আমার বয়স তখন সাত, আট বছরের মধ্যে হবে। চোট্ট একটি গ্রামে আমরা বাস করতাম। গ্রামের একটি অংশে বিশ-পচিঁশটার মত হিন্দু পরিবার বাস করত, অপর অংশে আমরা চল্লিশের মত মুসলিম পরিবার বাস করতাম।
আমাদের পাড়ায় আমরা ছােট-বড় মিলে বিশ জনের মত ছেলে ছিলাম, প্রায় সবাই একসাথে স্কুলে যেতাম, আবার ফিরে বিকালে একসাথে মাঠে খেলতাম।
এখনকার মত তখন নির্বাচন নিয়ে অতি মতামাতি হত না। টাকার খেলা ছিল না। যতটুকু মনে পড়ে- মাইক দিয়ে জারি গান বাঁজিয়ে প্রার্থীর পক্ষে ভােট চাইত আর সাথে থাকত প্রার্থীর মার্কার ”ছাঁচ” তা দিয়ে মাঠির দেয়ালে প্রতিকের ছাপ এঁকে দিত। নির্বাচনের আগের রাতে এসে বড়জোড় চিড়া-গুড়, সাথে ”ইনতাজ বিড়ি” দিয়ে যেত। ভােটের দিন সকালে বাবা-মায়ের সাথে ভােট কেন্দ্রে যেতাম, দেখতাম কত সুন্দর করে পােস্টার রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে- কত মানুষ, কত আনন্দ করছে। বাবা-মার ভােট দেওয়া শেষ হলে বাড়ি ফিরতাম সাথে অবশ্যই দুই-একটা খেলনা নিয়ে। সন্ধ্যায় যখন বাবা এসে মাকে বলত- যাক ভাল মানুষটা পাশ করেছে তখন মনে মনে ভাবতাম ভাল মানুষকে সবাই ভালবাসে আমিও ভাল-মানুষ হব।
একদিন বিকালে এক বড় ভাই খেলার মাঠে এসে বলল- আমরা নির্বাচন করব তোমরা ভােটার, ভােট দিবে। আমরা ছােটরাতো খুবই খুশি, বাবা-মায়ের মত আমরাও ভােট দিতে পারব। দুইজন প্রার্থী হল, একজন আমার চাচাত ভাই, আমি তার পক্ষে মিছিল করতাম, ভােট চাইতাম। খুব আনন্দ করেছিলাম। ভােটের দিন এল-ভোট দিলাম, যেহেতু ভােটার সংখ্যা কম তাই একজন তিনবার করে ভােট দিলাম। ফলাফল ঘােষনা হল- আমার চাচাত ভাই পনের ভােট বেশি পেয়ে চেয়্যারম্যান হল। আমরা মিছিল করতে করতে চাচার কাছে এলাম চাচা আমাদের বিস্কুট কিনে দিলেন।
কিন্তু পরের দিন জানলাম - ভােটের আগে আমার চাচাত ভাইয়ের পক্ষে সিল মেরে বিশটা ভােট বক্সে রাখা ছিল। সেদিনের পরাজিত, নির্বাচনে দায়িত্ব থাকা সেই ভাইকে বলেছিল-অযথা আমার একশত টাকা নষ্ট করলি।
আজ পঁচিশ বছর পরে সেই কথাগুলো মনে পড়ল বর্তমান দেশের নির্বাচন দেখে।
নির্বাচন কমিশনের কাছে আজ আমার প্রশ্ন- কেন এই নির্বাচন নির্বাচন খেলা, আর কেনইবা আমার কষ্টের ট্যাক্সের টাকার অপচয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:০৩