ঠাকুর মশায়ের শেষের কবিতা পড়লাম ৷ এতদিন পড়িনি তাই পড়তেই হবে এমন একটা সিচুয়েশনে বইটা লেখার প্রায় নব্বই বছর পরে অবশেষে পড়েছি এই দারুণ সাহিত্য কর্মটি। এভাবে পড়ার কারণ আছে অবশ্য। বাংলা সাহিত্যে কোন প্রেমিকা চরিত্রটি সবচেয়ে ভাল লেগেছে এই প্রশ্নের জবাবে একেক জন একেক নারীকে পছন্দের কথা বলে। কেউ শামারোখের প্রেমে হাবুডুবু খায়, কেউ শবনমকে জনম জনম চায়, কেউ চায় মেম সাহেবের সঙ্গী হতে, আর কেউ চায় লাবণ্যকে কাছে পেতে ।
বাকী প্রেমিকাদের গল্প পড়ে এতদিন মুগ্ধ হয়েছিলাম। অবশেষে এক রবীন্দ্র প্রেমিকার খবর পেলাম। পড়ুয়া-বুদ্ধিমতী লাবণ্য দারুণ স্মার্ট। তরুণী লাবণ্যকে ঠাকুর মশায় যুক্তিবাদী করে বানিয়েছেন। প্রেমিককে খুব কাছে পেয়েও সে শুধুমাত্র অজানা শঙ্কায় পড়ে কোন প্রশ্রয় দেয়নি। সারাক্ষণ হারানোর ভয় পেয়ে পেয়ে প্রেমিককে দূরে ঠেলে দিয়েছে। আমার ধারণা তা না করলে যেকোন মূল্যে অমিত তাকে জয় করতোই। এই স্পর্ধাটুকো নেবার জন্য অমিত তৈরি হয়েছিল। কবি নিবারণ চক্রবর্তী অমিতকে সাহস জুগিয়েছিল।
এই গল্পের দ্বারা প্রেম কী, কোথায় তার গন্তব্য সেই ব্যাপারে ঠাকুর মশায়ের চিন্তাভাবনাকে খুঁজে পাওয়া যায়৷ কৈশোরের ফ্যান্টাসি কাটিয়ে আসার পরে তরুণ বয়েসে যে প্রেমটি তৈরি হয় আমাদের মনে তার বেশিরভাগটা যুক্তিতে ভরা। কিছুতেই ছাড় দিতে চায় না মন। এমনকি মানিয়ে নিতেও ইতস্তত করতে থাকে। আগে সঙ্গীর আচরণ দেখে তারপর নিজে যেতে চায়। এই প্রেমে কখনো স্পর্ধা থাকে হয়তো, আবার নিজেকে গুটিয়ে নেবার ইচ্ছাও তৈরি হয় মনে।
আমার কাছে কোন প্রেমিকাকে ভাল লেগেছে তা ওভাবে মাপতে চেয়ে শামারোখকে লেগেছে নিজেকে লুকিয়ে রাখা গোপন প্রেমিকা, শবনমকে লেগেছে সাহসী প্রেমিকা, মেমসাহেবকে লেগেছে ধৈর্যশালী প্রেমিকা আর লাবণ্যকে লেগেছে যুক্তিবাদী প্রেমিকা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৯ দুপুর ১:১১