মুক্তিযুদ্ধে যে সকল গেরিলা বাহিনী অবিস্মরণীয় কৃতী অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল তাদের অন্যতম ছিল ফরিদপুরের হেমায়েত উদ্দিনের নেতৃত্বে গড়ে উঠা "হেমায়েত বাহিনী" । গত ২২ শে অক্টোবর এই কিংবদন্তী যোদ্ধা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ঢাকা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ।
অনেকটা নিরবে নিভৃতে বীরবিক্রম হেমায়েত উদ্দিন কে সমাহিত করা হয় ।
এদেশের ডিজিটাল চেতনার মিডিয়ায় অনুপস্থিত বীরবিক্রম হেমায়েত উদ্দিন, অথচ আওয়ামী লীগ ঘরনার কেঊ মৃত্যু বরণ করেলেই তাদের নামের আগে যোগ হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং আরো নানা হাজারো ভূষনে, যদিও মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে হয় তারা প্রান বাচাতে ভারতে পলায়ন পুর্বক আরাম আয়েশের বিলাসী জীবন পাড় করেছিলেন অথবা দেশের অভ্যন্তরে পালিয়ে বেড়িয়েছেন।
কিন্তু সন্মুখ গেরিলা যুদ্ধে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের "কাদেরিয়া বাহিনীর" পর সবচাইতে কৃতিত্বের দাবিদার হেমায়েত উদ্দিনের "হেমায়েত বাহিনী" । বীর বিক্রম হেমায়েত উদ্দিনের স্মৃ্তিতে তার মুক্তিযুদ্ধের অবদানের সামান্য কথা উইকিপিডিয়া থেকে তুলে ধরলাম । জাতিই একদিন নির্ধারন করবে বীর বিক্রম হেমায়েত উদ্দিনের অবদান ।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের রাতের পর ২৯শে মার্চ তারিখে ঢাকার জয়দেবপুর সেনানিবাসে অবস্থানরত পাঞ্জাবি সৈন্যদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহী সৈন্য এবং কর্মকর্তাগণ মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পরেন। বিদ্রোহী সৈন্যদের অন্যতম ব্যান্ডপার্টির হাবিলদার হেমায়েত উদ্দিন কয়েকজন সৈন্যকে নিয়ে ফরিদপুরে আসেন। এ সময় ফরিদপুরের স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় তিনি পাকিস্তান সৈন্যদের প্রতিহত করলে বেশ কিছুদিন ফরিদপুর পাক সৈন্য মুক্ত থাকে। কিন্তু ঢাকা থেকে আধুনিক অস্ত্রসস্ত্রসহ পাকিস্তান সৈন্য ফরিদপুর গেলে হেমায়েত উদ্দিন সঙ্গীদের নিয়ে ২৮ শে এপ্রিল নিজ গ্রাম কোটালিপাড়ার টুপুরিয়ায় সরে আসেন। এ সময় স্থানীয় রাজাকারেরা তাকে আত্মসমর্পন না করলে তার ছেলে এবং স্ত্রীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার হুকমী প্রদান করে। হুমকীর খবর শুনে হেমায়েতের স্ত্রী আত্মহত্যা করেন।[৩] হেমায়েত সেখান থেকে সরে গিয়ে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সহায়তায় মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলেন। তিনি এবং তার সঙ্গীরা কোটালিপাড়া থানা আক্রমণ করে প্রচুর অস্ত্র নিজেদের দখলে নেয়।
হেমায়েত বাহিনী[উৎস সম্পাদনা]
কিছুদিনের মধ্যেই হেমায়েতের মুক্তিযোদ্ধাদের দলটি একটি বিরাট বাহিনীতে রূপ নেয়। এ বাহিনীতে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল সর্বমোট ৫,৫৫৮ জন।[৩] এ বাহিনীর যুদ্ধক্ষেত্র বরিশালের উত্তরাঞ্চল, খুলনা-বাগেরহাট ও যশোরের কালিয়া সহ গোপালগঞ্জ এবং মাদারীপুরের পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। হেমায়েত বাহিনী পরিচালনার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ বাহিনী ৪২টি দলে বিভক্ত ছিল।[৩] প্রতিটি দলে কমান্ডার, সহকারী কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়েছিল। তবে কেন্দ্রীয় ভাবে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালিত হত। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে কোটালিপাড়ার জহরেরকান্দি হাই স্কুলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। হেমায়েত বাহিনীর মধ্যে বিচার বিভাগও ছিল। নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে ২ জন গ্রুপ কমান্ডার সহ মোট ৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল।[৩]
তাঁর নেতৃত্বে ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে হেমায়েত বাহিনী গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রায় ৫০০ পাকিস্তানি সেনাকে পরাস্ত করে এই এলাকা শত্রুমুক্ত করে। ২ ডিসেম্বর রাতে ২৪ জন সাব কমান্ডার নিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন চূড়ান্ত আক্রমণের।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫০