নেতৃত্ত্বের কথা আসলে স্বাভাবিক ভাবেই বুঝতে পারি যোগ্যতার মাপকাঠিতে অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব। কোন কর্মশালায় অধিকতর যোগ্য ব্যক্তিকে কর্তৃত্বের দায়িত্ব দিলেই ঐ কর্মশালা যথাযথ সফলতার আলো দেখতে পায়। অদক্ষ চালককে চালকের আসনে বসিয়ে দিলে চলন্ত গাড়ির যাত্রীদের মধ্যে স্বভাবতই একটা উৎকণ্ঠা বিরাজ করে। গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হলেও যাত্রীর আসনে বসে থাকা কোন দক্ষ চালকও দুর্ঘটনার হাত হতে রেহাই পায় না। বরং তাকেও আহত কিংবা নিহতের অন্তর্ভুক্ত হতে হয়। সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মূল্যবান গাড়িটাও। একটা দেশের বিভিন্ন নেতৃত্বের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরাও এক একজন চালক। এদের উপর নির্ভর করে দেশের সফলতা, বিফলতা, অগ্রগতি, সুশাসন, শান্তি, ধর্ম – কর্ম ইত্যাদি। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকেই দেশ ও সমাজের নেতৃত্ব পুরুষের উপরই বর্তিত ছিল। এটা শুধু মুসলিম সমাজে নয়, অমুসলিম সমাজেরও একই চিত্র। তবে অগোচরে যদি দু একটি থেকেও থাকে তাও লক্ষ্য কোটি স্বাভাবিক বিষয়ের মধ্যে দু একটি অস্বাভাবিক বিষয় উদাহরণ হতে পারে না
প্রথম অমুসলিম নারী শাসক হিসেবে যার নাম পাওয়া যায় তিনি হলেন সা’বা রাজ্যের রানী বিলকিস। হযরত সুলাইমান (আঃ) হুদ হুদ পাখির মাধ্যমে বিলকিসের সংবাদ প্রাপ্ত হলেন। তার বর্ণিত প্রতিবেদনটি ছিল কুরআনের ভাষায় নিম্নরূপ :
إِنِّي وَجَدتُّ امْرَأَةً تَمْلِكُهُمْ وَأُوتِيَتْ مِن كُلِّ شَيْءٍ وَلَهَا عَرْشٌ عَظِيمٌ- وَجَدْتُهَا وَقَوْمَهَا يَسْجُدُونَ لِلشَّمْسِ مِن دُونِ اللهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيلِ فَهُمْ لاَ يَهْتَدُونَ- (نمل ২৩-২৪)-
‘আমি এক মহিলাকে সাবা বাসীদের উপরে রাজত্ব করতে দেখেছি। তাকে সবকিছুই দেওয়া হয়েছে এবং তার একটা বিরাট সিংহাসন আছে’ (২৩)। ‘আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করছে। শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যাবলীকে সুশোভিত করেছে। অতঃপর তাদেরকে সত্যপথ থেকে নিবৃত্ত করেছে। ফলে তারা সঠিক পথ প্রাপ্ত হয় না’ (নমল ২৭/২৩-২৪)। অতঃপর হযরত সুলাইমান আঃ রানী বিলকিসের কাছে হুদ হুদ পাখির মাধ্যমে পত্র পাঠালেন। অনেক মজাদার ইতিহাস ঘটে যাওয়ার পর এক সময় রানী বিলকিস সুলাইমান আঃ এর কাছে আত্মসমর্পণ করলেন।
মুসলমানদের মধ্যে প্রথম নারী শাসক হিসেবে যার নাম পাওয়া যায় তিনি হলেন ভারতের প্রথম মুসলিম নারী শাসক রাজিয়া সুলতানা। ( ১২৩৬ – ১২৪০ )। রাজিয়া সুলতানা
ভারতবর্ষে আদি তুর্কি শাসনের চতুর্থ শাসকএবং সুলতান ইলতুৎমিস -এর কন্যা।
ইলতুৎমিসের সুযোগ্য পুত্র নাসিরুদ্দিন ১২২৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাতে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর অন্যান্য পুত্ররা ছিল অপরিণত বয়স্ক। ইলতুৎমিস মৃত্যুর আগে তাঁর কন্যা রাজিয়াকে রাজ্যের উত্তরাধিকার করে যান। মুসলিম আমির – ওমরাহগণ নারী শাসন ইসলামে অবৈধ বলে রায় দিলেও সুলতান
