।
৩০ নভেম্বর
কোরবানীর ঈদ ছিল গত পরশু। এবছর ঈদের ছুটিটা সরকারী ছুটির সাথে মিলে যাওয়াতে সংক্ষিপ্ত হয়ে গেল। আজকে অফিস করছি। সারাদিন গেল গরু কাটার ঝামেলায়, গতকাল আত্মীয় স্বজনদের বাসায় যাওয়া আসাতেই কেটে গেল। যোগাযোগ হয়ে উঠে না, ঈদের বন্ধে সেটা কিছুটা পূরণ হয়।
চলছে সবকিছু সেরকম। আমার একটা গল্প ছাপা হল শিল্পকণ্ঠ বলে একটা স্বল্প পরিচিত ম্যাগাজিনের ঈদ সংখ্যায়। গল্পটি কোন কাঁটাছেড়া না করে ছাপলেও নামটা সংক্ষিপ্ত করে দিয়েছে। পুরো নামটা ছিল ঘুনপোকা কেটে নিচ্ছে সব স্মৃতির কোলাজ, তারা ছাপল ঘুনপোকা (!!) শিরোনাম দিয়ে, এবং আমার অনুমতি না নিয়েই। আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না এটি কি তারা করতে পারে না করা উচিৎ।
ঈদের ছুটিতে বিয়ার খাওয়া হয়েছে খুব। শ্মশান ঠাকুরের সাথে ঈদের বিকেলে চারুকলার সামনে পার্কের ঘাসে বসে আড্ডা খুব জমে গেল। একটু একটু শীতের আমেজে মাঠের ঘাসে বসে এমনিতেই অলস সময় পার করতে পারছিলাম বলে ভাল লাগছিল, আড্ডাটা গল্প, কবিতা এবং এই সময়ের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড লিটল ম্যাগাজিন, ম্যাগাজিন, বাজারচলতি পত্রিকার সাহিত্য সাময়িকী এই সমস্ত বিষয়ে আবর্তিত হচ্ছিল। ভাল লাগছিল, রাতে বাসায় আমার দুটি ছোট ভাই আসল, ওদের সাথেও আড্ডা চলল রাত সাড়ে ১২টা অব্দি, সাথে খাওয়া দাওয়া এবং বিয়ার। মাথাটায় আন্দোলন উঠে আলোচনা ঘুরে গেল শেয়ার বাজার, ফ্যাট এই সমস্ততে!
বিকেলের আড্ডার সাথে এই আড্ডার ফারাক অনেকখানি। তবু দুটিতেই আরাম পেলাম। দুটিতেই স্বপ্ন বুনতে বুনতে অনেক দূর যাওয়া গেল।
কোন কোন দিন সকালে বা রাতে হঠাৎ কখনও ঘুম ভেঙ্গে গেলে খুব অপরিচিত মনে হয় সব কিছু। অপরিচয় ঠিক নয়, বুঝতে পারি না ঠিক কেন এই সমস্ত করছি। এই প্রতিদিন কেন অফিসে আসতে হবে, কেন আমাকে নির্দিষ্ট এই সমস্ত কাজগুলো করতে হবে। একদিন এই সমস্ত সবই অর্থহীন হয়ে যাবে। আমি থাকব না তবু মনের উপর চাপ তৈরী করে হলেও আমাকে এই কাজগুলো করে যেতে হবে। আমি এর থেকে কিভাবে মুক্ত হব? কতদিন নিজের উপর এই জোর করব?
নিজের একটা ঠিকানা থাকলে আমি এগুলো ছেড়ে দিতাম। নিজের একটা বাড়ি বা অন্তত একটা ফ্যাট থাকলেও.....চলার মত একটা পথ বের করে নেয়া যেত।
দুপুরগুলো বাইরে পড়ে থাকে, এক মধুর মায়াময় আহবানে আমার করোটিতে ঝংকার তুলে ফিরে। আমার ভিতরটা তাতে সাড়া দিতে উদগ্রিব হয়ে থাকে। ছুটির আমেজ-সম্পন্ন এই দুপুরের মাদকতা আরও বেশী, তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে আমার আকাঙ্খা, দুপুর দেড়টা বাজে। কোন কাজ নেই, তবু কি আমাকে বসে থাকতে হবে ৬টা পর্যন্ত? কি অদ্ভুত এই অর্থহীনতা। আমি প্রাণহীন এক স্থবির অর্থহীনতায় চুপচাপ স্যুট টাই পড়ে বসে থাকি। বসে থাকি.....
