ঢাকা হতে ব্লগ ডে পালনের জন্য প্রস্তুতকৃত পোষ্টার আমরা বেশ বিলম্বে প্রাপ্ত হয়েছি। দুপুর আড়াইটার পরে পাবার কারণে এবং পোষ্টারে স্থান হিসাবে সঙ্গত কারণেই শুধুমাত্র ঢাকা-র নাম উল্লেখ থাকায় একটা সাদা কাগজে তারিখ, বার, সময় ও স্থান হিসাবে পদ্মা গার্ডেন, রাজশাহী-র নাম লিখে প্রতিটি পোষ্টারে পেষ্টিং করতে হয়েছে।
পোষ্টার লাগানো অভিযানে যাবার ঘটনাটা এবার বলি শুনুন:
সারাদিন আমি টিউশানি, কম্পিউটার সার্ভিসিং, চাকুরির কাগজপত্র তৈরি ইত্যাদি বিষয়ে ব্যস্ততার মধ্যে দিন অতিবাহিত করছিলাম। তার মধ্যেও কিছুক্ষণ পর পর রিংকূ ভাইকে ফোন দিয়ে পোষ্টার আসার ব্যাপারে, পোষ্টারে পেষ্টিং করার বিষয়ে, পোষ্টার লাগানোর বিষয়ে নিয়মিত আপডেট নিচ্ছিলাম। রিংকূ ভাইও ব্যস্ত মানুষ, বিজনেস করেন, তার মধ্যেও তিনি তাঁর দলবল নিয়ে এই খাটুনিগুলো করেছেন।
রাত আটটা নাগাদ তিনি আমাকে ফোন দিয়ে জানালেন যে, তিনি, অরোন্য ভাই আর তাঁদের দলবল লক্ষীপুর মোড়, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, ঘোষপাড়ার মোড়-এ পোষ্টার সাঁটিয়ে আমার বাড়ির দিকে আসছেন। আমি থাকি ফায়ার সার্ভিসের মোড়ে। দোতলা থেকে রাস্তায় নেমেই দেখি তাঁরা আমার বাড়ির প্রাচীরেও ৪/৫টা পোষ্টার লাগিয়ে ফেলেছেন!! এসময় এক ব্যক্তি আমার কাছে জানতে চাইলো, এটা কোন কোচিং-এর পোষ্টার!! তাঁকে শুধু বললাম, এটা কোচিং-এর নয়।
ফায়ার সার্ভিস মোড়ে আরও কয়েকটা পোষ্টার লাগিয়ে আমরা হাঁটা শুরু করি যাদুঘর মোড়ের দিকে। সেখানে সুবিধামত জায়গায় কয়েকটি পোষ্টার লাগিয়ে রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসের প্রবেশ পথে পোষ্টার লাগাই। অনেক পরে বাড়ি ফেরার পথে লক্ষ্য করলাম, মুসলিম ছাত্রাবাসের পোষ্টারগুলো সব ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে!! যাদুঘর মোড়েরও কয়েকটি পোষ্টার আলেমুল-গায়েব!!
একে একে রাজশাহী কলেজ হিন্দু ছাত্রাবাস, দু'টি ছাত্রীনিবাস এবং রাজশাহী কলেজের নোটিশ বোর্ডে ৪/৫টি পোষ্টার লাগিয়ে যেই না সাহেব বাজারের দিকে যাবো, অমনি লোকজনের ছুটাছুটি দেখে ভড়কে গেলাম! দেখি, ১৯ তারিখে জামাতের হরতাল উপলক্ষ্যে কে বা কারা যেন সাইকেলের টায়ারে আগুন দিয়েছে আর সাংবাদিক ভাইয়েরা ক্লিক ক্লিক করে তার ফটো তোলায় ব্যস্ত!
সোনাদীঘি মোড়ে আমরা বাদাম খেতে খেতে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম সাংবাদিক সেলিম জাহাঙ্গীর ভাইয়ের জন্য। এসময় মো. আবু জাফর ভাই এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দেন। সাংবাদিক সেলিম জাহাঙ্গীর ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ সেরে একটা অটো রিক্সা নিয়ে সোজা রুয়েটের মেইন গেইট-এ পৌছালাম।
রুয়েটে পোষ্টার লাগানোর সময় এসে যোগ দেন ব্লগার বাঁধনহারা ভাই। এবার তিনি শুরু করেন তাঁর হাত দিয়ে পোষ্টারে আঠা লাগানো। রুয়েটের দেয়ালে অনেকগুলো পোষ্টার লাগিয়ে হেঁটে হেঁটে রওয়ানা দিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কাজলা গেটের দিকে। সেখানে যেসব পুলিশ ভাইয়েরা ছিলেন, তাঁরা উপদেশ দিলেন যে, অন্য কোন পোষ্টারের উপর আমাদের পোষ্টার লাগানো যাবে না। অবশ্য আমরা সাধারণত তা করছিলামও না। যাই হোক, এখানে কাজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয় মেইন গেইটে গিয়ে পড়লাম সমস্যায়। সেখানকার পুলিশ কিছুতেই পোষ্টার লাগাতে দেবে না। যতই বলি যে, এটা কোন রাজনৈতিক পোষ্টার নয়, তবুও শুনবেন না তাঁরা!! অবশেষে তাঁদেরকে ম্যানেজ করে (ম্যানেজ মানে আপনারা যা ভাবছেন, তা নয় কিন্তু! কোন প্রকার অর্থ বা ঘুষের কারবার নয়, জাস্ট তাদের আমরা একটুখানি বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম আর কি) পোষ্টার লাগানোর অনুমতি পাই। তবে শর্ত দুইটা- (১) দেয়ালে লাগানো যাবে না এবং (২) একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের পোষ্টারের আশ-পাশ ছুঁয়েও লাগানো যাবে না! যাই হোক, বৈদ্যুতিক পোলে ৩টা পোষ্টার লাগিয়ে আমরা আপাততঃ হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম!!!
এতক্ষণ বকবক করলাম, কিন্তু আপনাদেরকে তো ব্লগ ডে-র পোষ্টারটাই দেখালাম না!! এই দেখেন সেই পোষ্টার....
রাজশাহীতে ব্লগ ডে উদযাপন সংক্রান্ত সমস্ত আপডেটেড তথ্য এই পোষ্টে পাবেন:
রাজশাহীর ব্লগারদের দৃষ্টি আকর্ষণ: বিষয় ব্লগ ডে উদযাপন
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ২:৪৩