গুগল ফটোস এপের সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না। অথবা জানলেও এর গুরুত্ব নিয়ে তেমন ভাবেন নাই। এই এপ আপনার একান্ত ব্যক্তিগত ছবিগুলোকে সংরক্ষণ করতে পারে। যখন কোন ছবি তোলা হয় সেটা একজনের অজান্তে গুগল ফটোস এপে ব্যাকাপ হয়ে যায়। এমনকি কিছু সময় পরে ফোনের গ্যালারি থেকে সেই ছবিটি কেটে দিবার পরেও গুগল ফটোস এপে তা সেইভ থাকতে পারে।
এটি ঘটে যখন আপনি নিজের ফোনে গুগল আইডি দিয়ে লগইন করেন। এটি করতেই হয় যেহেতু এন্ড্রয়েড ফোনের সকল ফিচার আর এপ গুলো গুগলের সাথে সম্পর্কিত। ফলে প্লেস্টোর থেকে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসএপ ইত্যাদি কোন এপ নামাতে গেলে এবং আর সকল কাজে গুগল আইডি দিতে হয়।
গুগল ফটোস এপ ছবি সংরক্ষণের জন্য প্রথমে পারমিশন নেয়। অর্থাৎ বৈধভাবে জানিয়েই এটি ছবি সংরক্ষণ করে। তবে যেহেতু আমরা অনেকেই এন্ড্রয়েডের ব্যাপারগুলো সম্পর্কে আগ্রহী থাকি না এবং অত জানিও না, ফলে সে যখন পারমিশন চায় সেটি ভাল করে না বুঝে আমরা তাকে ওকে বলে দিই। সে তখন আমাদের ফোনের ক্যামেরায় তোলা এবং ডাউনলোড করা ছবি, ভিডিও ইত্যাদি সর্বোচ্চ ১৫ জিবি পর্যন্ত সেইভ করতে শুরু করে। গুগল এটি সেইভ করে ভবিষ্যতে ফোন হারিয়ে গেলে অথবা কোন কারণে গ্যালারির ছবি মুছে গেলে আবার যেন সংরক্ষণ করা যায় সে জন্য।
এই ব্যবস্থাটি উপকারের জন্যে হলেও এটি সম্পর্কে সচেতন না থাকলে এর মাধ্যমেই আমাদের প্রাইভেসি নষ্ট হতে পারে। কেউ হয়তো নিজের একান্ত প্রিয়জনের সাথে কাটানো গোপন সময়ের ছবি আর ভিডিও ফোন দিয়ে তুললো। এটি তখন জিমেইল একাউন্টে গিয়ে জমা হয়। এখন আপনি ছাড়া আপনার পরিবার অথবা বন্ধু বান্ধবের মাঝে কেউ যদি আপনার জিমেইল আইডি আর পাসওয়ার্ড পায় তাহলে সে সহজেই গুগল ফটোসে সেইভ হওয়া আপনার ব্যক্তিগত ছবিগুলো পেতে পারে। অনেক সময় আমরা বাজারে ফটোকপি এবং এ জাতীয় দোকান থেকে নিজের ইমেইল আইডিতে লগইন করে বিভিন্ন ফটোকপি আর প্রিন্ট করি। সেখান থেকেও ইমেইল আইডি এবং পাসওয়ার্ড ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখন অন্য কেউ এর থেকে সহজেই গুগল ফটোসের ছবি পেতে পারে।
এমনিতে এ নিয়ে প্যানিকড হবার দরকার নেই। গুগল ফটোস চ্যাক করে কী ব্যাকাপ করা আর কী করা নেই এটি সচেতন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে হয়। তবুও এ ব্যাপারে একটু বাড়তি সচেতনতা দরকার।
মাঝে মাঝেই দেখা যায় নিজের পরিচিত অথবা মিডিয়া পিপলদের একান্ত ব্যক্তিগত এবং গোপনীয় ছবি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি মারাত্মক সাইবার ক্রাইম। এ ব্যাপারে বর্তমান বিশ্বের সকল দেশের সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে । তবুও অশিক্ষিত জনগোষ্ঠির দেশে এই ক্রাইমকে সকলে মিলে যেন উদযাপন করে। ভিক্টিমের প্রতি সহানুভূতি এবং তাকে সহযোগিতা করার বদলে তারা ভিক্টিমকে উলটো দোষারোপ করে এবং এ নিয়ে ইতর তামাশা শুরু করে দেয়।
এসবের একদিন হয়তো অবসান হবে। অসচেতন মানুশ হয়তো একদিন বুঝতে শিখবে কিন্তু তার আগে যে ভিক্টিম হয়ে যায় তাকে প্রচন্ড মেন্টাল ট্রমার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ক্রমাগত পাবলিক শেইমিং এর কারণে তার স্বাভাবিক জীবন নষ্ট হয় এমনকি সে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারে। দূরের কেউ এই বিপদে পড়লে হয়তো আমাদের কিছু আসে যায় না কিন্তু যদি কখনো নিজের পরিবারের কেউ সাইবার ক্রাইমের দ্বারা আক্রান্ত হয়, অথবা নিজেই যদি হই, তখন এর ভয়াবহতা নিশ্চয়ই টের পাওয়া যাবে, তাই না?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:১৫