বগুড়ায় ছাত্রী ধর্ষন আর ছাত্রীর মাকে সহ নির্যাতন করে ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনার মূল হোতা কে? বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহবায়ক তুফান সরকার? মোটেই না !!
এটার জন্য দায়ী আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা!! কিভাবে?
প্রত্যেকটা নিউজে দেখুন, মেয়েটি বলছে পাশ করেও কোন কলেজে ভর্তি হতে না পেড়ে, প্রতিবেশীর পরামর্শে প্রভাবশালী তুফান সরকারের দ্বারস্থ হতে হয়েছিলো । আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাই এরকমই, যেখানে পাশ করেও ভর্তির নিশ্চয়তা পাওয়া যায়না। আমি এই ঘটনার মূল হোতা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের বরখাস্ত চাই।
এবার আসি তুফান সরকার প্রসংগে। তুফান রা কারা? তুফান রা প্রত্যেকটি বড় দলে লেজুড়বৃত্তি করতে থাকা প্রজন্ম, যাদের কে রাজনৈতিক দলগুলো লালন পালন করে মাঠ পর্যায়ের রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করতে। এরা গরীবের পেটে লাথি মারবে, চাঁদা তুলে খাবে, ভূমিদস্যুতা, টেন্ডারবাজি করবে আর প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করবে । ক্ষমতায় থাকলে তুফানরা প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা করবে, ধর্ষণ করবে, চাঁদাবাজি করবে, খুন করবে আর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাসোহারা দিয়ে তাদেরকে সকল অপকর্মের সঙ্গী বানিয়ে নিবে। একই কথা প্রত্যেক বড় রাজনৈতিক দলের জন্য প্রজেয্য। বিএনপি আমলে পূর্ণিমা রানী ধর্ষণ কাহিনী কারো মনে আছে? নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে ততকালীন বিএনপি জামাতের স্থানীয় ক্যাডাররা সংখ্যালঘু পরিবারটির উপর হামলে পড়েছিলো। সেদিন পূর্ণিমার মা সন্ত্রাসীদের পায়ে ধরে বলেছিলো বাবারা আমার মেয়েটি ছোট, সহ্য করতে পারবেনা, তোমরা একজন একজন করে আমার মেয়েটিকে ধর্ষন করো,তবু একসাথে যেয়োনা। কিন্তু সেদিন সেই নরপিচাশরা ক্ষমতার গরিমায় এতই মত্ত ছিলো যে, পশুর মত দলবদ্ধ হয়ে একটি বাচ্চা মেয়েকে গনধর্ষনে মেতেছিলো। তুফান গং আর বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসীদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, তারা মনে করে তাদের দল ক্ষমতায়। দু'চারটা ধর্ষন তাদের জন্য জায়েজ।
এবার তুফানের স্ত্রী আশা এবং স্ত্রীর বড় বোন রুমকি প্রসংগে আসি। রুমকি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনি ধি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর। তাই ক্ষমতার দাপটে তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করতেই পারেন। যেখানে তার ছোট বোনজামাই শহর শ্রমিক লীগের আহবায়ক। না হয়, ফুর্তি করতে গিয়ে একটি মেয়েকে সামান্য ধর্ষণই করেছেন, তাতে কি এমন হয়েছে যে, বিচার চাইতে হবে?
আর ক্ষমতা যেহেতু তাদের হাতেই, তো বিচার কারা করবে?