ইলতুৎমিস তা পরোয়া করেননি। ১২৪০ খ্রিষ্টাব্দে রাজিয়ার ভাই মুইজউদ্দিন বাহরাম চিহালগনিদের সহায়তায় সিংহাসন দখল করেন এবং রাজিয়া ও তার স্বামীর সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করেন। পরাজিত হয়ে তারা কাইথাল পালিয়ে যান। তাদের সাথে থাকা অবশিষ্ট সৈনিকরা এরপর তাদের ত্যাগ করে। তারা দুজনেই জাটদের হাতে ধৃত হন। ১২৪০ সালের ১৪ অক্টোবর তাদের হত্যা করা হয়।
এরপর কয়েকশত বছর পরে ১৯৬০ সালে বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী(অমুসলিম) হন শ্রীমাভো বন্দরানায়েকে। ১৯৫৯ সালে শ্রীমাভো বন্দরানায়েকের স্বামী সলোমান ডায়াস বন্দোরানায়েকের মৃত্যুর পর ১৯৬০ সালে তিনি শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীতে মুসলিম অমুসলিম কয়েকজন রাষ্ট্র প্রধান হয়েছেন।
একটি বিষয়ে খতিয়ে দেখলে দেখা যায় এ পর্যন্ত যত জন নারী রাষ্ট্র প্রধান হয়েছেন এদের প্রারম্ভিক আবির্ভাব রাজতন্ত্রের হাত ধরে। অঘোষিত রাজতন্ত্রের ধারায় বাবা অথবা স্বামী কেউ না কেউ মসনদে অধিষ্ঠিত থাকার সুবাদে এরা ক্ষমতার চেয়ারে বসেছেন। নিজ যোগ্যতায় সিঁড়ি বেঁয়ে কেউ ক্ষমতার আসনে সমাসীন হননি। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাবা ছিলেন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্বামী ছিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সোনিয়া গান্ধীর স্বামী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধী, ভারতের প্রায়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর স্বামী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু, পাকিস্তানের প্রায়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো এর বাবা ছিলেন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট মেঘবতীর বাবা ছিলেন সুকর্ন, আর্জেন্টিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইসাবেলা পেরনের স্বামী ছিলেন প্রেসিডেন্ট জন পেরন, শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরানায়েকের স্বামী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী সলোমান ডায়াস বন্দোরানায়েকে।
প্রশ্ন হল প্রথম মানব হযরত আদম আঃ থেকে আজ পর্যন্ত “পৃথিবীতে মানুষ প্রেরনের প্রায় সাড়ে সাত হাজার বছরের” ইতিহাসে (নবীগণের জন্ম তারিখ ও তাদের আয়ূর তালিকা হযরত আদম আঃ থেকে হযরত মুহাম্মাদ সঃ পর্যন্ত নবীগণের জন্ম তারিখ, মুসলিম ঐতিহাসিক তাবারী ইবনে খলদুন হইতে গৃহীত ও তওরাত দ্বারা সমর্থিত।
হবুতি সনঃ হযরত আদম (আঃ) পৃথিবীতে অবতরণের বৎসরকে হবুতি সন বলা হয়।
১| হযরত আদম (আঃ) পৃথিবীতে অবতরণ হবুতি---১লা সন,আয়ূ-৯৩০ বৎসর।
২| হযরত শীস (আঃ)এর জন্ম হবুতি--১৩০ সন,আয়ূ--৯১২বৎসর।
৩|„হযরত ইদরীস (আঃ)এর জন্ম হবুতি ৫৮০সন,আয়ূ-৬৫ বৎসর।
৪| হযরত নূহ(আঃ)এর জন্ম হবুতি--১০৫৬ সন,আয়ূ--১৪০০ বৎসর।
৫| হযরত সাম(আঃ)এর জন্ম হবুতি--১৫৫৬ সন,আয়ূ--২২০বৎসর।
তাহার নাম হইতে শাম(সিরিয়া) নামকরণ হইয়াছে।
