অগ্নি পরীক্ষায় ওবামার ‘চেঞ্জ’-আগের পর্ব পড়ুন
ম্যাককেইনের ‘ভেরী এগ্রেসিভ’ প্রচারনার বিপরীতে ওবামাও খুব খাটছেন ক্যাথলিকদের মন পাওয়ার। ম্যাককেইনের সমর্থকরা ওবামাকে দোষছেন ‘দি এবোরশেন প্রেসিডেন্ট’ বলে। কারন ওবামা গর্ভপাত ও সমকামী অধিকার আন্দোলনের পক্ষে। অবশ্য ওবামাশিবির যুক্তি দেখাচ্ছে, অর্থনীতি, পরিবেশ ও দারিদ্র্য মোকাবেলায় তারা যে নীতি গ্রহন করেছে তা বাস্তবায়িত হলে ক্যাথলিকদের দাবী অনুযায়ী রিপাবলিকানদের চেয়েও গর্ভপাত হ্রাস পাবে।
ওবামার প্রচারণা-গোষ্ঠী ক্যাথলিকদের বিশেষ টার্গেট নিয়ে ‘ইয়ং ক্যাথলিক’, ‘সোশ্যাল জাস্টিস ক্যাথলিক’ ও ‘উইমেন রিলিজেয়াস কমিউনিটি’ ভাগ করে তাদের পেছনে কাজ করছে। রিগ্যান প্রশাসনের সাবেক সংবিধান বিশেষজ্ঞ ডগলাস কমিকের ওবামাকে নিয়ে লেখা সাম্প্রতিক “Can a Catholic Support Him” বইটিকে তারা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করছে।
যাহোক, ওবামার সাড়া জাগানো ভাবমূর্তি মোকাবেলায় জেন্টেলম্যান ম্যাককেইন বেশ সংযত, মিতব্যয়ী। বেশ সম্মানজনক পথ তিনি বেছে নিয়েছেন। এ পর্যন্ত মাত্র ছয়বার সরাসরি ‘ওবামা’ নাম ধরে কথা বলেছেন। তিনি ওবামাকে ‘অপরিপক্ক’ ও ‘দেশের চেয়ে নিজের ক্যারিয়ার নিয়েই ব্যস্ত’ বলে মনে করেন। ওবামা কিন্তু এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছেন। তিনি তাঁর নাম অসংখ্যবার উচ্চারন করছেন। বলছেন, ‘I’ve got news for you, John McCain. We all put our country first.’ এই “Country First” ই হল এবারের জন ম্যাককেইনের মূল শ্লোগান। ওদিকে ম্যাককেইন শিবিরও ‘Change’ শব্দ ব্যবহার করে মুখে ফেনা তুলছে। ওবামার জনপ্রিয় শ্লোগান ‘চেঞ্জ’-র সার্থক রূপায়ক একমাত্র ম্যাককেইনই অভিহিত করে রিপাবলিকান কৌশলী স্টিভ শমিড (Steve Schmidt) বলেছেন, ‘John McCain has a record of fighting to change.’ ওবামার শ্লোগানটি এভাবে চুরি হয়ে যাওয়া বিচিত্র কিছু না। কারন ভোটের শেষ মুহুর্তে রিপাবলিকানদের ‘ডার্টি গেম’-র নজির আমেরিকানদের কাছে আছে। গেল বারের নির্বাচনে জন কেরীর স্বাস্থ্য ও ইরাক ইস্যু বেশ জনপ্রিয় লাভ করায় বুশ দেশের ‘নিরাপত্তা’কেই মূল ইস্যু বলে আমেরিকানদের উত্তেজিত করে ফলাফল পালটে দেন।
পলিনের বাকপটুতা ও জেদী ইমেজ এখন আমেরিকার রাজনীতিতে আলোচ্য বিষয়। মাত্র দশ হাজার লোকের শহর ওয়াসিলার একসময়ের মেয়র এই পলিনকে আগে মূল রাজনীতিতে পরিচিতি না থাকায় সাংবাদিকরা জ্বালায়নি। এখন চটকদার নিউজ পরিবেশন করতে মিডিয়াকর্মীরা তাঁর নথিপত্র ঘাঁটা শুরু করে দিয়েছে। নিজের বোনকে তালাক দেয়ার অপরাধে পলিন তাঁর পুলিশ অফিসার সাবেক বোনজামাইকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করার অনুরোধ করেছিলেন পুলিশের উর্ধতন এক কর্মকর্তাকে। তাঁর অন্যায় এই অনুরোধ আমলে না দেয়ায় খোদ ওই পুলিশ কর্মকর্তাকেই পলিন ডিসমিস করেছিলেন বলে খবর বেরিয়েছে। সরকারী কোষাগার তছরুপের অভিযোগও চলে এসেছে তাঁর বিরুদ্ধে। ‘সরকারী সফর’ দেখিয়ে ৪৩,৮৯০ ডলারের ট্যাক্স রিসিট জমা দিয়েছেন। অথচ পলিনের এই সফরসমূহ ছিল স্বামী ও সন্তানসহ তাঁর ওয়াসিলার নিজ বাড়ীতে ৩১২ রাত কাটানো। মাত্র ঊনিশ মাসের গভর্ণরশীপে ১৭ হাজার ডলার নিয়েছেন ৬০০ মাইল দূরে ‘ডিউটি স্টেশন’ দেখিয়ে সরকারী অফিস করার। পলিন অবশ্য এর উত্তরে বলেছেন, আগের গভর্ণর ফ্র্যাঙ্ক মুরকাওস্কির চেয়ে তিনি অনেক কম খরচ করেছেন। তাঁর মুখপাত্র বলেছেন, ‘এটা তো চাকরিরই অংশ। ভ্রমনের জন্য তিনি এসব করতেই পারেন’।
সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ওবামা পলিনের ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে নাক গলাতে মোটেই পছন্দ করছেন না। তিনি বলছেন, ‘আমরা কারো পরিবারের পিছনে লাগি না। তাদেরকে নিয়ে রাজনীতিও করতে চাইনা। এটা সঠিক ও প্রাসঙ্গিকও নয়। আমার লোকজনের কেউ এতে জড়াচ্ছে না, জড়ালে অবশ্যই ফায়ার করব’। তিনি বলেন, ‘এগুলোকে আমাদের রাজনীতির অংশ বানানো উচিৎ নয়। পলিনের গভর্ণরের দায়িত্বপালনে এবং আগামীতে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মদক্ষতা প্রদর্শনে যোগ্যতার মাপকাঠি এসব হতে পারেনা। সবাইকে অনুরোধ করব এই ধরনের গল্প ফাঁদা থেকে দূরে থাকতে’। ম্যাককেইন দল কিন্তু ওবামাকে অগ্রিম দূষছেন পলিনের দূর্বল দিকগুলোতে ঘায়েল করার অভিযোগে।
রিপাবলিকানদের নিন্দনীয় প্রচারণা ওবামা-বাইডেনকে সার্বক্ষনিক তটস্থ করে রেখেছে। ইন্টারনেটে পলিনের লোকজন সম্প্রতি একটা এড ছড়িয়েছে। এডটা হল এরকম, পলিনকে নিয়ে ওবামা কথা বলছেন। এমন সময় তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আপনি কি নেতৃত্বের আসনে বসতে প্রস্তুত’? ওবামা বলছেন, ‘না’। আবার প্রশ্ন করা হলো, ‘বাজে কথা ছড়াতে কি আপনি রেডী’? ওবামার উত্তরঃ ‘হ্যাঁ’। বিভিন্ন রাজ্যে ছড়ানো আরো একটা ক্যাম্পেইনিং হল, ‘হোয়াইট হাউস’ মানেই হল ‘সাদাদের স্থান’, সুতরাং সেখানেই কৃষ্ণাঙ্গের না যাওয়াই হল আমেরিকান ট্র্যাডিশন।
ওবামাকে সারাক্ষণই চতুর্মূখী এরকম আক্রমন মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে রিপাবলিকানদের আরো একটি নোংরামী ‘লিপস্টিক অন অ্যা পিগ’ ক্যাম্পেইন বন্ধ করার দাবী জানিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘আমাকে যা খুশী বল তাতে আমার মাথা-ব্যাথা নাই, কিন্তু তাই বলে কাউকে নোংরা ও ব্যক্তিগত আক্রমন করতে পারবা না’। ‘লিপস্টিক অন অ্যা পিগ’ হল, পিগ (শুয়োর)-এর শরীর রং দিয়ে ভরে দিলেও সে পিগই। পলিন কৌতুক করে বলেছিলেন, আমেরিকান ষাঁড়ের সাথে ‘হকি মাতার’ অর্থাৎ তাঁর পার্থক্যটা হল ‘লিপস্টিক’। ওবামাকে বিদ্রুপ করে বুশ বলেছেন, ‘একটা পুরোন মরা মাছকে যদি তুমি ‘চেঞ্জ’ নামের কাগজ দিয়ে পেঁচিয়ে রাখো, আট বছর পর এথেকে দূর্গন্ধই ছড়াবে’।
গত ২৮ আগস্ট ডেনভারে ওবামা ঐতিহাসিক ভাষন দেয়ার পর তাঁর জনপ্রিয়তা ম্যাককেইনের চেয়ে আট পয়েন্টে এগিয়ে ছিল। শুরুতে ওবামার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় ডেমোক্রেটরা মোটামুটিভাবে এবার নিশ্চিত বিজয় ধরেই নিয়েছিল। কিন্তু পলিন মনোনয়নের পর এখন ওবামা কৌশলীদের আগের সব হিসাব-নিকাশ পালটে গেছে। বাগ্মী সারাহ পলিনের প্রথম আক্রমনেই ম্যাককেইন ৪ পয়েন্টে এগিয়ে ওবামা ক্যাম্পেইনে বাজীমাত করে দেন। জো বাইডেন এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন সামনের দিনগুলোতে সামনা-সামনি ডিবেটে কিভাবে এই বিদূষী মহিলাকে রুখা যায়। ‘ওয়ান অন ওয়ান’ ডিবেটে ম্যাককেইনকে মোকাবেলায় ওবামা খুব সহজে পার পেয়ে যাবার আশা করা গেলেও বাইডেনের ক্ষেত্রে তা নাও হতে পারে। আর সেখানেই হয়ে যেতে পারে নাটকীয় কোন কিছু, যদিও সারা দুনিয়ার শান্তিকামী মানুষেরা বুশের আদর্শের বিপরীত মেরুর ওবামার দিকে তাকিয়ে আছে আমেরিকায় ‘পরিবর্তন’-এর সত্যিকার দৃশ্য দেখার।
আলোচিত ব্লগ
বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !
"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমিত্ব বিসর্জন
আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।
"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন