"পিছনে দিব্বি দেওয়া থাকতো সাড়ে চুয়াত্তর"
বিজন ভট্টাচার্য আর নির্মল দের সাড়ে চুয়াত্তর সিনেমার নাম সাড়ে চুয়াত্তর হইছে উপরের লাইন থেকে। সাড়ে চুয়াত্তর(৭৪) মানে একটা বিশেষ চিহ্ন যেটি গোপন চিঠিতে লিখে দেওয়া হইত। এটি লিখে দিলে সেই চিঠি আর কেউ পড়তো না। সিনেমাতে রজনী বাবু তার স্ত্রীকে আক্ষেপ কইরা এই লাইনটি বলেছিল।
অন্নপূর্ণা বোর্ডিং হাউজের রামপ্রীতি আর রমলা প্রেমে পইড়া কাজের লোকরে দিয়ে গোপনে পরস্পর চিঠি আনা নেওয়া করতো। এই ব্যাপারের সাথে সিনেমার নাম সাড়ে চুয়াত্তরের সম্পর্ক আছে। গোপন চিঠিতে সাড়ে চুয়াত্তর লিখার প্রচলন পরে ভাব পরিবর্তন করে প্রেমের চিঠিতে ব্যবহার করা শুরু হয়। ফলে সাড়ে চুয়াত্তর আর অন্যকিছু গোপন নয় শুধু প্রেমের গোপন চিঠিতেই লিখা হইত।
১৯৫৩ সালের এই জনপ্রিয় কমেডি সিনেমাটি দারুণ হাস্যরসাত্মক। অন্নপূর্ণা বোর্ডিং হাউজে বিপদে পড়ে কিছুদিন থাকার জন্যে একটি পরিবার এসে উঠে। পরিবারে কলেজ পড়ুয়া এক যুবতী আছে। সেই যুবতীকে ইমপ্রেস করার জন্যে নানান বুদ্ধি বের করতে থাকে বোর্ডিং এর যুবকেরা। তাদেরই একজনের সাথে গোপনে যুবতীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
'৫৩ সালের সাড়ে চুয়াত্তর কিংবা এইসব পুরনো সিনেমা গুলি দেখলে নিজের দেশের সংস্কৃতি কেমন ছিল সেটি জানতে পারা যায়। আজকাল আমরা অনেকেই নিজের কালচার কী সেটি জানি না। নতুন ফাঁপা চাকচিক্য আর অন্য দেশের কালচারকে নকল করে বানানো এখনের বেশিরভাগ সিনেমাগুলির সাথে কম্পেয়ার করার জন্যে হলেও পুরনো সিনেমাগুলি দেখা যেতে পারে। যদিও সাড়ে চুয়াত্তর সিনেমাটি পশ্চিম বাংলার কালচারের আদলে। তবে তখন বাঙ্গালিদের মাঝে একটা কমন কালচার ছিল। সাতচল্লিশের পরে সেই কালচারটির পরিবর্তন হতে শুরু করে একাত্তরের পরে তা একেবারেই পরিবর্তিত হয়ে যায়। ধর্ম আর ভাষা কেন্দ্রিক একটা নতুন কালচার চর্চা করতে শুরু করে পূর্ব বাংলার লোকেরা। এদেশে বানানো হয় জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০), তিতাস একটি নদীর নাম(১৯৭৩), সীমানা পেড়িয়ে(১৯৭৭), গোলাপি এখন ট্রেনে(১৯৭৮), সূর্য দীঘল বাড়ি(১৯৭৯), ঘুড্ডি(১৯৮০)র মতন দারুণ দারুণ সিনেমা।