আজ প্রথম আলো সম্পাকীয়তে "বেপরোয়া জামায়াত" শিরোণামে একটি লেখা পড়েছি। মত প্রকাশের স্বাধীনতা এদেশে বিশেষ একটি শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই এখন আর বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ নেই। বিগত দুএক দিনের বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়টি একটু কৌতুহলের সাথে অবলোকন করছি-যদিও এ ব্যপারে খুব একটা মাথা ঘামাই না। পত্রিকায় আন্তর্জাতিক বিষয়ই আমার একমাত্র পড়ার বস্তু। কিন্তু আজকের সম্পাকীয়র সাথে গত দুএক দিনের রাজনৈতিক চিত্র বিপরীত মুখী দেখে এ বিষয়ে লেখার লোভ সামলাতে পারনি।
আমি সাধারত ব্লগে রাজনৈতিক বিষয় এড়িয়ে চলি। আমার দৃষ্টিতে আজকের লেখাটি রাজনৈতিক। তাই ভিন্নমতের ব্লগাররা বিষয়টিকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।
গত পরশু ঢাকাসহ সারা দেশে জামায়াতে ইসলামীর পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী পালন ছিল স্বতস্ফুর্ত, চোখে দেখার মত। সেদিনের কর্মসূচী মহাজোট সরকারের আমলের অন্যান্য কর্মসূচিগুলোর মত ছিল না। আমি কুমিল্লায় জামায়াতের মিছিলে এত বিপুল কর্মী সমর্থকের উপস্থিতি দেখে অন্যান্য উপস্থিত সাধারণ মানুষের মতোই আশ্চর্য হয়েছি। আমি নিশ্চিত মিছিলে উপস্থিত সবাই জামায়াতে কর্মী সমর্থক নয়। নি:সন্দেহে এটা সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভের বহি:প্রকাশ মাত্র।
গত কাল প্রথম আলোর নিউজ পড়েছি, নিউজের শেষে একটি ভিডিও এটাচ করা হয়েছে সেটিও দেখেছি। উক্ত ভিডিওটিতে প্রথম আলো সম্পাদকের ভাষায় জংঙ্গীত্ব প্রদর্শনের নমুনা কোথাও দেখিনি। মিছিলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের সাথে পুলিশের যৌথ মহড়ায় ঘুরে দাড়ানোর ব্যতিক্রমী দৃশ্য দেখেছি। তবে পুলিশ প্রধানের ভাষায় "আমরা ধারণা করেছি অন্যান্য বারের মতো জামায়াতকে ধাওয়া করলে পালিয়ে যাবে"- এই ধারণাটি ভুল ছিল। কারন সরকার ও পুলিশকে বুঝতে হতে প্রত্যেক বাড়াবাড়ির একটা সীমা রেখা আছে। মানুষ একই স্থানে বার বার মার খায় না। আইন-শৃংখলা রক্ষার নামে বিরোধী দল দমনের মধ্যযুগীয় নীতি এদেশের মানুষ বিগত তিন বছর ধরে দেখেছে। আশাহত মানুষ তাই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে মাত্র।
সমস্যা হচ্ছে আমাদের দেশে ক্যারিশমেটিক নেতৃত্ব গড়ে উঠছে না। তাহলে আরো আগেই এদেশের সাধারণ মানুষের মুক্তির সম্ভাবনা তৈরী হয়ে যেত। আভ্যন্তরীন জঞ্জালে বিএনপির লেজে-গোবরে অবস্থা। মানুষ তাদের উপর আস্থা রাখতে পারছেনা কিছুতেই। এমনকি বিগত তিন বছরে আস্থা রাখার মত কোন কর্মসূচীই সফল করতে পারেনি বিএনপি।
প্রথম আলো সম্পাদকের মতে- "যাদের মুক্তির কর্মসূচী নিয়ে জামায়াত মাঠে নেমেছে তারা একটি একটি বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় অন্তরীন" এদেশের সচেতন সাধারণ মানুষ জানে- যে বিচার প্রক্রিয়া প্রক্রিয়ার আওতায় জামায়াতের পাঁচ শীর্ষ নেতা অন্তরীন, সেটি বিরোধী মত দমনের জন্য গঠিত হয়েছে। বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্টও এ ব্যাপারে সরাসরি বিরোধিতা করেছে, উইকিলিকস এর কল্যাণে আমাদের মত আম পাবলিকও সে কথা জেনে গেয়ছি। এমনকি প্রথম আলো সম্পাদক জানেন- তিনি কোন এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছেন।
সাংবাদিকতা সংবিধানের স্রোতের বিরুদ্ধে কলম ধরার বিষয়টা লিখা আছে। সম্পাদক সাহেবের কল্যাণে প্রথমআলো সব সময় স্রোতের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এখানে ছোট্ট একটা ফারাক আছে। স্রোতের বিরুদ্ধে আর জনমতের বিরুদ্ধে এক কথা নয়। আমরা দেখেছি- জনমতের বিরুদ্ধে লিখে প্রথম আলো পরিবার বার বার ক্ষমা চেয়েছে এবং ক্ষমা পেয়েছে। আমি প্রথমেই বলেছি- প্রত্যেক বাড়াবাড়ীর একটা সীমারেখা আছে। বার বার ক্ষমা পাওয়া যায় না। তাছাড়া দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি পত্রিকা এভাবে ছোট হওয়ার বিষয়টিও দৃষ্টি কটু। আশা করি মাননীয় সম্পাদক বিষয়টি ভেবে দেখবেন।