৬| হযরত হুদ (আঃ)এর জন্ম হবুতি--১৬৪০ সন,আয়ূ--৪৬৪বৎসর।
৭|হযরত ইব্রাহীম(আঃ)এর জন্ম হবুতি--১৯৮৭সন,আয়ূ--১৩৫বৎসর।
৮|হযরত ইসহাক আঃ এর জন্ম হবুতি--২০৮৯ সন,আয়ূ--১৪৫বৎসর।
৯|হযরত ইয়াকুব (আঃ)এর জন্ম হবুতি--২১৪৭ সন,আয়ূ--১৪৭বৎসর।
১০|হযরত ইউসুফ (আঃ)এর জন্ম হবুতি--২২০২সন,আয়ূ--১০৫ বৎসর
১১|হযরত আইয়ূব (আঃ)এর জন্ম হবুতি-২২৮৮সন,আয়ূ-১৪০বৎসর
১২|হযরত মুসা (আঃ)এর জন্ম হবুতি--২৪১২ সন,আয়ূ--১২০বৎসর।
১৩| হযরত ইউশা( আঃ) জন্ম হবুতি-২৪৮০সন,আয়ূ-১১০ বৎসর।
১৪|হযরত দাউদ (আঃ)এর জন্ম হবুতি--৩১০৯ সন,আয়ূ--৭০বৎসর।
১৫|হযরত সোলায়মান (আঃ)এর জন্ম হবুতি--৩১৪৯ সন,আয়ূ--১৩৫
১৬|হযরত ঈসা (আঃ)এর জন্ম হবুতি--৪০০৪ সন,আয়ূ--৩৩বৎসর।
১৭| মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম,জন্ম হবুতি--৪৫৭৪(৫৭০খৃঃ) সন,আয়ূ--৬৩ বৎসর।)
হিব্র বাইবেল অনুসারে হযরত মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত ৫৯৯২ বৎসর গণনা করা হয় ও পারসিকদের মতে ৪১৮০ বৎসর গণনা করা হয়। (সূত্রঃ আত্মার সাওদা,নেয়ামুল কুরআন)।) ১২৩৬ সাল পর্যন্ত কোন মুসলিম নারী শাসক পৃথিবীতে আসেননি। ব্যাপারটাকি এমন যে আগে কোন যোগ্য নারী ছিলনা কিংবা যোগ্য নারী ছিল পুরুষদের হিংসাত্মক মনোভাব কোন নারীকে নেতৃত্বের আসনে বসতে দেয়নি।
এর জবাবে আসতে হলে প্রথমে জানতে হবে আপনি কি আস্তিক না নাস্তিক, মুসলিম না অমুসলিম। কারন, একজন নাস্তিক আল্লাহতে বিশ্বাস না করা পর্যন্ত ঈমানের দাওয়াত দেয়া, একজন অমুসলিমকে মুসলমান না হওয়া পর্যন্ত আমলের দাওয়াত দেয়া অরণ্যে রোদন। বাক্তির যদি কুরআন হাদিসে বিশ্বাস থাকে সে ক্ষেত্রে তাদের প্রতি নারী নেতৃত্বের আলোচনা প্রাসঙ্গিক। সরল জবাব, যোগ্য নারী থাকলেও পুরুষের তুলনায় যোগ্য ছিলনা আর পুরুষের হিংসাত্মক মনোভাবের কারন ছিল কিনা তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ নবুয়তের ধারা। পৃথিবীর সর্বপ্রথম মানব ও নবী হযরত আদম আঃ থেকে শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) পর্যন্ত এক লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গাম্বর আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত হয়েছিলেন। মানুষের পরামর্শ ক্রমে কিংবা ভোটের মাধ্যমে নবী নির্ধারিত হয়নি। নবীদের বিশেষ বৈশিষ্টের মধ্যে কতোগুলো বৈশিষ্ট্য হল – যে নবী যে গোত্র বা এলাকা বা দেশ বা সমগ্র দুনিয়ার জন্য আবির্ভূত হয়েছেন তিনি ছিলেন তাঁর নির্ধারিত পরিসরে সমসাময়িক কালের সবচেয়ে উত্তম চরিত্রের অধিকারী, সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী, সবচেয়ে সুদর্শন এবং দৈহিক ও আত্মিক শক্তিতে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী এবং মোজেজার অধিকারী।