তাই রুমকি নিজ হাতে বিচারের দায়িত্ব নিয়ে মা- মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছেন,আবার শাসিয়ে দিয়েছেন খবরদার, এই বিষয়ে আর টু শব্দ করবি না, আর করলেও লাভ নেই, কারন আমি নির্বাচিত কাউন্সিলর, পুলিশকে কিছু টাকা দিলে সব শেষ। তাই আমার কিচ্ছু হবেনা।
তুফানের স্ত্রী আশার ভুমিকা ঠিক তেমন হয়ছে, যেমন একটা ক্ষমতাশালী নেতার বউয়ের হউয়া দরকার। আবার তার নিজের বড় বোনও একজন ক্ষমতাধর নারী কাউন্সিলর। জোয়ান মেয়ে কেন আসলো আমার ক্ষমতাধর স্বামীর সাহায্য চাইতে? ধর্ষণ করেছে বেশ করেছে, দোষ নিজের স্বামীর না, দোষী মেয়েটির মা -আর মেয়েটির। তাইতো বাসায় ডেকে নিয়ে এসে,মা-মেয়েকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছে, উত্তম মধ্যম দিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে।
নারীরা মায়ের জাত, নারী মানেই কোমলতা, দয়া আর মাতৃত্বের আধার। সত্যিই কি তাই? বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ইতিহাস তা বলেনা । ক্ষমতাসীন রাজনৈতিকদের স্ত্রী কন্যারা কিংবা নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিরা কিংবা উচ্চপদস্থ নারীরা কেউ দুর্নীতিতে, পুরুষের চেয়ে কম যান না। স্থানীয় সরকারের প্রত্যেকটা নারী জনপ্রতিনিধি, কাবিখার গম লুট, ত্রানের চাল লুট সহ সকল প্রকার অপকর্মে, পুরুষের সাথে সমান তালে সমপাপী । প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির স্ত্রী কন্যারা নিজেদের জন্য নামে, বেনামে, অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন এবং সেই চিত্র ফুটে উঠেছিল ওয়ান ইলাভেনের সময়। মোদ্দাকথা আমি বলবো, সমগ্র ঘটনার জন্য আমাদের সিস্টেম দায়ী।
যেখানে স্কুল কলেজে ভর্তি হতে গেলে, পচে যাওয়া, নষ্ট হয়ে যাওয়া, নেতা নামধারী প্রভাবশালীদের ধর্না ধরতে হয়।। যে পর্যন্ত প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর ভর্তির নিশ্চয়তা, তথা শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন না হবে, ততদিন পর্যন্ত এই ঘটনা চলতেই থাকবে। এরকম ঘটনা অহরহই ঘটছে, বগুড়ার ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে মাত্র, বাকি গুলো অপ্রকাশিত থেকে যায়।
এই ঘটনার জন্য দায়ী, আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। যেখানে দরিদ্র রিক্সাচালকের ছেলে তুফানও, মাত্র দুই বছরে, কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলতে পারে, শুধু মাত্র ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয়ে।
আর সমাজের দূষিত উচ্ছিষ্ট শ্রেনীর মানুষ আকৃতির প্রানী গুলোই, রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে আর ভালো মানুষগুলো, হয়ে পড়েছে কোনাঠাসা। ক্ষমতাসীন দের সব অপকর্ম জায়েজ, এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি যতক্ষণ না বন্ধ হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আশা- রুমকিদের ক্ষমতার দাপট, আর তুফানদের ধর্ষণ ঠেকানো যাবেনা।
সর্বোপরি আমাদের বিচার ব্যবস্থা আর আইনপ্রয়োগকারী সদস্যরাও দায়ী এই ঘটনার জন্য। দুই বছর আগে তুফান সরাকার, দুই বস্তা ফেন্সিডিল সহ ধরা পড়ার পরও কিভাবে দুর্বল বিচার ব্যবস্থার কারনে, জেল থেকে মুক্তি পেয়ে গেলো??
কোন পুলিশ অফিসার মামলার তদন্ত করেছিলো? কিভাবে আইনের ফাক গলে সে বেড়িয়ে যেতে পেড়েছিলো?
তারও তদন্ত হওয়া দরকার। অবশ্য যেখানে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী যোসেফ তোফায়েল সহ ৫৩ দাগী আসামী, আইনের ফাক গলে বেরিয়ে যেতে পারবে, সেখানে তুফান কোন ছার?
কিছুদিন জেল খেটে ক্ষমতার দাপটে, সেও থাকবে বহাল তবিয়ৎ এ। মাদকব্যবসা, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী করে, একটি ক্ষমতাসীন দলের নেতা হতে হলে, যাদের কে ম্যানেজ করা দরকার, তুফান সরকার সবাইকে করেছে। যারা তাকে নেতা বানিয়েছে, যারা তাকে শেল্টার দিয়েছে, তাদের বিচার চাওয়া কি দোষের কিছু?
ক্ষমা করো ধর্ষিত হওয়া ছাত্রী বোনটি, ক্ষমা করুন ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে, মেয়েসহ নির্যাতিত হয়ে মাথা ন্যাড়া হয়ে আসা "মা" জননী। এখানে ধর্ষক বগুড়া শহর শ্রমিকলীগের সভাপতি, তুফান গংদের কোন দোষ নেই, আপনাদের নির্যাতন করে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া, ধর্ষক তুফানের স্ত্রী আশা আর আশার ক্ষমতাশালী কাউন্সিলর বড় বোন, রুমকিরও কোন দোষ নেই!!
বিবেকের কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে রেখে যাচ্ছি, শিক্ষা ব্যবস্থাকে, সরকার ও তার পরিচালনা ব্যবস্থাকে, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা আর বিচার ব্যবস্থাকে, সর্বোপরি রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ।
বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছি, আর সব কিছু জেনেশুনেও সব অন্যায়ে চুপ করে থাকা, আর প্রতিবারই মার্কা দেখে ভোট দিয়ে যাওয়া, আমজনতাকেও তাদের নিজ বিবেকের কাঠগড়ায়, আসামীর করে গেলাম। ক্ষমা করবেন মা- মেয়ে।।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৩৪