পর্তুগাল থেকে ফ্রান্সিসকো এসেছে সিলেটে ঘুরতে। রাতে ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছাতেই ক্ষুধার্ত ফ্রান্সিসকোরে নিয়ে সেকেন্ড গেইটে আমরা খাইতে বসলাম। তারে পাবদা মাছের তরকারি আর ভাত দেওয়া হইলো। মাছে এত মশলা যে সে একটুখানি মুখে দিয়ে স্পাইসিইই বলে আঁতকে উঠলো। তারপর কাটা চামচ দিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে যতটুকো সম্ভব মশলা ছাড়িয়ে মাছ-ভাত খাইলো।
খাইতে খাইতে আমরা তার সম্পর্কে জানতে চাইলাম। সে কী করে, কতটুকো পড়েছে, বাংলাদেশ এসে কেমন লেগেছে, আর কই কই যাবে ইত্যাদি। সেও আমাদের সম্পর্কে একে একে বিভিন্ন কিছু জানতে চাইলো।
এখানে আসার আগে ফ্রান্সিসকো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে ছিল। আমরা তারে জিগাইলাম ঢাকা থেকে সিলেট আসতে কোন অসুবিধা হইল কিনা। সে জানাইলো জার্নি ভাল হয়েছে। শ্যামলি বাসে এনাফ স্পেস ছিল তাই পা নড়াচড়া করতে অসুবিধা হয় নাই। কিন্তু আসার পথে বাসে একটা উইয়ার্ড ঘটনা ঘটেছে। মুখ গোমড়া করে সে বললো, আসার পথে এক জায়গায় তাদের বাস থামাইছিল কিছুক্ষণের জন্য। তখন সেখান থেকে কিছু লোক দলবেঁধে বাসে ঢুকে জানালার ধারে বসা এক যাত্রীকে বেদম পিটিয়ে তারপর বাস থেকে নেমে গেছে। যাত্রীটিকে পেঠানোর সময় বাসের অন্য যাত্রীদের কেউ একটা টু শব্দও করেনি। শুধুমাত্র ওই যাত্রীর পাশে বসা মোটাখাটা লোকটা তাদেরকে কয়েকবার সড়ানোর চেষ্টা করেছিল।
আমরা তারে আবার জিগাইলাম, তুমি কি তখন ডরাইছিলা? সে হেসে জানাইলো অত ডরায় নাই। পিটানোর সময় সে তাদের দিকে চেয়ে চ্যাঁচামেচি করেছে। তখন একবার নাকি একটু ডরাইছিল, যদি তারেও তারা পিটাইতে আসে। আমরা হাসতে হাসতে বললাম, নো নো, তোমারে কেউ পিটাইবে না।
ফ্রান্সিসকো তখন বলতে লাগলো, এইটা কেমন কালচার? অর্থ দিয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে কেউ উঠলে তার জান মাল সকল কিছুর দায়িত্ব সেই ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের। অথচ ওই লোকরে কয়েকজন পিটাইয়া গেল কিন্তু বাসের কেউ কিছু বলল না।
তার এই আফসোসের কোন উত্তর নাই যেহেতু তাই আমরা টপিক পরিবর্তন করে আবার খাইতে লাগলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৯