যুদ্ধাপরাধের বিচার এখন বাস্তবাতা। আমাদের দীর্ঘদিনের চাওয়ার বাস্তবায়ন। জামাত প্রথম থেকেই এর বিরোধীতা করে আসছে, আর কাদের মোল্লার রায়ের পর ট্রাইবুনালের পক্ষের একটি অংশ এর বিরোধিতা করছে যার নেতৃত্বে রয়েছে বাম দলীয় রাজনীতিকরা। আনেকটাই পরিকল্পিত ভাবেই তারা এর শুরু করে এবং নেতৃত্ব নিয়ে নেয়। প্রশ্ন হচ্ছে কেন তারা এই কাজটি করে, যেখানে তারাই সরকারের অংশ? কারা এটাকে অরগানাইজ করার সুযোগ করে দিয়েছে, এবং কেন? এর মাধ্যমে কে লাভবান হচ্ছে এবং কিভাবে? যুদ্ধাপারাধের বিচারের ভবিষ্যত কি? নিম্নে এ প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার চেষ্টা করব:
কাদের মোল্লার বিচারের রায়ের পর এই ব্লগেই কয়েকজনকে আহবান করতে দেখি শাহবাগে যাওয়ার যাতে মনে হতে পারে এটা ব্লগীয় আন্দোলন, কিন্তু একই সময়ে ফেবুতে আমার প্রফেসনাল বন্ধুরাও তাদের ফেবুতে একই আহবান জানাতে থাকে যারা সবাই আওয়ামীলীগে আশ্রিত বামু। এই বামুরা যেখানে যায় সেখানেই সমস্যা তৈরি করে। প্রথমআলু সহ বামু পত্রিকাগুলো এবং নিউজ চ্যানেলগুলো লাইভ কাভারেজ দেয়ার দায়িত্ব পালন করে। পুরো আন্দোলনটিই বামুদের আগের হরতালের মত। সরকারী পৃষ্টপোষকতায় হরতাল পালন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এর মাধ্যমে কি এই বিচার ব্যবস্হা লাভবান হয়েছে না ক্ষতিগ্রস্হ হয়েছে? - আমার অভিমত ক্ষতিগ্রস্হ হয়েছে। কারণ জামাত প্রথম থেকেই এই বিচারকে সরকারের নিয়ন্ত্রিত বিচার বলে আসছে - যা ন্যায় বিচারের বিপরীত। তাই তারা বলত এই ট্রাইবুনাল বিতর্কিত। আজ আমরাই সেই দাবিকে প্রতিষ্ঠা করলাম। ট্রাইবুনালের রায় নিয়ে সমালোচনা এবং আন্দোলন করে আমরা আমাদের ট্রাইবুনালকে বির্তিকিত করলাম। আগামীতে আর কাউকে ফাঁসি দিলেও সেই রায় বির্তিকত হবে। সাময়িক আবেগের কাছে ন্যায় বিচার পরাজিত হবে। জামাত সাময়িক সমস্যায় পড়লেও সামগ্রিকভাবে তারা গণমানুষের সহমর্মিতা পাবে। আর লাভবান হবে এই বামুরা, কারণ জামাত তাদের রাজনীতিক আদর্শের প্রতিপক্ষ। ফলে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে তারা জামাত বিরোধী মানুষদেরকে তাদের আরও কাছে নিয়ে আসতে পারবে।
প্রশ্ন হচ্ছে আওয়ামীলীগ কি লাভবান হল না ক্ষতিগ্রস্হ হল? - আমার অভিমত সার্বিক বিচারে আওয়ামীলীগ ক্ষতিগ্রস্হ হয়েছে - ১) যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামীলীগের দাবী - এর রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এই আন্দোলন আওয়ামীলীগের রাজনীতিক এবং সামাজিক প্রভাব খর্ব করবে। ২) আওয়ামীলীগ সাময়িক লাভবান হলেও (মানুষকে সরকারের রাজনৈতিক দূর্বলতাগুলো সাময়িক ভুলিয়ে রাখা গেলেও) দীর্ঘমেয়াদে রাজনীতি সরকারের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। ৩) এই আন্দোলনের ফলে সম্ভবত বিএনপি একই ভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন করতে পারে। যার সামগ্রিক ইংগিত এখনই দেখা দিতে শুরু করেছে। এবং এ অবস্হায় বাধা দেয়ার নৈতিক অধিকারটুকু সরকারের থাকবেনা। ৪) আওয়ামীলিগ বিএনপির বিরুদ্ধে জামাতকে আশ্রয় দেয়ার যে অভিযোগ তুলত, সেই রাজনীতিক সুবিধাটুকু আওয়ামীলীগ হারাল। কারণ এই আন্দোলনকারিরা বলছে এটা সমাঝোতার রায়। এ ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগের বা ট্রাইবুনলের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার উচিত ছিল রায়ের সম্মান রক্ষা করা, যা তারা করতে ব্যার্থ হল।
মোটের উপর ট্রাইবুনালের রায়ের সমালোচনা করে বামুরা সাময়িক লাভবান হলেও এর মাধ্যমে পুরো বিচার ক্ষতিগ্রস্হ হয়েছে।
আমি যতটুকু লক্ষ্য করেছি এই আন্দোলন একটি অপরিকল্পিত ছকের পরিকল্পিত ফসল। বাম রাজনীতির ছাত্র সংঘটনগুলো এর নেতৃত্বে রয়েছে। অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো সেখানে পরে উপসস্হিত হলেও তারা নেতৃত্ব নিতে পারেনি, শুধু সহযোগী হিসাবেই আছে। আর বাম নেতারা পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। সরকার যেখানে জামাতকে নিষিদ্ধ করা বা এ বিষয়ে কোন চিন্তা ভাবনা করছেনা সেখানে ইনু এসে বলে জামাতকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে - এ সবই বামুদের রাজনীতিক চাল। তবে এখানে আমি কিছু মৌলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেও এখন অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। শুধু মনে ব্যাথা পাচ্ছি এ জন্যে যে একটি সামগ্রিক বিচারকে সম্ভবত আমরা হত্যা করলাম। এই বামুরাই স্কাইপ কেলেংকারীর সাথে জড়িত ছিল আবার এখন তারাই এই বিচারকে হত্যা করছে। জামাত আর বাম এদের জন্যে শুধুই ঘৃনা। কেউ কি আমায় বলতে পারেন শাহবাগের মোড়ে ধর্মীয় রাজনীতির দাবী কেন উঠে - জামাতই কি বাংলাদেশে একমাত্র ধর্মীয় রাজনীতি করে? তাহলে কাদেরের ফাঁসির দাবী করতে গিয়ে আমরা ধর্মকে কেন প্রতিপক্ষ বানালাম? হাঁ বামরাই সবসময় ধর্মকে প্রতিপক্ষ করে।
আমি সরকারের নিকট দাবী জানাব এই বামদের এখনই দমন করার জন্য যেভাবে জামাত শিবির রাজাকারদের দমন করা হচ্ছে। আর ট্রাইবুনালকে সকল বিতর্কের উর্ধ্বে রাখার জন্যে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:১৪