আল্লাহ তায়ালা সকল ভুলের উর্ধে একথা অবশ্যই স্বীকার্য। সুতারং হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে একলক্ষ চব্বিশ হাজার নবী- রসূলদের মধ্যে তিনি একজনও নারী মনোনীত করেননি। শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর পরবর্তী যুগে দুনিয়াতে রিসালাতের ধারা সমাপ্ত হলে মুসলিম বিশ্বের জন্য হযরত আবুবকর (রাঃ) সর্ব প্রথম খলিফা নিযুক্ত হন। এরপর হযরত উমর (রাঃ), হযরত উসমান (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ) পর্যন্ত ছিল খেলাফতের সোনালি যুগ। পরবর্তী শাসন ব্যাবস্থা যাই হোক সেটা ছিল পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যাবস্থা। নারী নেতৃত্ব সঙ্গত কি অসঙ্গত তা আল্লাহর নির্ধারিত রিসালাতের ধারা দিয়েই বুঝা যায়। অতএব নারীর নেতৃত্ব হীনতা পুরুষের জবরদস্তি নয় বরং আল্লাহর বিধান।
যেসব নামধারী বুদ্ধিজীবীরা বলেন হুজুররা না জেনেই ফতোয়া দেয় নারী নেতৃত্ব হারাম সে সব বুদ্ধিজীবীরা অন্ধ দর্শকের তাজমহল দর্শনের ন্যায়।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ‘নারীদের উপর পুরুষগণ শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্বের অধিকারী।’ [বাকারা : ২২৭]।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: ‘পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বকারী। কারণ আল্লাহ তাআলা-ই তাদের মাঝে তারতম্য ও শ্রেষ্ঠত্বের বিধান রেখেছেন। দ্বিতীয়ত পুরুষরাই ব্যয়-ভার গ্রহণ করে।’ [নিসা : ৩৪]
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বামীর আনুগত্যকে এবাদতের স্বীকৃতি প্রদান করে বলেন—
যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজান মাসের রোজা রাখে এবং নিজের লজ্জাস্থান হেফাজত করে ও স্বীয় স্বামীর আনুগত্য করে, সে,নিজের ইচ্ছানুযায়ী জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবে। [আহমাদ : ১৫৭৩] বিভিন্ন হাদীসে বলা হয়েছে নারী নেতৃত্ব হারাম।যেমন বুখারী শরীফের কিতাবুল ফিকানে বলা হয়েছে যে,
“যে জাতির নেতৃত্ব কোন নারী দিবে সে জাতি কখনও কল্যাণ বয়ে আনবে না।”
অন্যত্র বলা হয়েছে, “যখন নারীরা নেতৃত্ব দেওয়া শুরু করবে তখন মাটির উপরের চেয়ে নীচের অংশ ভাল হবে।” [তিরমযীঃকিতাবুল ফিকান]
তিরমিযী শরীফে আরেকটি হাদীস রয়েছে, “পুরুষেরা তখন ধংস্ব হয়ে যাবে যখন তারা নারী নেতৃত্ব মেনে নিবে।” [তিরমিযি]
কুরআন-হাদীস ছাড়াও ইজমাতে ইবনে হাযম মারাফিতুল ইজমা(পৃঃ১২৬) গ্রন্থে বলেছেন, “তারা একথায় একমত হয়েছে নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।” ইমাম তাইমিয়া বলেছেন, “নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।” [নাকালু মারাফিয়া ইজমা] অতঃপর আল্লামা মাওয়ার্দী যাকে ইসলামী রাজনীতির প্রবক্তা বলা হয় তিনি বলেন, “নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।এ ব্যাপারে আলেমগণ একমত হয়েছেন।” [আহকামুস সুলতানিয়া] আল্লামা আবুল ইয়ালা হাম্বলী তার এ আহকামুস সুলতানিয়া গ্রন্থে বলছেন, “নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।” ইমামুল হারামায় আল্লামা জুরাইন বলেছেন, “নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।” ইবনুল আরাবী বলছেন, “নারী খলীফা কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারে না।” ইমাম কুরতুবী এই ইজমা উল্লেখ করেছেন যে, “নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।” ইমাম গাযযালী(রঃ) খলীফা হওয়ার জন্য পুরুষ শর্ত উল্লেখ করেছেন।আল্লামা শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী(রঃ) তার হুজ্জাতুল বালিগা তে বলেছেন, “নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।নেতৃত্ব হওয়ার জন্য তাকে অবশ্যই পুরুষ হতে হবে।” আল্লামা ইবনুল কাসীর বলেন, “নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পুরুষ হওয়া ফরয।” ইমাম কুরতুবী আহকামুল কুরআনে নারী নেতৃত্বকে নাজায়েয বলেছেন। ইমাম যামাখখাশারী তার কাশশাফ এ লিখেছেন যে, “নারী নেতৃত্ব হারাম।” ইমাম বায়যভী তার তাফসীরে বায়যাভীতে বলেছেন যে, “নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।”ইমাম শাওকানী একই কথা বলেছেন।ইমাম বদরুদ্দিন আইনী লিখেছেন যে, তা বৈধ নয়।মোল্লা আলী কারী(রঃ) ফাতহুল বারীতে লিখেছেন যে, নারী নেতৃত্ব জায়েয নয়।আল্লামা মওদূদী ইসলামী শাসনতন্ত্রের ৮১ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “রাজনীতি এবং দেশশাসনে নারীদের কর্মসীমার বহির্ভূত।” আশরাফ আলী থানবী (রঃ) বলেন, “নারী নেতৃত্ব বৈধ নয়।” সৌদি আরবের মুফতি আযম,আব্দুল্লাহ বিন বার,আযমীর নারী নেতৃত্ব নাজায়েয বলেছেন।বিখ্যাত ফিকাহ গ্রন্থ ফাতওয়া শামীতে বলে হয়েছে, “নারী নেতৃত্ব কোনভাবেই জায়েয নয়।কারণ আল্লাহ পাকের নির্দেশ হল নারীরা ঘরে পর্দার সাথে জীবন যাপন করবে।তাদের জন্য পর্দা করা ফরয।তাই কোনভাবেই তাদের জন্য নেতৃত্ব জায়েয নয়।”
অর্থাৎ, এখানে গোটা উম্মাতের ভিতর এই ইজমা সঙ্ঘটিত হয়েছে যে,নারী নেতৃত্ব ইসলামে মোটেও জায়েয নয়।
এবার বলব দৃষ্টি দিন আল্লাহর সৃষ্টি কৌশলের দিকে। দৈহিক শক্তি, দেহের আকৃতি, সাহস, মেধা – মনন, শ্রমের দক্ষতা, দারাজ কণ্ঠ অর্থাৎ নেতৃত্বের জন্য যে বৈশিষ্ট্য গুলো দরকার সব দিক থেকে পুরুষ এগিয়ে। শুধু মানুষ নয় অন্য জীব জন্তুর দিকে তাকালেও দেখতে পাই আল্লাহ তায়ালা পুরুষ দিগকেই প্রধান্য দিয়েছেন। প্রাণী কুলের মধ্যে পুরুষ দিগকে শুধু আকার শক্তি সামর্থের দিক দিয়েই বড় করেননি সৌন্দর্যের দিক দিয়েও রেখেছেন উর্ধে। যেমন বাস্তব দেখুন ময়ূর - ময়ূরী, মোরগ - মুরগি, বলদ - গাভি, হরিণ - হরিণী, সিংহ – সিংহী ইত্যাদি। শুধু যোগ্যতাই নয় যখন প্রাণীগুলো দল বেঁধে চলে তখন দেখা যায় পুরুষ গুলোই সামনে সামনে চলে। তাহলে আল্লাহ পুরুষদের ব্যাপারে পক্ষপাতিত্ব করেছেন এমন কথা বলার দুঃসাহস দেখাবেন? তাহলে তো ঈমান নামক মহা মূল্যবান দৌলত হারাবেন। বিশাল বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি কর্তার ভুল ধরতে পারলে একটা খুদ্রাতি খুদ্র বস্তু হলেও সৃষ্টি করে দেখান তো। অসম্ভব, কস্মিনকালেও পারবেন না।
