আল্লাহ সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে বলেছেন,‘রাদিআল্লাহু আনহুম-আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট’। আল্লাহ মিথ্যাবাদী, গুনাহগার ও বেঠিকলোকদের উপর সন্তুষ্ট নন, সুতরাং সাহাবায়ে কেরাম সত্যবাদী, মাসুম বা বেগুনাহ ও সঠিক বা হক।যিনি সত্যাদী ও সঠিক বা হক তিনি সত্য বা হক্কের মাপকাঠি না হওয়ার সংগত কোন কারণ নেই।সুতরাং সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি।সুতরাং সাহাবায়ে কেরামের অনুসরন সঠিক বিবেচিত হবে।মূলত সত্যের মাপকাঠি একাজেই লাগে।তবে কাঠির মাঝে বড়ছোট থাকে। যেমন, সাহাবায়ে কেরামের (রাঃ) চেয়ে মহানবী (সঃ) বড়, মহানবী (সঃ) থেকে আল্লাহ বড়। কোন বিষয় অনুসরনে তিন কাঠির মধ্যে পার্থক্য দেখা গেলে বড় সত্যের মাপকাঠি বিচার্য হবে।সাহাবায়ে কেরামের (সঃ) পরস্পরের মধ্যে প্রভেদ দেখা গেলে মহানবীর (সঃ) অধীক নৈকট্য প্রাপ্ত সাহাবা (রাঃ) অনুসরনীয় হবেন।আর যদি এমন হয় তাহলে সাহাবায়ে কেরামের (রাঃ) সত্যের মাপকাঠি হওয়ার ব্যাপারে আপত্তির কি কারণ থাকতে পারে? তবে সাহাবায়ে কেরামকে (রাঃ) সত্যের মাপকাঠি না মানলে ক্বোরআন অস্বীকারের দায় বহন করতে হবে।
কেউ যদি বলে সাহাবার (রাঃ) এ কাজ ক্বোরআনের সাথে মিলেনা, তো তিনি ক্বোরআন মানলে তাঁকে মানা করে কে? কেউ যদি বলেন সাহাবার (রাঃ) এ কাজ হাদীসের সাথে মিলেনা, তো তিনি হাদীস মানলে তাঁকে মানা করে কে? মূলত ক্বোরআনের ও হাদীসের সাথে মিল যুক্ত সাহাবার (রাঃ) কাজতো ক্বোআন ও হাদীসেরই অনুসরন।আর ক্বোরআন ও হাদীসের খেলাপ সাহাবার (রাঃ) অনুসরন করতে কেউ কখনো বলবেনা।যেমন ক্বোরআন মুসলমানে মুসলমানে যুদ্ধকরা সমর্থন করে না।হাদীসেও সেটা সমর্থন করেনা। সে জন্য এর থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে কোন মুসলমান কোন মুসলমানকে আক্রমন করে বসলে তাকে এর উচিত জবাব না দিয়ে উপায় কি? যেমন ৭১ এ আমরা পাকিস্তানীদের উচিত জবাব দিয়েছিলাম। তো সাহাবায়ে কেরামের পরস্পর যুদ্ধ এ জাতীয় যুদ্ধ জায়েজ করে। এর থেকে অনুমেয় সাহাবায়ে কেরামের (রাঃ) অনুসরণ কত জরুরী।নতুবা আমরা কি করে বুঝতাম যে মুসলমান অন্যায় করলে তাকে শায়েস্তা করতে যুদ্ধ করা জায়েজ হবে। আর এমন গভীরে গিয়ে বিবেচনা করলে কোন সাহাবার (রাঃ) কোন সমালোচনা কেউ করতে পারবে না, এ ব্যাপরে আমি নিশ্চিত।
হজরত মুয়াবিয়া (রাঃ) ভাবলেন, হজরত ওমর (রাঃ) তাঁকে সিরিয়ার শাসক নিয়োগ করেছেন, হজরত ওসমান (রাঃ)তাঁকে বহাল রেখেছেন। সুতরাং হজরত আলী (রাঃ) তাঁকে বরখাস্ত করে অন্যায় করেছেন।সুতরাং তিনি হজরত আলীর (রাঃ) বরখাস্ত আদেশ অগ্রাহ্য করেছেন। আর হজরত আলী (রাঃ) খলিফার আদেশ অগ্রাহ্য করায় হজরত মুয়াবিয়াকে (রাঃ) বিধিমত আক্রমন করলেন। যুদ্ধে জিততে না পেরে বরখাস্ত করা শাসনকর্তাকে অবশেষে খেলাফতের অর্ধেক ছেড়ে দিয়ে অবশেষে ফিরে এলেন। তারচেয়ে বরং তাঁকে বরখাস্ত না করাইতো ভালছিল।এতে আমাদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো এমন কাজ করা ঠিক নয় যার ফসল আমার ঘরে না উঠে আরেক জনের ঘরে উঠবে।যেমন হজরত মুয়াবিয়া (রাঃ) ও আলীর (রাঃ) দ্বন্দ্বে মূলত হজরত মুয়াবিয়া (রাঃ) লাভবান হয়েছেন, যিনি বেকার হয়ে ঘরে বসে থাকার কথা উল্টা তিনি হয়ে গেলেন খলিফা।
ইয়াজিদ খলিফা না হলে খলিফা হয় হজরত হোসেন (রাঃ)। হজরত হোসেন (রাঃ) হজরত মুয়াবিয়ার (রাঃ) শত্রুপুত্র। সংগত কারণে শত্রুপুত্র যেন খলিফা না হয় সে জন্য হজরত মুয়াবিয়া (রাঃ) নিজপুত্রকে উত্তরাধীকারী মনোনীত করেছেন। তাঁর স্থানে আমরা থাকলে কি করতাম সে হিসেব করে না হয় আমরা কিছু বলি। একই কাজ যদি যে কেহ করতো ঘটনা এমন হয় তবে আর হজরত মুয়াবিয়ার সমালোচনা কেন?
আদার বেপারী জাহাজের খবর নিয়ে কাজ নেই। কেউ যদি কখনো হজরত মুয়াবীয়ার (রাঃ) স্থানে যেতে পারেন তবে নিজ পুত্রকে ক্ষমতা না দিয়ে নেক লোককে ক্ষমতা দিলে সেটা দোষের হবেনা।এ ক্ষেত্রে হজরত মুয়াবিয়ার (রাঃ) অনুসরনে এমন নেককাজে কেউ পরিহার করতে বলে না। কিন্তু এ যাবত এমন ক’টি ঘটনা ঘটেছে? সুতরাং মহানবীর (সঃ) সাহাবায়ে কেরামের বিচারের ভার আল্লাহর হাতে তোলা থাকুক। কোন বেয়াদব এ ব্যাপারে নাক না গলিয়ে যেন নিজের পরকাল বিনষ্ট না করে।আর সাহাবায়ে কেরামকে (রাঃ) সত্যের মাপকাঠি না মানাও তাঁদের সাথে চরম বেয়াদবী।
বিঃদ্রঃ পোষ্টটি মাওলানা ফরিদ আহমদ চৌধুরী এর ফেসবুকে প্রদত্ত পোষ্ট।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:৩৩