এক দিকে চরম আর্থিক সঙ্কট। অন্য দিকে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি। সাঁড়াশি চাপে বিপাকে পাকিস্তান। লাহোর, মুলতান, ইসলামাবাদ থেকে শুরু করে রাওয়ালপিন্ডির রাস্তায় উঠছে ‘আজাদি’-র স্লোগান। পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে পশ্চিমের প্রতিবেশীর তিন থেকে চার টুকরো হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে। এমনটাই দাবি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে পাকিস্তানে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। জেলবন্দি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেট অধিনায়ক ইমরান খান। তাঁর দল ‘পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ’ বা পিটিআইয়ের নেতৃত্বে শুরু হয়েছে গণবিক্ষোভ। ইমরানকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার দাবি তুলেছে তারা।এর পাশাপাশি ‘পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ’-এর (পিএমএল-এন) নেতা তথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের যুক্তি, ইমরানকে বন্দি করে অন্যায় ভাবে ক্ষমতা দখল করেছেন শরিফ ও তাঁর সঙ্গীরা। আর এতে তাঁদের সাহায্য করেছে পাক ফৌজ।
পিটিআইয়ের এই গণবিক্ষোভ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পাক প্রশাসন। আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে রাস্তায় নেমেছে পাক রেঞ্জার্স। কিছু কিছু জায়গায় সেনাবাহিনীকেও কাজে লাগানো হচ্ছে।
কিন্তু তার পরেও পশ্চিমের প্রতিবেশী দেশটির যে সমস্ত ছবি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তা রীতিমতো ভয়ের। সেখানে বিক্ষোভকারীদের উপর নির্বিচারে লাঠি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাতে দেখা গিয়েছে। কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছে ট্যাঙ্ক।
পিটিআইয়ের আভিযোগ, বিক্ষোভকে বুট দিয়ে মাড়িয়ে সমূলে নষ্ট করতে পাক ফৌজের হাত খুলে দিয়েছে শরিফ সরকার। যার জেরে বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালানোর সাহস পাচ্ছেন সেনা অফিসার ও জওয়ানেরা। শুধু তা-ই নয়, বেছে বেছে ইমরানের কট্টর সমর্থকদের রাস্তা থেকে গায়েব করা হচ্ছে। যার নেপথ্যে পাক গুপ্তচর সংস্থা ‘ইন্টার সার্ভিভেস ইন্টেলিজেন্স’ বা আইএসআইয়ের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।তবে এত কিছুর পর ইমরানের দলের দমে যাওয়া তো দূরে থাক, তাদের স্বর আরও জোরদার হয়েছে। রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদর দফতরের সামনে এককাট্টা হয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে তারা। পাক রেঞ্জার্সের অত্যাচার সত্ত্বেও তাদের আন্দোলনের মাত্রা এতটুকু কমেনি।
মজার বিষয় হল, দেশের হাল যে এমনটাই দাঁড়াবে, সেই ভবিষ্যদ্বাণী আগেই করেছিলেন ইমরান খান। তাও প্রায় বছর দুই আগে। ২০২২ সালের জুনে সাবেক পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রথম দেশটা দেউলিয়া হবে। তার পর আমাদের পরমাণু হাতিয়ার ও পরমাণু সম্পত্তি কেড়ে নেবে। ফলে বাধবে গৃহযুদ্ধ। তখন দেশটাকে তিন টুকরো হওয়া থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।’’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, ইমরানের এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। চারটি মূল প্রদেশে বিভক্ত পশ্চিমের এই প্রতিবেশী দেশ। সেগুলি হল পঞ্জাব, সিন্ধ, বালুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়া। এই প্রদেশগুলির জনজাতি, ভাষা ও সংস্কৃতির মধ্যে জমি-আকাশের পার্থক্যই পাকিস্তান ভাগের কারণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:০৫