--শাকিল মাহমুদ সুমন
সময় ঠিক রাত ১১ঃ৩০, টিউশনি শেষ করে যাচ্ছিলাম ধানমন্ডির একটি গলি ধরে। সোডিয়ামের আলো আমার দৃষ্টি থেকে দূর করে রেখেছে আঁধার। সোডিয়ামের আলো আঁধারকে দূর করতে পারলেও দৃষ্টি থেকে দূর করতে পারেনি পরিত্যক্ত ডাস্টবিনের মায়াবী দুটি পা। পা দুটো আকাশের দিকে ইশারায় ব্যস্ত ছিলো। কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম, আশেপাশে তাকাচ্ছিলাম কাউকে দেখতে পাইনি।
সামনে এগুতেই কানে ভেসে আসছিলো ছোট্ট শিশুর কান্না সেই ডাস্টবিন থেকে। দ্রুত এগিয়ে গেলাম ময়লার স্তুপের দিকে, পলিথিনে মোড়ানো একটি ফুটন্ত গোলাপের ন্যায় শিশু। মাথাটা পলিথিনের ভিতরে এবং পা দুটো বাহিরে আকাশমুখি অবস্থায়। আহ! জীবন,
অনবরত কান্নায় ব্যস্ত ছিলো শিশুটি। পলিথিন থেকে শিশুটিকে বের করে কোলে নিলাম কিন্তু
বুঝতে পারছিলাম না কি করবো সেই মুহূর্তে।
মনের মধ্যে শুধু প্রশ্ন জাগছিল কার এই সন্তান, এ সন্তান কি কারো বৈধ ফসল নাকি কোন পাপী বাবা-মায়ের অবৈধ সাময়িক আনন্দের ফসল?
নিয়তি আজ শিশুটিকে করেছে দূর্ভাগা। কখন যে গাল বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু শিশুটির গালে পড়ছিলো তা বুঝতে পারিনি। চারদিকে তাকালাম কোন লোকজন দেখতে পেলাম না।
শিশুটিকে কোলে নিয়ে রওয়ানা দিলাম আজিমপুর 'ছোট্টো শিশু নিবাসের' উদ্দেশ্যে। সেখানকার দায়িত্বশীল লোকজনের নিকট আমি শিশুটিকে হস্তান্তর করি।
তারা জানায় শিশুটিকে দত্তক দিয়ে দিবে। দাঁড়িয়ে ছিলাম আর দেখছিলাম শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার করুণ দৃশ্য। অনবরত সেই বাচ্চা শিশুটির মতো কেঁদেছিলাম আমিও।
হয়তো কেউ এখান থেকে শিশুটিকে নিয়ে মা-বাবার আদরযত্ন দিয়ে বড় করে তুলবে মানুষের মতো মানুষ করে তুলবে নয়তো শিশুটির শেষ পরিণতি হবে অবহেলিত একজন পথশিশু।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৪