খিলাফত আমলে প্রাচীন সভ্যতার প্রাচীন নগরী বাগদাদ ছিলো জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিতরণ-কেন্দ্র! জ্ঞানের বাতি জ্বালিয়েছে এই শহর। আব্বাসিয়াদের 'বাইতুল হিকমাহ' এই শহরেই স্থাপিত হয়েছিলো। তৎকালীন বিশ্বের বড় বড় জ্ঞানী-গুণী ও বিজ্ঞানীগণের আবাস ছিলো এই শহর। সরকারি খরচে তাদের গবেষণার কাজে নিয়োজিত করা হতো, এমন কোনো শাস্ত্র নেই, যে বিষয়ের পণ্ডিত ছিলনা ও পঠন-পাঠন হতনা, মসজিদই ছিল সেসবের আলোকিত শিক্ষাকেন্দ্র।
জাতীয় ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে মূল্যবান কিতাব ও পাণ্ডুলিপির সংগ্রহশালা ছিলো বিশাল বিশাল! মানুষের রুচি এমন ছিলো, বই দিয়ে ঘর সাজাতেন। আরবিতে প্রবাদই হয়ে গেছে- "বই লেখা হয় কায়রোতে, ছাপা হয় বৈরুতে, পড়া হয় বাগদাদে!"
সেই বাগদাদে যখন মোঙ্গলরা হামলা করলো, শহরের সমস্ত লাইব্রেরী জ্বালিয়ে দিল, বই এনে ফেলে দিলো ফোরাত নদীর বুকে, কালির রংয়ে নদীর পানি কালো হয়ে গিয়েছিলো, বলা হয়- স্রোত পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো সেদিন! এতো দিনের সংগ্রহ- শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সবকিছু পানিতে মিশিয়ে দিলো।
মোঙ্গলরা ছিলো আদিম হিংস্র অশিক্ষিত বর্বর জাতি, বইয়ের মূল্য তাদের জানা ছিলনা, এজন্য ওরা সম্পদ লুটেছে, বই লুটেনি। কিন্তু ইসরাইলিরা হলো ধূর্ত ও ধুরন্ধর জাতি, বইয়ের মূল্য ওদের জানা আছে। এজন্যইতো ওরা ফিলিস্তিনের সম্পদের সাথে তাদের ইতিহাস ঐতিহ্যও লুটে নিয়ে গেছে।
কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে চাইলে শুধু পেশীর জোরে নয়, মতাদর্শিক শক্তিও কেড়ে নিতে হয়, শুধু ভাতে আর ঘাতে নয়, ওদের নীলনকশা আরো গভীরে। ওরা ফিলিস্তিনিদের জাতিগত পরিচয়, শিল্প সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সব ধ্বংস করেই তাদেরকে মুছে দেওয়ার পাঁয়তারায় আছে।
"ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলো ১৯৪৮ সালের ১৫ মে। এদিন ইসরায়েলি ইহুদি জনগোষ্ঠী তাদের স্বাধীনতা দিবস পালন করে। নাচে। বাজি ফোটায়। আর বাস্তুচ্যুত হওয়া ফিলিস্তিনিরা দিনটিকে ‘নাকবা’ অর্থাৎ ‘মহাবিপর্যয় দিবস' হিসেবে পালন করে।
১৯৪৮ সালের এই দিনে ইসরায়েলি সেনা ও তাদের সমর্থকদের সঙ্গে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে ইসরায়েলি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা জাতীয় গ্রন্থাগারের লোকজন।
ইসরায়েলি সেনারা যখন ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর ধ্বংস ও লুটতরাজে ব্যস্ত, তখন এই লাইব্রেরিয়ানরা ব্যস্ত ছিলেন সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাসে সমৃদ্ধ ফিলিস্তিনিদের বইপত্র, নথি, দলিল-দস্তাবেজ লুটতরাজে। ওই দিন শুধু জেরুজালেম থেকেই লুট হয়েছিল ফিলিস্তিনিদের ৩০ হাজার বই। অন্যান্য শহর যেমন জাফা, নাজারেথ এবং হাইফা থেকে লুট হয়েছিল আরও ৪০ হাজার......
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১৮ রাত ১০:২১