ধরুন, আপনার এক খণ্ড জমি আছে এর কিছু অংশে মসজিদ বানালেন কিছু অংশে টয়লেট বানালেন কেন? টয়লেট একটু এদিক সেদিক সরিয়ে নিলেন না কেন?( সরিয়ে নিলে যৌক্তিকতায় কোন বাঁধা নেই )। আপনি একজন প্রকাশক, একই মানের কিছু কাগজে কুরআন শরীফ ছেপেছেন, কিছু কাগজে উপন্যাস ছেপেছেন। যে কাগজ গুলো কুরআন শরীফ ছাপানোর কাজে ব্যায় করেছেন সে কাগজ গুলো উপন্যাস ছাপানোর কাজে ব্যায় করেননি কেন অথবা যে কাগজ গুলো উপন্যাস ছাপানোর কাজে ব্যায় করেছেন সে কাগজ গুলো কুরআন শরীফ ছাপানোর কাজে ব্যায় করেননি কেন? আপনাকে যদি এসব প্রশ্ন করা হয় আপনি বলে ফেলবেন এটা একান্তই আমার ইচ্ছা, আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। এবার আপনার জবাব দিয়েই আপনি বুঝে নিন আল্লাহর সৃষ্টি ভুল ধরে আপনি কোন অজ্ঞতার সুড়ঙ্গে বাস করছেন। সমগ্র দুনিয়ার সমগ্র সৃষ্টির জ্ঞান যেখানে শেষ মহা বিশ্বের সৃষ্টি কর্তা আল্লাহর জ্ঞান সেখানে শুরু।
কি এক অপরূপ ভারসাম্যতায় গোটা সৃষ্টিকে সাজিয়ে রেখেছেন মহান দয়াময়। নারী পুরুষের সংখ্যাগত ভাবে প্রায় সমান সমান যেটা উভয় জাতির সুখময় জীবনের জন্য এক বিশেষ নেয়ামত। এটাকে যদি x – y এর ক্রোমোজোম গত ফল হিসেবে বলতে চান তবে বলুন x – y এর সৃষ্টিকর্তা কে?
যে নারী একাকী নির্জনে চলতে ভয় পায়, পুরুষ ছাড়া যে নারী অসহায় সে নেতৃত্বের ভার নেয় কিভাবে? বাস্তব সত্য হল এজন্য পুরুষরাই পুরোপুরি দায়ী। পুরুষেরা নারী নেতৃত্বের মদদ না দিলে কোন কালেই নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। নিজেদের হীন স্বার্থ আদায়ের লক্ষে নিচুমনা পুরুষদের মদদের ফলই নারীর খমতায়ন। নারী রাষ্ট্র প্রধান হওয়ার আরেকটা বাস্তব কারন হল দেশে দেশে অঘোষিত দলীয় রাজতন্ত্র রক্ষার তাগিদে পুরুষ উত্তরসূরির অভাবে নারীকে দলীয় প্রধান হিসেবে বসানো অতঃপর মসনদ দখলের লড়াই। নিজ নিজ স্বার্থের বিভোরে স্বার্থান্বেষীরা ভুলে যায় হারাম( নিষিদ্ধ ) নারী নেতৃত্ব।
জাতির কাছে আমার একটা প্রশ্ন রাজতন্ত্র এবং গণতন্ত্র যদি সাংঘর্ষিক হয় তাহলে যোগ্যতার মাপকাঠিকে এড়িয়ে গিয়ে সাংগঠনিক যোগ্যতাকে অবমূল্যায়ন করে উত্তরসূরিকে দলীয় প্রধান করা এটা কোন গণতন্ত্র। কৌশলগত ভাবেই আল্লাহ তায়ালা পুরুষদের অধিক যোগ্য করে সৃষ্টি করেছেন অতঃপর তাদের উপর দায়ভার চাপিয়ে দিয়েছেন। যেমনঃ মা – বাবা, সন্তান – সন্ততি, স্ত্রীর ভরণ পোষণের দায়িত্ব পুরুষের উপর বর্তিত। মানব সৃষ্টির শুরু থেকে সৃষ্ট যত দুর্জয়, আবিস্কার, বীরত্ব সব কিছুতেই পুরুষের কর্তৃত্ব সু স্পষ্ট। অবকাঠামোগত ভাবেও পুরুষদের গঠনই নেতৃত্বের ইঙ্গিত বহন করে।
সর্বোপরি আল্লাহ তায়ালা নারীদের উপর পর্দা ফরজ করে দিইয়েছেন যা খেলাপের পরকালীন সাস্তি ভয়াবহ।قل للمؤمنت يغضنن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولا يبدين زينتهن الا ما ظهر منها
তরজমা : (হে নবী!) মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। তারা যেন সাধারণত যা প্রকাশ থাকে তা ছাড়া নিজেদের আভরণ প্রদর্শন না করে। (সূরা নূর : ৩১)
তোমরা তাঁদের (নবী পত্নীদের) নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাও। এই বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। তোমাদের কারো জন্য আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেওয়া সংগত নয় এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য কখনো বৈধ নয়। আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা ঘোরতর অপরাধ। (সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৩)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
নারী হল সতর তথা আবৃত থাকার বস্ত্ত। নিশ্চয়ই সে যখন ঘর থেকে বের হয় তখন শয়তান তাকে মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে। আর সে যখন গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করে তখন সে আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বেশি নিকটে থাকে।-আলমুজামুল আওসাত, তবারানী
উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা. বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম। উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা রা.ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এমন সময় আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম উপস্থিত হলেন। এটি ছিল পর্দা বিধানের পরের ঘটনা। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার সামনে থেকে সরে যাও। আমরা বললাম, তিনি তো অন্ধ, আমাদেরকে দেখছেন না?! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখছ না?-সুনানে আবু দাউদ ৪/৩৬১, হাদীস : ৪১১২; জামে তিরমিযী ৫/১০২, হাদীস : ২৭৭৯; মুসনাদে আহমাদ ৬/২৯৬; শরহুল মুসলিম, নববী ১০/৯৭; ফাতহুল বারী ৯/২৪৮।
নারী যদি নেতৃত্বের আসনে আসে তাহলে তার পর্দা রক্ষা হয় কিভাবে? পর্দার হুকুম অমান্য করা এক প্রকারের নির্লজ্জতাও বটে। হে নারীরা আপনারা মায়ের জাত এটাই তো আপনার বিশেষ মর্যাদা। মায়ের মর্যাদা আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন। তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় করো এবং পিতা-মাতারও। (সূরা লোকমান : ১৪) এতে সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামে আল্লাহ পাকের ইবাদতের পর পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। রসুল (সা.) বলেছেন, 'মায়ের পায়ের তলে সন্তানের বেহেশত। ' (ইবনে মাজা, নাসায়ী)। বোখারি ও মুসলিম শরিফের হাদিসে বর্ণিত, এক লোক রসুল (স.)-এর দরবারে এসে বলল : হে আল্লাহর রসুল! কোন ব্যক্তি আমার সদাচরণ ও আনুগত্য পাওয়ার সবচেয়ে বেশি অধিকারী? তিনি এরশাদ করলেন, তোমার 'মা'। সে আরজ করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার 'মা'। আবার সে আরজ করল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার 'মা'। পুনরায় সে নিবেদন করল, তারপর কে? তিনি জবাব দিলেন, তোমার পিতা।এভাবে তিনবার মায়ের কথা বলার পর চতুর্থ বার বাবার কথা বললেন।
সুতারং রাষ্ট্র পরিচালনার মতো নেতৃত্বের লোভ থেকে ফিরে আসুন। দুনিয়ার সংক্ষিপ্ত সময়ের ক্ষমতার লোভে অনন্ত জিন্দেগীর ধ্বংস ডেকে আনবেন না। পুরুষদেরকে বলছি আপনারাও নারীদেরকে ক্ষমতার আসনে বসানোর নীচ মানসিকতা পরিহার করুন। আল্লাহকে ভয় করুন।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৪