১লা ডিসেম্বর
আজকে সারাদিন কোন কাজ নেই অফিসে। সারাদিন বসে বসে আর গল্প আড্ডা মেরে সময় কাটিয়েছি। নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসেছেন আমাদের ব্যাংকে, সবাই মানিয়ে নিতে ব্যস্ত। ১৪ ডিসেম্বর
ইদানিং বড্ড বেশী জ্বালা যন্ত্রণা এই কাজটা নিয়ে। একঘেয়েমীতে পেয়ে বসেছে, কেবলই সকাল থেকে এক খোয়াড়ে এসে ঢুকি এমন বোধ হতে থাকে আর সারাদিন বন্দী মুরগির মত ছটফট করি। কোন উচ্চাকাঙ্খা নেই, নেই কোন বড় হওয়ার বোধ। আমার ভিতরটা মৃতের মত আচরণ করে।
কেবল আমার মেয়েটার সাথে সময়গুলো আমার নির্মল আনন্দের, ও বড় হচ্ছে একটু একটু করে, এখন সে ঘুমঘোরে স্বপ্ন দেখলে কখনও কখনও সেই স্বপ্নকে মনে করতে পারে! আর আমি কোন স্বপ্ন তৈরী করতে পারছি না আপাতত। স্বপ্নহীন বেচে থাকা যে কি যন্ত্রণাকাতর তা এখন টের পাচ্ছি হাড়ে হাড়ে।
এরই মাঝে ভাবনাগুলো নাড়িয়ে দিয়ে যায়। অতীত থেকে ভেসে আসা কণ্ঠস্বর মাদকতা ছড়ায়। আর আমি সে সমস্ত...
২১ ডিসেম্বর
কিছু লেখা হল না আজকে।
২৯ ডিসেম্বর
শেষ হয়ে যাচ্ছে আরেকটা বছর। এর মাঝে বড়দিন চলে গেল। সে উপলক্ষে বিয়ার খাওয়া হল ক’দিন। আমরা একটা পত্রিকা করছি, কিছু ভাল লেখা পেয়েছি তবে এখনও ছাপার মত যথেষ্ট নয়। সেগুলো নিয়েই আমরা কিছুদিন ব্যস্ত থাকছি।
সে সমস্ত গল্প পড়তে গিয়ে একটা অনুভূতি হল যে সবাই গল্প বলতে চায়। এখানে এখনও গল্প বলার প্রবণতাই প্রবল। মেয়েটি আসল, কোথাও গেল, একটা ঘটনা বা দুর্ঘটনায় তারা নিজেদের আবিষ্কার করল, কিছু একটা ঘটল এই সমস্তই প্রধান বিবেচ্য, এবং নারী-পুরুষের প্রেম। কোন ভাঙ্গাচোরা নেই তেমন, নেই কোন আচমকা মনোলোকের উদ্ভাসন এবং তীব্রতা।
৬ জানুয়ারী
নতুন একটা বছর এসে গেল, মনে হয় জীবনটাকে নতুনভাবে শুরু করতে পারলে ভাল হত। যে সমস্ত ভুলগুলো হয়ে গেছে সেগুলোকে কিছুটা হলেও শুধরে নেয়া যেত। জীবনে অনেকবার মূল্যায়িত হয়েছি আমার তথাকথিত গুণাবলীর জন্য, সেগুলোকে এক্সট্রা-ক্যারিকুলাম একটিভিটিজ হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে। এ-কারণে ছাত্রাবস্থায় আমি সেরা চৌকষ ক্যাডেটের তকমা পেয়েছিলাম, কিন্তু অদ্ভুত বিষয় এগুলো এক্সট্রা-ক্যারিকুলাম একটিভিটিজ হয়েই রয়ে গেল সব সময়। কর্মক্ষেত্রে এসম¯ে-র মূল্যায়ন হল না!
আমার সমবয়সী সবাই আমার থেকে অনেক ভাল অবস্থায় পদমর্যাদার ক্ষেত্রে, আমার এত বহুবিধ প্রকাশ কোন মূল্যই পেল না। এ সমস্ত যখন ভাবি তখন মনে হয় তার থেকে সাধারণ একটা তথাকথিত এমবিএ কিংবা ব্যাংক ব্যবস্থাপনা করলেই ভাল ছিল। কি হল কবিতা লেখার ফল, গল্প বা শিল্প সমালোচনা করার কিংবা ছবি আঁকতে পারার সামর্থ্য?ে এগুলো অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবেই দেখা হল সবসময়, তেমন কোন স্বীকৃতি জুটল না, যা জুটল তা হল মানুষের ভালবাসা!!
আমাকে ইদানিং এ সমস্ত ছোটখাট কষ্টগুলো ঘিরে ধরছে, এর থেকে ভাল ছিল কোন কিছু না করা। প্রতিষ্ঠান বিবেচনা করে কেবল সনদপত্র। প্রতিষ্ঠানে অযোগ্য না হলেও কম যোগ্যতা সম্পন্ন অনেককেই স্যার স্যার করতে হচ্ছে আমাকে। কেননা সে শুরু করেছে আগে। এরকম নানা রকমের কষ্ট আছে আমার।
কষ্ট আছে আমার, কষ্ট। এখানে নিজের সাথে নিজের কথোপকথন ছাড়া আর কিছু করছি না। নিজের বয়ানে মেতেছি, একান্তই ব্যক্তিগত এ সমস্ত কথা। সুন্দরের চর্চা করেছি, সুন্দর খোঁজার চেষ্টা করেছি, সেই সুন্দর খুব কম মানুষের মাঝে দেখেছি। সুন্দর কথায়, সুন্দর আচরণে, সুন্দরভাবে বাঁচা শিখেনি অনেক মানুষই। অথচ তথাকথিত ডিগ্রী আছে, আছে তথাকথিত শিক্ষা!!
অসহ্য মনে হয় এই সমস্ত। মনে হয় সব কিছু উলোট পালট করে ভেঙ্গেচুরে একটা কিছু করে বসি।
১১ জানুয়ারী
অদ্বৈত এর জন্য লেখা সংগ্রহের কাজ চলছে খুবই ধীর গতিতে, লেখা চেয়ে চেয়ে কিছুটা বিরক্ত। শুধু চেয়েই শেষ নয় সেজন্য প্রতিনিয়ত আবার তাগাদাও দিতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে তরুণরা অনেক বেশী আন্তরিক এবং সক্রিয়। যেভাবে ভেবেছিলাম সেভাবে ঠিক হয়ত হবে না পত্রিকাটি। তবু চেষ্টা চলছে। শ্মশান খুব সাহায্য করছে এ বিষয়ে।
অনেক বিষয়েই লেখা পাওয়া গেল না। সাক্ষাতকার ছাপার ইচ্ছা ছিল কারও কারও সেটি সম্ভব হল না। কয়েকটি গল্প খুবই অসাধারণ মনে হয়েছে, নতুনদের কারও কারও গল্পে এই সময়ের ভাবনা চিন্তার পরিবর্তনের ইঙ্গিত ইশারা আর বলার ঢঙ্গে খুঁজে পাওয়া যায়। গল্প বলার প্রবণতাটি থাকলেও তা যেন অনেকখানি বিচ্ছিন্নতায় নিজেকে প্রকাশ করে, ঠিক প্রকট আর সরাসরি নয়।
কিছু পূনর্মুদ্রণ করছি, সময় মত সবকিছু শেষ করতে পারব এই প্রত্যাশা করি।
১৩ জানুয়ারী
