৯৫ সাল , খুলনাতে নিজ বাড়িতে থাকি এবং চিংড়ি চাষে বিনিয়োগ করেছি । আগের দিন বিকালে ফিরেছি ঘের থেকে । স্ত্রী রাতে খেতে খেতে বলল বাজারে ইলিশ উঠেছে বড় বড় , তুমি কাল যাবে ইলিশ আনতে । পরদিন গেলাম বাজারে , বাজার ফাকা । মাত্র কজন ইলিশ নিয়ে বসে । তারা বলল সকালেই ইলিশ বেচাকেনা শেষ । একটা বড় সাইজের ইলিশ দেখে ওজন করতে বললাম , ৩ কেজি ৯০০ গ্রাম । ৭০ টাকা কেজি , স্ত্রী আমায় বলেছে ৬৮ টাকা কেজি কিনেছে সবাই । বাকি ইলিশ সব আড়াই এবং দুই কেজির । দশটা ইলিশ নিয়ে , মাটির পাত্রে লবন দিয়ে দিতে বললাম । দুই কি তিনটি মাছ কেটে পিস করে দিল । বাসায় ফিরে মনে হল সকালে নাস্তা খাইনি , বেশ ক্ষুধা পেটে । গৃহ কর্মীকে বললাম বড় কয়েক পিস মাছ ভাজ , ও বলল ভাত রান্না করা আছে । আমার ছেলেটির বয়স এক বছর হয়নি । বাথরুমে ঢুকে বেশ শাওয়ারের নিচে দাঁড়ালাম । হটাত বাথরুমের দরজায় ঘটা ঘট আওয়াজ । বুঝলাম কিছু ঘটেছে , বাবুর কিছু হয়নি তো ? তাওয়েল পেচিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে দেখি কড়াই শুদ্ধ আগুন জ্বলছে । আমি কয়েক সেকেন্ড দেখে বুঝলাম গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন লাগেনি , লেগেছে কড়াইয়ের তেলে । একটা কাপড় দিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার বিচ্ছিন্ন করলাম তারপর মেয়েটির দিকে তাকাতেই সে বলল আমি তেল বেশি দেইনি মাছের তেলে কড়াই ভরে আগুন ধরে গেছে । কড়াই থেকে চামচ দিয়ে তেল অন্য পাত্রে রেখে বিশাল টুকরো গুলো আবার আগুনে দিলাম । খেতে বসলাম , আহা মাছের তেল কি মজা একেবারে প্রান জুড়িয়ে খেলাম । মাছের তেল রেখে দিতে বললাম আর ঐ তেলেই সব্জি বাগার দিতে উপদেশ দিলাম । স্কুল থেকে মা মেয়ে ফিরলে হাসির রোল পড়ে গেল । কিন্তু দুই টাকা বেশি দেওয়ায় আমার স্ত্রী মনঃক্ষুণ্ণ হল । পুরো মাস মাছের তেলে মাছ ভাজি , সব্জি বাগার খুব চলল । পরের বছর শহরের মধ্যে সন্ধ্যা বাজারে গিয়ে দেখি বড় মাছ ১৫০ টাকা কেজি । বাজারটা গুণ্ডাপাণ্ডারা লিজ নিয়ে সব ভাল বড় মাছের দাম হাকিয়েছে লাগামহীন ।
এই গল্পটা বড় ইলিশ আর কিভাবে মধ্যস্বত্বভোগীরা পন্যের দাম বাড়িয়ে লুট পাট করে তার শুরুর কাহিনী বয়ান করলাম । ঐ মাছ আর পাইনি । এখন দেড় কেজির ইলিশ দেড় হাজার টাকা দিয়ে কিনি , আমরা উপায়হীন বস ।
ছবিঃবি ডি রাইজিং
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২২ রাত ৮:৩১