সম্রাট আকবরকে নিয়ে আমার ব্যক্তিগত আগ্রহের সীমা নেই। তাই আকবরকে নিয়ে যে কোন বই সংগ্রহের সুযোগ কখনোই হাত ছাড়া করি না। হঠাতই হাতে পেলাম বইটা। নাম 'দি এমপেরর'স রাইটিংস : মেমোরিজ অব আকবর দ্য গ্রেট'। যতদূর জানি আকবর কোন আত্মজীবনী লিখে যাননি। বই উল্টেপাল্টে দেখলাম, আমার ধারণা ভুল না। এটা একটা ফিকশন। সত্যিই বইটা একটা অনবদ্য ঐতিহাসিক দলিল। (ইতিহাস নির্ভর ফিকশন ব্যক্তিগতভাবে আমি সব সময়ই এড়িয়ে চলি)। কিন্তু না এ বই এড়ানোর উপায় নেই। বইয়ের লেখকের নাম ড্রিক কোলিয়ার। মি. ড্রিক বেলজিয়ামের মানুষ। বিখ্যাত জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানির শীর্ষ কর্তাদের একজন ছিলেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাও করেছেন। কর্পোরেট কোম্পানির শীর্ষ কর্তা লিখেছেন আকবরের আত্মজীবনী! অস্বস্তি লাগলেও বইয়ের পাতা উল্টে তা একেবারেই উবে গেছে বরং ভদ্রলোকের প্রতি কৃতজ্ঞ বোধ করা ছাড়া কোন পথ দেখছি না। বইটি লিখতে লেখক আকবর এবং মুঘল ভারত সম্পর্কে গভীরভাবে পড়াশোনা করেছেন। সেই পড়াশোনার নজির এবং ইতিহাসের প্রতি তার দায়িত্ববোধ বইটিতে দৃষ্টিগোচর হয়। শুরুতে তার ইচ্ছা ছিল গোয়া কেন্দ্রিক ইউরোপিয় ও ভারতীয়দের সংযোগকে নিয়ে উপন্যাস লেখার। এ বিষয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে তিনি প্রথমবারের মতো সন্ধান পান আকবর নামের এক বিস্ময় পুরুষের। কোলিয়ারের বিনয়ী কথায়, 'Intrigued, I began to document myself about the life and times of this remarkable individual, of whom, I ashamed to admit, I had never heard before. In my defence, I should point out that at least in my time, high schools in continental Western Europe paid little to no attention to Asian history in general, and Indian history in particular...'
[
আকবরের নিজের মুখের বয়ানের মাধ্যমে তার ইতিহাস,চিন্তাকে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিলেন কোলিয়ার। পুরো বইটি লেখা হয়েছে পুত্র জাহাঙ্গীরের প্রতি আকবরের লিখিত চিঠি হিসেবে। সাত বছরের পরিশ্রমে কোলিয়ার শেষ করেন ৬০০ পাতার এই বিরাট গ্রন্থ। ইতিহাস , দলিল সাক্ষ্য দেয় না এমন কোন কথা তিনি বইতে আকবরের মুখ থেকে বলাননি। বইটির অমূল্য সংযোজন হিসেবে আছে দুটি ঐতিহাসিক চিঠি। একটি গোয়ার জেসুইট মিশনারীদের কাছে আকবরের পাঠানো চিঠি। ভারতের অধিশ্বর এই চিঠিতে বিনীত ভাষায় জেসুইটদের কাছে লিখেছেন যে তিনি খৃস্ট ধর্ম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী । এজন্য জেসুইটদের পক্ষ থেকে কাউকে পাঠানো হলে সম্রাট তাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে গ্রহণ করবেন। এবং কাজ শেষে তারা ফিরে যেতে চাইলে তিনি তাদের সসম্মানে পৌছে দেবেন। সবচেয়ে বড় বিস্ময়টি হল তৎকালীন পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগর রোম থেকে সম্রাট আকবরকে ধর্ম সম্পর্কে তার উদারতা এবং অনুসন্ধানকে স্বাগত জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে রোম থেকে পোপ সেই চিঠিটি পাঠান। আকবরের এই বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কোলিয়ার লিখেছেন, I discovered to my surprise , that then rulling 'Great Mogul' Akbar the Great had invited no less than three Jesuit missions to his court, eager to learn about the Christian faith... when Europe found itself plagued by fanaticism, persecution and bloody religious war....not only was he among the most powerful and wealthiest sovereigns of his time, but without any doubt, also one of the most enlightened ones...his tolerance in religious matters, which he pushed through in spite of stiff opposition and a great personal risk, was truly exceptional and that alone merits him a place among the greatest rulers in history. বইটার সাজসজ্জা সম্পর্কেও একটু বলা দরকার। প্রচ্ছদে আকবরের প্রতিরূপের মধ্যে ক্যালিওগ্রাফিতে লেখা আছে ' Abul Fath, Jalal-ud-din Muhammad Akbar, Padshah, Ghazi, Akbar-e-Azam.