এবছরের সবচেয়ে বেশী ঠান্ডা পড়েছে গত তিনদিন। তীব্র শৈত্য প্রবাহে মানুষের অবস্থা বেশ করুণ। সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিসে আসার সময় ঠান্ডায় একেবারে জবুথবু হয়ে যেতে হয়। দরিদ্র মানুষের দুর্দশার অন্তনেই। সকাল ১১টা অব্দি কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকে শহর, রাতেও বাতাসে হীম বয়।
১৮ জানুয়ারী
ঢাকার বাড় এখন উর্দ্ধমুখী, উপায়ও নেই অবশ্য এছাড়া। জীবনযাত্রা হয়ে উঠছে অসম্ভব রকমের ব্যয়বহুল। জনসংখ্যার তুলনায় মানুষের যে প্রবৃদ্ধি তাতে এখন ঢাকাই সম্ভবত পৃথিবীর সবচাইতে ঘনবসতিপূর্ণ শহর। এসংক্রান্ত তথ্য আমার সঠিক জানা নেই, তবে সেটা ভুল হবার সম্ভবনা ক্ষীণ। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই যত্রতত্র চলছে আবাসনের নামে যথেচ্ছভাবে রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর অর্থ কামানোর ধান্ধা। ক্রমাগত এই খাতে বেড়ে চলেছে ফ্যাটের দাম। এখন তা আকাশচুম্বী, ক্রমেই তা মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার আরও বাইরে চলে যাচ্ছে।
আজীবনের সঞ্চয় দিয়েও মধ্যবিত্তের একটি সামান্যতম মাথা গুঁজার ঠাই হয়ে উঠছে কষ্ট-কল্পনা! তাও কিনা যারা সৌভাগ্যবান, তারা আসলে কিনছেন হাওয়া। ছ’তলা, দম তলার উপর একটি ইট সিমেন্টের হাওয়া বসত। হায়রে বসত-ভিটা।
প্রকৃতি নিধনে মেতে উঠেছে এই সমস্ত কোম্পানিগুলো। তো এই সমস্ত দেখে দেখে আমি এবং আমরা যে বেশ সুখেই আছি তা বুঝতে পারছি। অলস দুপুরে আকাশের অনেক উপর দিয়ে চিল উড়ে গেলে আমার ভিতর কি যেন কেমন একটা স্যুররিয়াল চিত্রকল্প রচিত হয়। আমি অনেক বেশী মাত্রায় তখন চিলের একটানা গতিপথ ধরে হাওয়ায় উড়ে বেড়ানোর একটা কার্যকারণ খুঁজে বের করি। এই কংক্রিটের শহরে হঠাৎ করে ধাবমান গাড়ির কাচে, বনেটে কিংবা স্কাইস্ক্র্যাপারগুলোর শরীরে চকিতে রোদের প্রতিফলন দেখে ভাবি...বাহ, বেশ হচ্ছে তো আমাদের!!!! আমরা তো বেশ এগিয়ে যাচ্ছি উন্নতির পথে!!!! আমরাতো বেশ আছি এই মুক্তবাজারী হাওয়ায়, বেশ তো সভ্য-ভব্য আর বিদেশী বিদেশী হয়ে উঠছি। আমাদের এখানেও তো রেডিসনের মত আন্তর্জাতিক চেইন হোটেল গড়ে উঠছে। বেশ তো সবার পকেটে পকেটে সেল ফোন, ক্রেডিট কার্ড। ভাল, বেশ ভালই তো এগুচ্ছি আমরা।
আর ওদিকে প্রচন্ড শৈত্য প্রবাহে গড়ে প্রতিদিনই মানুষ মরছে, সংখ্যার খবর বলতে পারছি না, তবে নেহায়েত কম না সেই সংখ্যা। এই শীতে এ পর্যন্ত হাজারখানেক তো হবেই। ভালই তো হচ্ছে সব চারদিকে!!!!!!
আমিনুল হক শান্ত
ধানমন্ডি, ঢাকা
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১০ রাত ১১:১৪