সবে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছি- নতুন স্কুল, অপরিচিত সবমুখ, অচেনা জায়গা, সময় যেন ফুরাতো না-একদিন কাটতে যেন যুগ চলে যেত। মায়ের ভাষায় একটু ”হাবা টাইপের” ছিলাম তাই সহজে মানিয়ে-গুছিয়ে-বুঝে উঠতে পারতাম না। মাস কাটল জনা দুয়ের সাথে আমার বন্ধুতের ভাব জমল। দু’জনেই আমার বিপরীত আমি যেখানে নীরবে শান্তভাবে কােথাও বসে একটু কথা বলতে পছন্দ করি সেখানে তারা সারাদিন হুই-হুল্লোড়-খেলা-ধুলায় মহা ব্যাস্ত। একথায় মুদ্রার এপিট ওপিট। তবুও জামিল ও হাবুল আমার স্কুলের সব, যাদের সাথে আমি কিছু বলতে পারি-খুব সহজে।
স্থান-কাল-পাত্র বুঝে কথা বলার যে সহজ-সরল-সমীকরণ তা কখনও আমার মাথায় কাজ করিত না। আমার মুখ হতে ঠাস করে বেরিয়ে যাওয়া ”উদ্ভট” কথায় সবই খুবই মজা করত। মাঝে মধ্যে খুবই শরম পেতাম যখন বলত-এই হাবুর মানুষ হতে আশি বছর লাগবে। এই যেমন- একদিন জামিল, হাবুল আরও কয়েকজন ক্লাসের বেঞ্চে গােল হয়ে বসে ভারত-পাকিস্থানের ম্যাচ নিয়ে প্রচন্ড তর্কে জড়িয়ে পড়ল, আমি সেখানে ঢুকেই বললাম-বাংলা ক্লাস কখন শুরু হবে? ব্যাস-তর্ক শেষ, শুরু হল আমাকে নিয়ে তীর্যক সব মন্তব্য-একজন বলল-শরৎ সাহেবের আগমন, সদ্য বক্তার দিকে চােখ টিপনী দিয়ে আরেকজন বলল-এভাবে বলিস না, চল স্যারের কাছে বাংলা পড়তে বসি।
দুইদিন পরে স্কুলে এসে জানলাম আজ ক্রিকেট ম্যাচ। জামিল বলল-আজ কিন্তু খেলতে হবে, আমার হ্যাঁ-না কােন উত্তর না নিয়েই আমার নাম একাদশে। খেলা শুরু হল। আমার দলের নয়জন-বাংলাদেশের জাতীয় দলের মত কে কার আগে ফিরবে-এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে যথারিতী ফিরেছে। দশম-ম্যান আমি। ভাবছি কি করব-মাঠে ঢুকব নাকি পালাবো। হঠাৎ কি যেন ভেবেই জুতা খুুলে মােজা পায়ে রেখেই হাতে ব্যাট নিয়েই মাঠের ভিতর-দেীঁড়।
খেলা শেষ হল সেদিন কিন্তু শেষ হল না খেলার রেশ-হাবু থেকে হয়ে গেলাম ক্রিকেটার মােজাবাবু দুইদিন পর শুধু মােজাবাবু। কত যে এই শব্দটি শুনেছি সাথে নানা উপাধি।
একদিন সন্ধ্যায় বাবা মামাদের বাড়িতে এসে বলল-আমাকে নিয়ে যাবে। সেখানেই পড়ব। নিজের গ্রামে ফিরে গেলাম, শুরু হল নতুন আরেক অধ্যায়।
এখন যখন ফেলে আসা দিনগুলি চােখ বুঁজে দেখি-তখন খুব করে তাদের মনে পড়ে। খুবই ইচ্ছে করে তাদের সামনে আবার গিয়ে দাঁড়ায়, আবার শুনি-কিরে মোজাবাবু খবর কি, শার্টের নিচে গেঞ্জি কয়টা, এক হালি নাকি এক ডজন।
সত্যি জীবন এক অদ্ভুত ঊপলব্ধি----
সময় যত বাড়ে তার বিচিত্র রংয়ের তত দেখা মেলে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৬ সকাল ৯:৪৯