কুমারী মাতার দেশে
বাড়ি থেকে এয়ারপোর্ট যেতে যতটুকু সময় লাগে, তার চেয়ে কম সময়ে পৌঁছে যাওয়া যায় নেপালের রাজধানীতে। আকাশ পথে নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডু যেতে সময় লাগে মাত্র এক ঘণ্টা। কিন্তু এই এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে হলে আপনাকে ঢুকতে হবে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে। দিতে হবে এয়ারপোর্ট ট্যাক্স, ইমিগ্রেশন এর ঝাঁকি পোয়াতে হবে (আগে থেকে ভিসা না থাকলেও চলবে, তবে পাসপোর্ট থাকতে হবে), কাস্টমস ডিক্লেরেশন দিতে হবে, ইমিগ্রেশন ফর্ম পুরন করতে হবে কাঠমুন্ডু এয়ারপোর্টে দেওয়ার জন্য, পেরোতে হবে গ্রীন কিংবা রেড চ্যানেল। কারণ একটাই। নেপাল হল ‘ফরেন’। অর্থাৎ বিদেশ। নেপালে আপনার আর একজন ইউরোপ বা আমেরিকানের মধ্যে স্ট্যাটাস এর কোন পার্থক্য নেই। সবাই ‘ফরেনার’।
১। নেপাল এয়ারপোর্ট
নেপাল ভ্রমণের এটা হল প্রথম রোমাঞ্চ। এ ছাড়া নেপাল মানেই হল এক ধরনের রহস্যময়তা। যেভাবে পাতলা কুয়াশার চাদর এখানকার মখমলে সবুজ পাহাড়ের শরীরকে কখনও আড়ালে, কখনও গোপনে, কখনও চোখের সামনে এনে ফেলে – ঠিক সেই রহস্যময়তাই যেন ছেয়ে আছে সারা নেপাল জুড়ে। কাঠমুন্ডুর দরবার স্কয়ারে এক বিশাল মন্দিরের ছোট্ট কাঠের জানালার ফাঁক দিয়ে একটি বাচ্চা মেয়ের মুখ যেন সেই রহস্যময়তারই প্রতিফলন। এই মেয়েটি হল ‘কুমারী মাতা’।
২। ‘কুমারী মাতা’
সারা বছর জুড়ে তার পূজা চলে। কেউ তাকে বলে কন্যাকুমারীর পুনজন্ম, কেউ বলে দেবী দুর্গার অবতার, আবার কেউ বলে অষ্টমাতার একজন। শাক্য বংশের স্বর্ণকার বা রৌপ্যকার পরিবার থেকে চার-পাঁচ বছর বয়সেই বেছে নেওয়া হয় কুমারী মাতাকে। তার শরীর হতে হবে নিখুঁত এবং নিদিষ্ট বত্রিশটি চিহ্ন থাকতে হবে সেই শরীরে। বাছাই পর্বের সেমিফাইনাল রাউন্ডের পরীক্ষাই সবচেয়ে কঠিন। মন্দির চত্বরে এক গা-ছমছমে পরিবেশে শয়তান আর ভূতের মুখোশ পরে ভয় দেখানো হয় সেই সব শিশু মেয়েদের ।
৩। শয়তান আর ভূতের মুখোশ
কাটা মহিষের মুণ্ডু রক্তাক্ত অবস্থায় তখন ছড়িয়ে থাকে সারা চত্বর জুড়ে। এই পরীক্ষায় যে শিশু আগাগোড়া শান্ত থাকতে পারে, পরীক্ষায় সে পাশ করে। আর সবার শেষে তাকে অনেক পোশাকের ভিড়ের ভিতর থেকে বেছে নিতে হয় প্রাক্তন মাতার একটি পোশাক। এই নির্বাচনে পার পেলে যতদিন না পর্যন্ত সে রজঃস্বলা হচ্ছে ততদিনই সে মাতা। কুমারী মাতা। এই কুমারী মা উদাস চোখে কারুকাজ করা কাঠের জাফরির(জানালা বিশেষ) ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে দেখা দেয় কখনও-সখনও। তার মুখের চারপাশে যেন পাহাড়ের গায়ে লেপটে থাকা মেঘের কুয়াশার মতো রহস্যময়তার ওড়না।
নেপালে বেড়ানোটাকে তিন ভাগে ভাগ করা খুব সহজ। কাছে, একটু দূরে এবং দূরে। কাছাকাছি দেখার জিনিসের মধ্যে আছে পশুপাতিনাথ মন্দির, পৃথিবীর উচ্চতম স্থানে অবস্থিত বৌদ্ধস্তূপ বৌধনাথ, ঘুমন্ত বিষ্ণুর মন্দির, স্বয়ম্ভুনাথ স্তূপ আর দক্ষিনকালীর মন্দির। পশুপাতিনাথ মন্দিরের বিশালত্বের পাশাপাশি গা-ছমছমে পরিবেশে পাহাড়ের এক কোনায় দক্ষিনকালীর মন্দির। এই দুই মন্দিরের ভাবই আলাদা। আকাশ-পাতাল ফারাক। আর স্বয়ম্ভুনাথ স্তূপ যেন নেপাল দেশটার গার্জেন হয়ে বুদ্ধের চোখ দিয়ে আগলে রাখছে নিরন্তর।
৪। পশুপাতিনাথ মন্দির
একটু দূরে বেড়ানোর মধ্যে পরে ভক্তপুর আর নাগরকোট। বিষ্ণুর শঙ্খের আকৃতিতে নবম শতাব্দিতে তৈরি ভক্তপুর। নেপালের পৌরাণিক কালের অনেক কিছুর সাক্ষী এই ভক্তপুর। ভক্তপুরের পাশাপাশি প্রায় দু’হাজার মিটার উচ্চতায় নাগরকোট। কাঠমুন্ডু থেকে এর দূরত্ব মাত্র বত্রিশ কিলোমিটার। এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের বা সূর্যোদয়ের সময় হিমালয় দেখা হতে পারে জীবনের এক অসাধারন মুহূর্ত। ঠকঠকে শীতে কাঁপতে কাঁপতে হিমালয়ের অপার সৌন্দর্য দেখার মুহূর্তে এক কাপ গরম চা এগিয়ে দেয়ার জন্য এক্কেবারে কাছেই আছে ক্লাব হিমালয়, নাগরকোট রিসোর্ট এর মতো বেশ কয়েকটি নামী দামি জায়গা।
এবার আসা যাক দূরে বেড়ানোয়। এই তালিকায় থাকতে পারে পোখরা আর চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক।
৫। চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক
ত্রিশূলী নদীকে বাঁ দিকে রেখে সবুজ পাহাড়ের শরীর বেয়ে কাঠমুন্ডু থেকে নামতে নামতে নেমে আসতে হবে প্রায় মাটির কাছে। চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক। ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ৩৬০ বর্গমাইলের চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক নেপালের প্রথম ন্যাশনাল পার্ক। এখানে থাকতে হবে জঙ্গলের ভিতরে। গাইদা জঙ্গল ক্যাম্প। তারকা হোটেলের ব্যবস্থা ঘন জঙ্গলে। তবে শর্ত একটাই। ইলেক্ট্রিক লাইট জ্বালানো যাবে না। জ্বলবে মোমবাতি। লাল- নীল- হলুদ- সবুজ মোমবাতি। কাঠমুন্ডু হতে পাঁচ ঘণ্টার চমৎকার একটি জার্নি শেষে দেখা মিলবে এই ক্যাম্পের। খুব ভোরে রওনা হলে বারটার মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায়। পৌঁছানো মাত্র ক্যাম্প ম্যানেজার জানাবেন দিনের কর্মসূচি। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে দুপুরের খাওয়া। তার আর ঘণ্টা খানেক হয়তো আলোচনা হবে হাতি নিয়ে। হাতির কথা শুনে চমকে উঠার কিছু নেই। কারণ এই জঙ্গলের একমাত্র বাহন এই হাতিই। হাতি সম্পর্কে সমস্ত কিছু জানা হয়ে যাবে ক্যাম্পের প্রকৃতিবিদদের মিনিট তিরিশের আলোচনায়। এমন চমৎকার আলোচনা যে আপনার মনে হবে এখনই গিয়ে উঠে যাই হাতির পিঠে। আর তখনি হয়তো আপনাকে বলা হবে, এবার শুরু হবে ‘জঙ্গল সাফারি’। হাতির পিঠে ঘন জঙ্গলে দু’ঘণ্টার অ্যাডভেঞ্ছার। চিতওয়ানের জঙ্গলে মাছির মতো ভিড় গণ্ডার আর হরিণের। গণ্ডা কয়েক গুন্ডা টাইপের গণ্ডার আর শ খানেক হরিণের দেখা মিলবেই-এটা