ইহা এমন গ্রন্থ যা পরস্পর বিপরীত দিকে পথ নির্দেশ করে। তারমানে ক্বোরআন পাঠে কেউ হেদায়েত পায়, আর কেউ পথ ভ্রষ্ট হয়। এজন্য নাস্তিকরাও ক্বোআন পাঠের পরামর্শ দিয়ে থাকে। তারা মনে করে ক্বোআন পাঠ করে তারা যেমন পথ ভ্রষ্ট হয়েছে অন্য সবাই তেমন পথভ্রষ্ট হবে। অথচ দেড় হাজার বছর ধরে ক্বোরআন পাঠ চলছে। অনেকেই তা’তে হেদায়েত প্রাপ্ত হচ্ছে, পথভ্রষ্ট হচ্ছেনা।
ক্বোরআন থেকে সঠিক পথ খুঁজতে গিয়ে অনেকে সঠিক পথ পেয়ে যায়, আবার অনেকে সঠিক পথ পায়না। কারা সঠিক পথ পায়? যারা এর প্রতি সম্মান রেখে এটা বুঝতে অনেক খাটাখাটনি করে তারা সঠিক পথ পায়। যারা এর প্রতি তামাশা করে, এর প্রতি তার তামাশার মনভাব প্রমাণে খাটাখাটুনি করে তারা বিভ্রান্ত হয়। তারাও বিভ্রান্ত হয় যারা এর প্রতি অমনোযোগী।
পংকিল জলাশয়ে সূর্য ডুবা, মাকড়সা, মশা, পিঁপড়া, ইয়াজুজ-মাজুজ, হুর ও গেলমান, ক্বোরআনের সাথে মিল করে সূরা বানাতে অপারগ হওয়া, বিজ্ঞানের সাথে গরমিল মনে হওয়া বিষয় সমূহ, এ সব নিয়ে তামাশাবাজদের তামাশার শেষ নেই। আর পথ প্রাপ্তরা বুঝে এসব তামাশাবাজদের তাদের থেকে আলাদা করার জন্য।কারণ আল্লাহ তামাশাবাজদের তাঁর অনন্য সুন্দর জান্নাত প্রদান করবেন না।
আলীদস্তি গং বলছে ক্বোরআন কেন, কারো রচনার সাথে মিল রচনা অসম্ভব! অথচ আল্লাহর কথাও সেটি, কারণ কোন মানুষের রচনার সাথে ক্বোরআন মিলেনা। মহানবীর (সঃ) হাদীস ও ক্বোরআন এক রকম নয়। আবার অন্য ক্বোন মানুষের রচনার সাথেও ক্বোরআন মিলে না। সুতরাং যেহেতু ক্বোরআন অন্যকারো বাণী নয় সেহেতু ক্বোরআন আল্লাহর বাণী। আপনি তিনটি ‘র’ অন্তমিলে ভুমিকা আলোচনা ও উপসংহার এর সামঞ্জস্য রেখে নবীর প্রতি আল্লাহর কথা হিসেবে সূরা কাউছারের মত সূরা বাংলাতেও রচনা করতে পারবেন না। যদি পারেন তবে করে দেখান। ভুল তাতে মিলবেই মিলবে।
আল্লাহকে সনাক্ত করার মতো সুস্পষ্ট কিছুই অনেকে পাচ্ছেনা আর অনেকেই তাঁর সৃষ্টি দেখে তাঁকে বিশ্বাস করছে।প্রমাণ যে পাচ্ছেনা সে আল্লাহকে মানছেনা যে পাচ্ছে সে মানছে। না পাওয়ার কারণ যথাযথ অনুসন্ধান না করা। কোন জিনিস যদি থাকে এক দিকে আর কেউ যদি তা’খোঁজে উল্টা দিকে তবে সে সেটা পাবে কেমন করে?
ক্বোরআন পড়ে এর অনুসারী একদল হচ্ছেনা বরং বহুদল হচ্ছে, যার মধ্যে আবার সঠিক শুধু এক দল। আবার নবীর (সঃ) হাদীসেও তাঁর (সঃ) উম্মত বহুদল হচ্ছে যদিও তাদের প্রতি এক দল থাকার নির্দেশ।বহু দলের সবার দাবী তারাই সঠিক দল, এ নিয়ে অন্তহীন ঝাগড়া।এতে আবার অনেকেই বিরক্ত।কিন্তু সঠিক দাবী করলে কেউ সঠিক হয়না বরং সঠিক হতে হলে সঠিক কাজ করতে হয়। আল্লাহর প্রিয় বান্দাগনের সানে যারা বেয়াদবী করে, যারা তাদের সমালোচনা করে তারা সঠিক লোক নয়। আল্লাহর প্রিয় বান্দা তাঁরা যাদের মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাঁরা হলেন মহানবীর (সঃ) সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)। তাঁদের শানে আল্লাহ বলেছেন,‘রাদিয়াল্লাহু আনহুম-আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট’ আল ক্বোরআন, সুরা তাওবা আয়াত নং-১০০।সুতরাং যারা সাহাবা স্বীকৃত, তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট সমালোচক সঠিক মুসলমান নয়। বড় এর বিচার করে যিনি তার চেয়ে বড়, এ ক্ষেত্রে ছোট এর বড় এর বিচার করতে যাওয়া চরম বেয়াদবী। সুতরাং সাহাবায়ে কেরামের (রাঃ) সমালোচক সঠিক মুসলমানের তালিকা থেকে বাদ পড়বে। এভাবে ক্বোরআনের কয়েকটি সূত্রে ছাঁকলে প্রকৃত মুসলমান পাওয়া যাবে। এখানে আমরা সে বিশদ আলোচনায় যাচ্ছিনা।
সার কথা আল্লাহ যাকে হেদায়েত প্রদান করেন সে শুধু হেদায়েত পায়। কে হেদায়েত পায়? আল্লাহর যাকে পছন্দ! এর জন্য কি করতে হবে?
০১। নিজ দায়িত্বে লুকিয়ে থাকা আল্লাহকে খুঁজে বের করুন।
০২। নিজ মর্জি ত্যাগ করে তাঁর মর্জিমতো জীবন সাজান।
০৩। তাঁর মর্জি সঠিক ভাবে জেনে নিন।
০৪। আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সাথে বেয়াদবী ও অহংকার পরিহার করুন।
০৫। মিথ্যা পরিহার করুন।
উপরোক্ত পঞ্চগুণ সঠিক মুসলমান সনাক্ত করার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর উপায়।
উপরোক্ত পঞ্চগুণ না হলে কি হবে? আল্লাহর যা ইচ্ছা তাই হবে। কারণ তাঁর ইচ্ছার বাইরে কিছুই হয়না এবং হবেওনা। এসব আপনি বিশ্বাস করেননা? বিশ্বাস করুন আর নাই করুন যা ঘটার তা’কিন্তু ঘটবেই। কিছুই আপনি ঠেকাতে পারবেননা। কারণ আপনার সে ক্ষমতা নেই। আর এটাই বিস্ময়কর ক্বোরআনের সার সংক্ষেপ!
প্রসঙ্গত বান্দার হেদায়েতে আল্লাহর তেমন কোন গরজ নেই। কারণ এর বিনিময়ে সে জান্নাত পাবে এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাবে। তবে বান্দা হেদায়েতের পথে হাটলে আল্লাহ যথেষ্ট খুশী হন। কারণ তিনি বান্দার মঙ্গল সাধন করতে চান, বান্দার পাপের কারণে অনেক সময় তিনি বিধিমতো তা’করতে পারেননা। সুতরাং আমরা কারো দিকে না তাকিয়ে নিজেদের জান্নাতের পথ নিজেরাই খুঁজে নিতে সচেষ্ট হব, আল্লাহ আমাদের সেই তাওফিক দান করুন-আমিন।
বিঃদ্রঃ লেখাটি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত। লেখকঃ ফরিদ আহমদ চৌধুরী।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:২২