গ্যারান্টি। আর ভাগ্য যদি ভাল থাকে তাহলে লেপার্ডের সাথে দেখা হয়েও যেতে পারে। পর দিন সকালে ক্যানো রাইডিং। ‘রাপ্তি’ নদীতে জঙ্গলের গা ঘেঁষে ক্যানোয় চরে বয়ে যাওয়া। জঙ্গলে পাখি দেখার এ এক সুবর্ণ সুযোগ। প্রায় শ’তিনেক প্রজাতির পাখির দেখা মিলবে এই অঞ্চলে। আর কপাল ভাল থাকলে দেখা পেয়ে যাবেন কুমিরের। চিতওয়ানেই আছে পৃথিবীর অন্যতম হাতি প্রজনন কেন্দ্র। এই জায়গাটা ঘুরে আসতে ভুল করবেন না। কারণ পৃথিবীতে হাতি প্রজনন কেন্দ্র একেবারেই হাতে গোনা। চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্কে থেকে যেতে ইচ্ছা করবে বেশ কয়েকটা দিন। কিন্তু নেপালে দেখার জায়গার তো আর অভাব নেই। চিতওয়ান থেকে ফেরার আগে অথবা চিতওয়ান থেকে ফিরে পরের গন্তব্য হল পোখরা। কাঠমুন্ডু থেকে এর দূরত্ব প্রায় দু’শ কিলোমিটার। ফিউআ, বেগনাস আর রুপা-এই তিন লেক দিয়ে ঘেরা পোখরা উপত্যকা। হিমালয়ের অন্নপূর্ণা চূড়ার ঠিক নিচেই পোখরা উপত্যকা। জোসনা রাতে ফিউআ লেকে মচ্ছপুছার (ফিশ টেল বা মাছের লেজ) এর বরফ-সাদা প্রতিফলন দেখার জন্যই দুর-দুরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে পোখরা। অনেকে বলে দরবার স্কোয়ারে কুমারী মাতা আর ক্যাসিনোয় জুয়ার আকর্ষণের চেয়ে অনেক বেশি টান পোখরার এই মাছের লেজের। রাতের বেলা লেকের পানিতে ফিশ টেলের ঝিলিকের সঙ্গে পরের দিন সকালের অন্নপূর্ণা আর ধবলগিরির ফাঁক দিয়ে সূর্যোদয় –কোনটা বেশি উত্তেজক এ নিয়ে তর্ক করা যেতে পারে, তবে এক বা দুই রাত- যতদিনই পোখরা কাটান না কেন, অবশ্যই দেখতে ভুলবেন না বিদ্যাবাসিনী মন্দির। পোখরা থেকে বেরিয়ে পড়তে পারেন বেশ কিছু ছোট বড় ট্র্যাকিং এ। দুই দিন থেকে উনিশ-বিশ দিনও হতে পারে এই ট্র্যাকিং এর দৈর্ঘ্য।
আগেই বলেছি চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক আর পোখরা এই দুইটি এক সাথে। তাই এর মাঝে কাঠমুণ্ডু ফেরার প্রশ্নই আসে না। তবে কাঠমুণ্ডু ফেরার পথে অবশ্যই রিভার স্প্রিং রিসোর্টে একটু ঢুঁ মেরে যাবেন। পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে এতো চমৎকার রিসোর্ট পৃথিবীতে কয়টি আছে তা গুনে দেখবার বিষয়।
লনে কিংবা বারান্দায় বসলেই ঠিক নিচে খরস্রোতা নদী। সেই নদীতে রাফটিং করছে পর্যটকের দল। উত্তেজনায় ভরপুর প্রতিটি মুখ। নদীর ওপার গিয়ে ঠেকেছে পাহাড়ে। পাহাড়ের গায়ে তুলোর মতো মেঘ হেলায় ভেসে বেড়াচ্ছে। অল্প অল্প ঠাণ্ডা বাতাশ আপনের মুখে এসে ঝাপটা মারছে। আপনি বেতের চেয়ারে হেলান দিয়ে যখন এই দৃশ্য দেখছেন আর ভাবছেন, এখানে কয়েকটা দিন থেকে গেলে বেশ হত, তখন আপনার সামনে ধুমায়িত চায়ের কাপ রেখে যাবে রিসোর্টের বেয়ারা। সেই চায়ে চুমুক দিতেই চোখটা খনিকের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আপনি ভাবতেই পারেন, বেঁচে থাকাটা বড়ই সুন্দর।
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন